কোভিড বনাম আরব্য রজনীর জেলে ও সুলাইমান বাদশাহের বোতলবন্দি জিনের গল্প

আরব্য রজনীর জেলে ও সুলাইমান বাদশাহের বোতলবন্দি জিনের গল্প সেই কবে শোনা।

ঘটনার বিশদ কিছুটা মনে ছিল। জেলের বিস্ময় ছিল, যে জিন দেড় হাজার বছর অভিশপ্ত নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে বন্দী ছিল তাকে উদ্ধার করার পর উদ্ধারকারীকেই সে কেন হত্যা করতে চাইল। অকৃতজ্ঞতারও তো একটা সীমা থাকে ! সত্যি বলতে কী, জিনের ক্ষোভ নিয়ে ছোটবেলায় আমার নিজেরও বিস্ময় ছিল।

কাহিনীতে জিন বলে, নবী সুলাইমানের বিরুদ্ধাচরণ করায় তাকে বোতলে বন্দী করে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। উদ্ধাররহিত সেই দীর্ঘ একাকীত্বে জিন প্রতিজ্ঞা করে, যে তাকে মুক্ত করবে তাকে সে অগাধ সম্পদের মালিক করে দেবে। দিন যায় , মাস যায়, বছর যায় ; এভাবে একশ বছর চলে যায়, কেউ উদ্ধার করে না। সে আবার প্রতিজ্ঞা করে এবার যে তাকে উদ্ধার করবে, তাকে পৃথিবীর সমস্ত গুপ্তধনের সন্ধান দেবে। তবুও কেউ তাকে উদ্ধার করতে আসে না।

রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে অসহায় জিন বেচারা প্রতিজ্ঞা করে বসে যে, এইবার যে তাকে উদ্ধার করবে তাকে সে হত্যা করবে। অবশ্য , কীভাবে সেই উদ্ধারকারী মৃত্যুবরণ করতে চায় সেটা বিবেচনায় নেবে !

এর পরের কাহিনীও আমরা জানি, জেলে বুদ্ধি করে নবী সুলাইমানের কসম খেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিশাল দেহের জিন ঐ ছোট্ট বোতলে কীভাবে আঁটে ! বোকা জিন আবার সেই বোতলে ঢুকে দেখাতে গিয়ে চিরতরে আটকা পড়ে।
কেন জিন তাঁর চরম উপকারীকে হত্যা করার মতো এ রকম নির্দয় সিদ্ধান্ত নিতে পারল?

কারণ সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক ভাল প্রতিজ্ঞা করে। সমস্যা জটিলতর হলে, সে প্রতিজ্ঞায় আরো নানা প্রণোদনা যুক্ত হয়। কিন্তু যখন দেখে কোন উপায়েই উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই, তখন হতাশায় আর ক্ষোভে চরম অবিমৃষ্য ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

কোভিড ভাইরাসের প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল সবাই আগামীতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে। আরো কিছুদিন যাওয়ার পরে মনে হচ্ছিল, সেই প্রতিজ্ঞায় আরো অনেককিছু যুক্ত হচ্ছে। নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। প্রকৃতির বিশ্রামে নিজেই আরোগ্যলাভের আশাবাদে আমরাও পাশে দাঁড়াবো ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু, এখন যতো দিন যাচ্ছে, সবাই সেই বোকা জিনের মতো ধৈর্যহারা, অবিবেচক, অসহনশীল আর নিষ্ঠুর হয়ে পড়ছি।

প্রকাশকালঃ ১লা জুলাই,২০২০

‘ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরও ছিল’ কিছু কথা

‘ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরও ছিল’ কিছু কথা

‘ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরও ছিল।’

