by Jahid | Feb 18, 2023 | করপোরেট অবজারভেশন
আমি যখন করপোরেট দুনিয়ায় ম্যানেজার বা সোজা-বাংলায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হলাম ; যখন আমার দৈনন্দিন দায়িত্বের বাইরে অফিস ম্যানেজমেন্ট ও পিপল ম্যানেজমেন্টের স্পর্শকাতর হিসাবনিকাশ শুরু হলো– তখনকার কিছু কথা। এই লেখার কয়েকটি পর্ব হতেও পারে, নাও পারে। পুরোটাই নির্ভর করছে আমার সুবিখ্যাত আলস্যের মেজাজ মর্জির উপর।
বাংলাদেশের সব করপোরেট অফিসে মালিকের একটা অলিখিত নিজস্ব সিস্টেম থাকেই, তবুও মোটা দাগে ম্যানেজারদের কাজ হয়, গুচ্ছের লোকজনদেরকে ক্রমাগত বিক্রয় ও উৎপাদন বৃদ্ধির চাপ দেওয়া। বেশিরভাগ অফিসের চলনসই হিউম্যান রিসোর্স ( এইচআর) বিভাগও থাকে না। এমনকি বিদেশি যে সব এমএনসি ( মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি) আমাদের এখানে ব্যবসা করতে এসেছে, তাঁরাও এই দেশে এসে, কীভাবে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে হবে, কীভাবে কর্মচারীদের কম তেলে মুচমুচে ভাজতে হবে শিখে ফেলে। এবং এই শিক্ষণ পদ্ধতিতে সাহায্য আমাদের দক্ষ ম্যানেজাররাই করে। সার্বিকভাবে সকল কর্মচারীদের সুবিধা না দেখে, নিজের ব্যক্তিগত সুবিধাটি বুঝে নেওয়ার মতো বুদ্ধি বাঙালের সবসময়ই ছিল। তাই, নিজের গাড়ির মডেল বছর বছর বদলালেও ঐ বুদ্ধিমান ম্যানেজারদের অধীনস্থ কর্মচারীদের সুযোগসুবিধার কোন হিল্লে হয় না। নেগোশিয়েশনের মূল অংশটি বুদ্ধিমান ম্যানেজার করে ফেলেন।
বিদেশী মালিকদের দেখান, যে তিনি এই কোম্পানির কতো কতো টাকা বাঁচিয়ে দিলেন। এবং এই খরচ সাশ্রয়ের ভিতর দিয়ে তিনি মূলত নিজেকে কোম্পানির কাছে অপরিহার্য প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিদেশী কোম্পানিগুলোও দেখে, বাঙালকে দিয়েই যখন বাঙাল ম্যানেজ করা যাচ্ছে, তখন শুধু মিছে নিজেদের কাপড়ে নোংরা লাগানোর দরকার কী !
ম্যানেজমেন্টের যেহেতু কোন ট্রেনিং নেই আমাদের সিংহভাগ অফিসে। নবীন ম্যানেজারকে মালিকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সে কী চায় বোঝার জন্য। আর বিখ্যাত ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতি তো আছেই। কর্পোরেট অফিসের ম্যানেজারদেরকে চায়ের কাপের মডেল সিলেকশন থেকে শুরু করে, কোন কর্মচারী দ্বিতীয় বিয়ে করে পুলিশী মামলা খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে–সবই ম্যানেজ করতে হয়।
ব্যবসাবৃদ্ধির অপরিহার্য দায়িত্বের পাশাপাশি প্রথমদিকে পাবলিক রিলেশন মেইন্টেইন করা ছিল আমার জন্য নতুন কাজ । নতুন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানেই, সাপ্লাই/ভেন্ডর-বেইজের অনেক রথীমহারথীরা পদধূলি দিতেন। অনেকেই বিশুদ্ধ খাজুর আলাপ করতে আসতেন। নিজের কাজের ফাঁকে এই মালিক পক্ষ ও শিল্পকারখানার টপ ম্যানেজমেন্টকে আলাদা করে সময় দিতে হতো। জরুরী কাজ ফেলে রেখে ঘণ্টা ধরে তাঁদের জীবনের সাফল্য , বিত্তশালী হয়ে ওঠার গল্প মন দিয়ে শুনতাম। গল্প শোনার ফাঁকে অনেকেই আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতেন, আমি এতোগুলো বছর ধরে এই সেক্টরে কাজ করে মূলত তেমন কিছুই ‘ফালাইতে’ পারি নাই । আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করতে করতে তাঁদের আগামী ভবিষ্যতের বহুবিধ গল্প আরো বেশি করে মন দিয়ে শুনতাম।
