by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
এক-যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ। সে গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে।
রাজা বলিলেন, “এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।”
মন্ত্রীকে ডাকিয়া বলিলেন, “পাখিটাকে শিক্ষা দাও।”
২
রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়িল পাখিটাকে শিক্ষা দিবার।
পণ্ডিতেরা বসিয়া অনেক বিচার করিলেন। প্রশ্নটা এই, উক্ত জীবের অবিদ্যার কারণ কী।
সিদ্ধান্ত হইল, সামান্য খড়কুটা দিয়া পাখি সে বাসা বাঁধে সে বাসায় বিদ্যা বেশি ধরে না। তাই সকলের আগে দরকার, ভালো করিয়া খাঁচা বানাইয়া দেওয়া।
রাজপণ্ডিতেরা দক্ষিণা পাইয়া খুশি হইয়া বাসায় ফিরিলেন।
৩
স্যাকরা বসিল সোনার খাঁচা বানাইতে। খাঁচাটা হইল এমন আশ্চর্য যে, দেখিবার জন্য দেশবিদেশের লোক ঝুঁকিয়া পড়িল। কেহ বলে, “শিক্ষার একেবারে হদ্দমুদ্দ।” কেহ বলে, “শিক্ষা যদি নাও হয়, খাঁচা তো হইল। পাখির কী কপাল।”
স্যাকরা থলি বোঝাই করিয়া বকশিশ পাইল। খুশি হইয়া সে তখনি পাড়ি দিল বাড়ির দিকে।
পণ্ডিত বসিলেন পাখিকে বিদ্যা শিখাইতে। নস্য লইয়া বলিলেন, “অল্প পুঁথির কর্ম নয়।”
ভাগিনা তখন পুঁথিলিখকদের তলব করিলেন। তারা পুঁথির নকল করিয়া এবং নকলের নকল করিয়া পর্বতপ্রমাণ করিয়া তুলিল। যে দেখিল সেই বলিল, “সাবাস। বিদ্যা আর ধরে না।”
লিপিকরের দল পারিতোষিক লইল বলদ বোঝাই করিয়া। তখনি ঘরের দিকে দৌড় দিল। তাদের সংসারে আর টানাটানি রহিল না।
অনেক দামের খাঁচাটার জন্য ভাগিনাদের খবরদারির সীমা নাই। মেরামত তো লাগিয়াই আছে। তার পরে ঝাড়া মোছা পালিশ-করার ঘটা দেখিয়া সকলেই বলিল, “উন্নতি হইতেছে।”
লোক লাগিল বিস্তর এবং তাদের উপর নজর রাখিবার জন্য লোক লাগিল আরও বিস্তর। তারা মাস-মাস মুঠা-মুঠা তনখা পাইয়া সিন্ধুক বোঝাই করিল।
তারা এবং তাদের মামাতো খুড়তুতো মাসতুতো ভাইরা খুশি হইয়া কোঠাবালাখানায় গদি পাতিয়া বসিল।
৪
সংসারে অন্য অভাব অনেক আছে, কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট। তারা বলিল, “খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে, কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।”
কথাটা রাজার কানে গেল। তিনি ভাগিনাকে ডাকিয়া বলিলেন, “ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।”
ভাগিনা বলিল, “মহারাজ, সত্য কথা যদি শুনিবেন তবে ডাকুন স্যাকরাদের, পণ্ডিতদের, লিপিকরদের, ডাকুন যারা মেরামত করে এবং মেরামত তদারক করিয়া বেড়ায়। নিন্দুকগুলো খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে।”
জবাব শুনিয়া রাজা অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝিলেন, আর তখনি ভাগিনার গলায় সোনার হার চড়িল।
৫
শিক্ষা যে কী ভয়ংকর তেজে চলিতেছে, রাজার ইচ্ছা হইল স্বয়ং দেখিবেন। একদিন তাই পাত্র মিত্র অমাত্য লইয়া শিক্ষাশালায় তিনি স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত।
দেউড়ির কাছে অমনি বাজিল শাঁখ ঘণ্টা ঢাক ঢোল কাড়া নাকাড়া তুরী ভেরি দামামা কাঁসি বাঁশি কাঁসর খোল করতাল মৃদঙ্গ জগঝম্ফ। পণ্ডিতেরা গলা ছাড়িয়া টিকি নাড়িয়া, মন্ত্রপাঠে লাগিলেন। মিস্ত্রি মজুর স্যাকরা লিপিকর তদারকনবিশ আর মামাতো পিসতুতো খুড়তুতো এবং মাসতুতো ভাই জয়ধ্বনি তুলিল।
ভাগিনা বলিল, “মহারাজ, কাণ্ডটা দেখিতেছেন!”
