by Jahid | Dec 1, 2020 | লাইফ স্টাইল, সাম্প্রতিক
বড়কন্যার ছোটবেলা থেকেই মাছমাংসে অনীহা। সদ্য কৈশোরে পড়েছে। নিজের মতামত আছে । আবার, আমাকেও ওর মত মন দিয়ে শুনতে হয়। যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হয়। এই প্রজন্মের নতুন ট্রেন্ড প্রাণীজ আমিষ বর্জন করে নিরামিষাশী হওয়া। কেউ ভেজিটেরিয়ান কেউ কট্টর ভেগান। এরা প্রাণীহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে। প্রাণীজ আমিষ না খাওয়ার পিছনে হাজারটি কারণ দেখায়। স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে গ্লোবাল ওয়ার্মিং পর্যন্ত এর প্রভাব। বড়টির দেখাদেখি ছোটকন্যাও একই পথের। সেও দুপুর ও রাতের দৈনিক খাবারে মাছমাংস খেতে চায় না। তবে, ফাস্টফুডের দোকানে ফ্রাইড চিকেনে এদের আপত্তি নেই ! চিকেন বারবিকিউ পিজা, বিফ পিজায়ও নেই কোন আপত্তি।
গত দুই দশকে বেশিরভাগ শিশুকিশোরদের মাছ মাংসের ব্যাপারে অনীহা দেখছি। তবে একটু বয়স হলে বন্ধুদের সঙ্গে চলে চলে অনেকটা ঠিক হয়ে যায়। কেন এদের এই অনীহা ? আমার ধারণা এই অনীহা এসেছে সহজলভ্যতা ও প্রাচুর্য থেকে। আশির দশকে , আমাদের ছোট্ট সংসারে অন্যতম বিনোদন ছিল ছুটির দিনে একটু ভালমন্দ খাবার। গরুর মাংস, সঙ্গে সিজনাল মাছ। আর শাকসবজি তো প্রাত্যহিক ছিল। সকালের নাস্তায় হঠাৎ দুয়েকদিন পর সবজি ভাজির সঙ্গে ডিম। আস্ত ডিমের চেয়ে ভাগাভাগিটা ছিল স্বাভাবিক। কারো বাড়ি বেড়াতে গেলে অথবা বাসায় দাওয়াত থাকলে , তবেই ছোটবড় সবার পাতে আস্ত ডিম পাতে পড়ত।
কবে থেকে শুরু হয়েছিল মনে নেই, তবে সপ্তাহের একদিন ছিল মিটলেস ডে। ঐদিন কসাইখানায় গরুছাগল কাটা হোতো না। নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তের জন্য তরকারি বাড়ন্ত থাকত। সবকিছুই মেপে রান্না করা হতো। মায়েরা ভাত বেড়ে বাতাস করতে করতে তরকারি বেড়ে দিত। খাবার সময়ে কেউ না কেউ পাশে বসে থাকত। আবার কৈশোরে কোচিং সেরে বাড়ি ফিরতে দেরি হলে আলাদা বাটিতে তরকারি বেড়ে রাখা হোতো।রঙ্গিন টিভি আর ফ্রিজ মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে ঢুকেছে ৯০ এর দশকে। আর ফ্রিজ ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাজা সবজি আর তরতাজা মাছমাংসের স্বাদ ভুলতে বসেছি আমরা।
আমার এক স্কুলবন্ধু ফ্রিজের খাবারের ব্যাপারে ভীষণ বিরক্ত ছিল। বাঘ সিংহ যেমন শিকার করে একটু খেয়ে ফেলে রাখে দেয় , মড়ি বানায় ; তারপরে দুইদিন পরে এসে আবার খায়। ফ্রিজ আসার পরে আমাদের অবস্থা হয়েছে তাই। তাজা খাওয়া বাদ। বাজার থেকে যা আসে, সব ঢুকে পড়ে ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজের গভীর পাকস্থলীতে। দিনের পর দিন , মাসের পর মাস অথবা বছর জুড়ে ঠাণ্ডায় জমে জমে প্রতিটা কোষের সাইটোপ্লাজম আর মাইটোকন্ড্রিয়ার রস বের হয়ে শুকনো ছিবড়ে হওয়ার পরে রান্নার চুলায় পৌঁছায় তা। সেই ছিবড়ে হওয়া মাছমাংসে কতোখানি পুষ্টিগুণ থাকে জানিনা ; তবে ন্যাচারাল স্বাদ যে পুরোটাই চলে যায়, সে দিব্যি করে বলা যায়।
