ভাঙ্গো দুর্দশার চক্র।। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

ডিপ্রেশন এলে মানুষ অহংকে হারিয়ে ফেলে ।তখন সে কেন বেঁচে আছে , কেন ঘুরে দাঁড়াবে , কেন জীবনকে তার আদৌ দরকার- সব বোধ সে খুইয়ে বসে।
আমাদের দেশে আমরা কিন্তু মানুষের উপর অসম্ভব অত্যাচার করি। কারণে-অকারণে তাদের ছোট করি। আমাদের স্কুলগুলোর অনেক শিক্ষক ছাত্রদের নানারকম শাস্তি দেন, অনেকসময় তাতে আত্মমর্যাদা পুরো নষ্ট করে দেন।
আমাদের স্কুলে এক স্যার ছিলেন, তাঁকে যদি ছাত্ররা কেউ কোনো প্রশ্ন করত , তিনি সঙ্গে সঙ্গে উল্টো প্রশ্ন করতেন –বাড়ি কোথায় ? ছাত্র যদি বলত- নোয়াখালী ; সাথে সাথে তিনি সর্বজ্ঞের হাসি হেসে মন্তব্য করে উঠতেন – ও ! এই জন্যই । সবাই হো হো করে হেসে উঠতো। আমাদের দেশে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে , পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে প্রায় প্রত্যেকটা জায়গায় প্রতি মুহূর্তে মানুষকে ছোট করা হয় । ‘ তুই কে, তুই কী , তুই কেন, তুই কিছু না , তুই আসলে একটা … মানে তুই একটা তুই!’…এইসব কথাবার্তা সবখানে। তার ফলে আমাদের অধিকাংশ মানুষ যে যার জায়গায় ছোট হয়ে মরে থাকে।
বিশ্বের প্রতিটা এয়ারপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করে দেখবেন , নিজেকে রাজার মতো লাগবে। কিন্তু আমাদের এয়ারপোর্টে মনে হবে অন্যরকম। সবাই এমন চোখে তাকাবে যেন মনে হবে বলছে , কে ঢুকল রে … কী নিল রে … ধর রে … বাঁধ রে … । এমনই অপমান সবখানে।

” ভাঙ্গো দুর্দশার চক্র। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।।”

বিস্রস্ত জর্নাল ।। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

বছর তিনেক আগে কেন্দ্রে দেখা করতে এল কয়েকজন তরুণ কবি। দলপতি ছেলেটা পুরোদস্তুর বাগ্মী। দু-চারটে কথা থেকেই বোঝা গেল, সাহিত্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ করার জন্যেই তাদের আসা। বাগ্মিতার বিপুল শক্তি নিয়ে সে বলে যেতে লাগলঃ

“ ষাটের দশকে আপনার সম্পাদনায় বেরিয়েছিল ‘ কণ্ঠস্বর’ – ওই দশকের তরুণ লেখকেরা সেদিন সমবেত হয়েছিল পত্রিকাটিকে ঘিরে। কী উত্তেজনার অস্বস্ত দিন সেসব, কল্পনা করতেও ভালো লাগে।”

“কিন্তু দশ বছরও পার হল না, পত্রিকাটি বন্ধ করে আপনি চলে গেলেন টেলিভিশনে। সবার কাছে আপনার অবস্থান ত্যাগের কারণ হিশেবে দেখিয়ে গেলেন নেহাতই এক খোঁড়া যুক্তি। লিখলেনঃ ‘ যৌবনের মৃত্যুই সুন্দর।’ অথচ ভেবে দেখুন, তরুণ লেখকদের মধ্যে কী উদ্দীপনাই না চলেছিল পত্রিকাটিকে ঘিরে। ”

একনিশ্বাসে কথাগুলো বলতে গিয়ে খানিকটা বোধহয় হাঁপিয়েই উঠেছিল কবি-বাগ্মী। কিছুটা দম নিয়ে ফের বলতে শুরু করলঃ

