যেখানে সেখানে , যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ার অদ্ভুতুড়ে অভ্যাস বা ক্ষমতা ছিল আমার ! আমি ছিলাম অনেকের ঈর্ষার ! আমি এখন অন্যদের ঈর্ষা করি !
২০০৫ সালের ডিসেম্বরে অফিস পিকনিকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বাস উল্টে কেলেঙ্কারি। কোমরের ফিমার ছুটে গেল পেলভিক থেকে। ছয় সপ্তাহ বিছানায়, ধীরে ধীরে ক্র্যাচ নিয়ে আবার হাঁটা শেখা। বড়কন্যা জেবা তখনও পৃথিবীর মুখ দেখেনি। আমার স্ত্রী ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। পুরো পরিবারের উপর দুর্যোগ।
দুর্ঘটনা যখন হয় , আমি তখন ১০৫ জ্বর নিয়ে বাসের জানালার পাশে তন্দ্রাচ্ছন্ন। মুহূর্তেই সব উলটপালট। যে আমি, ঢাকা কলেজে টেম্পোতে যাওয়ার সময় পাশের জনের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমাতাম ; বাসে সিট না পেলে হ্যান্ডেল ধরে ঘুমাতাম ; দুই ঘণ্টার বিমানযাত্রায়ও ঘাড় কাত করে ঘুমাতাম—ওই অ্যাকসিডেন্টের পরে কীরকম একটা আতঙ্ক গ্রাস করল আমাকে। যে কোন যানবাহনে আমি এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটা অস্ফুট আতঙ্ক নিয়ে জেগে থাকি। দুই এক মিনিটের তন্দ্রা কেটে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আমার হয়তো কোন সাইক্রিয়াটিস্ট সেশন দরকার ছিল– ওই আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার জন্য। নানা কারণে ভেবেছিলাম , এমনিতেই একদিন সেরে যাবে। আমি আবার বেঘোরে ঘুমাতে পারব। না ! হচ্ছে না ! কিছুতেই হচ্ছে না! যে কোন যানবাহনে, হোক সে প্রাইভেট কার, বাস, বিমান—আমি আর ঘুমাতে পারি না। একটা দুর্ঘটনা আমার জীবনের নিষ্পাপ, নিশ্চিন্ত ঘুম কেড়ে নিয়ে গেছে আজ এই ১৪ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও।
আমার টুনি আর দুই টুনটুনি আমার সেই বিখ্যাত অভ্যাস ধরে রেখেছে। যেখানে কাত, সেখানেই বেঘোরে ঘুম।
প্রকাশকালঃ ৭ই জানুয়ারি, ২০২০