আর কী নেই সেই ফ্রিজে ! এই বছরের কোরবানির মাংস, পরের বছরের শবে বরাতে খাওয়া। এপ্রিল-মে মাসের তাজা ইলিশ মড়ি হয়ে পড়ে থাকে ফ্রিজের এক কোনায়। পহেলা বৈশাখে সেই বিস্বাদ ইলিশ পাতে ওঠে। কিছুদিন আগে বাসার ডিপ ফ্রিজ গেল বিগড়ে । আমার গিন্নী ধীরে ধীরে সবকিছু বের করা শুরু করলেন। করোনাকালীন বাসায় থাকি বলেই, সেই দুর্লভ দৃশ্য চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য হল । একেকটা আইটেম বের করেন আমি বিস্মিত হই। অপেক্ষা করি আর কী বের হয় দেখার জন্য ! কবে কোন প্রস্তর যুগে কক্সবাজারের কেনা শুটকি মাছ থেকে শুরু করে গাজর, ছোলা, মটরশুঁটি কী নেই ! মাছ মাংসের পোঁটলাগুলোর এমনতর অবস্থা যে, গিন্নী নিজেই ভুলে গেছেন ভিতরে কোন পদের মাছ ! পুরো ফ্রিজের মালপত্র বের করা দেখে বিস্মিত হচ্ছি দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন , আমি কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি কীনা । আমি বললাম, যেভাবে অতিপুরাতন জিনিসপত্র বের হচ্ছে, এক পোঁটলা ডাইনোসরের মাংস কখন বের হবে সেই অপেক্ষা করছি। ফ্রিজ নষ্ট হওয়ায় তার মেজাজ এমনিতেই তিরিক্ষে , তারপরেও একটা অগ্নিদৃষ্টি হেনেই বিরতি দিলেন। কিছু পোঁটলা হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিকটাত্মীয়দের বাসায় ফ্রিজ না সারা অবধি রেখে আসতে বললেন।
সেকালে , আমরা মাছ মাংস ডিম , আমিষের কাঙাল ছিলাম। সপ্তাহের পরপর দুইদিন শুধু নিরামিষ হলে মুখ অন্ধকার হতো। আম্মা গজগজ করতে করতে দুইভাইকে ডিম ভেজে ভাগ করে দিতেন। অথচ, অধুনা মধ্যবিত্তের ঘরে ডিম, মাছ, মাংস মজুদ থাকে সারামাসের জন্য, প্রায়শ: সারা বছরের জন্য। কিন্তু প্রাচুর্যের চাপে শিশুকিশোরেরা দৈনিক বাসায় তৈরি প্রাত্যহিক খাবারের চেয়ে ফাস্টফুডে আসক্ত। মাছেভাতে বাঙালি নাম ঘুচে যাওয়ার উপক্রম।স্বাস্থ্যচিন্তা, পর্যাপ্ত সরবরাহ ও ফ্রিজে রাখা বিস্বাদ আমিষের প্রভাব পড়েছে বড়দের উপরেও। নানা কারণে অনেকেই মাংস এড়িয়ে চলেন।
বড়কন্যার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ওর প্রিয় আলু ভর্তা , ডিম ও যে কোন ধরণের সবজি। ঢেঁড়স সবচেয়ে প্রিয়। মুরগির মাংস কদাচিৎ মুখে তুললেও গোমাংস দেখলেই নাক কুঁচকায়। যেহেতু কৈশোরে পা দিয়েছে, ওর মতামতের দাম দিই , জোরাজুরি না করে, জানার চেষ্টা করি। কেন খাচ্ছে না বোঝার চেষ্টা করি। একদিন বললাম মাছমাংস না খেলে বাড়ন্ত শরীরে নানা প্রোটিন, ভিটামিনের কমতি থেকে যেতে পারে। পড়াশোনা করে বলে, উল্টো আমাকে নানা তথ্য উপাত্ত দিয়ে বোঝাল যে ভেগানরা পৃথিবীর জন্য অনেক উপকারী। সে বড় হলে ভেগান হবে।
গতকাল খেতে বসে বললাম, প্রাণীহত্যা বা যে কোন প্রাণহত্যা যদি খারাপ হয়। তাহলে তো সবজি খাওয়াও বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। সকল উদ্ভিদের প্রাণ আছে, প্রমাণিত সত্য। সে হু হা করল। আমি বললাম, তোমার সবচেয়ে যে প্রিয় খাবার ডিম ; সেটাও খাওয়া বাদ দেওয়া উচিৎ। কারণ প্রতিটি ডিম একেকটা সম্ভাব্য মুরগি অথবা মোরগ।
আমরা একটা দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্যদিয়ে কৃষিতে থিতু হয়েছি। ছিলাম তো একসময় মাংসাশী শিকারির দল। আর প্রাণিজগতে ফুডচেইন বা খাদ্যশৃংখলে একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। এখানে এক প্রজাতি আরেক প্রজাতির খাবার বলেই না শৃঙ্খলা আছে। আর শুধুমাত্র খাবারের জন্য চাষাবাদ করে যে মাছ মাংস উৎপাদন করা হচ্ছে সে গুলো খেলে সমস্যা কোথায়, সেটাই দুর্বোধ্য !
