যৌনতা নিয়ে খোলামেলা কিছু কথা

আমাদের ব্যাচমেটদের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে সেক্স নিয়ে কথা হচ্ছিল। মেসেঞ্জার হচ্ছে ফোন কলের মত। কথা শেষ তো সবাই সবকিছু ভুলে যায়। ওই আলোচনায়, সেক্স নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে, সেটা নিয়ে আমি কিছু কথা বলেছি। যা আমি নানা অভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা থেকে পেয়েছি।

যেহেতু গুছিয়ে লিখেই ফেলেছি। সেটা বরং জনসমক্ষে প্রকাশিত থাক ; কখনও হয়তো কারো কাজে লাগতেও পারে। অনেক ভুল ধারণার অবসানও হবে। সবার যৌনজীবন সুখের হোক। কারণ আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতি ধনী-গরীব নির্বিশেষে দুইটি জায়গায় কাউকে বঞ্চিত করে নাই। সবাই সমান। দুইটি নেয়ামত বলি বা প্রকৃতিপ্রদত্ত দান হচ্ছে খাদ্যগ্রহণ ও যৌনতা। খাদ্য গ্রহণ ও যৌনতার মধ্যেই আমরা আমাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারি। অন্য কোন ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাওয়ার সুযোগ প্রকৃতি রাখে নাই। সুতরাং যৌনতাকে নিষিদ্ধ ভেবে নানা ভুল ধারণা নিয়ে না থেকে সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ । আমি ব্যক্তিগতভাবে তাই মনে করি। কেউ ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা তুলতে পারে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, খোলামেলা আলোচনা ভাল।
সেক্স ডিউরেশন , লিঙ্গের সাইজ ও দ্রুত-স্খলন ইত্যাদি নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তি আছে। ওই যে বললাম, ব্যাপারটা নিয়ে খোলামেলা কেউ কথা বলতে চায় না। কেউ কেউ অনেক সময় দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বাগাড়ম্বর করে ফেলে। যা সে করেনি ,সেটার ফ্যান্টাসি করে সবার কাছে বড় হতে চায়। উল্টোদিকে, কেউ হয়ত সব কিছু ঠিক ঠাক মতোই করছে , কিন্তু অন্যদের বাগাড়ম্বর বা ফ্যান্টাসি শুনে ভাবছে , আহারে অন্যরা বোধহয় ‘ আসল পুরুষ’।

আমার পর্যবেক্ষণটা শেয়ার করি। দুঃখিত এই পর্যবেক্ষণ বিশেষ কাউকে নিয়ে নয়। সুতরাং এই অবজারভেশন শুধুমাত্র আমার বিগত কয়েক দশকের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা

১। লিঙ্গের আকৃতি কখনই যৌনতৃপ্তির মূল ব্যাপার নয়। নারীদেহে যোনির ২ ইঞ্চির ভিতরেই তাঁদের ‘জি-স্পট’ বা সকল যৌনানুভূতির স্নায়ু ও কেন্দ্রবিন্দু থাকে। কারো যদি ২.৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের লিঙ্গ থাকে তবে সে মোটামুটি ৯০ ভাগ নারীকে যৌন তৃপ্তি দিতে সক্ষম। অশ্বলিঙ্গের ব্যাপারে চাহিদা ও ফ্যান্টাসি সবার আছে। কিন্তু দেখা গেছে, যাঁদের অশ্বলিঙ্গ থাকে , তাঁদের পার্টনাররা নানারকম অস্বস্তিতে ভোগে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা যৌন আনন্দের চেয়ে বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।

২। পৃথিবীতে গড় পুরুষের শিথিল লিঙ্গ ২.৮ থেকে ৩.৯ ইঞ্চি হয়ে থাকে। আর উত্তেজিত অবস্থায় সেটা ৪.৭ থেকে সর্বোচ্চ ৬.৩ ইঞ্চি হয়। এর বেশী বা কম হচ্ছে ব্যতিক্রম ! কারো লিঙ্গ ৬.৩ ইঞ্চির চেয়ে বড় হলে ,তাঁর উচিৎ পর্ন মুভিতে যোগাযোগ করা। সবার ধারণা দেশ-ভেদে লিঙ্গের সাইজ অনেক কম-বেশী হয়। হ্যাঁ হয়, সেটা খুব সামান্য, কয়েক সেন্টিমিটার । যেমন, ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান দের লিঙ্গের সাইজ এশিয়ানদের চেয়ে কিছুটা বড় হয়। তাই বলে সেটা অশ্বলিঙ্গ হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, গড় পুরুষের, মানে সব দেশের গড় লিঙ্গের উত্তেজিত অবস্থার সাইজ ৫ ইঞ্চির কাছাকাছি। সো , ইরেকটেড লিঙ্গের সাইজ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। পার্টনারকে যৌন তৃপ্তি দিতে হলে, দিল্লীর কুতুব মিনারের প্রয়োজন নেই।