মহারাজ বলিলেন, “আশ্চর্য। শব্দ কম নয়।”
ভাগিনা বলিল, “শুধু শব্দ নয়, পিছনে অর্থও কম নাই।”
রাজা খুশি হইয়া দেউড়ি পার হইয়া যেই হাতিতে উঠিবেন এমনসময়, নিন্দুক ছিল ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়া, সে বলিয়া উঠিল, “মহারাজ, পাখিটাকে দেখিয়াছেন কি।”
রাজার চমক লাগিল; বলিলেন, “ঐ যা! মনে তো ছিল না। পাখিটাকে দেখা হয় নাই।”
ফিরিয়া আসিয়া পণ্ডিতকে বলিলেন, “পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই।”
দেখা হইল। দেখিয়া বড়ো খুশি। কায়দাটা পাখিটার চেয়ে এত বেশি বড়ো যে, পাখিটাকে দেখাই যায় না; মনে হয়, তাকে না দেখিলেও চলে। রাজা বুঝিলেন, আয়োজনের ত্রুটি নাই। খাঁচায় দানা নাই, পানি নাই; কেবল রাশি রাশি পুঁথি হইতে রাশি রাশি পাতা ছিঁড়িয়া কলমের ডগা দিয়া পাখির মুখের মধ্যে ঠাসা হইতেছে। গান তো বন্ধই, চীৎকার করিবার ফাঁকটুকু পর্যন্ত বোজা। দেখিলে শরীরে রোমাঞ্চ হয়।
এবারে রাজা হাতিতে চড়িবার সময় কানমলা সর্দারকে বলিয়া দিলেন, নিন্দুকের যেন আচ্ছা করিয়া কান মলিয়া দেওয়া হয়।
৬
পাখিটা দিনে দিনে ভদ্র-দস্তুর-মতো আধমরা হইয়া আসিল। অভিভাবকেরা বুঝিল, বেশ আশাজনক। তবু স্বভাবদোষে সকালবেলার আলোর দিকে পাখি চায় আর অন্যায় রকমে পাখা ঝট্পট্ করে। এমন কি, এক-একদিন দেখা যায়, সে তার রোগা ঠোঁট দিয়া খাঁচার শলা কাটিবার চেষ্টায় আছে।
কোতোয়াল বলিল, “এ কী বেয়াদবি।”
তখন শিক্ষামহলে হাপর হাতুড়ি আগুন লইয়া কামার আসিয়া হাজির। কী দমাদ্দম পিটানি। লোহার শিকল তৈরি হইল, পাখির ডানাও গেল কাটা।
রাজার সম্বন্ধীরা মুখ হাঁড়ি করিয়া মাথা নাড়িয়া বলিল, “এ রাজ্যে পাখিদের কেবল যে আক্কেল নাই তা নয়, কৃতজ্ঞতাও নাই।”
তখন পণ্ডিতেরা এক হাতে কলম, এক হাতে সড়কি লইয়া এমনি কাণ্ড করিল যাকে বলে শিক্ষা।
কামারের পসার বাড়িয়া কামারগিন্নির গায়ে সোনাদানা চড়িল এবং কোতোয়ালের হুঁশিয়ারি দেখিয়া রাজা তাকে শিরোপা দিলেন।
৭
পাখিটা মরিল। কোন্কালে যে কেউ তা ঠাহর করিতে পারে নাই। নিন্দুক লক্ষ্মীছাড়া রটাইল, “পাখি মরিয়াছে।”
ভাগিনাকে ডাকিয়া রাজা বলিলেন, “ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।”
ভাগিনা বলিল, “মহারাজ, পাখিটার শিক্ষা পুরা হইয়াছে।”
রাজা শুধাইলেন, “ও কি আর লাফায়।”
ভাগিনা বলিল, “আরে রাম!”
