by Jahid | Nov 27, 2020 | সাহিত্য
অনেকদিন থেকেই
আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।
কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।
যদি তার দেখা পেতাম, দামের জন্য আটকাতো না।
আমার নিজস্ব একটা নদী আছে,
সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে।
কে না জানে পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশি।
পাহাড় স্থানু, নদী বহমান।
তবু আমি নদীর
বদলে পাহাড়ই কিনতাম।
কারণ আমি ঠকতে চাই।
নদীটাও অবশ্য আমি কিনেছিলাম একটা দ্বীপের বদলে।
ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোট্টোখাট্টো ছিমছাম একটা দ্বীপ ছিল।
সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি।
শৈশবে দ্বীপটি ছিল বড় প্রিয়।
আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার কাছে মাপে ছোট লাগলো।
প্রবহমান ছিপছিপে তন্বী নদীটি বেশ পছন্দ হল আমার।
বন্ধুরা বললো, ঐটুকু একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড় একটা নদী পেয়েছিস?
খুব তো জিতেছিস মাইরি।
তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম।
তখন সত্যিই আমি ভালবাসতাম নদীটিকে।
নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত।
যেমন, বলো তো, আজ সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?
সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া।
শুধু একটা ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি, সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব।
আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না।
সে জানতো। সবাই জানে।
শৈশবে আর ফেরা যায় না।
এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।
সে ই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য,
আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাবো,
তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়।
একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশম নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।
আমার কষ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না।
আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না।
আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো, প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী,
এখানে আমি একা—এখানে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।
এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে।
হে দশ দিক, আমি কোনো দোষ করিনি।
আমাকে ক্ষমা করো ক্ষমা করো।
by Jahid | Nov 27, 2020 | সাহিত্য
যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো
জীবনের ভুলগুলি;
যদি ভালোবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘ পথে
তুলে নেবো ঝোলাঝুলি
যদি ভালোবাসা পাই শীতের রাতের শেষে
মখমল দিন পাবো
যদি ভালোবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো আর
সমুদ্র সাঁতরাবো
যদি ভালোবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল
যদি ভালোবাসা পাই জীবনে আমিও পাবো
মধ্য অন্ত্য মিল।
যদি ভালোবাসা পাই আবার শুধরে নেবো
জীবনের ভুলগুলি
যদি ভালোবাসা পাই শিল্প-দীর্ঘ পথে
বয়ে যাবো কাঁথাগুলি…
by Jahid | Nov 27, 2020 | সাহিত্য
আমি আমেরিকায় গিয়ে শুনে এলাম
লোকে ওখানেও বলছে:
দিনকাল যা পড়েছে
তুমি তোমার খাবারের কাছে ঠিক সময়ে
পৌঁছতে না পারলে
অন্য একজন পৌঁছে যাবে।
আরে, এ তো আমাদের দেশে
গরিব লোকেরা করত।
এখন বছরে তিনবার ধান হয় বলে
একজন ভিখিরি, একজন পাগলের খাবার
কেড়ে নেওয়ার আগে দুবার ভাবে।
তবে গতকাল শুনলাম
মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করতেন অংশুমান রায়
কী ভাল, তার অফিস তাকে সপরিবারে
মরিশাস পাঠাল বেড়াতে।
দশদিন বাদে ফিরে এসে দেখল
তার চেয়ারে বসে আছে তার থেকে একটু ফর্সা
তার থেকে একটু লম্বা
তার চেয়ে একটু ঘন চুল অন্য এক
অংশুমান রায়।
by Jahid | Nov 27, 2020 | সাহিত্য
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ।
আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না ।
কী করে তfও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,
সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে
সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে । অবাক লাগে ।
আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো ।
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন ?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,
নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে ।
মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো ,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো ।
আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে থাকাটা আর হতো না ।
মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় ;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি ।
by Jahid | Nov 27, 2020 | সাহিত্য
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।
আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?
by Jahid | Nov 27, 2020 | সাহিত্য
বড় কিছু পেতে হলে আমাদের যে কিছু দিতে হবে , এ তো নতুন কথা নয়। কিন্তু তা নিগ্রহ বা কষ্টের মধ্য দিয়ে দিলে হবে না, দিতে হবে জীবনের সুপ্রচুর উদ্যাপনের ভেতর দিয়ে। সব কাজ আমাদের কাছে সমান আনন্দ নিয়ে আসে না । অথচ আনন্দ না থাকলে সাধনা শুকিয়ে ওঠে। অবন ঠাকুরের খুব সুন্দর একটা কথা আছে । কথাটা হলঃ ‘ মানুষ কি ভেরেণ্ডা গাছ খেতে পারে ? পারে না; কিন্তু আখ গাছ খেতে পারে। কেন? খেতে পারে এর ভেতরকার মাধুর্যের জন্য ।এর ভিতর মিষ্টি রস আছে বলে।’ জীবনও তা-ই । এর পরিপক্ব ফলটি পেতে হলে এর ভেতরকার মাধুর্যটি আস্বাদন করতে হয়। না হলে এ হয়ে যায় খরখরে কাঠের মতো।
জীবন উৎসর্গ করা মানে ভয়ংকর চেহারা করে দুরূহ শপথে জীবনকে শ্বাসরুদ্ধ করা নয়। উৎসর্গের আসল মানে আনন্দ। উৎসর্গ মানে উদ্যাপন । সর্বোচ্চ আনন্দ আর উদ্দীপনার আলোয় বিচ্ছুরিত হওয়া। যার কাছে বেঁচে থাকা মানে জীবনকে নিগ্রহ নিষ্পিষ্ট করা , সে কিন্তু আসলে জীবন উৎসর্গ করে না। কর্মদানব আর কর্মবীর এককথা নয়। কর্মদানব জীবনকে জবাই করে জীবনকে পায় , আর কর্মবীর পায় জীবনকে বিকশিত করে। ওটাই প্রকৃত উৎসর্গ । এ উৎসর্গ শ্রেয়তর জীবনের জন্য । উচ্চতর লক্ষ্যের জন্য । ….
তাই সফল সেই মানুষ – যে পৃথিবীর কাছ থেকে নেয় বেশি আর সার্থক সেই মানুষ – যে দেয় বেশি। এই সার্থকতাই শেষপর্যন্ত জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু একটা বিশেষ পর্যায় পর্যন্ত সাফল্য আমাদের চাই। যেমন, টাকার কথাই ধরা যাক। অনেক বেশি হয়ে গেলে এ আত্মঘাতী জিনিশ। কিন্তু কিছু পরিমাণ না হলে তো সবই ভণ্ডুল। সব ক্ষেত্রের জন্যই এ সত্য।
ভাঙ্গো দুর্দশার চক্র। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।।
সাম্প্রতিক মন্তব্য