৩। দ্রুত-স্খলন ও দীর্ঘ-স্খলন নিয়ে অনেকের অনেক মনোবেদনা ও ফ্যান্টাসি আছে। বেশী বেশী ব্লু ফিল্ম দেখে ধারণা হয়েছে, মনে হয় ‘ আসল পুরুষ’ রা আধা-ঘণ্টা ধরে নারীদের সঙ্গে সেক্স করে। ভুল ! গড়ে যদি কারো যোনিতে লিঙ্গের প্রবেশের পরে, ৩ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে স্খলন হয় , সেটা স্বাভাবিক। কারো যদি ১৫ মিনিটের পরেও বীর্যপাত না হয়, তবে সেটা অস্বাভাবিক ও অনেকক্ষেত্রে পার্টনারের জন্য পেইনফুল। কারণ পার্টনারের লুব্রিকেশন শুকিয়ে যেতে পারে। আর আমাদের বাঙালী পুরুষদের স্বভাব হচ্ছে, বউকে ধরার ২ মিনিটের মধ্যে আমরা আমাদের লিঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করি বা করে ফেলি। ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার মেয়েদের উত্তেজিত হতে সময় লাগে ৩ থেকে ৭ মিনিট। তবে ব্যতিক্রমও আছে, মাসিকের পরের কয়েকদিন মেয়েরা ২/১ মিনিটেই উত্তেজিত হয়ে রসসিক্ত হয়ে পড়ে।
সো, পার্টনারকে রসে সিক্ত করতে হলে সময় দিতে হবে। নানা ভাবে মর্দন , চোষণ, ফোর প্লে করে তাঁকে উত্তেজিত করে তারপরে লিঙ্গ প্রবেশ করাতে হবে। তাড়াহুড়া করলে, বীর্যপাত ঠিকই হবে কিন্তু বেচারি থেকে যাবে অতৃপ্ত।
৪। সেক্স ডিউরেশনের আরেকটা মূল ব্যাপার হচ্ছে, নিরাপদ সময়। লুকিয়ে লুকিয়ে করতে গেলে দ্রুত স্খলন হবেই। ভিতরে টেনশন নিয়ে সেক্স করার চেয়ে না করা ভাল। নিরাপদ স্থান ও সময় হচ্ছে, যখন পাশে ঘুমানো বাচ্চা আপনাকে বিরক্ত করবে না। বা দরজা খোলা আছে, যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে। এই মুহূর্তগুলোতে দ্রুত স্খলন হতেই পারে।

৫। ব্লু ফিল্ম দেখে দেখে আমাদের অনেকের ধারণা হয়েছে, যে ‘ আসল পুরুষ’ এর বীর্যপাত মনে হয় এক গ্লাস বা এক জগ হয়! ভুল ! গড়ে পুরুষের বীর্যপাত হয়ে সর্বোচ্চ এক চা চামচের সমান। সেটার পরিমাণ নির্ভর করে, পুরুষটি কী ধরণের খাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত। এটার রং, গন্ধ পুরোটাই নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের উপর। আসলে যৌনতা শুধু লিঙ্গ ও যোনীর ঘর্ষণে বীর্যপাতের মতো এতো সহজ ব্যাপার না। পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্ক। মাথায় সারাক্ষণ দ্রুত বীর্যপাতের দুশ্চিন্তা থাকলে সেটাই হবে। আপনি যা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন , তাই হবে। বরং উল্টোটা ভাবা উচিৎ। শরীরের যত্ন নিন, নিজেকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিন, তারপর সেক্স করেন। আপনাদের অনেকেই মোরগ-মুরগীকে সেক্স করতে দেখেছেন। ওই যে, মোরগ দৌড়ে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডর ঘর্ষণে তাঁর বীর্যপাত করায়। কেউ যদি ভাবে, সে সঙ্গিনীর সঙ্গে সারারাতে তিন চারবার সেক্স করা খুব বাহাদুরির ব্যাপার সেটা তাঁর নিজস্ব ভুল চিন্তা। সেটা বিয়ের প্রথমদিকে হতেই পারে।
কিন্তু একবার বীর্য-স্খলনের পরে অন্তত: ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে আরেক বার লিঙ্গের উত্তেজিত হতে। মনে রাখতে হবে, পরিপূর্ণ আনন্দের সঙ্গে রাতে একবার সেক্স করলে সেটার রেশ থেকে যায় কয়েকদিন। মোরগ-মুরগীর দ্রুতলয়ের মতো সারারাতে ৩/৪ বার বা ততোধিক-বার সেক্স করার কথা শুনে হতাশ হওয়ার কিছু নাই।
ব্যাপার হচ্ছে, নিজের বীর্যপাতের চেয়েও সঙ্গিনীর চরম তৃপ্তির দিকে নজর রাখতে হবে। প্রবিষ্ট হলাম আর আমার মাল আউট , আমার কাজ শেষ , তুমি মুড়ি খাও – ঠিক না ! সবার সুস্থ যৌন জীবন হোক এই কামনা করি।

তো উপরের আলোচনায়, যৌনতার কিছু বিভ্রান্তি নিজের মতো করে খণ্ডানোর চেষ্টা করেছি। যৌন আলোচনা সুস্থভাবে হলে সেটা থেকে আমাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, লিঙ্গের সাইজই নারীর যৌনতৃপ্তির অন্যতম বা একমাত্র অনুষঙ্গ । আসলে তা না। লিঙ্গের সাইজ সামান্যই প্রভাব রাখে পুরো সঙ্গমে। ব্যাপার হচ্ছে, একগামীতার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মেয়েরা তাদের হাজব্যান্ডের লিঙ্গের আকার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে বা থাকতে বাধ্য হয়। কারণ অন্য কারো লিঙ্গের সাইজের সঙ্গে তাদের এটা তুলনা করার সুযোগ থাকে খুবই কম। তা ছাড়া, সেক্স ডিউরেশন বা সঙ্গমের স্থায়িত্ব নিয়েও অন্যের সংগে তুলনা করার সুযোগ কম থাকে।এমন ও হয়েছে, কোন মেয়ে সারাজীবনেও অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি পায় নি। সে জানেই না , অর্গাজম কি ! অথচ জীবনের বড় অংশটি মেয়েটির কেটে গেছে গতানুগতিক যৌনসংগমে ও সন্তান উৎপাদনে।

