যৌনতা নিয়ে খোলামেলা কিছু কথা

আমাদের ব্যাচমেটদের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে সেক্স নিয়ে কথা হচ্ছিল। মেসেঞ্জার হচ্ছে ফোন কলের মত। কথা শেষ তো সবাই সবকিছু ভুলে যায়। ওই আলোচনায়, সেক্স নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে, সেটা নিয়ে আমি কিছু কথা বলেছি। যা আমি নানা অভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা থেকে পেয়েছি।

যেহেতু গুছিয়ে লিখেই ফেলেছি। সেটা বরং জনসমক্ষে প্রকাশিত থাক ; কখনও হয়তো কারো কাজে লাগতেও পারে। অনেক ভুল ধারণার অবসানও হবে। সবার যৌনজীবন সুখের হোক। কারণ আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতি ধনী-গরীব নির্বিশেষে দুইটি জায়গায় কাউকে বঞ্চিত করে নাই। সবাই সমান। দুইটি নেয়ামত বলি বা প্রকৃতিপ্রদত্ত দান হচ্ছে খাদ্যগ্রহণ ও যৌনতা। খাদ্য গ্রহণ ও যৌনতার মধ্যেই আমরা আমাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারি। অন্য কোন ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাওয়ার সুযোগ প্রকৃতি রাখে নাই। সুতরাং যৌনতাকে নিষিদ্ধ ভেবে নানা ভুল ধারণা নিয়ে না থেকে সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ । আমি ব্যক্তিগতভাবে তাই মনে করি। কেউ ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা তুলতে পারে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, খোলামেলা আলোচনা ভাল।
সেক্স ডিউরেশন , লিঙ্গের সাইজ ও দ্রুত-স্খলন ইত্যাদি নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তি আছে। ওই যে বললাম, ব্যাপারটা নিয়ে খোলামেলা কেউ কথা বলতে চায় না। কেউ কেউ অনেক সময় দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বাগাড়ম্বর করে ফেলে। যা সে করেনি ,সেটার ফ্যান্টাসি করে সবার কাছে বড় হতে চায়। উল্টোদিকে, কেউ হয়ত সব কিছু ঠিক ঠাক মতোই করছে , কিন্তু অন্যদের বাগাড়ম্বর বা ফ্যান্টাসি শুনে ভাবছে , আহারে অন্যরা বোধহয় ‘ আসল পুরুষ’।

আমার পর্যবেক্ষণটা শেয়ার করি। দুঃখিত এই পর্যবেক্ষণ বিশেষ কাউকে নিয়ে নয়। সুতরাং এই অবজারভেশন শুধুমাত্র আমার বিগত কয়েক দশকের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা

১। লিঙ্গের আকৃতি কখনই যৌনতৃপ্তির মূল ব্যাপার নয়। নারীদেহে যোনির ২ ইঞ্চির ভিতরেই তাঁদের ‘জি-স্পট’ বা সকল যৌনানুভূতির স্নায়ু ও কেন্দ্রবিন্দু থাকে। কারো যদি ২.৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের লিঙ্গ থাকে তবে সে মোটামুটি ৯০ ভাগ নারীকে যৌন তৃপ্তি দিতে সক্ষম। অশ্বলিঙ্গের ব্যাপারে চাহিদা ও ফ্যান্টাসি সবার আছে। কিন্তু দেখা গেছে, যাঁদের অশ্বলিঙ্গ থাকে , তাঁদের পার্টনাররা নানারকম অস্বস্তিতে ভোগে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা যৌন আনন্দের চেয়ে বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।

২। পৃথিবীতে গড় পুরুষের শিথিল লিঙ্গ ২.৮ থেকে ৩.৯ ইঞ্চি হয়ে থাকে। আর উত্তেজিত অবস্থায় সেটা ৪.৭ থেকে সর্বোচ্চ ৬.৩ ইঞ্চি হয়। এর বেশী বা কম হচ্ছে ব্যতিক্রম ! কারো লিঙ্গ ৬.৩ ইঞ্চির চেয়ে বড় হলে ,তাঁর উচিৎ পর্ন মুভিতে যোগাযোগ করা। সবার ধারণা দেশ-ভেদে লিঙ্গের সাইজ অনেক কম-বেশী হয়। হ্যাঁ হয়, সেটা খুব সামান্য, কয়েক সেন্টিমিটার । যেমন, ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান দের লিঙ্গের সাইজ এশিয়ানদের চেয়ে কিছুটা বড় হয়। তাই বলে সেটা অশ্বলিঙ্গ হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, গড় পুরুষের, মানে সব দেশের গড় লিঙ্গের উত্তেজিত অবস্থার সাইজ ৫ ইঞ্চির কাছাকাছি। সো , ইরেকটেড লিঙ্গের সাইজ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। পার্টনারকে যৌন তৃপ্তি দিতে হলে, দিল্লীর কুতুব মিনারের প্রয়োজন নেই।