এই শিরোনামের একটা লেখা মেসেঞ্জারে ঘুরছে কয়েকদিন ধরে। অনেকে পাঠিয়েছেন। কেন করোনার এই সংকটে মাস ছয়েক পার করার সামর্থ্য নেই মধ্যবিত্তের, তা নিয়ে অভিযোগের আঙুল মধ্যবিত্তদের দিকেই। লেখক বলেছেন, “ একটা অপ্রিয় কথা বলি, কিছু মনে করবেন না। আমাদের এই শহরে লাইফস্টাইলে প্রব্লেম ছিলো। শো অফ বেশি ছিলো। নইলে অন্তত ছয় মাস বসে খাওয়ার মতো টাকা সব পরিবারেই জমে থাকার কথা। যতটুকু ইনকাম, কালের স্রোতে গা ভাসাতে যেয়ে খরচ তারচেয়ে বেশি হয়েছে। যতটুকু স্ট্যাটাস, যতটুকু সামর্থ্য, মানুষ নগদে তার চেয়ে উঁচু তলায় বাস করেছে।”

নিচে লিংক দিলাম। আগ্রহীরা মূল লেখা পড়ে দেখতে পারেন।

মূল লেখা এখানে

আমার পরিচিতদের অনেকে এই লেখাকে সমর্থন দিয়েছেন , কেউ বা মধ্যবিত্তদের না দুষে, দুষেছেন আমাদের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে। আমাদের ভোগবাদী সমাজে রাষ্ট্র কোনধরনের অন্ন , বস্ত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না বলে, এক শ্রেণির মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ জমিয়ে পাহাড় করছেন। আরেক শ্রেণি এমনই টানাপড়েনের মাঝে আছেন যে, সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রেখে সন্তানের যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খাচ্ছেন।

সত্যি কথা বলতে কী , আমি নিজেও বিভ্রান্ত! আমার পর্যবেক্ষণ মধ্যবিত্তদের পক্ষে নাকি বিপক্ষে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আম্মা মফঃস্বলের সচ্ছল পরিবারের আর আব্বা গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে জোড় বেঁধে সংসার এগিয়েছেন বহুদূর।

পুরনো ঢাকার আবাস থেকে উচ্ছেদ হয়ে কয়েকবছর গ্রামে আর তারপরে আবার ঢাকা এসে আমরা যখন মিরপুরে থিতু হলাম, তার মাঝখানে বছর তিনেক ভাড়া ছিলাম মিরপুরের গুদারাঘাট, পাইকপাড়া নামের গ্রাম গ্রাম গন্ধের মফঃস্বল এলাকায়। পুরনো ঢাকার পর নানাবাড়ি , তারপর ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পরে এভাবে জায়গায় জায়গায় ভাড়া থাকাটা আম্মার পছন্দ ছিল না। যে করেই হোক নিজের একটা স্থায়ী বাড়ি ছিল তাঁর স্বপ্ন। সুতরাং সাধ ও সাধ্যের মিল রেখে আমরা বাড়ি কিনে চলে এলাম অবাঙ্গালী অধ্যুষিত মিরপুর ১১ নাম্বারে। এর আগে যেখানেই ছিলাম চারিদিক অনেক খোলামেলা ছিল, এতো ছোট জায়গায় ছিলাম না। এখানে মানিয়ে চলতে হল। মধ্যবিত্ত জীবন শুরু হল নিম্নবিত্তদের মতো সঙ্কুচিত আবাসনে। দীর্ঘ তিরিশ বছরে পৌনে দু’কাঠার বাড়ি একসময় নতুন প্রজন্মের প্রকোপে জনবহুল হয়ে গেল। আমি ভাড়াবাড়িতে চলে এলাম। সেই ভাড়াও বছর বছর বেড়েই চলছিল । মাস শেষে বেতনের বড় একটা অংশ গুণে গুণে দিতে হয়। বুকে বিঁধে। বছর ছয়েক পরে ২০১৪ সালে শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপদেশ দিল যে ভাড়ার টাকার সঙ্গে আর কিছু লাগালেই নাকি মান্থলি ইন্সটলমেন্টে ফ্ল্যাট হয়ে যাবে! বউ আর সামাজিক চাপে অবশেষে ফ্ল্যাটের চক্করে ফেঁসে গেলাম। এই লোন,সেই লোন আর লোন ফেরতের চক্করে এখনো নাভিশ্বাস।

ট্রেডের এক ছোটভাইয়ের সাজেশনে Robert T.Kiyosaki এর বেস্টসেলার Rich Dad, Poor Dad পড়েছিলাম ২০০৯ এর দিকে। একটা চিন্তা মনে দাগ কেটে আছে।
One believed, “Our home is our largest investment and our greatest asset.” The other believed, “My house is a liability, and if your house is your largest investment, you’re in trouble.”