অবশ্যই খাদ্যাভ্যাস যার যার। কিন্তু একজন আমিষাশী মানুষ খারাপ আর আপনি নিরামিষাশী বলে ভাল মানুষ হয়ে গেলেন , সেটা কিরকম কথা ! প্রতি মুহূর্তে আমাদের নিঃশ্বাসে কোটি ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাস ও অণুজীব ঢুকছে, কেউ বেঁচে থাকছে, কেউ মরে যাচ্ছে। তো, এদের জীবনরক্ষার্থে নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে থাকতে হবে ?
প্রতিবছর কোরবানির ঈদ এলেই প্রাণীহত্যা নিয়ে আহা উঁহু করাটা আমার কাছে বড্ডো আদিখ্যেতা মনে হয়। সারাবছর তো ডিম,দুধ, মাছমাংস খেলেন ; এখন কোরবানির বিরোধিতা করে সারাদেশের এতোবড় একটা অর্থনৈতিক চক্রকে তুচ্ছ জ্ঞান করার কী আছে !
আমার বয়স অর্ধশতকের কাছাকাছি। গোমাংস ও সকল লোহিতমাংস ( রেডমিট) খাওয়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু আমি কম খাই বা বেশি খাই সেটা আলোচ্য নয়। আমার বিশ্বাস পশু কোরবানির এই ট্রেন্ড ধর্মীয়দৃষ্টিতে যতোটা যৌক্তিক , অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে সেটা আরো বেশি যৌক্তিক। পুরো কোরবানিকে ঘিরে লক্ষলক্ষ পরিবারের পশুপালন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ভাগ্য জড়িত।
কোরবানি দিন এবং দিন কয়েক কবজি ডুবিয়ে খান।
সবাইকে ঈদ মোবারক। ঈদের শুভেচ্ছা ।
প্রকাশকালঃ ৩১শে জুলাই,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
সকালে ছোট কন্যার Zoom ক্লাসে কিছুক্ষণ বসেছিলাম।
ওর শিক্ষিকার জন্য বড্ডো মায়া হল। বেচারি !
১৪টা বাচ্চাকে সশরীরে ম্যানেজ করা যতোখানি না কষ্টের; তারচেয়েও বেশি ঝক্কির হচ্ছে কম্পিউটারে দূর-শিক্ষণে এদের নিয়ন্ত্রণ করা । একজন চেঁচিয়ে স্ক্রিনের লেখা পড়ছে, আরেকজন গুনগুন করছে। আরেকজন ‘মিস্ , মিস্, মিস্, মিস্ ’ বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে ক্রমাগত। রীতিমত হাটবাজার আর কী !