৩। দ্রুত-স্খলন ও দীর্ঘ-স্খলন নিয়ে অনেকের অনেক মনোবেদনা ও ফ্যান্টাসি আছে। বেশী বেশী ব্লু ফিল্ম দেখে ধারণা হয়েছে, মনে হয় ‘ আসল পুরুষ’ রা আধা-ঘণ্টা ধরে নারীদের সঙ্গে সেক্স করে। ভুল ! গড়ে যদি কারো যোনিতে লিঙ্গের প্রবেশের পরে, ৩ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে স্খলন হয় , সেটা স্বাভাবিক। কারো যদি ১৫ মিনিটের পরেও বীর্যপাত না হয়, তবে সেটা অস্বাভাবিক ও অনেকক্ষেত্রে পার্টনারের জন্য পেইনফুল। কারণ পার্টনারের লুব্রিকেশন শুকিয়ে যেতে পারে। আর আমাদের বাঙালী পুরুষদের স্বভাব হচ্ছে, বউকে ধরার ২ মিনিটের মধ্যে আমরা আমাদের লিঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করি বা করে ফেলি। ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার মেয়েদের উত্তেজিত হতে সময় লাগে ৩ থেকে ৭ মিনিট। তবে ব্যতিক্রমও আছে, মাসিকের পরের কয়েকদিন মেয়েরা ২/১ মিনিটেই উত্তেজিত হয়ে রসসিক্ত হয়ে পড়ে।
সো, পার্টনারকে রসে সিক্ত করতে হলে সময় দিতে হবে। নানা ভাবে মর্দন , চোষণ, ফোর প্লে করে তাঁকে উত্তেজিত করে তারপরে লিঙ্গ প্রবেশ করাতে হবে। তাড়াহুড়া করলে, বীর্যপাত ঠিকই হবে কিন্তু বেচারি থেকে যাবে অতৃপ্ত।
৪। সেক্স ডিউরেশনের আরেকটা মূল ব্যাপার হচ্ছে, নিরাপদ সময়। লুকিয়ে লুকিয়ে করতে গেলে দ্রুত স্খলন হবেই। ভিতরে টেনশন নিয়ে সেক্স করার চেয়ে না করা ভাল। নিরাপদ স্থান ও সময় হচ্ছে, যখন পাশে ঘুমানো বাচ্চা আপনাকে বিরক্ত করবে না। বা দরজা খোলা আছে, যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে। এই মুহূর্তগুলোতে দ্রুত স্খলন হতেই পারে।

৫। ব্লু ফিল্ম দেখে দেখে আমাদের অনেকের ধারণা হয়েছে, যে ‘ আসল পুরুষ’ এর বীর্যপাত মনে হয় এক গ্লাস বা এক জগ হয়! ভুল ! গড়ে পুরুষের বীর্যপাত হয়ে সর্বোচ্চ এক চা চামচের সমান। সেটার পরিমাণ নির্ভর করে, পুরুষটি কী ধরণের খাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত। এটার রং, গন্ধ পুরোটাই নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের উপর। আসলে যৌনতা শুধু লিঙ্গ ও যোনীর ঘর্ষণে বীর্যপাতের মতো এতো সহজ ব্যাপার না। পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্ক। মাথায় সারাক্ষণ দ্রুত বীর্যপাতের দুশ্চিন্তা থাকলে সেটাই হবে। আপনি যা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন , তাই হবে। বরং উল্টোটা ভাবা উচিৎ। শরীরের যত্ন নিন, নিজেকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিন, তারপর সেক্স করেন। আপনাদের অনেকেই মোরগ-মুরগীকে সেক্স করতে দেখেছেন। ওই যে, মোরগ দৌড়ে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডর ঘর্ষণে তাঁর বীর্যপাত করায়। কেউ যদি ভাবে, সে সঙ্গিনীর সঙ্গে সারারাতে তিন চারবার সেক্স করা খুব বাহাদুরির ব্যাপার সেটা তাঁর নিজস্ব ভুল চিন্তা। সেটা বিয়ের প্রথমদিকে হতেই পারে।
কিন্তু একবার বীর্য-স্খলনের পরে অন্তত: ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে আরেক বার লিঙ্গের উত্তেজিত হতে। মনে রাখতে হবে, পরিপূর্ণ আনন্দের সঙ্গে রাতে একবার সেক্স করলে সেটার রেশ থেকে যায় কয়েকদিন। মোরগ-মুরগীর দ্রুতলয়ের মতো সারারাতে ৩/৪ বার বা ততোধিক-বার সেক্স করার কথা শুনে হতাশ হওয়ার কিছু নাই।
ব্যাপার হচ্ছে, নিজের বীর্যপাতের চেয়েও সঙ্গিনীর চরম তৃপ্তির দিকে নজর রাখতে হবে। প্রবিষ্ট হলাম আর আমার মাল আউট , আমার কাজ শেষ , তুমি মুড়ি খাও – ঠিক না ! সবার সুস্থ যৌন জীবন হোক এই কামনা করি।

তো উপরের আলোচনায়, যৌনতার কিছু বিভ্রান্তি নিজের মতো করে খণ্ডানোর চেষ্টা করেছি। যৌন আলোচনা সুস্থভাবে হলে সেটা থেকে আমাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, লিঙ্গের সাইজই নারীর যৌনতৃপ্তির অন্যতম বা একমাত্র অনুষঙ্গ । আসলে তা না। লিঙ্গের সাইজ সামান্যই প্রভাব রাখে পুরো সঙ্গমে। ব্যাপার হচ্ছে, একগামীতার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মেয়েরা তাদের হাজব্যান্ডের লিঙ্গের আকার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে বা থাকতে বাধ্য হয়। কারণ অন্য কারো লিঙ্গের সাইজের সঙ্গে তাদের এটা তুলনা করার সুযোগ থাকে খুবই কম। তা ছাড়া, সেক্স ডিউরেশন বা সঙ্গমের স্থায়িত্ব নিয়েও অন্যের সংগে তুলনা করার সুযোগ কম থাকে।এমন ও হয়েছে, কোন মেয়ে সারাজীবনেও অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি পায় নি। সে জানেই না , অর্গাজম কি ! অথচ জীবনের বড় অংশটি মেয়েটির কেটে গেছে গতানুগতিক যৌনসংগমে ও সন্তান উৎপাদনে।