“আর কি ওড়ে।”
“না।”
“আর কি গান গায়।”
“না।”
“দানা না পাইলে আর কি চেঁচায়।”
“না।”
রাজা বলিলেন, “একবার পাখিটাকে আনো তো, দেখি।”
পাখি আসিল। সঙ্গে কোতোয়াল আসিল, পাইক আসিল, ঘোড়সওয়ার আসিল। রাজা পাখিটাকে টিপিলেন, সে হাঁ করিল না, হুঁ করিল না। কেবল তার পেটের মধ্যে পুঁথির শুকনো পাতা খস্খস্ গজ্গজ্ করিতে লাগিল।
বাহিরে নববসন্তের দক্ষিণহাওয়ায় কিশলয়গুলি দীর্ঘনিশ্বাসে মুকুলিত বনের আকাশ আকুল করিয়া দিল।
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
আপনি যা বলবেন
আমি ঠি-ক তাই করবো
তাই খাবো
তাই পরবো
তা-ই গায়ে মেখে ব্যাড়াতে যাবো
আমার জমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো
কথাটি না বলে।
বললে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকবো সারারাত
তাই থাকবো।
পরদিন যখন, বলবেন
‘এবার নেমে এসো’
তখন কিন্তু লোক লাগবে আমাকে নামাতে
একা একা নামতো পারবো না।
ও টুকু পারি নি বলে
অপরাধ নেবেন না যেন।
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না সে শহরে যুদ্ধ শেষের ভাঙা পোড়া একটা এয়ারপোর্টের মতো বেঁচে থাকবে তুমি
তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে স্কার্টপরা বুড়ি বার্মিজ মহিলার মতো ভৌতিক নির্জনতা
তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ ঝুলে থাকবে তছনছ তারের জটিলতা
লতাগুল্মময় ক্রেনের কঙ্কাল, জংপড়া লোহালক্কড় আর হিংস্র ঘাসের মধ্যে ধু–ধু করবে তোমার জীবন
ভয়ার্ত সব মিলিটারি ভ্যান আর উল্টে থাকা ট্রলির পাশে ক্ষত–বিক্ষত একটা চাঁদ ওঠা রানওয়ের মতো
তুমি মুখ লুকিয়ে রাখবে গা–ছমছম করা জ্যোৎস্নায়।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না সে শহরে জনহীন কোনো পেট্রোল পাম্পের দেয়াল ঘেঁষে একটা মরা শিউলি গাছের মতো বেঁচে থাকবে তুমি –
তোমাকে ঘিরে হা–হা করবে নিদাঘরাত
দেখবে পর্যুদস্ত একটা হেলমেটের ফাটল দিয়ে মাথা তুলছে একগুচ্ছ সবুজ তৃণ
শুনবে ধ্বংসস্তুপের মধ্যে অর্ধডোবা সূর্যাস্তের মতো আগুন লাগা বিলুপ্তপ্রায় লাউঞ্জ থেকে ভেসে আসছে প্রেতহাসির শব্দ
আর তোমাকে ঘিরে নামবে এক জোড়া জনশূণ্য বুটের স্তব্ধতা।
যে শহরে আমি নেই থাকব না সে শহরে প্রতিদিন দুর্ঘটনা দিয়ে শুরু হবে তোমার ভোর
সকাল সাতটা থেকেই অনবরত টেলিফোনে আসতে থাকবে সানস্ট্রোকের সংবাদ
তোমার পাশের সাততলা জানালা থেকে লাফিয়ে পড়বে কোঁকড়াচুলের যুবক
একদিন গলায় ক্ষুর চালাতে–চালাতে ঘুমিয়ে পড়বেন সেই বুড়ো
সবুজ রঙের গলাবন্ধ পরে চকচকে বেতের স্টিক হাতে যিনি মনিংওয়াকে বেরুতেন রোজ
একটি কিশোরী তার আব্বার রেজর থেকে লুকিয়ে খুলে নেবে ব্লেড
