আমি নিজে দীর্ঘদিন ও বহুবছর ধরে ‘তথাকথিত’ কর্পোরেট অফিসে ঘষটাচ্ছি ! নানা রকমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, পরিপ্রেক্ষিত আর অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। এখনো , প্রতি মুহূর্তে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন করে শেখা। কিন্তু আমি সন্দিহান, আমার নির্দিষ্ট একটা প্রোডাক্টের( পড়ুন গার্মেন্টস), নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা—তা তো আর সার্বজনীন নয়। এক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম , আরেক প্রতিষ্ঠানে প্রায়শঃ অচল প্রমাণিত হয়। এক সময়ের অভিজ্ঞতা আরেক সময়ে হয়ে যায় বাতিল।

কারখানা বা ট্রেডিং ও সোর্সিং অফিসের নবীন প্রজন্মের কাছে আমার অর্জিত
যৎসামান্য অভিজ্ঞতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কর্পোরেট অব‌জার্ভেশন লেখালেখি। অবশ্য সকল নবীনদের মনে রাখতে হবে, ‘গরম কালের ওয়াজ শীতে করলে, শীতে কেঁপে সমূহ বিপদ ডেকে আনার সম্ভাবনা আছে!’

অভিজ্ঞতার সর্বজনীনতা না থাকুক , হাস্যকৌতুকের একটা সর্বজনীনতা আছে। শুধু স্থান-কাল-পাত্র ভেদে প্রেক্ষিত ও কুশীলবদের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়; কৌতুকের মাঝ দিয়ে সহজ সত্য বুঝে ফেলার প্রবৃত্তিও মানুষের সহজাত। বহুল ব্যবহৃত গল্প, তবু আরেকবার বলি—
শিষ্য পরিবৃত হয়ে এক হুজুর কোন এক অজ-পাড়াগাঁয়ে ওয়াজ করেছিলেন, ‘মেয়ে মানুষের কাপড় একশো বার ধুইলেও বেগানা মরদ তথা পরপুরুষের তা গায়ে লাগানো উচিত না’। তাঁর এক শাগরেদ এই ওয়াজ শুনে আরেক সময়ে আরেক অজ-পাড়াগাঁয়ে গিয়ে দিনের বেলায় একই ওয়াজ করলেন। সেটা ছিল হাড়-কাঁপানো শীতের সময়। রাতের বেলায় শোবার সময় তাঁকে এনে দেয়া হল কাঁথা, যেটা গ্রামদেশে মেয়েদের পুরনো সূতীর শাড়ি দিয়েই তৈরি করা হয়ে থাকে। নবীন সাগরেদ তার সদ্য অর্জিত জ্ঞান ফলিয়ে বললেন, ‘আমি বেগানা মরদ, এই সব মেয়ে মানুষের কাপড়ে তৈরি কাঁথা আমি গায়ে দেব না’। ওরা বললো, ‘জনাব, আমাদের গ্রামাঞ্চলে লেপ-তোষকের প্রচলন নেই; হয় আপনাকে কাঁথা গায়ে দিতে হবে, না হয় শীত কাঁপতে হবে।’

তো এভাবে দু’-তিন রাত শীতে কেঁপে অসুস্থ হয়ে শাগরেদ হুজুরের ডেরায় ফিরে বললেন, ‘হুজুর, আমারে এমন ওয়াজই শিখাইলেন; আমি তো শীতে মরি প্রায় !’ হুজুর সবটা শুনে তাঁকে ধমক লাগালেন, ‘আরে বেওকুফ, এটা তো ছিল গরমের দিনের ওয়াজ; তোরে শীতের দিনে এই ওয়াজ করতে কইছে কে ?”