এবার, নিজের অভিজ্ঞতার একটা গল্প বলি। ।একবার ফ্লাইটে করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ঢাকা আসছিলাম। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। পাশের সীটের বাংলাদেশী তরুণ আমার সঙ্গে গল্প করা শুরু করল।জিজ্ঞাসা করে জানলাম , সে বিয়ে করতে বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিন্তু সে ব্যাপারটাতে মোটেও খুশী নয়। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যা জানালো, তাঁর আসলে সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে সেক্সের অভিজ্ঞতা আছে। সে আরও জানালো , সে বাংলাদেশী কোন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করে দৈহিক ভাবে সম্ভবত: কোনদিনই সুখী হতে পারবে না।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘কারণ কি ?’
সে যা ব্যাখ্যা করল, কারণ হচ্ছে, পশ্চিমের মেয়েরা বিছানায় দুর্দান্ত অ্যাকটিভ। সেক্স যে পারষ্পরিক বোঝাপড়ার, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ব্যাপার সেটা তাঁরা বোঝে। সুতরাং সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে যৌনসংগম হয় তুলনামূলক ভাবে তুমুল আনন্দের। প্রতি-চুম্বন, প্রতি-মর্দন, গুঙিয়ে ওঠা , শীৎকার দেওয়া প্রতিটা ব্যাপারেই তারা অনেক বেশী সক্রিয়। আর আমাদের বাংলাদেশী মেয়েদের ব্যাপারে সে বলল, ‘ জাহিদ ভাই , ভ্যাদা মাছ দেখছেন কখনো ? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ দেখেছি, — ওই যেই মাছগুলো ম্যান্দা মেরে মাছধরা জালের নীচে পড়ে থাকে। সে বলল, ‘ বাংলাদেশী মেয়েরা সঙ্গমের সময় আপনার নীচে পড়ে থেকে ভ্যাদা মাছের মতো শুধু কুঁ কুঁ করে।’ একবার সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে সত্যিকারের সেক্স যে করেছে, তাঁর পক্ষে বাংলাদেশী মেয়েদের সঙ্গে সেক্স করে মজা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

আমার গল্পের প্রাথমিক অংশ শেষ !

একইভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে , যদি আমাদের বাংলাদেশী কোন তরুণী কোনভাবে যদি ইউরোপ আফ্রিকার প্লেবয় টাইপের কারো সঙ্গে সেক্স করার সুযোগ পায় , তাহলে কি হতে পারে ? মানে যে ছেলে সব রকম চুম্বন, ফোর প্লে, এক্সাইটমেন্ট করার পদ্ধতি জানে এবং একটা মেয়েকে মাল্টিপল অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি দিতে পারে– তাঁর সঙ্গে একবার সেক্সের পরে, মেয়েটির যৌন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাবে। সেও চাইবে দীর্ঘ সঙ্গমের আনন্দ। সে চাইবে তার স্পর্শকাতর অংশগুলোতে ছেলেটি মুখ দেবে, কোনরকম ইতস্তত: না হয়েই । আমাদের খুব কম সংখ্যক দেশী পুরুষদের কাছ সে রকমটি আশা করা যেতে পারে। যদিও নানাধরনের পর্ন সাইটের কল্যাণে বহুবিধ আসনে সঙ্গম করা শিখে গেছে আমাদের প্রজন্ম। ডগি স্টাইল, গার্ল অন টপ তো খুব মামুলী ব্যাপার হয়ে গেছে। অথচ, আমাদের আগের প্রজন্মে এক মিশনারি স্টাইল( নারী নীচে ও পুরুষ উপরে থেকে উপগত হওয়া) ছাড়া আর কোন স্টাইল জানত না !

আমাদের পুরুষদের শিখতে হবে দীর্ঘক্ষণ কিভাবে সঙ্গম করা যায়। কিভাবে তার পার্টনারকে সময় দিয়ে উত্তেজিত করে পূর্ণ পিচ্ছিলতা আনতে হয়। কিভাবে তার পার্টনারকে স্বল্প সময়ের মাঝে কয়েকবার অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি দেওয়া যায়। আমার মনে হয় না , বাঙ্গালী পুরুষদের এইসব ব্যাপারে তেমন কোন শিক্ষা বা প্র্যাকটিস আছে। মাঝখানে, কিশোর বয়স থেকে অশ্লীল নীল ছবি দেখে দেখে আমাদের ধারণা হয়েছে, সঙ্গমের জন্য অশ্ব-লিঙ্গের প্রয়োজন ও অন্তত: ২০-৩০ মিনিট লিঙ্গ চালনা করতে না পারলে , সেটা কোন সঙ্গমই না !

লিঙ্গের সাইজ নিয়ে কথা বলতে বলতে , মেয়েদের যোনীর স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে কথা উঠল। ছেলেদের মধ্যে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করে সেই সতীচ্ছদের গল্প শুনে শুনে। কবে কার বাসর রাত হয়েছে, নতুন বউয়ের সতীচ্ছদ হয়েছে, সেটা দিয়েই নারীর কুমারীত্ব নির্ধারণ করে থাকে সে। ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে মানেই তার সতীচ্ছদ হতে হবে , হালকা বা ভারী রক্তপাত হতে হবে।নইলে সে ভার্জিন নয়। প্রথম সঙ্গমের রক্তপাতে সে চিৎকার চেঁচামেচি করবে ; পরের দিন সে ব্যথায় কাতর থাকবে। ধীরে ধীরে দ্বিতীয় রাত থেকে সে সঙ্গমের পূর্ণ আনন্দ পেতে থাকবে। এইতো !

আমাদের এই শিক্ষা ও ধারণাগুলো আশেপাশে শুনে শুনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আমরা ধরেই নিয়েছি, এইটাই সর্বৈব সত্যবচন। কিন্তু, প্রাকৃতিক-ভাবে অনেক মেয়েদের সতী-পর্দা নাও থাকতে পারে। আবার যেসব মেয়ে খেলাধুলা করে দৌড়ঝাঁপের সময় অনেকের সতীচ্ছদ আগেই হয়ে থাকতে পারে।

আবার আমাদের বাঙালী পুরুষের বদ্ধমূল ধারণা, বহুগামী মেয়েদের যোনি অনেক প্রশস্ত ও ঢিলে হয়ে থাকে। হ্যাঁ, সেটা যোনির প্রারম্ভে কিছুটা প্রশস্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু ভিতরের নালীটির সেই এই রকমভাবে ঢিলে বা প্রশস্ত থাকার সম্ভাবনা কম। মেয়েদের যোনির লুজ থাকা বা টাইট থাকার ব্যাপারেও কিছু বলতে হয়। অবশ্য তাঁর আগে আমার জানা দরকার যে বা যারা আমার লেখাটি পড়ছেন , তিনি বহুগামী কীনা ! আমার কয়েকজন বহুগামী বন্ধু আছে । তাদের মধ্যে কয়েকজন বাস্তববাদী আছে। তাদের মতে, এই ব্যাপারটা ( যোনির লুজ বা টাইট ) অনেকখানি পুরুষদের মানসিক সমস্যা । বহুগামীদের অনেকেই পরকীয়ার মাধ্যমে তাদের বহুগামিতা বজায় রাখছেন। অনেকে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে বান্ধবী ও যৌনকর্মীর সাহচর্য নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, আমি একগামী হলেও, অন্যের বহুগামিতা নিয়ে আমার কোন বাতিক বা বিকারগ্রস্ততা নেই। বহুগামিতা প্রাকৃতিকভাবেই আছে প্রাণিজগতে এবং আমাদের মনুষ্যসৃষ্ট সমাজে সম্পদ ও সন্তানের উত্তরাধিকারের বিশৃঙ্খলা রোধের জন্যই বহুগামিতাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। সে আরেক কাহিনী। সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটতে হবে।