“ আজ এতগুলো বছর ধরে ‘ কণ্ঠস্বর’ বন্ধ। আপনিই বলুন, আমাদের সাহিত্যের সঙ্গে এরচেয়ে বড় ধরনের শত্রুতা একালে আর কেউ কি করেছে? কিন্তু যা যাবার তা গেছে। সুখের বিষয় , সম্ভাবনাময় নতুন ভূমিকায় জেগে ওঠার আরেকটা অপ্রত্যাশিত সুযোগ হঠাৎ করেই এসে গেছে ‘ কণ্ঠস্বর’ এর সামনে। সে সুযোগ যেমন আচমকা তেমনি সম্মানজনক । কেউ লক্ষ করুন আর নাই করুন, গত দুই দশকের ভেতর দিয়ে আমাদের কাল ও ভূগোল নতুন একটা জীবনানুভূতিতে জেগে উঠে নতুন একটা পালাবদল ঘটিয়ে ফেলেছে আমাদের সাহিত্যের অঙ্গনে। আর সেই উত্থানের পেছনে পেছনে আজ এই আশির দশকের শুরুতে একটা সম্পূর্ণ নতুন সাহিত্যদল এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের সাহিত্যের দোরগোড়ায়। না, এসে দাঁড়ায়নি শুধু, তারা আজ উদ্যত, একত্রিত, সমবেত। সবই আছে তাদের । ইচ্ছা, চেষ্টা, আত্মদান, শ্রম, প্রতিভা—কোনোকিছুরই ঘাটতি নেই। অভাব শুধু একটা ছোট্ট জিনিশের—তাদের এই উদ্দীপ্ত প্রেরণার একটা মুখপত্র—তাদের জ্বলন্ত চৈতন্যের একটা অগ্নিময় প্রতিনিধি। হ্যাঁ , একটা পত্রিকা— একটা রক্তিম জ্বলজ্বলে প্রাণবন্ত পত্রিকা, যার মধ্যদিয়ে এই নতুন যুগের শক্তিমান প্রবল নিষ্টুর আলোড়ন উৎক্ষিপ্ত হবে নিজস্ব জ্বালামুখ দিয়ে। আমাদের অনুরোধ, আলসেমি ফেলে ‘ কণ্ঠস্বর’ আর একবার বের করুন আপনি। আপনার নেতৃত্বে ‘ কণ্ঠস্বর’ আবার জ্বলে উঠুক দুদশক আগের মতোই—বেগবান তারুণ্যের অনিবার্য মুখপত্র হিশেবে—তবে এবার ফুরিয়ে যাওয়া ষাটের জীবনানুভূতি নিয়ে নয়—আশির দশকের টগবগে তারুণ্যের উদ্যত প্রতিভূ হিশেবে। ”

সিরাজউদ্দৌলা নাটকে নবারের শেষ সংলাপের মতোই তাঁর ভাষণের বিষণ্ন আকুতি যেন উতল হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে যেতে লাগল। সে একইভাবে বলে চললঃ

‘ কণ্ঠস্বর’ বের করার দায়িত্বটা কষ্ট করে আরেকবার শুধু নিন আপনি। ভেবে দেখুন, আপনার সামান্য একটু কষ্টের ওপর কতবড় একটা বিস্ফোরণ অপেক্ষা করে আছে। শুধু এটুকু পেলেই আশির দশকের শক্তিমান তারুণ্য উদ্যত তলোয়ারের মতো আকাশের দিকে হাত উঁচিয়ে দাঁড়াতে পারবে আর এ সমস্ত কিছুই সম্ভব শুধু আপনার তুচ্ছ একটু দায়িত্ব নেওয়ার ওপর।”

অনেকক্ষণ একটানা শুনে একসময় আস্তে করে তাকে বললাম, যা বুঝলাম তার মানে তো একটাইঃ “ যৌবন তোমার আর বেদনা আমার , তাই না?”