নিজের একটা ফ্ল্যাট বা স্থায়ী আবাস যখন মানুষের সবচেয়ে বড় ও একমাত্র ইনভেস্টমেন্ট হয় সে তো আসলেই বিপদে আছে। সেই বিপদে আমাদের এশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক। অদ্ভুতুড়ে মধ্যবিত্ত মানসিকতা। মজার ব্যাপার হচ্ছে , মধ্যবিত্তদের এই অনিশ্চয়তা আর নিরপত্তাহীনতার বীজ তাদের বংশধরেরা বহন করে চলে যুগের পর যুগ। কয়েক দশক আগে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের স্বপ্ন শেষ হতো পেনসন, প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের টাকায় নিজের একটা বাড়ি তৈরি দিয়ে। শেষ হতো বলছি, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যেতো, বাড়ি তৈরির ঝক্কি আর যন্ত্রণা পেরিয়ে পরিবারের কর্তা যখন আরামকেদারায় হেলান দিতেন, তক্ষুনি সেটা স্থায়ী হেলান হয়ে যেত। মানে পরিবারের কর্তা বা কর্তীর জীবনাবসান ঘটত।

ঘুরে ফিরে আমার বাবা-মা, নিকটাত্মীয় সকলের স্বজনদের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল এই ঢাকা শহরে নিজের একটা জমি, সেই জমিতে বাড়ি, সামনে একটা বাগান ইত্যাদি ইত্যাদি। অধুনা, মেগা-সিটিতে সেই সুযোগ নেই বলেই, নিজের ফ্ল্যাট, ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে ছোট্ট বাগান। সারাজীবন ঘানি টেনে টেনে যে তেল জমে ; তা বের হয়ে যায় একটা নিজের বাড়ি অথবা ফ্ল্যাটে।

আমার পরিচিত একজন উদ্যোক্তাকে জানি ,গত দুই দশক ধরে ভাড়াবাড়িতে থাকেন। তাঁর কথা, ‘এতোগুলো টাকা ব্যবসায় খাটালে ব্যবসার লাভ। বছর দুয়েক পরে পরে বাসা বদলাই , নতুন মোজাইক আর নতুন কমোড ব্যবহার করি। কোন মানে হয় না ঢাকা শহরের সোনার দামে ফ্ল্যাট করার!’ সেই লোক দিব্যি আছে।

আবার আমেরিকায় ও দেশের বাইরে কয়েকজন আধুনিক বাংলাদেশীকে চিনি, এঁরা প্রয়োজনে এক স্টেট ছেড়ে আরেক স্টেটে যাওয়ার সময় সবকিছু গুছিয়ে বিক্রি করে আরেক জায়গায় নতুন বসতি গড়েছেন।

মুশকিল হচ্ছে মফঃস্বল থেকে উঠে আসা মধ্যবিত্তদের। মফঃস্বলের মধ্যবিত্তদের স্থায়ী আবাসনের স্বপ্ন আর আবেগঘটিত সমস্যা আরো জটিল। এঁদের সবার গ্রামে একটা বাড়ি থাকে। সেই ভিটেবাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলেও , সেটাতে ঘুঘু চরলেও সারাজীবন বাল্যস্মৃতি আর নানাবিধ আবেগের পোঁটলা হিসাবে সেটা তারা রক্ষা করে চলেন। এই স্মৃতি ধরে রাখার খরচ কিন্তু নিতান্ত কম নয়। এই মধ্যবিত্তরা অনেকে জেলা শহরে এসেছেন চাকরির স্বার্থে। সেখানে থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। সেই হিসাবে জেলা শহরে তাদের একটা আলাদা স্থায়ীবাস থাকে। এরা পড়াশোনা শেষে যখন ঢাকায় আসে, তখন ঢাকায় এসে সেই একই চক্কর। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ঢাকায় আরেকটি স্থায়ীনিবাসের জন্য তাদের প্রাণান্ত। এদের পরবর্তী প্রজন্ম যখন আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া যায়, মনের গভীরে এদের প্রধানতম লক্ষ্যই থাকে একটা গাড়ি আর স্থায়ী একটা বাড়ির।