তো তখন, অনেকে আলাপের ফাঁকে এই কথা সেই কথা বলার পর, আমাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেন, ভাই সন্ধ্যার পর কি করেন? আমি হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলতাম, ঢাকা শহরে অফিস থেকে বের হয়ে, কতক্ষণে আমি বাসায় পৌঁছবো সেই চিন্তায় থাকি রে ভাই। উল্লেখ্য, আমার দুই কন্যা তখন বেড়ে উঠছে। আমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে থাকত ওদের চিন্তা। কখন বাসায় পৌঁছব, একটা শাওয়ার দিয়ে, সাময়িক ক্লান্তি মুছে ফেলে, খাওয়া দাওয়া সেরে ওদের সঙ্গে খুনসুটি করব সেই চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকতাম। সুতরাং অফিস থেকে বাসায় পৌঁছানোই আমার মোক্ষ ছিল। কালেভদ্রে যদি আমার অদ্ভুতুড়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে ( রবিবার) যদি কোন আড্ডা বা অনুষ্ঠান ভাগ্যক্রমে সাংঘর্ষিক হয়ে যেতো, তবে সেটাতে হাজির হতাম। এমনও হয়েছে, মাসের পর মাস আমি কোন আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াতে ( যেটা এখনো জনস্বার্থে মূলত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বা শুক্রবার হয়ে থাকে) উপস্থিত হতে পারিনি। এক পর্যায়ে দেখা গেল, সবাই আমাকে হিসাবের খাতা থেকে বাদ দিয়েই তাঁদের বিয়ে, জন্মদিন আর অন্যান্য অনুষ্ঠানের শিডিউল নির্ধারণ করছে।
আমি সন্ধ্যারাতে তেমন কিছুই করি না, সেটা শুনে অনেক উৎসাহী শুভাকাঙ্ক্ষী বিস্ময় ও উষ্মা প্রকাশ করতেন। সন্ধ্যার পর আমি কোন তরল পানীয়ের টানে, কোন বিনোদনের টানে, ক্লান্তি-হরণকারী কোনকিছুতে অংশগ্রহণ না করে বাসায় চলে যাই, সেটি সম্ভবত তাঁরা মেনে নিতে পারতেন না বা অন্য অনেকের সঙ্গে মেলাতে পারতেন না। একদিন একজন বলেই বসলেন, ‘আপনি এরকম বলেই, আপনার কিছুই হবে না ভাই !’ আমি তাঁকে বুঝিয়ে বললাম যে, আমার এই সীমাবদ্ধতার কথা আমি বিলক্ষণ জানি। করপোরেট পৃথিবীতে আমার কয়েকটি পদন্নোতি আর মানুষের মুখে ‘ উনি ভাল মানুষ’ এর বাইরে আমার কিছুই অর্জন করা সম্ভব হবে না, সেও আমি বহু আগেই বুঝে ফেলেছি।
এ তো গেল গত ১৪/১৫ বছর আগের কথা। তারপরে কতদিন, মাস, বছর চলে গেল। ঢাকা মেগা-সিটি হলো, রাস্তায় যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতি বা ৪ কি:মি: / ঘণ্টা হলো। মেট্রো-রেলের হুলুস্থুল শুরু হলো, ফ্লাইওভারে ঢাকা শহর ছেয়ে গেল। এখন গত কয়েকবছর ধরে আরেক ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। সফল উদ্যোক্তারা, শিল্পপতিরা নিজের সাফল্যের কথা বলতে বলতে আমাকে অনেকখানি করুণা করেই বলেন, ভাই আপনি আর কতদিন এই চাকরি-বাকরি, অন্যের দাস হয়ে থাকবেন? আপনার এতো অভিজ্ঞতা, একটা শিল্প-কারখানা নিদেন একটা অফিস দিয়ে বসেন। আমরা তো আছি, ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সঙ্গে আমার পরিচিত, স্বল্পপরিচিত , গণ্ডীর ভিতরের বাইরের কে বা কাহারা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হয়ে বনানী, গুলশানে ফ্ল্যাট করে ফেলেছে এবং সমস্ত পরিবারকে কানাডা, আমেরিকায় স্থানান্তর করে নিজে এখন বিজনেস ক্লাসে আসা যাওয়ার ভিতরে আছে, সেই বিশাল লিস্ট শুনিয়ে দেন। আমি একে ভয়ঙ্কর অলস , যার ফলশ্রুতিতে প্রতিভার অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সামাজিক দৃষ্টিতে ব্যর্থ মানুষ। নিজের ব্যর্থতা আর সম্পত্তির সীমাবদ্ধতা নিয়ে এমনিতেই নিজের কাছেই নিজে ম্রিয়মাণ হয়ে থাকি। এখন সেই কথা যদি সকাল বিকাল অন্য লোকেও বলা শুরু করে তাহলে আর যাই কোথায় ?