হঠাৎ ঘা খেয়ে যেন চমকে উঠল কবি-বাগ্মী। অনুরোধের অসঙ্গতিটুকু টের পেয়েই যেন , সলজ্জ মুখে, থেমে পড়ল সে।

বললামঃ এভাবে কি হয়? প্রতিটা নতুন কালই তার পাশব দাবি নিয়ে এসে দাঁড়ায় সেই যুগের শক্তিমান তারুণ্যের সামনে। নিজেদের স্বেদ রক্ত আত্মোৎসর্গ দিয়ে সে দাবি তাদের মেটাতে হয়। আমাদের যুগ-চৈতন্য যেসব নতুন অজানিত বক্তব্য উচ্চারণের দাবি নিয়ে আমাদের সামনে এসেছিল, সাধ্যমতো যত্নে আমরা সে ঋণ শোধের চেষ্টা করেছি। তোমাদের কাল ও ভূগোলের ঋণ তোমাদেরই শোধ করতে হবে। আমাদের নির্বীজ বার্ধক্য দিয়ে তোমাদের তারুণ্যের প্রতিকার আমারা কী করে করব?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ; বিস্রস্ত জর্নাল; ২৯.১০.৮৯

তথাগত, আপনাকে। সুবোধ সরকার।।

তোমাকে যদি কেউ আশ্বিনের সকালে জুতো মারে
তুমি কী করবে ,তথাগত?
তথাগত বললেন, অঘ্রাণের নিয়মে জুতোর ক্ষয় হবে
আমারও প্রতিহিংসার ইচ্ছা কমে আসবে ফাল্গুনে।
কিন্তু যে আমাকে জুতো মেরেছিল
সেই জুতোর পেরেক গত তিন হাজার বছর তাকে
খুঁচিয়ে চলেছে
‘ আবার আশ্বিন এসে গেল , জুতো ছুড়বে না ?’

কেউ যদি তোমার মুখ থেকে খাবার কেড়ে নেয়
তুমি কী করবে, তথাগত?
তথাগত বললেন,
যার খাবার আছে সে খাবার কেড়ে নিতে আসে না
যার নেই তাকে খেতে দাও ।
যদি খেতে না দাও
এরপর কিন্তু যাদের খাবার আছে তারা একটা দল হয়ে যাবে
যাদের খাবার নেই তারা একটা দল হবে
এদের একটা গৃহযুদ্ধ হবে।
তবে কী জানো , যাদের হাতে খাবার আছে তারাই জিতবে।

যদি কোন বেশ্যা এসে বলে, তুমি আমার শ্লীলতাহানি করেছ
তুমি কী করবে , তথাগত ?
তথাগত বললেন,
আমি বেশ্যার মাইনে বাড়িয়ে দিতে পারি ,
অট্টালিকা বানিয়ে দিতে পারি, কিন্তু তাকে পিঠে লিখতে হবে
‘ আমি পৃথিবীর প্রথম জীবিকা
মানুষ, আমাকে ভয় করো, শ্রদ্ধা করো , বিনাশ করো।’
তথাগত বললেন
কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি।

তোমাকে যদি দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়
কথা বলতে না দেয়
তুমি কী করবে , তথাগত ?
তথাগত বললেন,
কথা বলতে না দিলে বেঁচে গেলাম, কথা বলব না
এতদিন কথা বলেই বা কী হল
কিন্তু কথা বলতে দিলে আমি বলব
আমাকে কথা বলতে দিন।

তোমার সামনে ওরা যদি কোন কিশোরকে
রাস্তায় ফেলে মারে
তুমি কী করবে , তথাগত ?
আমিও ওদের সঙ্গে হাত লাগাব , আমিও দু’-এক ঘা দেব
তারপর বলব , এবার ছেড়ে দাও , এবার
ছেলেটা বাঁচুক
তোমারও বাঁচো । যে মারছে আর যে মার খাচ্ছে
দু’জনকেই বাঁচতে হবে।