আমার এক খালাম্মা স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন সেই আশির দশকে।
সেই সময়ে একেক ক্লাসে ন্যুনতম ৬০ থেকে শুরু করে প্রায়ই ৮০ জন ছাত্রছাত্রী থাকত।
আমরা দূর থেকে দেখতাম, খালাম্মা ক্লাসের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছেন হাতে কাঠের স্কেল। ছোট ছোট বাচ্চাদের কিচিরমিচির । খালাম্মা কোনদিন শারীরিক প্রহার করতেন না, তবে দুষ্টুমি করলে , বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রাখতেন। বাচ্চাগুলো বেঞ্চে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গা গা গি গি করত।
খালাম্মা একদিন আম্মাকে আফসোস করে বলছিলেন, ‘ বাপমায়ের আর কী ! এরা তো বছর বছর পুক্ পুক্ করে বানিয়ে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর , এগুলোকে মানুষ করতে যতো যন্ত্রণা আমাদের !’ আমি তখন কিছুটা সাবালক, তাঁর সেই ‘ পুক্ পুক্ ’ শব্দচয়ন আমার কানে বিঁধেছিল । তাঁর বেদনা সেই সময়েই টের পেয়েছিলাম। আজ এই ত্রিশ বছর পরে যেমনটি টের পেলাম ছোটকন্যার শিক্ষিকার বেদনা।
সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য আমার শুভকামনা।
by Jahid | Dec 1, 2020 | লাইফ স্টাইল, সাম্প্রতিক
শৈশবের বইপড়ার অভ্যাস সেবা প্রকাশনী দিয়ে শুরু হয়েছিল। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র একটা পাঠ রুচি তৈরি করে দিয়েছে।
ছোটবেলায় যে কোন বই এক বসায় অথবা একটানা কয়েকদিনে শেষ করেছি। সমরেশ মজুমদার , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ঢাউস আকৃতির বইগুলোর পাঠস্মৃতি মনে আছে। এখন বৃহদায়তনের বই পড়া শুরু করার আগে গেলে তিনবার চিন্তা করি। শুরু করলে কবে শেষ হবে ; আদৌ শেষ হবে কীনা কে জানে ! কয়েকটা বই একসঙ্গে শুরু করে , দেখা গেল কোনটাই শেষ না করে ফেলে রেখেছি।
গত কয়েকবছরের বইমেলায় কেনা বই পড়া হয়নি। বই পড়ার সেই প্যাশন জীবিকার চাপে চিঁড়েচ্যাপটা হয়েছে বহুবছর আগেই। জীবনে বই একমাত্র বিনোদন নয় আমাদের প্রজন্মের। অনলাইন সাহিত্য, ব্লগ, ফেসবুক এসে বইয়ের জায়গা দখল করেছে।
বড়কন্যার বইপড়ার অভ্যাস শুরুতেই আমার মধ্য-চল্লিশের মতো। একসঙ্গে কয়েকটা বই শুরু করে আর একেকটা একেক বেলায় পড়ে। আরেকটা বড় পার্থক্য হচ্ছে, সে পড়ে ইংরেজি ভাষার বই। আমি সারাজীবনে ইংরেজি নন-ফিকশন বই পড়েছি ঠ্যাকায় পরে সাকুল্যে হাতে গোনা কয়েকটি। আর বড়কন্যার স্কুলের পড়াশোনার মাধ্যম যেহেতু ইংরেজি ; ঐ ভাষাতেই ওর স্বাচ্ছন্দ্য বেশি।
আজ সকালে ওর পড়ার টেবিলে কী কী বই পড়ছে সেটা চোখে পড়ল।
আর নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল।
প্রকাশকালঃ ২রা জুলাই,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
সপ্তাহ দুয়েক ধরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে ।
অনেকেই বলছেন, তাঁদের একটু জ্বরজ্বর ছিল বা ক্লান্তি ছিল, শরীর ম্যাজম্যাজে ছিল । এবং সবাই ওরস্যালাইনের মুখস্থ রেসিপির মতো বহুল প্রচলিত মশলা পানির ভাপ নিয়েছেন। এখন সুস্থ বোধ করছেন। তাদের ধারনা তাদের মাইল্ড কোভিড-19 ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছিল। খুব অল্পের উপর দিয়ে শরীরে অ্যান্টিবডি হয়ে গেছে।
আমি তাদের এই অপরীক্ষিত আত্মবিশ্বাসের পক্ষেই আছি।
বহুবছর আগে ‘দি টার্মিনাল’ সিনেমাতে ক্যাথরিন জেটা জোন্স টম হ্যাঙ্কসকে বলে, সম্রাট নেপোলিয়ন নির্বাসনে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ছয়গুণ বেশি মাত্রার বিষ গ্রহণ করতেন বা তাকে খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হতো। উদ্দেশ্য তাঁর দ্রুত মৃত্যু । কিন্তু নেপোলিয়ন ছিলেন অহংকারী লোক। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, পৃথিবীর কোন বিষ তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না। এই অতিমানবিক আত্মবিশ্বাস নাকি নেপোলিয়নকে বহুবছর সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিল !
ভুল করে হলেও নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ব্যাপারটা হয়তো ভাল।
তবে কোভিড-19 ভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলছেন বৈজ্ঞানিকেরা। সেই ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের অ্যান্টিবডি আপনার থাকলেও সবরকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিৎ।
কেননা , দিন শেষে আমি,আপনি কেউই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট না !