এখন, কেন সবাই উদ্যোক্তা হতে পারেন না, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হতে পারেন না। কেন সেনাবাহিনীতে অনেককেই মেজর পদমর্যাদা থেকেই অবসরে চলে যেতে হয়, অথবা কেন সারাজীবন একটা অকিঞ্চিৎকর জীবন যাপন করে যেতে হয়—সেসব তো আর একটা নির্দিষ্ট কারণে হয় না। অনেককিছু মিলিয়েই সেটা হয়ে থাকে। পৃথিবী এভাবেই চলে আসছে। তীব্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা , পারিবারিক চাপ, সামাজিক বলয়, কর্মস্পৃহা, জীবনে কিছু একটা হয়ে ওঠার সেই তীব্রতম উত্তেজনা তো সবাই বহন করতে পারেন না। যার হয় তার ৯ বছরেই হয় ; যার হয় না , তার ৯০ বছরেও হয় না। এখন এই না হওয়াটাকে মেনে নেওয়া যায়। অথবা মেনে না নিয়ে জীবনপাত করে সমাজের উচ্চতম জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা যায়।
আমি আজন্ম অলস, আমি আমার নিজের কমফোর্ট জোন থেকে সেই দুগ্ধপোষ্য বয়স থেকেই বের হতে পারি নাই। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধকরি আমার মাতৃদুগ্ধ পানের ইতিহাস। আমি প্রায় ছয় বছর পর্যন্ত স্তন্যপায়ী ছিলাম। আমার অন্য দুই সহোদর ছয়মাস একবছরে স্তন্যপায়ী থেকে সাবালক হয়েছেন। অথচ , আমি কেমন করে যেন বছর ছয়েক পর্যন্ত স্তন্যপায়ী ছিলাম। অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, নানাজনের নানা উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে আমাকে মাতৃস্তন থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কোনভাবেই কেউ সফল হয়নি। আম্মা মুরব্বীদের কথা শুনে বুকে নিমপাতা থেকে শুরু করে আরো অনেককিছুর প্রলেপ দিয়ে দেখেছেন। কিন্তু আমি সেইসব তুচ্ছ করে আমার অধিকার আদায় করে নিতাম। পুরোদমে ইশকুলগামী হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি যতদিন স্তন্যপায়ী ছিলাম, আম্মার সেই অমৃতধারাও বাধাহীন, অবিরত ছিল। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করত, কেন রে দুষ্টু, তুই এখনো মাতৃস্তন নিয়ে জোরাজুরি করছিস, কিছুই তো পাওয়ার কথা না। আমি হা করে গালভর্তি দুগ্ধধারা তাঁকে দেখিয়ে দিয়ে বোঝাতাম আমার বরাদ্দ তো থেমে যায়নি !
যাই হোক, কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম !
ওই যে বলছিলাম, সামান্য ও সাধারণ প্রাপ্তিতেই আমি ডুবে থাকি বা থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। কুয়োর ব্যাঙের মতো, বাইরের আলোকিত পৃথিবী, সুবিশাল খাদ্য বৈচিত্র্যে লুব্ধ হওয়ার চেয়ে নিজেকে নিয়ে নিজের মতো থাকার কুঅভ্যাস আছে আমার। এখন এই পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বয়সে এসে, জীবনানন্দের কাব্য দিয়ে নিজেকে রক্ষা করি, সেলফ প্রোটেকশন নিই, নিজেকে শোনাই:
‘আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে।
জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।’
আমি জানি , আমাকে সবাই মনে করিয়ে দেয় ; একটু ইচ্ছে করলেই আমি ‘জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতা’ পেতে পারতাম, এখনো চাইলেই পারি। কিন্তু কী যে করি, এই আজন্ম আলস্যের জন্যই সেই সাফল্য আমার চার-দেয়ালের বাইরে মাথা কুটে মরে গেল,আর আমি রইলাম আমার কমফোর্ট জোনে। নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে না যাওয়ার এই সাফল্য-বিধ্বংসী চারিত্রিক কুঅভ্যাসের পাশাপাশি নিজেকে অন্যভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি। আজ এই দুই-যুগের কর্পোরেট