যা বলছিলাম। কথা বলার স্বার্থে ধরে নিচ্ছি, আমাদের সেই বহুগামী বন্ধুটি ক্লাস – A ও ক্লাস- B নারীদের সঙ্গে দৈহিকতা করছে। C ও D ক্লাস আমাদের আলোচ্য নয়। সেই ক্ষেত্রে A ও B ক্লাস নারীদের পরকীয়া বা বহুগামিতা বজায় রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়স ও দৈহিক গঠন মেইন্টেইন করতে হয়। নিজের সময় নষ্ট করে অথবা টাকা পয়সা খরচ করে কেউ C ও D ক্লাস নারীর সঙ্গে সঙ্গম করতে চাইবে না। সেটা রিকশাওয়ালা বা সমাজের খুব নিম্নশ্রেণীর জন্য। কোনভাবে যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে বীর্যপাত করাতে পারলেই তাদের কার্যোদ্ধার হয়ে যায়। অন্য কোন মানসিক আনন্দের ব্যাপারটা মুখ্য নয় এধরনের সঙ্গমে।

আবার আসি, যোনির ঢিলে ও টাইট প্রসঙ্গে। নির্দিষ্ট বয়সের নারীর যোনি অতি ব্যবহারের ফলে ঢিলে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, মোটামুটি সচেতন নারী দেহের যত্ন নিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সের বা বৃদ্ধ পুরুষের পুরুষাঙ্গ যেমন বয়সের কারণে উত্থান-রহিত বা কম দৃঢ় হতে পারে। ঠিক একইভাবে , পঞ্চাশের পর একজন নারীর যোনি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত ও ঢিলে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটি মেয়ে শুধুমাত্র বহুগামী হলেই তার যোনি ঢিলে হয়ে যায় না। যে সব নারী নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করেছেন , প্রসবের পরে তাদের যোনিও কিছুদিন প্রশস্ত থাকতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক-ভাবেই খুব দ্রুতই মাংসপেশিগুলো নিজের স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পেতে চেষ্টা করে।

আমাদের যৌন-জ্ঞান এতো বেশী অস্বচ্ছ , আর কৈশোর ও যুবাবস্থায় নানাধরনের চটি ও নীলছবি দেখে এতো বেশী আমাদের ফ্যান্টাসির জগতে বসবাস সে আর কহতব্য নহে। যৌনতা দুইজন নারী পুরুষের পারষ্পরিক তীব্র আকর্ষণের ফলাফল। সঙ্গম থেকে নারীপুরুষ তাদের প্রাপ্য আনন্দ খুঁজে নিক, বুঝে পাক—সেই কামনাই করি।

প্রথম প্রকাশ: ২রা ডিসেম্বর ২০১৬

করপোরেট অবজারভেশন ( চলতি আলোচনায় ঢুকবেন কীনা )

কয়েকজন অগ্রজ, সহকর্মী বা অধীনস্থদের চলতি কোন আলোচনায় অংশ নেবেন কি নেবেন না, সেটা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বেছে নেওয়া ভাল। আমার করপোরেট জীবনে এমন অনেকবার হয়েছে, কয়েকজন সমবয়সী সহকর্মী একটা কিছু নিয়ে কথা বলছি, হাসাহাসি করছি, হুট করে আমার কোন ঊর্ধ্বতন এসে যে কোন একটা শব্দ ধরে আমাদের আলোচনায় ঢুকে গেলেন। অথবা জিজ্ঞেস করলেন , কি ব্যাপার কি নিয়ে আলোচনা করছেন ? মুশকিল হচ্ছে, যুবাবস্থায় ও করপোরেট চাকুরেরা চা-পানের বিরতিতে হয় চিরন্তন নারীদেহ , যৌনতা অথবা কোম্পানির কোন অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলে। এখন ঊর্ধ্বতন কেউ জিজ্ঞেস করে ফেললে উত্তর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে ! সেই সময়ে, আমাদের মধ্যে হাজির জবাব দেওয়ার ক্ষমতা যার ভালো সে ধুনফুন কিছু একটা বলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেওয়াতো। বস-কে তো আর বলা যায় না, আমরা মাধুরী দীক্ষিতের দেহবল্লরী বা ‘বে ওয়াচ ’ নিয়ে আলোচনা করছিলাম।

আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় কয়েকজন বসের মধ্যে মাত্র একজনকে পেয়েছি, যার চলতি আলোচনায় অনাবশ্যক অনুপ্রবেশের পরিমিতি বোধ ছিল। আর বেশিরভাগ ঊর্ধ্বতনদের এই ব্যাপারে পরিমিতিবোধের অভাব আছে। পরিস্থিতি না বুঝে হুট করে আরেকটি আলোচনায় ঢুকে পড়তেই পারেন যে কোন ঊর্ধ্বতন। কিন্তু সেটা যে প্রায়শ: বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, সেটা তাঁরা ভুলে যান।

হ্যাঁ, উচ্চকিত কণ্ঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঢুকে পড়ুন, আপনার মতামত দিন। তামিম ইকবালের খেলার সমালোচনা করুন। কিন্তু মাঝারি বা নিচু কণ্ঠের আলোচনায় অনুপ্রবেশ করার আগে পরিমিতিবোধ দেখানো উত্তম।