এবার, নিজের অভিজ্ঞতার একটা গল্প বলি। ।একবার ফ্লাইটে করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ঢাকা আসছিলাম। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। পাশের সীটের বাংলাদেশী তরুণ আমার সঙ্গে গল্প করা শুরু করল।জিজ্ঞাসা করে জানলাম , সে বিয়ে করতে বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিন্তু সে ব্যাপারটাতে মোটেও খুশী নয়। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যা জানালো, তাঁর আসলে সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে সেক্সের অভিজ্ঞতা আছে। সে আরও জানালো , সে বাংলাদেশী কোন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করে দৈহিক ভাবে সম্ভবত: কোনদিনই সুখী হতে পারবে না।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘কারণ কি ?’
সে যা ব্যাখ্যা করল, কারণ হচ্ছে, পশ্চিমের মেয়েরা বিছানায় দুর্দান্ত অ্যাকটিভ। সেক্স যে পারষ্পরিক বোঝাপড়ার, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ব্যাপার সেটা তাঁরা বোঝে। সুতরাং সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে যৌনসংগম হয় তুলনামূলক ভাবে তুমুল আনন্দের। প্রতি-চুম্বন, প্রতি-মর্দন, গুঙিয়ে ওঠা , শীৎকার দেওয়া প্রতিটা ব্যাপারেই তারা অনেক বেশী সক্রিয়। আর আমাদের বাংলাদেশী মেয়েদের ব্যাপারে সে বলল, ‘ জাহিদ ভাই , ভ্যাদা মাছ দেখছেন কখনো ? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ দেখেছি, — ওই যেই মাছগুলো ম্যান্দা মেরে মাছধরা জালের নীচে পড়ে থাকে। সে বলল, ‘ বাংলাদেশী মেয়েরা সঙ্গমের সময় আপনার নীচে পড়ে থেকে ভ্যাদা মাছের মতো শুধু কুঁ কুঁ করে।’ একবার সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে সত্যিকারের সেক্স যে করেছে, তাঁর পক্ষে বাংলাদেশী মেয়েদের সঙ্গে সেক্স করে মজা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

আমার গল্পের প্রাথমিক অংশ শেষ !

একইভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে , যদি আমাদের বাংলাদেশী কোন তরুণী কোনভাবে যদি ইউরোপ আফ্রিকার প্লেবয় টাইপের কারো সঙ্গে সেক্স করার সুযোগ পায় , তাহলে কি হতে পারে ? মানে যে ছেলে সব রকম চুম্বন, ফোর প্লে, এক্সাইটমেন্ট করার পদ্ধতি জানে এবং একটা মেয়েকে মাল্টিপল অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি দিতে পারে– তাঁর সঙ্গে একবার সেক্সের পরে, মেয়েটির যৌন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাবে। সেও চাইবে দীর্ঘ সঙ্গমের আনন্দ। সে চাইবে তার স্পর্শকাতর অংশগুলোতে ছেলেটি মুখ দেবে, কোনরকম ইতস্তত: না হয়েই । আমাদের খুব কম সংখ্যক দেশী পুরুষদের কাছ সে রকমটি আশা করা যেতে পারে। যদিও নানাধরনের পর্ন সাইটের কল্যাণে বহুবিধ আসনে সঙ্গম করা শিখে গেছে আমাদের প্রজন্ম। ডগি স্টাইল, গার্ল অন টপ তো খুব মামুলী ব্যাপার হয়ে গেছে। অথচ, আমাদের আগের প্রজন্মে এক মিশনারি স্টাইল( নারী নীচে ও পুরুষ উপরে থেকে উপগত হওয়া) ছাড়া আর কোন স্টাইল জানত না !

আমাদের পুরুষদের শিখতে হবে দীর্ঘক্ষণ কিভাবে সঙ্গম করা যায়। কিভাবে তার পার্টনারকে সময় দিয়ে উত্তেজিত করে পূর্ণ পিচ্ছিলতা আনতে হয়। কিভাবে তার পার্টনারকে স্বল্প সময়ের মাঝে কয়েকবার অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি দেওয়া যায়। আমার মনে হয় না , বাঙ্গালী পুরুষদের এইসব ব্যাপারে তেমন কোন শিক্ষা বা প্র্যাকটিস আছে। মাঝখানে, কিশোর বয়স থেকে অশ্লীল নীল ছবি দেখে দেখে আমাদের ধারণা হয়েছে, সঙ্গমের জন্য অশ্ব-লিঙ্গের প্রয়োজন ও অন্তত: ২০-৩০ মিনিট লিঙ্গ চালনা করতে না পারলে , সেটা কোন সঙ্গমই না !