জীবনে, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, পরিশ্রমী, বুদ্ধিমান অসংখ্য উদ্যোক্তাদের আমি কুটিরশিল্প থেকে বৃহদায়তন শিল্পকারখানার মালিক হতে দেখেছি। আমার চেয়ে বছর দুয়েকের বড় , সমবয়সী অথবা আমার অনেক কম বয়েসের উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণদের দেখেছি, তাঁরা জানেন কীভাবে দুইহাতে বুনো মোষের শিং ধরে নিজের পায়ের তলায় আনতে হয়। দেখেছি, কী অপরিসীম পরিশ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে সমাজের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত শক্তিমত্ত মানুষে পরিণত হতে হয়।
আমি যেখানে ছিলাম, মোটের উপর কিছু বেতন ও পদবী-বৃদ্ধিসহ সেখানেই পড়ে আছি। আমার অবস্থা হয়েছে, গ্রামের প্রাইমারী ইশকুলের সেই শিক্ষকদের মতো। বছরের পর বছর , যুগের পর যুগ অসংখ্য কচিকাঁচা তাঁদের চারপাশ দিয়ে হাইস্কুল, কলেজ, বিসিএস দিয়ে কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউ পুলিশ, কেউ আমলা, কেউ মন্ত্রী হয়ে যান। কিন্তু প্রাইমারী ইশকুলের শিক্ষককে সেই সীমাবদ্ধ জীবন ও জগত নিয়ে পড়ে থাকতে হয়। এখন বোধকরি নতুন করে জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা বহন করবার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। বাকীজীবন শিক্ষকসুলভ ঔদার্যে অন্যের সাফল্যে আনন্দ লাভ করাই শ্রেয় মনে করছি।
প্রথম প্রকাশ: ২৬শে মার্চ, ২০২২
by Jahid | Feb 18, 2023 | দর্শন, লাইফ স্টাইল
আমাদের ব্যাচমেটদের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে সেক্স নিয়ে কথা হচ্ছিল। মেসেঞ্জার হচ্ছে ফোন কলের মত। কথা শেষ তো সবাই সবকিছু ভুলে যায়। ওই আলোচনায়, সেক্স নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে, সেটা নিয়ে আমি কিছু কথা বলেছি। যা আমি নানা অভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকে, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা থেকে পেয়েছি।
যেহেতু গুছিয়ে লিখেই ফেলেছি। সেটা বরং জনসমক্ষে প্রকাশিত থাক ; কখনও হয়তো কারো কাজে লাগতেও পারে। অনেক ভুল ধারণার অবসানও হবে। সবার যৌনজীবন সুখের হোক। কারণ আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতি ধনী-গরীব নির্বিশেষে দুইটি জায়গায় কাউকে বঞ্চিত করে নাই। সবাই সমান। দুইটি নেয়ামত বলি বা প্রকৃতিপ্রদত্ত দান হচ্ছে খাদ্যগ্রহণ ও যৌনতা। খাদ্য গ্রহণ ও যৌনতার মধ্যেই আমরা আমাদের পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেতে পারি। অন্য কোন ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাওয়ার সুযোগ প্রকৃতি রাখে নাই। সুতরাং যৌনতাকে নিষিদ্ধ ভেবে নানা ভুল ধারণা নিয়ে না থেকে সেটা নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ । আমি ব্যক্তিগতভাবে তাই মনে করি। কেউ ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা তুলতে পারে। তবুও আমি বিশ্বাস করি, খোলামেলা আলোচনা ভাল।
সেক্স ডিউরেশন , লিঙ্গের সাইজ ও দ্রুত-স্খলন ইত্যাদি নিয়ে আমাদের বিভ্রান্তি আছে। ওই যে বললাম, ব্যাপারটা নিয়ে খোলামেলা কেউ কথা বলতে চায় না। কেউ কেউ অনেক সময় দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বাগাড়ম্বর করে ফেলে। যা সে করেনি ,সেটার ফ্যান্টাসি করে সবার কাছে বড় হতে চায়। উল্টোদিকে, কেউ হয়ত সব কিছু ঠিক ঠাক মতোই করছে , কিন্তু অন্যদের বাগাড়ম্বর বা ফ্যান্টাসি শুনে ভাবছে , আহারে অন্যরা বোধহয় ‘ আসল পুরুষ’।