প্রকাশকালঃ ১লা জুলাই,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
প্রায় সগোত্রীয় বলে নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের প্রতি আমার কিছুটা পক্ষপাতিত্ব থাকা স্বাভাবিক।
নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর করোনায় অধিকতর বিত্তহীনতা অসহায় করবে জানি। এঁদেরকে আরো মানবেতর জীবনের দিকে ঠেলে দেবে। রাষ্ট্র তাঁদের কল্যাণের জন্য যতোখানি করতে চাইছে, সেটা দুর্নীতির ছাঁকনি পেরিয়ে কতোটুকুই বা তাঁদের কাছে পৌঁছাচ্ছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
ইতিহাস ও সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তি থেকে দেখা যায় দারিদ্র্যের হেরফেরে নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মানিয়ে চলার সক্ষমতা রাখে।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত ও সচ্ছলদের অস্বচ্ছলতার দিকে ধাবিত হওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরো বেশি বিপদে ফেলবে। চারপাশের সচ্ছলরা এখনো নানাভাবে নিম্নবিত্ত হত দরিদ্রদের দায়ে-ঘায়ে পাশে দাঁড়াতে পারছে। বিত্তহীনতা তাঁদের সেই চ্যারিটি করার সক্ষমতাকে আরো সঙ্কুচিত করবে।
পারস্পরিক উন্নয়ন, অবনমন ও মিথস্ক্রিয়া এই কয়েকটা শ্রেণির মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে।
প্রকাশকালঃ ১লা জুলাই,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | দর্শন, সাম্প্রতিক
আরব্য রজনীর জেলে ও সুলাইমান বাদশাহের বোতলবন্দি জিনের গল্প সেই কবে শোনা।
ঘটনার বিশদ কিছুটা মনে ছিল। জেলের বিস্ময় ছিল, যে জিন দেড় হাজার বছর অভিশপ্ত নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে বন্দী ছিল তাকে উদ্ধার করার পর উদ্ধারকারীকেই সে কেন হত্যা করতে চাইল। অকৃতজ্ঞতারও তো একটা সীমা থাকে ! সত্যি বলতে কী, জিনের ক্ষোভ নিয়ে ছোটবেলায় আমার নিজেরও বিস্ময় ছিল।
কাহিনীতে জিন বলে, নবী সুলাইমানের বিরুদ্ধাচরণ করায় তাকে বোতলে বন্দী করে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। উদ্ধাররহিত সেই দীর্ঘ একাকীত্বে জিন প্রতিজ্ঞা করে, যে তাকে মুক্ত করবে তাকে সে অগাধ সম্পদের মালিক করে দেবে। দিন যায় , মাস যায়, বছর যায় ; এভাবে একশ বছর চলে যায়, কেউ উদ্ধার করে না। সে আবার প্রতিজ্ঞা করে এবার যে তাকে উদ্ধার করবে, তাকে পৃথিবীর সমস্ত গুপ্তধনের সন্ধান দেবে। তবুও কেউ তাকে উদ্ধার করতে আসে না।
রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে অসহায় জিন বেচারা প্রতিজ্ঞা করে বসে যে, এইবার যে তাকে উদ্ধার করবে তাকে সে হত্যা করবে। অবশ্য , কীভাবে সেই উদ্ধারকারী মৃত্যুবরণ করতে চায় সেটা বিবেচনায় নেবে !
এর পরের কাহিনীও আমরা জানি, জেলে বুদ্ধি করে নবী সুলাইমানের কসম খেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিশাল দেহের জিন ঐ ছোট্ট বোতলে কীভাবে আঁটে ! বোকা জিন আবার সেই বোতলে ঢুকে দেখাতে গিয়ে চিরতরে আটকা পড়ে।
কেন জিন তাঁর চরম উপকারীকে হত্যা করার মতো এ রকম নির্দয় সিদ্ধান্ত নিতে পারল?
কারণ সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক ভাল প্রতিজ্ঞা করে। সমস্যা জটিলতর হলে, সে প্রতিজ্ঞায় আরো নানা প্রণোদনা যুক্ত হয়। কিন্তু যখন দেখে কোন উপায়েই উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই, তখন হতাশায় আর ক্ষোভে চরম অবিমৃষ্য ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
কোভিড ভাইরাসের প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল সবাই আগামীতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে। আরো কিছুদিন যাওয়ার পরে মনে হচ্ছিল, সেই প্রতিজ্ঞায় আরো অনেককিছু যুক্ত হচ্ছে। নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। প্রকৃতির বিশ্রামে নিজেই আরোগ্যলাভের আশাবাদে আমরাও পাশে দাঁড়াবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু, এখন যতো দিন যাচ্ছে, সবাই সেই বোকা জিনের মতো ধৈর্যহারা, অবিবেচক, অসহনশীল আর নিষ্ঠুর হয়ে পড়ছি।
প্রকাশকালঃ ১লা জুলাই,২০২০
সাম্প্রতিক মন্তব্য