লিঙ্গের সাইজ নিয়ে কথা বলতে বলতে , মেয়েদের যোনীর স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে কথা উঠল। ছেলেদের মধ্যে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করে সেই সতীচ্ছদের গল্প শুনে শুনে। কবে কার বাসর রাত হয়েছে, নতুন বউয়ের সতীচ্ছদ হয়েছে, সেটা দিয়েই নারীর কুমারীত্ব নির্ধারণ করে থাকে সে। ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে মানেই তার সতীচ্ছদ হতে হবে , হালকা বা ভারী রক্তপাত হতে হবে।নইলে সে ভার্জিন নয়। প্রথম সঙ্গমের রক্তপাতে সে চিৎকার চেঁচামেচি করবে ; পরের দিন সে ব্যথায় কাতর থাকবে। ধীরে ধীরে দ্বিতীয় রাত থেকে সে সঙ্গমের পূর্ণ আনন্দ পেতে থাকবে। এইতো !

আমাদের এই শিক্ষা ও ধারণাগুলো আশেপাশে শুনে শুনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আমরা ধরেই নিয়েছি, এইটাই সর্বৈব সত্যবচন। কিন্তু, প্রাকৃতিক-ভাবে অনেক মেয়েদের সতী-পর্দা নাও থাকতে পারে। আবার যেসব মেয়ে খেলাধুলা করে দৌড়ঝাঁপের সময় অনেকের সতীচ্ছদ আগেই হয়ে থাকতে পারে।

আবার আমাদের বাঙালী পুরুষের বদ্ধমূল ধারণা, বহুগামী মেয়েদের যোনি অনেক প্রশস্ত ও ঢিলে হয়ে থাকে। হ্যাঁ, সেটা যোনির প্রারম্ভে কিছুটা প্রশস্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু ভিতরের নালীটির সেই এই রকমভাবে ঢিলে বা প্রশস্ত থাকার সম্ভাবনা কম। মেয়েদের যোনির লুজ থাকা বা টাইট থাকার ব্যাপারেও কিছু বলতে হয়। অবশ্য তাঁর আগে আমার জানা দরকার যে বা যারা আমার লেখাটি পড়ছেন , তিনি বহুগামী কীনা ! আমার কয়েকজন বহুগামী বন্ধু আছে । তাদের মধ্যে কয়েকজন বাস্তববাদী আছে। তাদের মতে, এই ব্যাপারটা ( যোনির লুজ বা টাইট ) অনেকখানি পুরুষদের মানসিক সমস্যা । বহুগামীদের অনেকেই পরকীয়ার মাধ্যমে তাদের বহুগামিতা বজায় রাখছেন। অনেকে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে বান্ধবী ও যৌনকর্মীর সাহচর্য নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, আমি একগামী হলেও, অন্যের বহুগামিতা নিয়ে আমার কোন বাতিক বা বিকারগ্রস্ততা নেই। বহুগামিতা প্রাকৃতিকভাবেই আছে প্রাণিজগতে এবং আমাদের মনুষ্যসৃষ্ট সমাজে সম্পদ ও সন্তানের উত্তরাধিকারের বিশৃঙ্খলা রোধের জন্যই বহুগামিতাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। সে আরেক কাহিনী। সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটতে হবে।

যা বলছিলাম। কথা বলার স্বার্থে ধরে নিচ্ছি, আমাদের সেই বহুগামী বন্ধুটি ক্লাস – A ও ক্লাস- B নারীদের সঙ্গে দৈহিকতা করছে। C ও D ক্লাস আমাদের আলোচ্য নয়। সেই ক্ষেত্রে A ও B ক্লাস নারীদের পরকীয়া বা বহুগামিতা বজায় রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়স ও দৈহিক গঠন মেইন্টেইন করতে হয়। নিজের সময় নষ্ট করে অথবা টাকা পয়সা খরচ করে কেউ C ও D ক্লাস নারীর সঙ্গে সঙ্গম করতে চাইবে না। সেটা রিকশাওয়ালা বা সমাজের খুব নিম্নশ্রেণীর জন্য। কোনভাবে যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে বীর্যপাত করাতে পারলেই তাদের কার্যোদ্ধার হয়ে যায়। অন্য কোন মানসিক আনন্দের ব্যাপারটা মুখ্য নয় এধরনের সঙ্গমে।

আবার আসি, যোনির ঢিলে ও টাইট প্রসঙ্গে। নির্দিষ্ট বয়সের নারীর যোনি অতি ব্যবহারের ফলে ঢিলে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, মোটামুটি সচেতন নারী দেহের যত্ন নিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সের বা বৃদ্ধ পুরুষের পুরুষাঙ্গ যেমন বয়সের কারণে উত্থান-রহিত বা কম দৃঢ় হতে পারে। ঠিক একইভাবে , পঞ্চাশের পর একজন নারীর যোনি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত ও ঢিলে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটি মেয়ে শুধুমাত্র বহুগামী হলেই তার যোনি ঢিলে হয়ে যায় না। যে সব নারী নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করেছেন , প্রসবের পরে তাদের যোনিও কিছুদিন প্রশস্ত থাকতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক-ভাবেই খুব দ্রুতই মাংসপেশিগুলো নিজের স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পেতে চেষ্টা করে।

আমাদের যৌন-জ্ঞান এতো বেশী অস্বচ্ছ , আর কৈশোর ও যুবাবস্থায় নানাধরনের চটি ও নীলছবি দেখে এতো বেশী আমাদের ফ্যান্টাসির জগতে বসবাস সে আর কহতব্য নহে। যৌনতা দুইজন নারী পুরুষের পারষ্পরিক তীব্র আকর্ষণের ফলাফল। সঙ্গম থেকে নারীপুরুষ তাদের প্রাপ্য আনন্দ খুঁজে নিক, বুঝে পাক—সেই কামনাই করি।