প্রথম প্রকাশ: ১৮ই জানুয়ারি,২০১৭

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেসবুকে) আমার কার্যক্রমের পর্যালোচনা

ফেসবুককে আমার প্রথম থেকেই মনে হতো একটা ঘরোয়া আড্ডার মতো। একটা লিটল ম্যাগাজিন পড়ার অনুভূতি থাকত। লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে যেমন সারাক্ষণ তরতাজা মচমচে স্বাদু অনুভূতির ছাপানো হরফ থাকে , সেইরকম । এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হয়েছে। অসাধারণ কিছু মেধাবী লেখকের দৈনন্দিন দিনলিপি পড়ার সুযোগ ঘটেছে। আমি আরো বেশি রাজনীতি ও সমাজ সচেতন হয়েছি। নবীন প্রজন্মের কিছু চিন্তক , দার্শনিক , কবি ও সাহিত্যিকদের লেখা প্রতিদিন পড়ার সৌভাগ্য হচ্ছে। এঁদের একজন সতীর্থ আহসান। গতকাল , কিছু কথোপকথনের পরে, তিনি আমার লেখালেখি সম্বন্ধে কিছু বললেন। আমার কাছে ,সেটা অসংখ্য লাইক , লাভ, ওয়াও ইমোজি চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অনুমতি নিয়েই নিজের ওয়ালে পোস্ট করলাম।

“ আপনার লেখাজোকা ফেসবুকে যা প্রকাশিত হতো, মাঝেমধ্যে পড়া হত। হয়তো রিএকশন দিতাম, কখনো কখনো দিতাম না। আপনি মূলত প্রবন্ধ ঘরানার লেখা লিখে থাকেন। মোটামুটি লম্বা লম্বা বাক্যে। পড়তে শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। যেন শ্বাসরুদ্ধকর কোনো ফিকশন পড়ছি, এমন একটা অনুভূতি জাগে। সেই টানা টানা শ্বাসরুদ্ধকর বাক্যগুলোর মাধ্যমে যে চিন্তার প্রকাশ ঘটান সেটা সব সময়ই কোনো না কোনো ভাবে চিন্তা উদ্রেককারী হয়ে থাকে।

পরিচ্ছন্ন ভাষা আর গোছানো চিন্তা আপনার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য। বোঝা যায় আপনি দুনিয়াকে অবহেলিত শোষিত পীড়িত মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। গণমানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়– এমন কোনো আচরণ আপনাকে ক্রুদ্ধ আর ব্যথিত করে। সেই মনোভাবকেই আপনি শৈল্পিক ভাষায় উপমায় প্রকাশ করেন। আমি শুধু অনুরোধ করব, এই ক্রোধ/দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি আরেকটা স্টেপ যোগ করুন। যেটা হচ্ছে, সেই বিপর্যয়টা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সেটার পরামর্শ দিতে পারেন। দেশি বিদেশি নানা উদাহরণ সহযোগে। এতে আমার মনে হয়, আপনার লেখাটার গুরুত্ব আরো বাড়বে। আপনি নিজে কী, নিজে ঠিক বুঝতে পারছেন না, এর কারণ আত্মবিশ্বাসহীনতা। এইটা একটা মারাত্মক ব্যাধি জাহিদ ভাই। এই রোগে যারে ধরে সে সাধারণত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

এবার আরেকটা কথা শুনেন। আপনি থাকেন ২ নাম্বার রোডে। আর আমি থাকতাম ৩ নাম্বার রোডে। আপনার ঠিক বিপরীত রোডেই। আপনি বেশ কয়েকবার আড্ডার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি প্রায়ই আপনার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে আসতাম। কিন্তু আপনাকে জানিয়ে যাওয়া হতো না। কারণ, সেই তীব্র হীনমন্যতা। আমি ওখানে থাকতাম, একাই লাগত। আপনার সাথে প্রায়ই আড্ডা দিতে ইচ্ছা হতো। সাহিত্য আড্ডা আর কি। কিন্তু তখনই আমার পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যেত। এই জন্য দুঃখিত। সামনে কখনো গেলে, এই নেকাব আর রাখব না। এই যে আমার আত্মবিশ্বাসহীনতা, এইটা অনেকগুলো সম্ভাবনাকে খুন করে থাকবে। হয়ত মনের সব বাঁধা পেরিয়ে আপনার সাথে দেখা করতে পারলে আমাদের চমৎকার সব সাহিত্য-আড্ডার অভিজ্ঞতা ঘটতে পারত। আপনার পরামর্শ বা কথাবার্তা আমার লেখাকে সমৃদ্ধ করতে পারত। আমার কোনো পরামর্শ হয়ত আপনারও কাজে লাগত। কিন্তু আমার এই আত্মবিশ্বাসহীনতা সে সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিলো।
আপনার লেখার হাত যথেষ্ট ভাল। চিন্তা পরিষ্কার। বইয়ে স্থান দেবার মত লেখা। শুধু একটু মনোযোগ আর আত্মবিশ্বাস বিনিয়োগের অভাব। মনে যা আসে, লিখতে থাকুন, তা যতই খারাপই হোক, এতে লেখার ফ্লো টা ঠিক থাকে। এই ফ্লো খুব ইম্পরট্যান্ট জিনিস। আর সময় পেলেই নানা বই পড়বেন। লেখার ফ্লো তৈরিতে বই পাঠের ভূমিকা অনেক। চিন্তাও সমৃদ্ধ হয়।