যদি ওরা এসে বলে, সুজাতাকে আপনি লুকিয়ে রেখেছেন
ওকে ছেড়ে দিন আমাদের হাতে
তুমি কী করবে , তথাগত ?
তথাগত বললেন, আমি মেয়েটিকে ভালবাসি
আমি ওকে পরমান্ন বলে ডাকি
আমি কী করে ওকে ঘর থেকে বের করে দেব ?
তাহলে আমার প্রশ্নের জবাব দাও
তোমাদের মধ্যে কেউ আছে যে মেয়েটিকে ভালোবাসে ?
গলাতে চোলাই ঢেলে একজন এগিয়ে এল,
আমি ওকে ভালবাসি
দ্বিতীয়জন এগিয়ে এল, আবে ফোট, আমি ওকে ভালবাসি ।
তথাগত বললেন,
তিন হাজার বছর ধরে দেখে আসছি
তোমারা লড়াই করতে জানো
ভালবাসতে জানো না ।

একটা মেয়ে কি দু’জন পুরুষকে একই সঙ্গে ভালবাসতে পারে
তোমার কী মত, তথাগত ?
তথাগত বললেন,
এতে ধাতু দুর্বল হয়, ধানের ক্ষতি হয়
কিন্তু একেই তো বলে দু’পায়ে দাঁড়ানো।

একজন পুরুষ কি পারে এক সঙ্গে দু’টি মেয়েকে ভালবাসতে ?
তোমার কী মত, তথাগত ?
তথাগত বললেন,
পুরুষ একসঙ্গে বহু মেয়েকে ভালবাসে
কিন্তু যাকে সত্যি সত্যি ভালবাসে,
যার জন্য ছটফট করে, ঘুমোতে পারে না
সেই মেয়ে তাকে ভালবাসে না ।

রাজা কি তার ক্ষমতার জোরে একজনকে ধাক্কা দিয়ে
ফেলে দিতে পারে ?
তথাগত , তোমার কী মত ?
তথাগত বললেন,
যে ধাক্কা মারে তার জোর আছে
যে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় না তার জোর আরও বেশি,
দু’জনেই দু’টি জলবিন্দু কচুর পাতার ওপর
হাওয়া কোন দিক থেকে আসে তার উপর নির্ভর করছে কচুর পাতা,
ক্ষমতার বিন্যাস।
১০
যৌনসঙ্গম ছাড়া কি বড় কোন আনন্দ পৃথিবীতে নেই
তথাগত বললেন, নেই ।
যুদ্ধের মাঠে রাত্রিবেলা
সেনাপতি এবং সেনাপতির ছেলে
একই জিপসি মেয়ের ঘরে এলেন, আলাদা আলাদা ।
তথাগত বললেন,
কিন্তু একটা কথা আছে
ওই সেনাপতি যেদিন অন্ধ হয়ে হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তা পার হবে
তাকে প্রশ্ন করুন, সে বলবে
রাস্তা পার হওয়ার চেয়ে বড় আনন্দ পৃথিবীতে নেই।
১১
শত্রুকে সম্মান করা উচিত ?
তোমার কী মত , তথাগত ?
তথাগত বললেন,
যে তোমাকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছে
সে নিজে যতক্ষণ শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ তাকে
সম্মান করো।
এমনকী শত্রুর ডেডবডি যদি পড়ে থাকে রাস্তায়
তাকে সম্মান করে তুলে আনো ছায়ায়
তাকে স্নান করাও।
পারলে লুকিয়ে চোখের জল ফেলে আসো বাথরুমে ।
তথাগত বললেন,
সে তোমার শত্রু হতে পারে
কিন্তু মানুষের কাছে তার একটা পাওনা ছিল ।
সেটা তুমি দেবে না ?