প্রথম প্রকাশ: ২রা ডিসেম্বর ২০১৬

কাজিনের বিয়ে

আমরা যখন স্কুল পেরিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছি, কে কোন পেশায় যাবে সেটা নিয়ে নানা ধরণের চিন্তা করতাম। আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত বাবা মায়ের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল ছেলেমেয়ে যেন ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হয়। ছেলেরা ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেয়েরা মেডিক্যালের জন্য প্রাণপাত করত। বিয়ের বাজারেও তাই, প্রথম সারিতে এঁদের নাম। আম্মা বলতেন বিয়ের বাজারে ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে কাতান শাড়ির মতো। শাড়ির ফ্যাশন বদলাতে বদলাতে কাঞ্জিভরম, বোমকাই, সম্বলপুরি, সিল্ক , মসলিন অথবা লেহেঙ্গা যাই আসুক না কেন। কাতান কীভাবে কীভাবে যেন টিকে গেছে। বাঙ্গালির বিয়ে হচ্ছে কাতান নেই , হতেই পারে না।

আমাদের তারুণ্যে বিয়ের বাজারের পাত্রের সঠিক র‍্যাঙ্কিং মনে নেই, তবে মেধাতালিকার প্রথমদিকে ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, তারপরে সেনাবাহিনী, কাস্টম অফিসার, পুলিশ, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যাংকার, আমেরিকা-কানাডা প্রবাসী পাত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ‘ইত্যাদির’ ভিতরে ছিল বেকার পাত্র , প্রাইভেট চাকরি করা পাত্র, ব্যবসায়ী পাত্র আরো অনেক গণ মানুষ, যাদের ‘পাত্র কি করে’ – এই প্রশ্নের উত্তর কয়েক লাইনে দিতে হয় !

অধুনা দেশের চাকরি একটাই! সেটা হচ্ছে সরকারি চাকরি। গত দুই দশকে সরকার বাহাদুর তার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সুযোগসুবিধা এমনভাবে বাড়িয়েছেন যে ; আমরা যারা নানা কারণে দেশের প্রাইভেট সেক্টরকে অনেক স্মার্ট চয়েস ভেবেছিলাম তাঁদের ভীষণ আফসোস হচ্ছে কেন তখন ঠিকঠাক মতো বিসিএস দিইনি আমরা !
বর্তমানে সরকারি চাকুরীজীবীদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা বিশ্ব রপ্তানিতে চীনের মতো। রপ্তানিতে পৃথিবীতে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ আছে—প্রথম কিন্তু বরাবরই সেই একজন ! তাও আবার বিশাল নাম্বারের ব্যবধানে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়-তৃতীয় হচ্ছে।

সরকার আমাদের ট্যাক্সের টাকাটাই কেবল ঠিকঠাক মতো নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের ব্যাপারে আর কোন শ্রম আইন( পেনশন, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মেডিক্যাল ইত্যাদি ইত্যাদি) যে একেবারেই মানা হচ্ছে না – সেই ব্যাপারে সরকার বাহাদুরের বিন্দুমাত্র গরজ নেই। থাকার কথাও না, আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের লোকেরা একটা সংখ্যা বই কিছুই নই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে, একজন কনস্টেবল পুলিশের যতোখানি গুরুত্ব আছে সরকারের কাছে , আমার মতো উচ্চহারে ট্যাক্স দেওয়া ১০০ লোকেরও সেই গুরুত্ব নেই ! অতএব আমরা শুধুই সংখ্যা !
যাই হোক ছোট মামার বড় ছেলের ( আবির হোসেন স্বাক্ষর) পাত্রী দেখার ও এঙ্গেঞ্জমেন্ট করার তারিখ ছিল গতকাল ৭ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ; মুরব্বীরা সবাই একসঙ্গে। পাত্র ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমানে এমবিএ করছে।পাত্রী ডাক্তারি পাশ করে , ইন্টার্ন শুরু করেছে ।

দুইজনেই যে ব্যাচমেট, গতকালই প্রথম জানলাম। আরো জানলাম , যে উভয়ে উভয়কে চেনে দীর্ঘ আট বছর ধরে। দুজনের কারো পড়াশোনা শেষ হয়নি বলে, ব্যাপারটা আংটি বদলেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা ছিল।
কিন্তু পরিবারের মুরব্বীদের অবাধ দেখাশোনা, ঘোরাফেরা নিয়ে আপত্তি আছে, একবারে আকদ করাটাই যুক্তিসঙ্গত মনে হলো। মুরব্বীদের কথা এভাবে এঙ্গেজমেন্টের পরে দেখাশোনা চলাফেরা শরীয়ত মোতাবেক হবে না। যদিও আমি আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলাম যে, আট বছরের প্রেমে কি এখনো শরীয়ত ঠিক আছে ! নানা আলোচনা শেষে রাত যখন গভীর, তখন এই ডাক্তার পাত্রী ও ইঞ্জিনিয়ার পাত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।

উভয়ের দীর্ঘ সুখের জীবন কামনা করি।

প্রথম প্রকাশঃ ৮ই ফেব্রুয়ারি,২০২০

 

করপোরেট অবজারভেশন ( চলতি আলোচনায় ঢুকবেন কীনা )