গভীর জ্যোৎস্নাঙ্কিত স্ট্রিটের মাথায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়বে কালো রঙের গাড়ি
একজন মানুষ শিরীষ গাছের ভিতরে টিপে ধরবে আর একজন মানুষের গলা
পার্কের ঝরাপাতার উপর সারা রাত ধরে শিশিরে ভিজে যাবে মৃত তরুণীর হাঁটুর ভাঁজ
যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না সে শহরে চরম দুর্বোধ্যতম হয়ে বেড়ে উঠবে তোমার বিষণ্ণ সন্তান
বারবার করে বদলাতে হবে তার ঝাপসা চোখের চশমার গ্লাস
তুমি তাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে ভোরের ইস্কুলে
কিন্তু কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আর কোনোদিন ফিরে আসবে না নীল হাফপ্যান্টপরা তোমার ছেলে, আসবে না
তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে ইস্কুল–বাড়ির সামনে : রাস্তার ওপারে –
যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না সে শহরে নিয়মিত দুধের বোতল দিয়ে যাবে ডেইরি ফার্মের গাড়ি
কিন্তু সেই দুধে মেশানো থাকবে গুঁড়োবিষ
তোমার ফ্রিজের ভিতরে মরে পড়ে থাকবে সাদা ইঁদুর
তোমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় বসে থাকবে একটা তেলাপোকা তার রং হবে মারাত্মক রকম লাল
তোমার ওয়ারড্রোবের ভিতর থেকে হ্যাঙ্গার শুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়বে মধ্যরাতের কাপড়চোপড়
তুমি পালাতে চাইবে পালাতে চাইবে
ছুটে পালাবে
ছুটবে
ছুটতে ছুটতে তুমি তিনতলার জানলার একখন্ড পরদার মতো আটকে যাবে বারবার
তুমি ঊধ্বশ্বাসে ছুটে পালাবে ঘুমের ভিতর
কিন্তু মৃত শহর শাণিত করে রাখবে তার সমস্ত রাস্তার বালি
তারার ভিতর থেকে সারা রাত ধরে খসে পড়বে চুন
হঠাৎ লক্ষ–লক্ষ হাতের করতালি বেজে উঠবে আতঙ্কিত মোড়ে–মোড়ে
দেখবে সাদা ট্রাফিক দাঁড়িয়ে আছে বাজপড়া তালগাছের মতো
তার হাত দুটো ঝুলছে চাঁদহীন মরা ডালের মতো
চোখের লোমহর্ষক দুটো গর্তের ভিতর দিয়ে চলেছে বিষাক্ত পিঁপড়ের বাহিনী
তার মাথার ফাটলে গজিয়েছে একটা বটচারা
তোমার ভয়ার্ত চিৎকারে শুধু সেই মৃত ট্রাফিকের লাল
হা–এর ভিতর থেকে উড়ে যাবে একটা সন্ত্রস্থ বনটিয়া।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকব না সে শহরে লিফট তোমাকে নিয়ে সোজা নেমে যাবে পাতালে
তোমাকে নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পার্কের ধারের খাদে ছিটকে পড়বে বাস
লেকের হাঁসগুলি গুগলির মতো ঠুকরে খাবে মানুষের চোখ
আর খুব বিকেলবেলায় তুমি ক্লান্ত হয়ে
ক্লান্ত হয়ে
ক্লান্ত হয়ে
ফিরবে ঘরে
কিন্তু তোমার ঘরের নিঃসঙ্গ দরোজা তোমাকে খুলে দেবে হুহু শীতার্ত প্রান্তর
তোমার সোফা তোমাকে বসতে দেবে না পাঠিয়ে দেবে বেডরুমের বিছানায়
