উপলব্ধি: ৪৮

‘There is no set rule.’
পরিস্থিতি, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, যুগ ও প্রযুক্তির প্রভাবে যে কোন একটা নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় প্রযোজ্য নয় অর্থাৎ একইভাবে কাজ করে না। এই সহজ ব্যাপারটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কেউ বুঝে ফেলে, আবার ঠিক বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কেউ ‘একই নিয়ম সব জায়গায় চলবে’ – এই ব্যাপারে ভয়ঙ্কর মৌলবাদী হয়ে পড়ে।

নিয়মের ব্যত্যয়, সংস্করণ, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন মেনে নেওয়ার ব্যাপারে উদার পন্থা কাম্য। একটি পরিবার যে নিয়মে চলে, পাশের বাসার পরিবার কিছুটা পরিবর্তিত রূপে চলে। এক অফিসে যে নিয়মে চলে, হুবহু একই ধরণের পাশের অফিসটিতে সেই নিয়ম চলে না। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও বহুবিধ তন্ত্র একেক সমাজে, রাষ্ট্রে একেক রূপ ধারণ করে।
অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্মাচার, জাগতিক সকল আচার ও নিয়ম স্থান-কাল-ভেদে পরিবর্তিত হয়।

উপলব্ধি: ৪৭

সামান্যতম সুযোগ থাকলেও , যে কোন অস্পষ্টতায়, অজ্ঞতায় প্রশ্ন করুন, জিজ্ঞেস করুন। যাকে জিজ্ঞেস করছেন সে আপনার সহকর্মী হতে পারে, আপনার অধস্তন হতে পারে। আপনার অজ্ঞতায় সে হয়তো আপনাকে সাময়িক নির্বোধ ভাবতে পারে। কিন্তু একবার বোকা হয়ে আপনি সারাজীবনের জন্য কিছু একটা শিখে গেলেন। আর যদি না জিজ্ঞেস করেন তবে সারাজীবনের জন্য বোকাই রয়ে গেলেন। সামান্য সময়ের জন্যে বোকা হওয়া সারাজীবনের জন্য বোকা হয়ে থাকার চেয়ে ভাল।

উপলব্ধি: ৪৬

The Small Changes make big difference!

আমার এক ক্রেতার কাছ থেকে শেখা। ও আমাকে প্রায়ই মনে করিয়ে দিত। ছোট একটা বাক্য, সামান্য একটা হাসি যেমন কারো মনে আপনার ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনতে পারে ; তেমনি সামান্য একটু অবহেলা, কটু কথা ঠিক উল্টোটা করতে পারে।

যোগাযোগের মাধ্যম, বন্ধুত্ব, চুক্তি, সহযাত্রা কিংবা বিচ্ছেদ ও প্রস্থান যাই হোক না কেন, একটু সৌন্দর্যের ছোঁয়া থাকা ভাল।

উপলব্ধি: ৪৪

পরিমিতিবোধ বুদ্ধিবৃত্তিক লেখালেখি ও আলোচনায় ঐশ্বর্যময় একটা গুণ। লেখালেখিতে এবং কথা বলার সময়েও অল্প কথায় প্রকাশ করার অব্যাহত দুশ্চেষ্টার অনুপ্রেরণা হচ্ছে প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী। অনাবশ্যক ব্যাখ্যা না দেওয়ার প্রবণতাও তাঁর কাছ থেকেই। পাঠককে বুদ্ধিমান ভাবা উচিৎ। যে পাঠক আপনার ইশারা বুঝবে সেই আপনার আসল পাঠক; যে বুঝবে না, তাকে হাজার পাতার ব্যাখ্যা দিলেও বুঝবে না।

উপলব্ধি: ৪৩

জীবনে থামতে জানতে হয়। মানবজীবন যেন এক ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়। কখন কোথায় থামতে হবে সেটা বোঝা জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের পথচলা কখন শুরু হয়ে যায় সেটা আমাদের হাতে থাকে না অনেকাংশে। কিন্তু থামতে পারাটা আমাদের হাতেই থাকে। আমার খুব প্রিয় একটা সিনেমা রাজকুমার হিরানির ‘থ্রি ইডিয়টস’। তো হিরানি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,“ প্রত্যেকের বোঝা উচিত, ‘প্রয়োজন’ ও ‘লোভের’ মধ্যে পার্থক্য কী। আপনার জানা উচিত, ঠিক কোন জায়গাতে আপনাকে থামতে হবে এবং এটাও জানা উচিত, ‘আর নয়, অনেক হয়েছে’ কথাটা কখন বলতে হবে। অনিশ্চয়তা আপনাকে শেষ করে দিচ্ছে? পৃথিবীর সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির দিকে তাকান, তিনিও বলবেন, ভয় লাগে, কখন সব শেষ হয়ে যায়! আপনি যদি এই অনিশ্চয়তার ভয় কাটাতে পারেন, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।”
এই থামতে পারার ব্যাপারটা যখন আমি খুব চাপে থাকি, তখন নতুন করে বোঝার চেষ্টা করি ও থামি।