কয়েকজন অগ্রজ, সহকর্মী বা অধীনস্থদের চলতি কোন আলোচনায় অংশ নেবেন কি নেবেন না, সেটা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বেছে নেওয়া ভাল। আমার করপোরেট জীবনে এমন অনেকবার হয়েছে, কয়েকজন সমবয়সী সহকর্মী একটা কিছু নিয়ে কথা বলছি, হাসাহাসি করছি, হুট করে আমার কোন ঊর্ধ্বতন এসে যে কোন একটা শব্দ ধরে আমাদের আলোচনায় ঢুকে গেলেন। অথবা জিজ্ঞেস করলেন , কি ব্যাপার কি নিয়ে আলোচনা করছেন ? মুশকিল হচ্ছে, যুবাবস্থায় ও করপোরেট চাকুরেরা চা-পানের বিরতিতে হয় চিরন্তন নারীদেহ , যৌনতা অথবা কোম্পানির কোন অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলে। এখন ঊর্ধ্বতন কেউ জিজ্ঞেস করে ফেললে উত্তর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে ! সেই সময়ে, আমাদের মধ্যে হাজির জবাব দেওয়ার ক্ষমতা যার ভালো সে ধুনফুন কিছু একটা বলে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেওয়াতো। বস-কে তো আর বলা যায় না, আমরা মাধুরী দীক্ষিতের দেহবল্লরী বা ‘বে ওয়াচ ’ নিয়ে আলোচনা করছিলাম।

আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় কয়েকজন বসের মধ্যে মাত্র একজনকে পেয়েছি, যার চলতি আলোচনায় অনাবশ্যক অনুপ্রবেশের পরিমিতি বোধ ছিল। আর বেশিরভাগ ঊর্ধ্বতনদের এই ব্যাপারে পরিমিতিবোধের অভাব আছে। পরিস্থিতি না বুঝে হুট করে আরেকটি আলোচনায় ঢুকে পড়তেই পারেন যে কোন ঊর্ধ্বতন। কিন্তু সেটা যে প্রায়শ: বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, সেটা তাঁরা ভুলে যান।

হ্যাঁ, উচ্চকিত কণ্ঠে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঢুকে পড়ুন, আপনার মতামত দিন। তামিম ইকবালের খেলার সমালোচনা করুন। কিন্তু মাঝারি বা নিচু কণ্ঠের আলোচনায় অনুপ্রবেশ করার আগে পরিমিতিবোধ দেখানো উত্তম।

প্রথম প্রকাশ: ১৮ই জানুয়ারি,২০১৭

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেসবুকে) আমার কার্যক্রমের পর্যালোচনা

ফেসবুককে আমার প্রথম থেকেই মনে হতো একটা ঘরোয়া আড্ডার মতো। একটা লিটল ম্যাগাজিন পড়ার অনুভূতি থাকত। লিটল ম্যাগাজিনগুলোতে যেমন সারাক্ষণ তরতাজা মচমচে স্বাদু অনুভূতির ছাপানো হরফ থাকে , সেইরকম । এই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে নতুন করে পরিচয় হয়েছে। অসাধারণ কিছু মেধাবী লেখকের দৈনন্দিন দিনলিপি পড়ার সুযোগ ঘটেছে। আমি আরো বেশি রাজনীতি ও সমাজ সচেতন হয়েছি। নবীন প্রজন্মের কিছু চিন্তক , দার্শনিক , কবি ও সাহিত্যিকদের লেখা প্রতিদিন পড়ার সৌভাগ্য হচ্ছে। এঁদের একজন সতীর্থ আহসান। গতকাল , কিছু কথোপকথনের পরে, তিনি আমার লেখালেখি সম্বন্ধে কিছু বললেন। আমার কাছে ,সেটা অসংখ্য লাইক , লাভ, ওয়াও ইমোজি চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অনুমতি নিয়েই নিজের ওয়ালে পোস্ট করলাম।

“ আপনার লেখাজোকা ফেসবুকে যা প্রকাশিত হতো, মাঝেমধ্যে পড়া হত। হয়তো রিএকশন দিতাম, কখনো কখনো দিতাম না। আপনি মূলত প্রবন্ধ ঘরানার লেখা লিখে থাকেন। মোটামুটি লম্বা লম্বা বাক্যে। পড়তে শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না। যেন শ্বাসরুদ্ধকর কোনো ফিকশন পড়ছি, এমন একটা অনুভূতি জাগে। সেই টানা টানা শ্বাসরুদ্ধকর বাক্যগুলোর মাধ্যমে যে চিন্তার প্রকাশ ঘটান সেটা সব সময়ই কোনো না কোনো ভাবে চিন্তা উদ্রেককারী হয়ে থাকে।

পরিচ্ছন্ন ভাষা আর গোছানো চিন্তা আপনার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য। বোঝা যায় আপনি দুনিয়াকে অবহেলিত শোষিত পীড়িত মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। গণমানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়– এমন কোনো আচরণ আপনাকে ক্রুদ্ধ আর ব্যথিত করে। সেই মনোভাবকেই আপনি শৈল্পিক ভাষায় উপমায় প্রকাশ করেন। আমি শুধু অনুরোধ করব, এই ক্রোধ/দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি আরেকটা স্টেপ যোগ করুন। যেটা হচ্ছে, সেই বিপর্যয়টা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সেটার পরামর্শ দিতে পারেন। দেশি বিদেশি নানা উদাহরণ সহযোগে। এতে আমার মনে হয়, আপনার লেখাটার গুরুত্ব আরো বাড়বে। আপনি নিজে কী, নিজে ঠিক বুঝতে পারছেন না, এর কারণ আত্মবিশ্বাসহীনতা। এইটা একটা মারাত্মক ব্যাধি জাহিদ ভাই। এই রোগে যারে ধরে সে সাধারণত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