আমার পর্যবেক্ষণটা শেয়ার করি। দুঃখিত এই পর্যবেক্ষণ বিশেষ কাউকে নিয়ে নয়। সুতরাং এই অবজারভেশন শুধুমাত্র আমার বিগত কয়েক দশকের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা
১। লিঙ্গের আকৃতি কখনই যৌনতৃপ্তির মূল ব্যাপার নয়। নারীদেহে যোনির ২ ইঞ্চির ভিতরেই তাঁদের ‘জি-স্পট’ বা সকল যৌনানুভূতির স্নায়ু ও কেন্দ্রবিন্দু থাকে। কারো যদি ২.৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের লিঙ্গ থাকে তবে সে মোটামুটি ৯০ ভাগ নারীকে যৌন তৃপ্তি দিতে সক্ষম। অশ্বলিঙ্গের ব্যাপারে চাহিদা ও ফ্যান্টাসি সবার আছে। কিন্তু দেখা গেছে, যাঁদের অশ্বলিঙ্গ থাকে , তাঁদের পার্টনাররা নানারকম অস্বস্তিতে ভোগে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা যৌন আনন্দের চেয়ে বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।
২। পৃথিবীতে গড় পুরুষের শিথিল লিঙ্গ ২.৮ থেকে ৩.৯ ইঞ্চি হয়ে থাকে। আর উত্তেজিত অবস্থায় সেটা ৪.৭ থেকে সর্বোচ্চ ৬.৩ ইঞ্চি হয়। এর বেশী বা কম হচ্ছে ব্যতিক্রম ! কারো লিঙ্গ ৬.৩ ইঞ্চির চেয়ে বড় হলে ,তাঁর উচিৎ পর্ন মুভিতে যোগাযোগ করা। সবার ধারণা দেশ-ভেদে লিঙ্গের সাইজ অনেক কম-বেশী হয়। হ্যাঁ হয়, সেটা খুব সামান্য, কয়েক সেন্টিমিটার । যেমন, ইউরোপিয়ান ও আফ্রিকান দের লিঙ্গের সাইজ এশিয়ানদের চেয়ে কিছুটা বড় হয়। তাই বলে সেটা অশ্বলিঙ্গ হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, গড় পুরুষের, মানে সব দেশের গড় লিঙ্গের উত্তেজিত অবস্থার সাইজ ৫ ইঞ্চির কাছাকাছি। সো , ইরেকটেড লিঙ্গের সাইজ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। পার্টনারকে যৌন তৃপ্তি দিতে হলে, দিল্লীর কুতুব মিনারের প্রয়োজন নেই।
৩। দ্রুত-স্খলন ও দীর্ঘ-স্খলন নিয়ে অনেকের অনেক মনোবেদনা ও ফ্যান্টাসি আছে। বেশী বেশী ব্লু ফিল্ম দেখে ধারণা হয়েছে, মনে হয় ‘ আসল পুরুষ’ রা আধা-ঘণ্টা ধরে নারীদের সঙ্গে সেক্স করে। ভুল ! গড়ে যদি কারো যোনিতে লিঙ্গের প্রবেশের পরে, ৩ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে স্খলন হয় , সেটা স্বাভাবিক। কারো যদি ১৫ মিনিটের পরেও বীর্যপাত না হয়, তবে সেটা অস্বাভাবিক ও অনেকক্ষেত্রে পার্টনারের জন্য পেইনফুল। কারণ পার্টনারের লুব্রিকেশন শুকিয়ে যেতে পারে। আর আমাদের বাঙালী পুরুষদের স্বভাব হচ্ছে, বউকে ধরার ২ মিনিটের মধ্যে আমরা আমাদের লিঙ্গ যোনিতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করি বা করে ফেলি। ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার মেয়েদের উত্তেজিত হতে সময় লাগে ৩ থেকে ৭ মিনিট। তবে ব্যতিক্রমও আছে, মাসিকের পরের কয়েকদিন মেয়েরা ২/১ মিনিটেই উত্তেজিত হয়ে রসসিক্ত হয়ে পড়ে।
সো, পার্টনারকে রসে সিক্ত করতে হলে সময় দিতে হবে। নানা ভাবে মর্দন , চোষণ, ফোর প্লে করে তাঁকে উত্তেজিত করে তারপরে লিঙ্গ প্রবেশ করাতে হবে। তাড়াহুড়া করলে, বীর্যপাত ঠিকই হবে কিন্তু বেচারি থেকে যাবে অতৃপ্ত।
৪। সেক্স ডিউরেশনের আরেকটা মূল ব্যাপার হচ্ছে, নিরাপদ সময়। লুকিয়ে লুকিয়ে করতে গেলে দ্রুত স্খলন হবেই। ভিতরে টেনশন নিয়ে সেক্স করার চেয়ে না করা ভাল। নিরাপদ স্থান ও সময় হচ্ছে, যখন পাশে ঘুমানো বাচ্চা আপনাকে বিরক্ত করবে না। বা দরজা খোলা আছে, যে কেউ ঢুকে পড়তে পারে। এই মুহূর্তগুলোতে দ্রুত স্খলন হতেই পারে।
