জীবনকে সহজভাবে নেওয়ার,সহজ করে তোলার অনেক চমৎকার উপায় আছে।

প্রতিনিয়ত ধাক্কা খেতে খেতে আমাকে শিখতে হয়েছে সেটা ! ক্যারিয়ারের একটা পর্যায় ছিল, সারাক্ষণ ত্রস্ত থাকতাম কখন জানি কী হয় ভেবে ভেবে । যতো দিন যাচ্ছে শিখেই চলেছি। নানাভাবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। হ্যাঁ , আমি বিশ্বাস করি … লার্নিং ইজ এ নেভার এন্ডিং প্রসেস ! এই যেমন , সমস্যাকে শুধুই ‘সমস্যা’ হিসাবে দেখা শিখতে অনেক সময় লেগেছ ।

মিড লেভেল ম্যানেজমেন্ট সারাক্ষণ সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কাছে সব সমস্যা উগড়ে দিতে চায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পছন্দও করে। সব সমস্যায় তাঁরা আপডেট থাকতে পারলে ভাবে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের অপরিহার্য ! যদিও প্রাত্যহিক সমস্যার সেই তীব্র প্রেশার কিন্তু মিড লেভেল ম্যানাজারদেরকেই নিতে হয় !

কিছুদিন আগে একটা কথা বা দৃষ্টিভঙ্গি চোখে পড়ল , কোন একটা ওয়েবে। ভালো লেগে গেল । এটা সমস্যাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি আরেকটু বদলে দিয়েছে আমার। সমস্যার সংজ্ঞা একজন ম্যানেজারের কাছে কি হওয়া উচিৎ ?
“If you can’t tell me what you’d like to be happening, he said, you don’t have a problem yet. You’re just complaining. A problem only exists if there is a difference between what is actually happening and what you desire to be happening.”
সতীর্থ কলিগদের অন্য উদাহরণ দিয়া বোঝাই। ধরেন আপনার শিপমেন্ট দেরী হয়েছে । সেটা এসে সিনিয়র ম্যানেজারকে বললেন। তাহলে , ব্যাপারটা কি দাঁড়াচ্ছে ? আপনি কি চান ? সে এই দুরবস্থা থেকে ম্যাজিক দিয়ে তিনি সব ঠিক করে ফেলবেন ! আপনি নিজে কি জানেন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কি কি উপায় আছে? আপনি কি জানেন কি কি হওয়া উচিৎ ? যদি জানেন কি করতে হবে, তাহলে তো এটা কোন সমস্যাই না ; যেহেতু সমাধানের উপায়টা আপনার জানা আছে।

আরেকদিকে ধরেন, চৈত্র মাসের গরম, ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম, ধুলাবালি, হরতাল, দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি নিয়ে আপনি কথা বলতেই পারেন। কিন্তু , এগুলো কি আপনার একার সমস্যা? না এগুলো সমস্যা না, এগুলো একধরনের অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি এবং আপনি যখন এই প্রসঙ্গগুলি নিয়ে কথা বলছেন , সেটা হচ্ছে অভিযোগের ভঙ্গীতে ! এগুলো সিম্পলি কমপ্লেইন। কেন এগুলো সমস্যা না ? কারণ , আপনি আসলে জানেন না কী হওয়া উচিৎ।এটা আপনার কন্ট্রোলে নাই । আপনার জানা বা চাওয়া দিয়ে এগুলোর কোন সমাধানও নাই ! বরং আপনি এই পরিস্থিতিগুলোর সাথে অ্যাডজাস্ট করতে পারেন,মেনে নিতে পারেন।

আমি আরেকটা উদাহরণ সচরাচর আমার সহকর্মীদের দিই। বলি, আমার নিজের জীবনের বড়ো একটা শিক্ষা হচ্ছে– “ Changing yourself is much more easier than changing the whole world.”
আসলে আমাকে কাজ করতে হয় কিছু উচ্চশিক্ষিত উচ্চাভিলাষী তরুণদেরকে নিয়ে। যারা প্রত্যেকে আমাদের জেনারেশনের চেয়ে মেধাবী ও সংবেদনশীল। কিন্তু আমাদের জীবন তো তাঁদের মতো এতোখানি ডিজিটালাইজড ছিল না। আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ বিঘ্নকারী ছিল টিভি ! এছাড়া বই ও আড্ডাকে আমরা পজিটিভলিই নিয়েছিলাম।

এখন নবীন প্রজন্মের জীবন ও জীবনযাত্রা এতো বেশী জটিল হয়ে গেছে; চাইলেও তাঁদের মনোযোগের শতভাগ কাজের ক্ষেত্রে দিতে পারেন না তাঁরা। দারুণ একটা বৈপিরিত্যময় সময়ের তরুণদের সঙ্গে আমাকে চলতে হয়। আমার অভিজ্ঞতার কিছুটা পুরনো এবং অনেকখানিই তাঁদের ডিজিটাল যুগে অকার্যকর হয়ে গেছে জেনেও অনবরত বাচালের মতো কথা বলে চলি।