লেখা থেকে ধর্ম আর রাজনৈতিক বিষয়টা যেন সরাসরি না আসে তা খেয়াল রাখবেন। জানেনই তো এইদেশে মুক্তভাবে কথা বলার পরিবেশ নাই। একটা পদ্ধতি আছে, সেটার মাধ্যমে আপনি ধর্ম ও রাজনীতিকেও সমালোচনা করতে পারবেন। সেটা আপোষ পদ্ধতি বা ছলনা পদ্ধতি। এমনভাবে লিখতে হবে যাতে মনে হয় আপনি তাদের বিপক্ষের কেউ না। তাদেরই একজন। বন্ধ বান্ধব যেমন নিজেদের বন্ধু বান্ধবদের সমালোচনা করে। এই রকম আর কি। তবে লেখালেখির ক্ষেত্রে এই দুইটা বিষয় এড়িয়ে চলাই অধিকতর ভালো। লেখার মত দুনিয়ায় কত বিষয় আছে ভাই। তবুও এই দুইটাই যদি আপনাকে বেশি পীড়িত করে, তাহলে অবশ্যই ডিরেক্ট ম্যাথডে লিখবেন না। নানা ছলনার আশ্রয় নিবেন। এতে মূল কাজটাও হয়ে গেল, আপনিও টার্গেট হলেন না।

যা করুন, আর নিজেকে অবহেলা করবেন না। আপনাকে ক্লাসিক লেখক হতে হবে এই দিব্বি কে দিছে। আপনি একজন বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হিশেবে আপনার মতামত প্রকাশ করবেন দুই মলাটের মধ্যে। এবং, সেটা খুব ভাল ভাবে সম্পন্ন করার যথেষ্ট যোগ্যতা আপনার রয়েছে। জাস্ট শুরু করে দিন।”

প্রথম প্রকাশঃ ১৮ই জানুয়ারি, ২০২০

মারা খাওয়ার দর্শন

মারা খাওয়ার দর্শন:

এই যুগে সবাই কমবেশি চালাক ও স্বার্থপর। নিজেকে নিজে যতোই বলি না কেন , আমি সহজ সরল, কারো ক্ষতিবৃদ্ধি করি না ; কিন্তু একেবারে ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির তো আর কেউ নই। কেউ কেউ আছে যারা অতিচালাক ও অতিস্বার্থপর। তাদের নিয়েই কিছু কথা। আমরা যারা কম চালাক ও কম স্বার্থপর, তারা সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে নানা রকম মারা খাই। মূলত: যারা বেশি চালাক ও অতিস্বার্থপর তাদের কাছ থেকেই খাই। খেয়েই ব্যথায় কাতরাই, সবাইকে দুঃখের কথা বলি, মনের দুঃখে বনে যাই অবস্থা।
কিন্তু যারা এক্সট্রিম শ্রেণির, তাদেরকে দেখে মনে হবে, কীভাবে কী দারুণভাবে তাদের জীবন ও সংসার চলে যাচ্ছে। একেবারে মসৃণভাবে। অথচ , আমরা প্রতিপদে হোঁচট খাচ্ছি, কেউ ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছে, কেউ সবার আগে কেড়ে নিচ্ছে, সবার আগে বিলাসব্যাসনে তৃপ্ত হচ্ছে, পৃথিবীর সামাজিক প্যারামিটারে যোগ্যতার অনেক বেশি অলৌকিকভাবে ছিনিয়ে নিচ্ছে, এবং এদের ধাক্কার চোটে আর অতিস্বার্থপরতায় আমরা কতিপয় আমজনতা মুষড়ে পড়ছি।

প্রশ্ন হচ্ছে তারাও কি মারা খায় না।
খায়। অবশ্যই খায়।
তবে সেটা কোনভাবেই তারা প্রকাশ্যে আনে না। কিল খেয়ে কিল হজম করে। শুধু বিজয়ী চেহারাটা দেখায়।

জীবনের মারা আপনাকে খেতেই হবে, কম আর বেশি।
আপনি হা হুতাশ করলে লোকে জানবে। চেপে গেলে কেউ জানবে না।

আমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে ধার্মিক ও দার্শনিক আকাঙ্ক্ষা থেকে অতিস্বার্থপরদের মারা খাওয়া খুঁজে পাওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা দেখেছি কম স্বার্থপরদের ভিতরে। এটা মূলত সান্ত্বনা পাওয়ার চরম প্রয়োজনেই। আপনি মারা খেলেন, আরেকজন আজীবন মারা দিয়ে গেল, কিন্তু কোনভাবেই খেল না, সেটা তো মেনে নেওয়া কঠিন। এতো মনকষ্টে তো হৃদরোগে ভুগে অকালমৃত্যু হবে। তাই, চালাক-স্বার্থপরদের মারা খাওয়া খুঁজে পাওয়ার আনন্দ অসীম ও বেদনার ক্ষতে প্রলেপের মতো।

সুতরাং আপনি চোখকান খোলা রাখেন বা নাই রাখেন, আপনার চোখে পড়ুক বা নাই পড়ুক- অতিচালাক ও অতিস্বার্থপররা নানাভাবে মারা খাচ্ছে। কিন্তু তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য সেটার কিয়দংশও প্রকাশ্যে আসছে না।

প্রকাশকালঃ ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২২

প্রসঙ্গ সড়ক দুর্ঘটনা

আশির দশকের দৈনিক পত্রিকায় সরকারী-বেসরকারি নিউজের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহের লিড নিউজ কী হতো, কারো মনে আছে?
আমার মনে আছে। হয় আরিচা মহাসড়কের বা অন্যকোন মহাসড়কের দুর্ঘটনার ছবি, সারিবদ্ধ লাশ , নীচে ক্যাপশন “এভাবে আর কতোদিন?” অথবা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় অর্ধশত নিহত, শতাধিক নিখোঁজ।

তো আমি তখন স্কুলের পোলাপান, থান্ডার ক্যাটস বা টম অ্যান্ড জেরি নিয়ে ব্যস্ত। কোথায় লঞ্চডুবি হইলো ,কতোজন মারা গেল আমাকে অতোখানি স্পর্শ করতো না। বড়োজোর ফেলে রাখা সারি সারি লাশের ছবি দেখে একটু মন খারাপ হতো।