৫। ব্লু ফিল্ম দেখে দেখে আমাদের অনেকের ধারণা হয়েছে, যে ‘ আসল পুরুষ’ এর বীর্যপাত মনে হয় এক গ্লাস বা এক জগ হয়! ভুল ! গড়ে পুরুষের বীর্যপাত হয়ে সর্বোচ্চ এক চা চামচের সমান। সেটার পরিমাণ নির্ভর করে, পুরুষটি কী ধরণের খাদ্য খেয়ে অভ্যস্ত। এটার রং, গন্ধ পুরোটাই নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের উপর। আসলে যৌনতা শুধু লিঙ্গ ও যোনীর ঘর্ষণে বীর্যপাতের মতো এতো সহজ ব্যাপার না। পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্ক। মাথায় সারাক্ষণ দ্রুত বীর্যপাতের দুশ্চিন্তা থাকলে সেটাই হবে। আপনি যা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন , তাই হবে। বরং উল্টোটা ভাবা উচিৎ। শরীরের যত্ন নিন, নিজেকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিন, তারপর সেক্স করেন। আপনাদের অনেকেই মোরগ-মুরগীকে সেক্স করতে দেখেছেন। ওই যে, মোরগ দৌড়ে গিয়ে কয়েক সেকেন্ডর ঘর্ষণে তাঁর বীর্যপাত করায়। কেউ যদি ভাবে, সে সঙ্গিনীর সঙ্গে সারারাতে তিন চারবার সেক্স করা খুব বাহাদুরির ব্যাপার সেটা তাঁর নিজস্ব ভুল চিন্তা। সেটা বিয়ের প্রথমদিকে হতেই পারে।
কিন্তু একবার বীর্য-স্খলনের পরে অন্তত: ৪৫ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে আরেক বার লিঙ্গের উত্তেজিত হতে। মনে রাখতে হবে, পরিপূর্ণ আনন্দের সঙ্গে রাতে একবার সেক্স করলে সেটার রেশ থেকে যায় কয়েকদিন। মোরগ-মুরগীর দ্রুতলয়ের মতো সারারাতে ৩/৪ বার বা ততোধিক-বার সেক্স করার কথা শুনে হতাশ হওয়ার কিছু নাই।
ব্যাপার হচ্ছে, নিজের বীর্যপাতের চেয়েও সঙ্গিনীর চরম তৃপ্তির দিকে নজর রাখতে হবে। প্রবিষ্ট হলাম আর আমার মাল আউট , আমার কাজ শেষ , তুমি মুড়ি খাও – ঠিক না ! সবার সুস্থ যৌন জীবন হোক এই কামনা করি।
তো উপরের আলোচনায়, যৌনতার কিছু বিভ্রান্তি নিজের মতো করে খণ্ডানোর চেষ্টা করেছি। যৌন আলোচনা সুস্থভাবে হলে সেটা থেকে আমাদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, লিঙ্গের সাইজই নারীর যৌনতৃপ্তির অন্যতম বা একমাত্র অনুষঙ্গ । আসলে তা না। লিঙ্গের সাইজ সামান্যই প্রভাব রাখে পুরো সঙ্গমে। ব্যাপার হচ্ছে, একগামীতার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মেয়েরা তাদের হাজব্যান্ডের লিঙ্গের আকার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে বা থাকতে বাধ্য হয়। কারণ অন্য কারো লিঙ্গের সাইজের সঙ্গে তাদের এটা তুলনা করার সুযোগ থাকে খুবই কম। তা ছাড়া, সেক্স ডিউরেশন বা সঙ্গমের স্থায়িত্ব নিয়েও অন্যের সংগে তুলনা করার সুযোগ কম থাকে।এমন ও হয়েছে, কোন মেয়ে সারাজীবনেও অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি পায় নি। সে জানেই না , অর্গাজম কি ! অথচ জীবনের বড় অংশটি মেয়েটির কেটে গেছে গতানুগতিক যৌনসংগমে ও সন্তান উৎপাদনে।
এবার, নিজের অভিজ্ঞতার একটা গল্প বলি। ।একবার ফ্লাইটে করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ঢাকা আসছিলাম। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। পাশের সীটের বাংলাদেশী তরুণ আমার সঙ্গে গল্প করা শুরু করল।জিজ্ঞাসা করে জানলাম , সে বিয়ে করতে বাংলাদেশে যাচ্ছে। কিন্তু সে ব্যাপারটাতে মোটেও খুশী নয়। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যা জানালো, তাঁর আসলে সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে সেক্সের অভিজ্ঞতা আছে। সে আরও জানালো , সে বাংলাদেশী কোন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করে দৈহিক ভাবে সম্ভবত: কোনদিনই সুখী হতে পারবে না।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম ‘কারণ কি ?’