খিদে। সুবোধ সরকার।।

মানুষর পেটে দু’রকম খিদে থাকে
একটা দিনের বেলার, একটা রাতের বেলার
একটা পেটের একটু উপরে, একটা একটু নীচে
খিদে পেলে গোলাপ খাওয়া যায় না
এত দাঁত আমাদের, একটা শক্ত কিছু চাই।
দিনের বেলা খিদে যখন মাথায় ওঠে
তখন বাপ মা ঠিক থাকে না
যাদের কখনও খিদে পায় না তারা ঠিক বুঝতে পারবে না।
তিনদিন বাদে একটা লোক একথালা ভাত পেয়েছে , খেতে দিন।
আপনারা যারা খেতে পান
আপনারা যারা খেতে পান না , তাদের একটাই পার্থক্য
একজন দেয়াল টপকে গোলাপ বাগানে ঢোকে মেয়েলোকের জন্য
একজন দেয়াল ফাটিয়ে বেরিয়ে আসে দুটো ভাতের জন্য
নক্ষত্রখচিত আকাশ গরিবের জন্য নয়, তার
দিনের বেলা খিদে রাতের বেলার খিদে একাকার হয়ে গেছে
তার একটাই চিন্তা পরের দিন ছেলেমেয়েদের সে কী খেতে দেবে?

ডিম। সুবোধ সরকার।।

প্রথম ডাক্তার বললেনঃ ‘ আপনার বেবি তা হলে ন’মাসে পড়ল
ডিম সেদ্ধ করে হলুদ কুসুম খেতে দেবেন।’
দ্বিতীয় ডাক্তার ভালো করে ওজন নিয়ে শান্ত স্বরে বললেনঃ
‘ডিমের যে অংশটা সাদা ,প্রতিদিন দু’চামচ করে খাওয়াবেন।’
প্রথম ডাক্তার বললেনঃ
‘ডিম সেদ্ধ করার নিয়ম আছে, গরম এক বাটি জলে
ডিমটা ছেড়ে দিয়ে তুলে নেবেন।’
দ্বিতীয় ডাক্তার বললেনঃ
‘ডিম সেদ্ধ করার নিয়ম আছে
দশ মিনিট ভাল করে ফোটাবেন।’
হামাগুড়ি দিয়ে উলটোদিক থেকে ছুটে আসা
আমার ন’মাসের পুত্রের দিকে
অসহায় তাকিয়েছিলাম,
সে আমাদের ভাষা বুঝতে শেখেনি, তবু বললামঃ
ডিম সম্পর্কে মানবসভ্যতায় এখনও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি
কিন্তু পরমুহূর্তেই আমার মনে হল বাক্যটা ভুল
ডিম নয়, ডাক্তার সম্পর্কে মানবসভ্যতায় এখনও সঠিক সিদ্ধান্ত
আমরা নিতে পারিনি।

স্বামীরা কীরকম হবে। সুবোধ সরকার।।

যেতে পারে
অন্য মেয়ের কাছে, তবে রাত আটটার মধ্যে
তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
খেতে পারে
তবে বেশী নয়, বড় জোর তিন পেগ, কিন্তু পা যেন
ঠিক থাকে টেবিলের তলায়।
দেবতা টেবতা নয়
স্বামী হবে পাইন গাছের মতো ঋজু , বলবান
অনেক অনেক টাকা, কিন্তু টাকার ওপর
কোন লোভ থাকবে না।
আমি ভাবছিলাম অন্য কথা
কেরোসিন লাইনে মার খেয়ে ফিরে আসে যেসব স্বামীরা
হাফপ্যান্ট পরা পুলিশের হাতে মার খেয়ে ফিরে আসে যেসব স্বামীরা
ন্যাশনাল হাইওয়ে থেকে মার খেয়ে ফিরে আসে যেসব স্বামীরা
কাদাজল মেখে হাতে জুতো নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে যেসব স্বামীরা
তারা কীরকম হবে?
তারা কিন্তু রাত্রে নিদ্রিত স্ত্রীর পাশে শুয়ে
স্বপ্ন দেখে ডানা কাঁটা পরি
হারে-রেরে-রেরে
তারাভরা অঘ্রান নিশীথে
সিংহের পিঠে বসে তাঁরা শহরে ওপর দিয়ে উড়ে চলেছে।