৮৭ তে আমার বড়মামা আর নানী লঞ্চডুবিতে পড়লেন। দিনের বেলা হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা কম। মোবাইলের যুগও নয়। বড়মামা ও নানী সঙ্গের মালপত্তর হারিয়ে কীভাবে যেন জানে বেঁচে গেলেন। আশে পাশের অনেক মাছ ধরা নৌকা অনেক যাত্রীর জীবন বাঁচায় সেবার। বড়মামা কারো সাহায্য করা একটা পুরনো ছেঁড়া লুঙ্গি আর নানী এক-কাপড়ে যখন ঢাকায় এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখন আমি বুঝলাম লঞ্চডুবির ভয়াবহতা। মামা ও নানীর মুখে শোনা, লঞ্চ ডুবে যাওয়ার আগের প্রত্যেকটা মুহূর্ত কী যে ভয়ংকর আতংকের ছিল, এখন মনে পড়ে যাচ্ছে।
ভারতের বদান্যতায় নদীতে নাব্যতার অভাবে লঞ্চ নির্ভরতা অনেক কমে গেছে মনে হয়। যা দেখছি, আগের মতো মাসে ৭/৮টা লঞ্চডুবির কথা শুনতে হয় না। লঞ্চ দুর্ঘটনা এখন আরে লিড নিউজে নাই।

আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটলো আমার নিজের জীবনে। ২০০৫ এ বাস অ্যাকসিডেন্টে বিছানায়, ফিমার ছুটে গেছে টিবিউলার থেকে, মানে হিপ বা কোমরের সাথে ডান পায়ের জয়েনিং ফর্দাফাঁই । ট্রাকশন নিয়ে চিৎ হয়ে তিনমাসের অসহনীয় দিনগুলো , মাঝে আবার কোরবানির ঈদ গেল, হাসপাতালের বেডে শুয়ে অকথ্য যন্ত্রণা , অসহায় আক্রোশের প্রতিটা মুহূর্ত। ওই সময় আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। বিছানায় শুয়ে শুয়েই প্রথম কন্যার জন্মসংবাদ শুনতে হলো। কী জানি কী মনে করে ,ঈদে গ্রামমুখী মানুষের সড়ক দুর্ঘটনার নিউজগুলো মন দিয়ে শুনতাম। শুয়ে শুয়ে একটা ডাটাও বের করলাম। ২০০৬ এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শুধুমাত্র টিভি নিউজে মোটামুটি শ দেড়েক বড় সড়ক দুর্ঘটনার নিউজ শুনলাম। মোটামুটি ১৫০ জনের অকালপ্রয়াণ আর হাজার খানেকের পঙ্গুত্ব।

আমি নিজে পা ভেঙ্গে পড়েছিলাম বলেই হয়তো এইগুলো মন দিয়ে দেখতাম। আর কতিপয় অসাবধানী শুয়োরের বাচ্চা ড্রাইভারের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করা লোকগুলোর কথা চিন্তা করতাম। আমার ডাক্তার ছিলেন ডাঃ রুহুল হক ( বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রী)। কিন্তু , কয় জনের সাধ্য আছে, তাঁকে দিয়ে চিকিৎসা করানোর? পঙ্গুত্বতো এক অর্থে মৃত্যুর চেয়ে অকল্পনীয় যন্ত্রণার !মনুষ্যজীবনে অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে অসম্মানের আর কী থাকতে পারে ?

আমার আশে পাশের অনেককে দেখেছি হাজার তিনেক টাকা দিয়ে দু নাম্বার ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করতে। কেন জানিনা আমার জিদ চেপে গিয়েছিল আমি দু নম্বরি কোনকিছু করবো না। সুস্থ হয়ে আমি নিজে ড্রাইভিং শিখলাম এবং মাত্র ১৮০০ টাকা কুল্লে খরচ করে পর্যায়ক্রমে ৪/৫ দিন বিআরটিসি তে লিখিত, মৌখিক, ব্যাবহারিক দিয়ে ওরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিলাম। এইটুকু বুঝলাম যে একজন অপ্রশিক্ষিত ড্রাইভার কতজনের সারাজীবনের দুর্দশার কারণ হতে পারে।

দুইটা ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা, আমাকে সচেতন করেছে মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশার কথা ভেবে দেখতে। আজ যারা রাজনীতিবিদ, দেশের মাথা , তাদের জন্য দোয়া করি তাঁদের নিকটাত্মীয় বা প্রিয়জনের এই অভিজ্ঞতা হোক। একজন প্রিয় মানুষের প্রস্থানে যদি ইলিয়াস কাঞ্চন, তারানা হালিমের মতো তারকা আজ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হতে পারেন । আমি প্রার্থনা করি, মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদদের প্রিয়জন অকালে বিল্ডিং চাপা পড়ুক, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাক, পুড়ে মরুক কোন বদ্ধ কারখানায়।

কয়েকজন মানুষের বিদায়ে যদি সারা বাংলাদেশে কিছু পজিটিভ পরিবর্তন হয়, আমি সেই প্রার্থনা করতেই পারি ! আপনারাও প্রার্থনা করেন , হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে করেন !

প্রথম প্রকাশঃ ২৬শে এপ্রিল ২০১৩

ওপেক্স স্মৃতি

স্মৃতি ২০০৫ :
২০০৫-এর ডিসেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় কোমর ভেঙ্গে হাসপাতালে। ডান হিপ জয়েন্টের ফিমার-অ্যাসিটাবুলাম গেছে ছুটে ! ভীষণ ব্যস্ত এই আমি আকস্মিক বিছানায়। দুর্বিষহ শারীরিক কষ্টের কথা বাদই দিলাম। বুড়ো হাড় ভাঙ্গলে জোড়া লাগানো যে কী কষ্টের, সে আর কহতব্য নহে !
কিন্তু, শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও মানসিক যন্ত্রণাটা ছিল অসহনীয়।

প্রথম যে প্রশ্নটা মনে পীড়া দেওয়া শুরু করলো , ‘হোয়াই মি ? আমিই কেন? ’
প্রাথমিক এক সপ্তাহ ধর্মপ্রাণ আম্মাকে বলে চললাম , ‘এটা কেমন বিচার, আমার আশেপাশের কুৎসিত ও অর্থ-লোলুপ পশুসুলভ লোকগুলো দিব্যি হেঁটে চলে ফিরে খাচ্ছে আর আমি কোমর ভেঙ্গে হাসপাতালে? এটা কেমন বিচার?’
আম্মা নানারকম সান্ত্বনার কথা বলতেন। বলতেন, ‘আল্লাহ্ ভালো মানুষের পরীক্ষা নেয় দুনিয়াতে। পাপ কাটা যাচ্ছে।’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নিজেকে নিজে কোন সান্ত্বনা দিতে পারতাম না।