সে যা ব্যাখ্যা করল, কারণ হচ্ছে, পশ্চিমের মেয়েরা বিছানায় দুর্দান্ত অ্যাকটিভ। সেক্স যে পারষ্পরিক বোঝাপড়ার, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ব্যাপার সেটা তাঁরা বোঝে। সুতরাং সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে যৌনসংগম হয় তুলনামূলক ভাবে তুমুল আনন্দের। প্রতি-চুম্বন, প্রতি-মর্দন, গুঙিয়ে ওঠা , শীৎকার দেওয়া প্রতিটা ব্যাপারেই তারা অনেক বেশী সক্রিয়। আর আমাদের বাংলাদেশী মেয়েদের ব্যাপারে সে বলল, ‘ জাহিদ ভাই , ভ্যাদা মাছ দেখছেন কখনো ? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ দেখেছি, — ওই যেই মাছগুলো ম্যান্দা মেরে মাছধরা জালের নীচে পড়ে থাকে। সে বলল, ‘ বাংলাদেশী মেয়েরা সঙ্গমের সময় আপনার নীচে পড়ে থেকে ভ্যাদা মাছের মতো শুধু কুঁ কুঁ করে।’ একবার সাদা চামড়ার মেয়েদের সঙ্গে সত্যিকারের সেক্স যে করেছে, তাঁর পক্ষে বাংলাদেশী মেয়েদের সঙ্গে সেক্স করে মজা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
আমার গল্পের প্রাথমিক অংশ শেষ !
একইভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে , যদি আমাদের বাংলাদেশী কোন তরুণী কোনভাবে যদি ইউরোপ আফ্রিকার প্লেবয় টাইপের কারো সঙ্গে সেক্স করার সুযোগ পায় , তাহলে কি হতে পারে ? মানে যে ছেলে সব রকম চুম্বন, ফোর প্লে, এক্সাইটমেন্ট করার পদ্ধতি জানে এবং একটা মেয়েকে মাল্টিপল অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি দিতে পারে– তাঁর সঙ্গে একবার সেক্সের পরে, মেয়েটির যৌন উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে যাবে। সেও চাইবে দীর্ঘ সঙ্গমের আনন্দ। সে চাইবে তার স্পর্শকাতর অংশগুলোতে ছেলেটি মুখ দেবে, কোনরকম ইতস্তত: না হয়েই । আমাদের খুব কম সংখ্যক দেশী পুরুষদের কাছ সে রকমটি আশা করা যেতে পারে। যদিও নানাধরনের পর্ন সাইটের কল্যাণে বহুবিধ আসনে সঙ্গম করা শিখে গেছে আমাদের প্রজন্ম। ডগি স্টাইল, গার্ল অন টপ তো খুব মামুলী ব্যাপার হয়ে গেছে। অথচ, আমাদের আগের প্রজন্মে এক মিশনারি স্টাইল( নারী নীচে ও পুরুষ উপরে থেকে উপগত হওয়া) ছাড়া আর কোন স্টাইল জানত না !
আমাদের পুরুষদের শিখতে হবে দীর্ঘক্ষণ কিভাবে সঙ্গম করা যায়। কিভাবে তার পার্টনারকে সময় দিয়ে উত্তেজিত করে পূর্ণ পিচ্ছিলতা আনতে হয়। কিভাবে তার পার্টনারকে স্বল্প সময়ের মাঝে কয়েকবার অর্গাজম বা চরম-তৃপ্তি দেওয়া যায়। আমার মনে হয় না , বাঙ্গালী পুরুষদের এইসব ব্যাপারে তেমন কোন শিক্ষা বা প্র্যাকটিস আছে। মাঝখানে, কিশোর বয়স থেকে অশ্লীল নীল ছবি দেখে দেখে আমাদের ধারণা হয়েছে, সঙ্গমের জন্য অশ্ব-লিঙ্গের প্রয়োজন ও অন্তত: ২০-৩০ মিনিট লিঙ্গ চালনা করতে না পারলে , সেটা কোন সঙ্গমই না !
লিঙ্গের সাইজ নিয়ে কথা বলতে বলতে , মেয়েদের যোনীর স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে কথা উঠল। ছেলেদের মধ্যে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করে সেই সতীচ্ছদের গল্প শুনে শুনে। কবে কার বাসর রাত হয়েছে, নতুন বউয়ের সতীচ্ছদ হয়েছে, সেটা দিয়েই নারীর কুমারীত্ব নির্ধারণ করে থাকে সে। ভার্জিন বা কুমারী মেয়ে মানেই তার সতীচ্ছদ হতে হবে , হালকা বা ভারী রক্তপাত হতে হবে।নইলে সে ভার্জিন নয়। প্রথম সঙ্গমের রক্তপাতে সে চিৎকার চেঁচামেচি করবে ; পরের দিন সে ব্যথায় কাতর থাকবে। ধীরে ধীরে দ্বিতীয় রাত থেকে সে সঙ্গমের পূর্ণ আনন্দ পেতে থাকবে। এইতো !