এই দুর্ভেদ্য চক্র কোনভাবেই শেষ হয় না ! বাইরের দেশে না হয় এন্তার জায়গা পড়ে আছে ; হোক আপনার দুইটা গাড়ি আর তিনটা বাড়ি। কিন্তু সীমিত সম্পদ আর অসম্ভব জনবহুল বাংলাদেশে কী করে আমাদের মধ্যবিত্তরা তিন চার জায়গায় কয়েকটি স্থায়ী নিবাসের মতো অনর্থক অপব্যবহারে মেতে আছেন, সেই দুষ্টচক্রের বিশ্লেষণ করা সময়ের দাবী !

প্রকাশকালঃ ২৮শে জুন,২০২০

লেফট আর রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ

লেফট আর রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ

ইউরোপ আর এশিয়ার লেফট হ্যান্ড রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ নিয়ে আমি সবসময় বিব্রত বোধ করি। পরিচিত কেউ ড্রাইভ করলে স্বাভাবিক সৌজন্য হচ্ছে তার পাশের সীটে বসা ; সেটা দেশেই হোক বা বিদেশে। অবশ্যি যদি ট্যাক্সি হয় তাহলে পিছনের সিটে বসা জায়েজ আছে। যেটা হয় ,এবারের ট্র্যাভেলে আমি একাই ছিলাম। ক্রেতা গাড়ি চালাচ্ছিল বলে আমি সৌজন্য করে গাড়ীর প্যাসেঞ্জার সিটে বসতে গেছি , দেখি ওইটা ড্রাইভিং সিট ! আমাদের বাংলাদেশের ঠিক উল্টো !

গত সপ্তাহে হোটেল থেকে ট্যাক্সিতে উঠলাম পিছনের সিটে , উঠে গাড়ির ডান দিকে বসলাম । ড্রাইভার লেফট-হ্যান্ড ড্রাইভে বাঁ দিকে বসে ড্রাইভ করছে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর কী মনে করে অভ্যাসবশত: বামদিকের সিটে চলে গেলাম।

মাঝ রাস্তায় মিররের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার হো হো করে রীতিমতো আর্ত চিৎকার দিয়ে উঠলো আমাকে পিছনে না দেখে ! ব্যাটা খেয়াল করে নাই, আমি কখন যে ডানদিক থেকে বা দিকে ঠিক তাঁর পিছনে চলে গেছি ! পরে তাকে বুঝিয়ে বললাম , আমি গাড়ীর বামদিকে বসে অভ্যস্ত তাই সাইড চেঞ্জ করেছি।

সে ও অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে যা বলল , তাঁর জীবনে এইরকম ব্যাপার এই প্রথম। সে ভেবে বসেছে , প্যাসেঞ্জার হঠাৎ ভ্যানিস হয়ে গেল কেমন করে !

প্রকাশকালঃ জুন, ২০১৩

বিজনেস ক্লাস

সারাবছরের অফিসের ট্রাভেলে হঠাৎ হঠাৎ একবার দু’বার বিজনেস ক্লাসে আপগ্রেড পাই, নিতান্তই মাইলেজের বদৌলতে ; তাও হয়তো কোন শর্ট ফ্লাইটে। নিম্নশ্রেণী থেকে উচ্চশ্রেণীতে উত্তরণের এই ব্যাপারটা কিন্তু আমি বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি।