তুমি বাথরুমে যাবে, শাওয়ার খুলে দিলে ঝরবে রক্ত তুমি বেসিনে নুয়ে পড়বে, পানির ঝাপটা দিতেই মনে হবে
কার গলা যেন কাশতে–কাশতে পাঠিয়ে দিচ্ছে যক্ষার ফুল
তুমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে,
দেখবে বীভৎস একটা চিড় ধরে আছে আয়নায়।
সেই চিড়–ধরা আয়নার ভিতরে তারপর ক্রমশ হারিয়ে যাবে তোমার আর্তনাদ
আর তোমার মনে হবে, আমি নেই।
~আবিদ আজাদ (১৯৫২-২০০৫)
by Jahid | Nov 28, 2020 | সাহিত্য
“একদিন এই পৃথিবীর আর কিছুই থাকবে না
শুধু এক অন্ধ অবস্থান , যেখানে শুধু
বিভ্রান্ত দিন আর রাত্র ঘোরে-
বিশাল আকাশের নীচে যেখানে ছিল অ্যান্ডিজ পর্বতমালা
সেখানে একটিও পাহাড় নেই, এমনকি একটা গিরিখাতও না
পৃথিবীর সমস্ত প্রাসাদ ও বাড়িগুলোর মধ্যে
শুধু টিকে থাকবে একটিমাত্র বারান্দা
এবং এই বিশ্বের মানব-জাতির মানচিত্রে
শুধু একটা বিষাদ , যার মাথায় আচ্ছাদন নেই।
ভূতপূর্ব আটলান্টিক সাগরের চিহ্ন থাকবে
বাতাসের সামান্য লবণাক্ত স্বাদে
একটা মায়াময় উড়ন্ত মাছ জানবে না
সমুদ্র কেমন দেখতে ছিল।
১৯০৫ সালের এক কুপেতে বসে
(চারটা চাকা আছে কিন্তু রাস্তা নেই)
অতীতকালের তিনটি যুবতী কন্যা
তখনো রয়ে গেছে, কিন্তু শরীর নেই, শুধু বাষ্প,
জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকবে বাইরে,
আর ভাববে প্যারিস বেশী দূর নয়
তারা প্রশ্বাসে নেবে বাতাসের দুর্গন্ধ
যাতে গলা বন্ধ হয়ে আসে।
একদা যেখানে অরণ্য ছিল , সেখানে ভেসে উঠবে
একটা পাখির গান , কেউ তাকে
দেখতে পাবে না , ধরতে পারবে না, শুনতেও পাবে না–
শুধু ঈশ্বর শুনবেন মন দিয়ে এবং বলবেনঃ
‘আরে ! এ যে একটা বউ কথা কও’!
জুল সুপরভাই (ফরাসী কবি)
( জন্ম উরুগুয়েতেঃ দক্ষিণ আমেরিকায় , কবি জীবন অতিবাহিত ফ্রান্সে )
by Jahid | Nov 28, 2020 | দর্শন, সাহিত্য
আমার মুশকিল এই যে , আমি মন্দিরে যখন কিছু বলি তখন নিজেকেই বলি , গুরুর আসনে বসে বাইরের কাউকে বলতে পারিনে। তার ফল হয় যে বলবার কথাগুলো সহজ হয় না। সেইজন্যে আমাকে ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত হয়েই কথা কইতে হয়। আমার নিজের কিছু উপকার হয় সন্দেহ নেই—কেননা চিরদিন আমি নিজেকে কথা বলেই শিক্ষা দিয়েছি।
ছয় অগ্রহায়ণ তেরোশো পঁয়ত্রিশ। নিজের কথা।। রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত চিঠি।
by Jahid | Nov 28, 2020 | দর্শন, লাইফ স্টাইল, সাহিত্য
আমার বোধ হচ্চে সায়ান্সে চিঠিলেখার পাঠই একেবারে উঠিয়ে দেবে—যাকে আজ চিঠি লিখতে হয় সেদিন তাকে তার আওয়াজসুদ্ধ একেবারে সামনে হাজির করে দেবে। কিন্তু সে হলে কি ভালো হবে ?
নয় অক্টোবর উনিশশো আঠাশ। নিজের কথা।। রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত চিঠি।
সাম্প্রতিক মন্তব্য