আমরা যখন স্কুল পেরিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছি, কে কোন পেশায় যাবে সেটা নিয়ে নানা ধরণের চিন্তা করতাম। আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত বাবা মায়ের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল ছেলেমেয়ে যেন ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হয়। ছেলেরা ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেয়েরা মেডিক্যালের জন্য প্রাণপাত করত। বিয়ের বাজারেও তাই, প্রথম সারিতে এঁদের নাম। আম্মা বলতেন বিয়ের বাজারে ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে কাতান শাড়ির মতো। শাড়ির ফ্যাশন বদলাতে বদলাতে কাঞ্জিভরম, বোমকাই, সম্বলপুরি, সিল্ক , মসলিন অথবা লেহেঙ্গা যাই আসুক না কেন। কাতান কীভাবে কীভাবে যেন টিকে গেছে। বাঙ্গালির বিয়ে হচ্ছে কাতান নেই , হতেই পারে না।

আমাদের তারুণ্যে বিয়ের বাজারের পাত্রের সঠিক র‍্যাঙ্কিং মনে নেই, তবে মেধাতালিকার প্রথমদিকে ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, তারপরে সেনাবাহিনী, কাস্টম অফিসার, পুলিশ, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যাংকার, আমেরিকা-কানাডা প্রবাসী পাত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ‘ইত্যাদির’ ভিতরে ছিল বেকার পাত্র , প্রাইভেট চাকরি করা পাত্র, ব্যবসায়ী পাত্র আরো অনেক গণ মানুষ, যাদের ‘পাত্র কি করে’ – এই প্রশ্নের উত্তর কয়েক লাইনে দিতে হয় !

অধুনা দেশের চাকরি একটাই! সেটা হচ্ছে সরকারি চাকরি। গত দুই দশকে সরকার বাহাদুর তার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সুযোগসুবিধা এমনভাবে বাড়িয়েছেন যে ; আমরা যারা নানা কারণে দেশের প্রাইভেট সেক্টরকে অনেক স্মার্ট চয়েস ভেবেছিলাম তাঁদের ভীষণ আফসোস হচ্ছে কেন তখন ঠিকঠাক মতো বিসিএস দিইনি আমরা !
বর্তমানে সরকারি চাকুরীজীবীদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা বিশ্ব রপ্তানিতে চীনের মতো। রপ্তানিতে পৃথিবীতে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ আছে—প্রথম কিন্তু বরাবরই সেই একজন ! তাও আবার বিশাল নাম্বারের ব্যবধানে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়-তৃতীয় হচ্ছে।

সরকার আমাদের ট্যাক্সের টাকাটাই কেবল ঠিকঠাক মতো নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের ব্যাপারে আর কোন শ্রম আইন( পেনশন, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মেডিক্যাল ইত্যাদি ইত্যাদি) যে একেবারেই মানা হচ্ছে না – সেই ব্যাপারে সরকার বাহাদুরের বিন্দুমাত্র গরজ নেই। থাকার কথাও না, আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের লোকেরা একটা সংখ্যা বই কিছুই নই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে, একজন কনস্টেবল পুলিশের যতোখানি গুরুত্ব আছে সরকারের কাছে , আমার মতো উচ্চহারে ট্যাক্স দেওয়া ১০০ লোকেরও সেই গুরুত্ব নেই ! অতএব আমরা শুধুই সংখ্যা !
যাই হোক ছোট মামার বড় ছেলের ( আবির হোসেন স্বাক্ষর) পাত্রী দেখার ও এঙ্গেঞ্জমেন্ট করার তারিখ ছিল গতকাল ৭ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ; মুরব্বীরা সবাই একসঙ্গে। পাত্র ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে এমবিএ করছে।পাত্রী ডাক্তারি পাশ করে , ইন্টার্ন শুরু করেছে ।

দুইজনেই যে ব্যাচমেট, গতকালই প্রথম জানলাম। আরো জানলাম , যে উভয়ে উভয়কে চেনে দীর্ঘ আট বছর ধরে। দুজনের কারো পড়াশোনা শেষ হয়নি বলে, ব্যাপারটা আংটি বদলেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা ছিল।
কিন্তু পরিবারের মুরব্বীদের অবাধ দেখাশোনা, ঘোরাফেরা নিয়ে আপত্তি আছে, একবারে আকদ করাটাই যুক্তিসঙ্গত মনে হলো। মুরব্বীদের কথা এভাবে এঙ্গেজমেন্টের পরে দেখাশোনা চলাফেরা শরীয়ত মোতাবেক হবে না। যদিও আমি আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলাম যে, আট বছরের প্রেমে কি এখনো শরীয়ত ঠিক আছে ! নানা আলোচনা শেষে রাত যখন গভীর, তখন এই ডাক্তার পাত্রী ও ইঞ্জিনিয়ার পাত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।

উভয়ের দীর্ঘ সুখের জীবন কামনা করি।

প্রথম প্রকাশঃ ৮ই ফেব্রুয়ারি,২০২০