by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ-
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল ?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল ?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ !’
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তাহারে কেবা !
সকলে বলিল, ‘যাও- না নন্দ, কর না ভায়ের সেবা।’
নন্দ বলিল, ‘ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি ?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক্; ’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক !’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যতো তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশগুণ !–
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল;
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল!’
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, “আ-হা-হা ! কর কি, কর কি ! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই ?
বলো ক’বিঘৎ নাকে দিব খত, যা বল করিব তাহা’;
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা !’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিশন’ হয়;
হাঁটিতে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি-চাপা-পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
১
তিন ঘণ্টা পর হঠাৎ তোমার একটা ‘কুহু’
চাই না আমি,–চাই না আমি।
আমি চাই মহুর্মুহু কোকিল আমায়
ডাক পাঠাবে তার বাগানে।
আমি চাই অনন্ত বসন্ত, তুমি
সারাক্ষণ থাকবে জুড়ে আমার প্রাণে।
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
২
ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত গভীর জলের মাছ,
শিকারীর সঙ্গে কতরকমের খেলা খেলে-
তারপর যখন শিকারীর বড়শিতে ধরা পড়ে,
তখন চোখের পলকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
মাছকে নিয়ে শুরু হয় শিকারীর জলখেলা।
আমি জানি, আমি মৎস্য , তুমিই শিকারী-
আমি তোমার কষ্টার্জিত ধন।
আমার সাধ্য কি যে এড়াই তোমার বন্ধন?
আমি তোমার সুখের হাসি , দুখের ক্রন্দন।
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
৩
আমি কান পেতে রই,
প্রাণ পেতে রই,
চোখ পেতে রই স্ক্রিনে।
কখন তুমি গানের মতো,
সর্বনাশা বানের মতো,
রুদ্রকাম উত্থানের মতো
প্রবেশ করো
আমার মুঠোফোনে।
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
৪
তুমি আমাকে চতুর শিয়ালের মতো
পা ছেড়ে লাঠি ধরতে বলো না তো।
আদি রস হচ্ছে কাম, স্নেহ নয়।
স্নেহ তো কামের অনুবর্তী।
প্রেম , বন্ধুত্ব—এগুলো হচ্ছে
কামানুভূতির সংস্কৃত প্রকাশমাত্র।
বুঝতে পারলে, বোকা মেয়ে ?
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
সে হয় না।
হয় পুরোটা পাগল হও, নয় তুমি মরে যাও।
এই মাঠ মানুষ বিক্রির মাঠ,
এইখানে তুলা ও রমণী একত্রে ওজনে ওঠে,
এইখানে সর্প ও বৃশ্চিক একত্রে অপেক্ষা করে খদ্দের আসার,
এই গৃহ জনহীন, এই দেহ ভাঙা হাট বটে—
মরে গেলে হবে? তারও পরে খরচাপাতি আছে।
উৎপলকুমার বসু।। টুসু আমার চিন্তামণি। প্রকাশ ১৯৯৯
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
ঐ যে ছেলেটা দেখছ, স্থিরচিত্রে, একটু বাঁ- দিক ঘেঁষে , থমকে
রয়েছে, আরো বহু মানুষজনের সঙ্গে , কিছুটা ত্যারচাভাবে,
অন্য কিছু দেখছে হয়ত, হাসছে, নাকি কিছু চিবিয়ে খাচ্ছিল,
হাতে তো ঠোঙাই দেখছি, মুঠো ভর্তি কাঁচা সূর্য, চাঁদ লঙ্কা,
নক্ষত্রের মশলা-মাখানো ঝালমুড়ি, খাচ্ছে কিন্তু যথেষ্ট ক্ষুধায়
নয়, অন্য কিছু ভাবছে যেন সে—ঐ আমি, আমিত্ববিহীন , ফটো-
সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরে-রাখা মহাজাগতিক এক সৌরচিত্র,
তখন সকাল এগারোটার হবে বুঝি, শীত শেষ হয়ে আসছে,
বসন্ত এসেছে—বহু, বহুদিন আগে , এই বাংলায়, হাওড়ায়,
রেলের ইয়ার্ডে, জোড়া লাইন হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে আরো
অনেকের সঙ্গে, সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রেন, এই ফাঁকে
ওরা অন্যদিকে চলে যাবে মনে হচ্ছে।
উৎপলকুমার বসু।। শরীরচিহ্ন। প্রকাশ ২০০২।।
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
দিদি, ধন্যবাদ। আমি হলেবীদ্ মন্দিরের
স্ত্রী-যক্ষ মূর্তিটিকে হেসে বলি,
এসো , আমাদের সামান্য আশ্রয়ে একদিন
থাকো, আতিথ্য গ্রহণ করো, আমাদেরই সংসারের
উত্থানপতনে ভ্রষ্ট হও, জয়ী হও,
আমাদের আলনা শেয়ার করো, এই তাকে বই রাখো,
কার্তিক সন্ধ্যায় প্রথম শ্যামাপোকা দেখে বিষণ্ণ হও,
আমাদের সংসারের উপর চিরদিন কালো মেঘ, অনেক ঝড়, অনেক বজ্রপাত—
দ্যাখো, সে-সৌন্দর্য তোমার চেয়ে কিছু কম বিষাক্ত নয়।
উৎপলকুমার বসু। অগ্রন্থিত কবিতা ৩৪ । প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
তুমি তো বৈচিত্র্যে নও , একটি নির্দিষ্ট রঙে স্থির আছো
যার নাম ধূপছায়া । এ-রঙের প্রকৃতি কেমন
তা যদি জানতে চাও তবে একদিন প্রবল
বৃষ্টির শব্দে জেগে উঠতে হবে। দেখে নিয়ো
জানালা খোলা। হয়ত বা বন্ধ আছে, কোনোটারই
কাচ নেই। কাঠের চেয়ারটেবিল জলে ভাসছে।
আজ ছুটি। ছাত্ররা উধাও। তুমি একা বেকুব মাস্টার
ক্লাসরুমে ঘুমাচ্ছিলে। জেগে উঠলে এইমাত্র।
উৎপলকুমার বসু। অগ্রন্থিত কবিতা ৫ । প্রথম সংস্করণ ১৯৯৬
সাম্প্রতিক মন্তব্য