১৯৮৮ সাল। এসএসসি ৮৯ ব্যাচের বিদায়ী অনুষ্ঠানের জন্য বই, ফুল ইত্যাদির আয়োজন করা কমিটিতে কী মনে করে শ্রেণি শিক্ষক আমাকেও রাখলেন। আমরা তখন, দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা, ওয়েস্টার্ন, তিন গোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিকে ডুবে আছি। সেবা প্রকাশনীর পেপারব্যাক এডিশনের বাইরে , লাইব্রেরিগুলোর তাকে সাজানো থাকত– হয় মোকছেদুল মোমেনিন, নামাজ শিক্ষা অথবা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য টাইপ বই। অথবা কিছু ভারতীয় লেখকের নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব, নীহার রঞ্জন গুপ্তের কিছু বই। কালেভদ্রে সুনীল, শীর্ষেন্দু।

৮৫ সালে এইসব দিনরাত্রি করে হুমায়ূন আহমেদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। ৮৭-৮৮ সালে তিনি ধারাবাহিক ও ঈদের হাসির নাটক করে খ্যাতির তুঙ্গে। সেই সময়ে আমার হাতে পড়ল তার ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাস দুটি। সেবা প্রকাশনীর নানা বিদেশি অনুবাদের ভিড়ে সেটা আমার কিশোর পাঠক মনের জন্য এক তুমুল বিস্ময় ! দুটি উপন্যাস পরপর পড়ে আমি রীতিমত ঘোরের ভিতরে চলে গিয়েছিলাম। এর প্রভাব এতোটাই পড়ল যে , সেই সময় কয়েকবছর ধরে বন্ধু বান্ধবী, ভাই-বোন যাদের জন্মদিন থাকত। আমি অবধারিতভাবে ‘শঙ্খনীল কারাগার’ বইটি তাকে দিতাম। এবং ৮৯ ব্যাচের বিদায়ীদের জন্য বাংলাবাজার গিয়ে প্রায় ১৫০ কপি নিয়ে আসলাম।

মধ্যবিত্ত জীবন দেখানো অনেক খ্যাতনামা উপন্যাসিক তখনো ছিল। কিন্তু কেন জানি না হুমায়ূন আহমেদ আমাদের প্রজন্মের কাছে পৌঁছে গেলেন সবার আগে। তাঁর সরল ভাষা আমাদের ছোটবড় সবাইকে তাঁর লেখার ভক্ত বানিয়ে ফেলল।

বাংলা সিনেমা আমি সিনেমা হলে গিয়েই দেখি। সেই ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘ মনের মানুষ’ থেকে শুরু করে গতবছরের ‘আয়নাবাজি’। তো গতকাল ঢুকে পড়লাম আণ্ডাবাচ্চা নিয়ে ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’ দেখতে। বাংলাদেশের প্রথম অ্যান্থলজি ফিল্ম। আমি ভেবেছিলাম, একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি। কিন্তু ধাক্কা খেলাম মিনিট দশেক পরেই, শুরু হল আরেকটি ছবি। আমি ধাক্কা খেতেই লাগলাম ! একবার হেসেছি, একবার বিষণ্ণ হয়েছি, একবার হতাশা গ্রাস করেছে আর অবশেষে মুগ্ধ হয়ে সিনেমা হল থেকে বের হয়ে এসেছি । আমার মুগ্ধতার রেশ এখনো কাটেনি।
১১ জন নবীন পরিচালকের শর্ট ফিল্মের সমাহার। শুরু হল, নুহাশ হুমায়ূন আহমেদ দিয়ে। হুমায়ূন পুত্র ছাড়া আর কাউকেই আপনি চিনবেন না। কিন্তু বিস্মিত হবেন। আমি আয়নাবাজি ৪ বার দেখেছিলাম, একবার নিজে, পরের বার টেক্সটাইলের প্রকৌশলী বন্ধুদের সাথে , তারপর স্কুলের বন্ধুদের সাথে, শেষের বার বাসার মুরব্বীদের সঙ্গে। এবং প্রতিবার আমি যেভাবে মুগ্ধ হয়েছিলাম , তাঁরাও হয়েছিলেন।
এই ছুটিতে দেখে আসুন।

একটা নতুন অভিজ্ঞতা হোক আপনার। দেখে এসে আপনার অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না।

ডিসক্লেইমারঃ
১। শিশুদের সঙ্গে না নিলেই ভাল। এরা এটা পছন্দ করবে না। আমার ত্রয়োদশী বড়কন্যা ভীষণ মজা পেয়েছে। কিন্তু আট বছরের শ্রেয়া বিরতির পর থেকেই উসখুস করেছে।
২। টাকা দিয়ে বিনোদন কেনার সামর্থবান ঢাকার একশ্রেণীর দর্শকদের আপনি সিনেপ্লেক্সে পাবেন। আমার ঠিক পাশের দুই তরুণ সারাক্ষণ ফেসবুক চালিয়ে হুহা, হিহি করে বিরক্ত করেছেন। ঠিক সামনের সারির মাঝবয়েসী তিনজন ভদ্রলোক(!) ‘এইটা কোন বালের ছবি হইল’ ইত্যাদি বলে সময় পার করেছে। বিরক্ত হয়ে তাদের অনুরোধ করতে হয়েছে আস্তে কথা বলার জন্য ; বৃথা চেষ্টা, তারা পুরো সময়টা বকরবকর করেছেন।পরে আসন বদলাতে হয়েছে। আর সামনের সারির ডানদিকে আরেক মাঝবয়েসী ভদ্রলোক(!) সারাক্ষণ তার ড্রাইভারকে গাজীপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর পার হয়ে উত্তরা পাঁচ নাম্বার সেক্টরে কীভাবে কোথায় টার্ন নিতে হবে এই ইন্সট্রাকশন দিয়েছে উচ্চস্বরে। বিরতির সময় বের হয়ে গেট কীপারকে অনুরোধ করতে হয়েছে, সাউন্ড বাড়াতে। ঢাকাবাসী ও ঢাকার দর্শক কতোখানি আবাল হতে পারে সেটা আপনি এই সিনেমা দেখতে গেলে তাদের নানা মন্তব্যে বুঝতে পারবেন।

প্রকাশকালঃ ১৪ই ডিসেম্বর,২০১৯