আমাদের এই শিক্ষা ও ধারণাগুলো আশেপাশে শুনে শুনে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। আমরা ধরেই নিয়েছি, এইটাই সর্বৈব সত্যবচন। কিন্তু, প্রাকৃতিক-ভাবে অনেক মেয়েদের সতী-পর্দা নাও থাকতে পারে। আবার যেসব মেয়ে খেলাধুলা করে দৌড়ঝাঁপের সময় অনেকের সতীচ্ছদ আগেই হয়ে থাকতে পারে।
আবার আমাদের বাঙালী পুরুষের বদ্ধমূল ধারণা, বহুগামী মেয়েদের যোনি অনেক প্রশস্ত ও ঢিলে হয়ে থাকে। হ্যাঁ, সেটা যোনির প্রারম্ভে কিছুটা প্রশস্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু ভিতরের নালীটির সেই এই রকমভাবে ঢিলে বা প্রশস্ত থাকার সম্ভাবনা কম। মেয়েদের যোনির লুজ থাকা বা টাইট থাকার ব্যাপারেও কিছু বলতে হয়। অবশ্য তাঁর আগে আমার জানা দরকার যে বা যারা আমার লেখাটি পড়ছেন , তিনি বহুগামী কীনা ! আমার কয়েকজন বহুগামী বন্ধু আছে । তাদের মধ্যে কয়েকজন বাস্তববাদী আছে। তাদের মতে, এই ব্যাপারটা ( যোনির লুজ বা টাইট ) অনেকখানি পুরুষদের মানসিক সমস্যা । বহুগামীদের অনেকেই পরকীয়ার মাধ্যমে তাদের বহুগামিতা বজায় রাখছেন। অনেকে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে বান্ধবী ও যৌনকর্মীর সাহচর্য নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, আমি একগামী হলেও, অন্যের বহুগামিতা নিয়ে আমার কোন বাতিক বা বিকারগ্রস্ততা নেই। বহুগামিতা প্রাকৃতিকভাবেই আছে প্রাণিজগতে এবং আমাদের মনুষ্যসৃষ্ট সমাজে সম্পদ ও সন্তানের উত্তরাধিকারের বিশৃঙ্খলা রোধের জন্যই বহুগামিতাকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। সে আরেক কাহিনী। সেটা বুঝতে হলে আমাদেরকে পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটতে হবে।
যা বলছিলাম। কথা বলার স্বার্থে ধরে নিচ্ছি, আমাদের সেই বহুগামী বন্ধুটি ক্লাস – A ও ক্লাস- B নারীদের সঙ্গে দৈহিকতা করছে। C ও D ক্লাস আমাদের আলোচ্য নয়। সেই ক্ষেত্রে A ও B ক্লাস নারীদের পরকীয়া বা বহুগামিতা বজায় রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট বয়স ও দৈহিক গঠন মেইন্টেইন করতে হয়। নিজের সময় নষ্ট করে অথবা টাকা পয়সা খরচ করে কেউ C ও D ক্লাস নারীর সঙ্গে সঙ্গম করতে চাইবে না। সেটা রিকশাওয়ালা বা সমাজের খুব নিম্নশ্রেণীর জন্য। কোনভাবে যোনিতে লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে বীর্যপাত করাতে পারলেই তাদের কার্যোদ্ধার হয়ে যায়। অন্য কোন মানসিক আনন্দের ব্যাপারটা মুখ্য নয় এধরনের সঙ্গমে।
আবার আসি, যোনির ঢিলে ও টাইট প্রসঙ্গে। নির্দিষ্ট বয়সের নারীর যোনি অতি ব্যবহারের ফলে ঢিলে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, মোটামুটি সচেতন নারী দেহের যত্ন নিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সের বা বৃদ্ধ পুরুষের পুরুষাঙ্গ যেমন বয়সের কারণে উত্থান-রহিত বা কম দৃঢ় হতে পারে। ঠিক একইভাবে , পঞ্চাশের পর একজন নারীর যোনি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত ও ঢিলে হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একটি মেয়ে শুধুমাত্র বহুগামী হলেই তার যোনি ঢিলে হয়ে যায় না। যে সব নারী নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করেছেন , প্রসবের পরে তাদের যোনিও কিছুদিন প্রশস্ত থাকতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক-ভাবেই খুব দ্রুতই মাংসপেশিগুলো নিজের স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পেতে চেষ্টা করে।
আমাদের যৌন-জ্ঞান এতো বেশী অস্বচ্ছ , আর কৈশোর ও যুবাবস্থায় নানাধরনের চটি ও নীলছবি দেখে এতো বেশী আমাদের ফ্যান্টাসির জগতে বসবাস সে আর কহতব্য নহে। যৌনতা দুইজন নারী পুরুষের পারষ্পরিক তীব্র আকর্ষণের ফলাফল। সঙ্গম থেকে নারীপুরুষ তাদের প্রাপ্য আনন্দ খুঁজে নিক, বুঝে পাক—সেই কামনাই করি।
প্রথম প্রকাশ: ২রা ডিসেম্বর ২০১৬
সাম্প্রতিক মন্তব্য