সারাক্ষণ এয়ারহোস্টেস ব্যতিব্যস্ত আপনাকে নিয়ে। যেখানে ইকোনমি ক্লাসে এক গ্লাস পানি চাইলেও সময় ফেরে এরা এতো ব্যস্ত থাকে যে, পারলে ঢেলে খেতে বলে। তিনবার ডাকলে একবার আসে। খাবার শেষ করে সামনের ট্রে নিয়ে ঘণ্টা খানেক ধরে বসে থাকতে হয়, কখন পরিষ্কার করবে এই আশায়। সেই তুলনায় বিজনেস ক্লাস মানে অন্যরকম কিছু।

কিন্তু আপগ্রেড পাওয়ার পরও একটা জিনিষ আমি বুঝি আমার সাথে জেনুইন বিজনেস ক্লাসের তফাৎ ঘোঁচে না। পাশের ধবধবে পেটমোটা কোট টাই পড়া হাঁসফাঁস যাত্রীটা কিছুটা বিরক্তির চোখে তাকায় আমার দিকে, এইসব মফিজ( পড়ুন জাহিদ) ক্যামন করে যে বিজনেস ক্লাসে আসে !

স্কুল জীবনে আমাদের একটা কমন অভজার্ভেশন ছিল বড়লোকের পোলাপানদের নিয়ে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের দুজন ছেলে বা মেয়ে যদি পাশাপাশি একই পোশাক পড়েও হেঁটে যায়, আমরা ঠিকই ওদের আলাদা করতে পারতাম। খেয়াল করে দেখতাম , উচ্চবিত্ত পোলাপানের চামড়ায় একটা আলাদা মসৃণতা, ঔজ্জ্বল্য বা জেল্লা থাকে। এটা কী ঘি মাখন, চর্বিচোষ্য খেয়ে নাকি সারাক্ষণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি ও ঘরে থেকে, কে জানে ! আমরা কিন্তু ঠিক ঠিক টের পেতাম। আমার মনে হয়, সমাজের যে কেউ এটা টের পেয়ে যান।

আবার নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কাউকে যতই পোশাক ও অন্যকিছু দিয়ে পালিশ করি না কেন, চামড়ার ওই জেল্লা আনা অনেক ডিফিকাল্ট! হঠাৎ বিজনেস ক্লাসে বসেও এবার আমি এইসব চিন্তা করতে করতে ঢাকায় !

প্রকাশকালঃ জুন, ২০১৩

কোভিড করোনা ও যুদ্ধাবস্থা

অনেকগুলো ছোটছোট যুদ্ধের ক্রমানুসারে আসে বড়-যুদ্ধ, মহাযুদ্ধ। উনিশ শতকে সেটার নাম হয়েছে বিশ্বযুদ্ধ। সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতাব্দীর পুরোটা জুড়ে বিশ্বের পাশাপাশি রাষ্ট্রগুলোর মাঝে যুদ্ধ লেগেই থাকত। বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো জাতি একক কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস প্রথম বিশ্বযুদ্ধে।

বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা, মানবিক বিপর্যয় এমন হয় যে সেটা মনুষ্য প্রজাতিকে দীর্ঘসময় হতবিহবল করে রাখে। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে একটা মানবিক সমাজ গড়ায় নজর দেয় তারা। নানাধরনের হম্বিতম্বি থাকলেও , কেউ আর বোকার নতুন করে যুদ্ধে জড়াতে চায় না। বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে সবাই মনে মনে একমত থাকে। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝে সময়-পার্থক্য সামান্যই।
তারপরেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমরা একটা দীর্ঘবিরতি পাচ্ছি। জন্ম হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি; এই শুরু হল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ; এই শুরু হল আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধ। সেটা হয়নি ,আর হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
তেমনি করে সার্স, মার্স, জিকা, সোয়াইন, ইবোলার চিকন ধাক্কা পার হয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাচ্ছি কোভিড-19 করোনা ভাইরাসের। বিশ্বব্যাপী যে বিপর্যয়টা যাচ্ছে; সেটা পার হয়ে গেলে আমাদের প্রজন্ম আর কোন বড় বিপর্যয় ছাড়াই এই শতাব্দী পার করতে পারবে ; এইসব ভেবে আশাবাদী হতে পারেন।

প্রকাশকালঃ ২৩শে জুন, ২০২০