এবার আরেকটা কথা শুনেন। আপনি থাকেন ২ নাম্বার রোডে। আর আমি থাকতাম ৩ নাম্বার রোডে। আপনার ঠিক বিপরীত রোডেই। আপনি বেশ কয়েকবার আড্ডার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি প্রায়ই আপনার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে আসতাম। কিন্তু আপনাকে জানিয়ে যাওয়া হতো না। কারণ, সেই তীব্র হীনমন্যতা। আমি ওখানে থাকতাম, একাই লাগত। আপনার সাথে প্রায়ই আড্ডা দিতে ইচ্ছা হতো। সাহিত্য আড্ডা আর কি। কিন্তু তখনই আমার পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যেত। এই জন্য দুঃখিত। সামনে কখনো গেলে, এই নেকাব আর রাখব না। এই যে আমার আত্মবিশ্বাসহীনতা, এইটা অনেকগুলো সম্ভাবনাকে খুন করে থাকবে। হয়ত মনের সব বাঁধা পেরিয়ে আপনার সাথে দেখা করতে পারলে আমাদের চমৎকার সব সাহিত্য-আড্ডার অভিজ্ঞতা ঘটতে পারত। আপনার পরামর্শ বা কথাবার্তা আমার লেখাকে সমৃদ্ধ করতে পারত। আমার কোনো পরামর্শ হয়ত আপনারও কাজে লাগত। কিন্তু আমার এই আত্মবিশ্বাসহীনতা সে সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিলো।
আপনার লেখার হাত যথেষ্ট ভাল। চিন্তা পরিষ্কার। বইয়ে স্থান দেবার মত লেখা। শুধু একটু মনোযোগ আর আত্মবিশ্বাস বিনিয়োগের অভাব। মনে যা আসে, লিখতে থাকুন, তা যতই খারাপই হোক, এতে লেখার ফ্লো টা ঠিক থাকে। এই ফ্লো খুব ইম্পরট্যান্ট জিনিস। আর সময় পেলেই নানা বই পড়বেন। লেখার ফ্লো তৈরিতে বই পাঠের ভূমিকা অনেক। চিন্তাও সমৃদ্ধ হয়।

লেখা থেকে ধর্ম আর রাজনৈতিক বিষয়টা যেন সরাসরি না আসে তা খেয়াল রাখবেন। জানেনই তো এইদেশে মুক্তভাবে কথা বলার পরিবেশ নাই। একটা পদ্ধতি আছে, সেটার মাধ্যমে আপনি ধর্ম ও রাজনীতিকেও সমালোচনা করতে পারবেন। সেটা আপোষ পদ্ধতি বা ছলনা পদ্ধতি। এমনভাবে লিখতে হবে যাতে মনে হয় আপনি তাদের বিপক্ষের কেউ না। তাদেরই একজন। বন্ধ বান্ধব যেমন নিজেদের বন্ধু বান্ধবদের সমালোচনা করে। এই রকম আর কি। তবে লেখালেখির ক্ষেত্রে এই দুইটা বিষয় এড়িয়ে চলাই অধিকতর ভালো। লেখার মত দুনিয়ায় কত বিষয় আছে ভাই। তবুও এই দুইটাই যদি আপনাকে বেশি পীড়িত করে, তাহলে অবশ্যই ডিরেক্ট ম্যাথডে লিখবেন না। নানা ছলনার আশ্রয় নিবেন। এতে মূল কাজটাও হয়ে গেল, আপনিও টার্গেট হলেন না।

যা করুন, আর নিজেকে অবহেলা করবেন না। আপনাকে ক্লাসিক লেখক হতে হবে এই দিব্বি কে দিছে। আপনি একজন বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হিশেবে আপনার মতামত প্রকাশ করবেন দুই মলাটের মধ্যে। এবং, সেটা খুব ভাল ভাবে সম্পন্ন করার যথেষ্ট যোগ্যতা আপনার রয়েছে। জাস্ট শুরু করে দিন।”

প্রথম প্রকাশঃ ১৮ই জানুয়ারি, ২০২০

মানুষ ও শিল্পমাধ্যম

মানুষ ও শিল্পমাধ্যম

শিল্পের অনেক শক্তি ।
সহজবোধ্য শিল্প আরো বেশি শক্তিশালী। যে শিল্পের রস আস্বাদনের জন্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কালো অক্ষরের দুর্গম স্রোত পাড়ি দিতে হয় না ; যা সাধারণ মানুষ সহজেই চোখে দেখে,কানে শুনে আনন্দ পায় তার শক্তিমত্তা স্বীকার করতেই হয় !
একটা কালজয়ী উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন যতোগুলো মানুষের কাছে পৌঁছায় ; মূল উপন্যাসটি তার শতকরা ১ ভাগ লোকের কাছেও পৌঁছায় কি?