কেমন করে ভুলি, আমি ও আমার স্ত্রী তখন অপেক্ষা করছি আমাদের প্রথম আরধ্য সন্তানের জন্য! অনাগত সেই মুখ দেখবো, স্ত্রীর পাশে হাসপাতালে থাকবো ; সেই কবে থেকে সবকিছু ঠিক করে রেখেছিলাম। সেখানে আমি আমার অনাগত সন্তানের সেবা করবো কি, আমার সহধর্মিণীই তাঁর ওই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় হাসপাতালে আমার সেবা করে যাচ্ছেন। একটা কথা মাঝে মাঝে শুনতাম , সংসার এমন যে, প্রয়োজনে তোমাকে তোমার অর্ধাঙ্গী বা অর্ধাঙ্গিনীর মল-মূত্রও পরিষ্কার করতে হয়। এটা স্যাক্রিফাইস আর অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার। সেটা যে, প্র্যাকটিকালি নিজের জীবনে দেখতে হবে, কে জানতো ! আমিতো আমার স্ত্রীর জন্য সামান্য হিন্দীকেশ ছিঁড়েও আঁটি বাঁধি নাই কোনদিন। আজ তাঁকেই কিনা পরিষ্কার করতে হচ্ছে আমার মল-মূত্র ! দুর্বোধ্য , নিষ্ফল এক আক্রোশে ফুঁসতাম শুধু !

আমার চিকিৎসক বন্ধুরা, শুভানুধ্যায়ীরা একে একে সাহস দিতে লাগলেন। ডাক্তাররা বোঝালেন আমার ভগ্নদশা মেরামত ও নিরাময়যোগ্য এবং আমি আবার আগের মতো হাঁটতে চলতে পারবো। আমার অফিসও সেই সময় অসম্ভব সহানুভূতি দেখালো। বিছানার পাশে বসে সাহস দেয়া সেই সব মুহূর্তগুলোর কথা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না।

এক চিত হয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। পাশ ফিরতেও পারতাম না। ডান হাঁটুর নীচে হাড় ছিদ্র করে একটা লোহার রডে লাগানো হয়েছিল, সেই রডের সাথে ১৪ পাউন্ড লোহার ওজন ঝুলত। ওই বস্তুকে বলে ট্রাকশন ! দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ গোসল নাই, মল-মূত্র বিছানায়। কী যে অসহনীয় সেইদিনগুলো ; আমি এখনও ভাবলে শিউরে উঠি।

নানা ধরণের বই পড়তাম শুয়ে শুয়ে। সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাসমগ্র পড়ে ফেললাম। এবং তাঁর একনিষ্ঠ ভক্তও হয়ে গেলাম। প্রায় ৭/৮ সপ্তাহ পরে ক্র্যাচে করে আবার নতুন করে হাঁটতে শেখা। এর মাঝে আমার মেয়ে জেবার জন্ম ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ । বুকের ওপর আম্মা ফুটফুটে একটা মনুষ্যশিশুকে শুইয়ে দিলেন। বসতেও পারিনা। ওভাবেই শুকনো চোখে আমার নীরব অশ্রুপাত।

আমেরিকান এক টেনিস খেলোয়াড় আর্থার অ্যাশ-এর একটা কথায় আমার প্রশ্নের আংশিক উত্তর পেয়েছিলাম। অন্তত আমাকে ওই বিশেষ কথাগুলো ‘হোয়াই মি? কেন আমিই ?’ এই প্রশ্নের ক্ষতে, তখনকার মতো কিছুটা হলেও একটা সান্ত্বনার প্রলেপ পড়েছিল।
আর্থার অ্যাশ ছিলেন আমেরিকার ইতিহাসের প্রথম কালো খেলোয়াড় যিনি একাধারে ইউএস ওপেন, অস্ট্রেলিয়া ওপেন এবং উইম্বলডন জিতেছিলেন। আমেরিকার টেনিস ইতিহাসের কিংবদন্তি। ১৯৮৩ সালে তাঁর হৃদপিণ্ডে সার্জারি করার সময় রক্ত-বাহিত হয়ে এইডস (AIDS) আক্রান্ত হন তিনি। সারা আমেরিকা থেকে তাঁর ভক্তরা তাঁকে শুভেচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটিও ছুঁড়ে দিতেন, ‘আপনাকেই কেন এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হলো?’

তিনি বোধকরি নিজেকেও এই প্রশ্নই করেছিলেন, ‘হোয়াই মি? কেন আমিই ?’
এক পর্যায়ে এসে আর্থার অ্যাশ নিজেকে প্রবোধ দিলেন। উনি নিজেকে বোঝালেন ৩২ কোটি আমেরিকানদের মধ্যে শিক্ষার সুযোগ পাওয়া কয়েক কোটি কালোদের মধ্যে সৌভাগ্যবান তিনি একজন। ৫ লক্ষ প্রফেশনাল খেলোয়াড়দের তিনি একজন তিনি একজন। গ্র্যান্ড স্লামে পৌঁছানো শেষ পাঁচ হাজারের তিনি একজন। যে ৫০ জন উইম্বলডন পর্যন্ত গেছেন, তিনি তাদের একজন, সেমিফাইনালে শেষের চারজনের তিনি একজন এবং ফাইনাল খেলার দুইজনের একজন।
কাপ জেতার পরে বা জীবনের অন্যান্য অগুনিত সৌভাগ্যের ক্ষেত্রেই এই প্রশ্ন একবারও ওঠেনি , ‘হোয়াই মি ? আমিই কেন?’
আর আজ যখন একটা অসুস্থতা তখন কেন এই প্রশ্ন?

আর্থার অ্যাশের এই অভিজ্ঞতা পড়ার পর আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পেরেছিলাম, কিছুটা হলেও !

প্রথম প্রকাশঃ ২০১৩