এই যে আমাদের ভার্চুয়াল ইন্টারনেটের পৃথিবী — এটা সেই হিসাবে একটা সহজগম্য ও সহজবোধ্য শিল্প মাধ্যম। মূলত: অনেক শিল্পের ব্যবহারিক প্রয়োগ বা মূল্য থাকে না। কিন্তু এই প্রথম একটা শিল্প মাধ্যমের ব্যবহারিক ব্যাপ্তি দেখে পুরো পৃথিবী হতবাক ও বিস্মিত। যে দৃষ্টিতেই দেখি না কেন, আমাদের সমাজের ডোনাল্ড ট্রাম্প,নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বাসার ড্রাইভার-দারোয়ানরাও এই প্রথম কোন মাধ্যমে বাধাহীনভাবে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছে।

 

ভুলে যাবেন না , ব্যক্তি মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হল তার অস্তিত্বের সংকট। সে কে? কেন এই পৃথিবীতে, কোথায় যাচ্ছে সে , ইত্যাদি নানাবিধ সংকট। হাজার বছর ধরে ধর্ম ও দর্শন অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কে না জানে , অনেক প্রশ্নই অমীমাংসিত থেকে যাবে। একই সংগে , ব্যক্তি-মানুষ সবচেয়ে বেশি যেটা আশৈশব চেয়েছে, সেটা হচ্ছে পরিপার্শ্বে তার নিজের আত্মপরিচয় থিতু করতে। সন্তান চেয়েছে মায়ের মনোযোগ, প্রেমিক- প্রেমিকার , বন্ধুর কাছে বন্ধু, রাষ্ট্রের কাছে জনগণ ! এমনকি প্রান্তিক দরিদ্রতম মানুষটিও নিজের পরিবারের চৌহদ্দির বাইরে সমাজে কাছে স্বীকৃতি ও মনোযোগ চেয়ে চলেছে সেই আদিকাল থেকে ! ইন্টারনেটের এই শিল্প সেই তুচ্ছাতিতুচ্ছ মানুষটিকেও একটা দেওয়ার মতো পরিচয় দিয়েছে। আয়নায় নিজের চেহারা একটু ভালো দেখানোর আনন্দ আছে , তার চেয়েও গভীর আনন্দের আর বিস্ময়ের হচ্ছে আরো পাঁচজনের চোখে নিজেকে দেখার !

এই শিল্পের কারিগরেরা রাতদিন এক করে বাস্তবের খুব কাছাকাছি, কিন্তু ঠিক বাস্তব নয় এমন একটা পৃথিবী তৈরি করেছেন আমাদের জন্য। এই ভার্চুয়াল পৃথিবী এখন আমাদের অস্তিত্বের অংশ , অনিবার্য নিয়তি। এই শিল্পমাধ্যম এতোই সহজবোধ্য , সর্বত্রগামী ও সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে যে আমরা যারা দুই প্রজন্মের সেতুবন্ধন হিসাবে এখন মধ্যবয়সে, তারাও বুঝে উঠতে পারছি না , ঠিক কতোখানি কাছে থাকব আর কতোখানি দূরে থাকব !

কালো অক্ষরে কয়েক সারি লেখা আমার প্রকাশিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সীমিত আরো কয়েকজনের কাছেও হতে পারে। কিন্তু আমার অস্তিত্বের সংকটের জায়গা থেকে আমি চাইব, সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে আমার চিন্তা পৌঁছাক । হোক সেই চিন্তা তুচ্ছ ও অর্থহীন, হোক সেটা বহুশ্রুত ! কিন্তু আমার কাছে যে সেই চিন্তা একেবারে নবীন !
আমার মুহূর্ত চিন্তার সঙ্গে দেওয়া এই ভাস্কর্যটি বিপরীতমুখী মনে হতে পারে। কারণ , আমি সর্বগ্রাসী ও সর্বব্যাপী এই নতুন শিল্পের শক্তিমত্তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ করছি না। বরং আমি এর সর্বব্যাপিতার মুগ্ধ একজন মানুষ। তবে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মতই শিল্প মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার ও আসক্তি আছে; সেটাও সবাই জানে। আমাদের দিনের সিংহভাগ সময় মোবাইল ফোনের নানা ধরণের সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে। আমরা যা দেখছি, পড়ছি শুনছি সেগুলো আমাদের কোন চিন্তা করাচ্ছে না। অনেকাংশে সেটা নিখাদ টাইমপাস আর সহজলভ্য, সহজপাচ্য বিনোদিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় জর্জরিত। ঠিক যেন সিনেমার হলে বসে বিশাল প্যাকেটের পপকর্ন খাওয়া ; খাচ্ছি তো খাচ্ছি,কিন্তু আখেরে না ভরছে পেট, না হচ্ছে পুষ্টি।

এই শক্তিশালী শিল্পমাধ্যমগুলো মানুষকে যেমন সুযোগ করে দিয়েছে কাছাকাছি হওয়ার ; তুচ্ছ মানুষটিকেও প্রকাশিত হওয়ার; আবার একই সঙ্গে এর অতি ব্যবহার ক্রমশঃ সেই মানুষদের মাঝে অর্থহীন দূরত্ব তৈরি করে চলছে। দূরত্বের এই অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ শিল্পে রূপ দিয়েছেন ব্রিটিশ শিল্পী Gali May Lucas এবং জার্মান ভাস্কর Karoline Hinz ! ভাস্কর্যটি নেদারল্যান্ডের আর্মস্টার্ডামে।

প্রথম প্রকাশ: ১৩ই ডিসেম্বর,২০১৯