by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
বড্ডো বিরক্তি নিয়ে বলছি, বাচ্চাদের জন্য সীমিত আকারে হলেও স্কুলগুলো খুলে দেওয়া উচিৎ। এযাবৎ কালের বিগ ডেটা যা বলে, বাচ্চাদের শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো বয়স্কদের তুলনায় অনেক সজীব ও সুস্থ। কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ও প্রাণহানির সম্ভাবনা তাঁদের অত্যল্প বা নেই বললে চলে।
আর বাংলাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা এমনিতেই তেমন পড়াশোনা করে না। আমাদের সময়ের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি এবং এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যা দেখছি সেটা হচ্ছে — নানা বর্ষের ধূসর হাতে লেখা নোটের ফটোকপি যাকে কথ্য বাংলায় ‘চোথা’ বলে ; সেগুলো পড়ে একেক সেমিস্টার পাশ করছে। অধুনা, এসেছে ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ; এক সেমিস্টারে কোন সাবজেক্টে ৭/৮ টা পাওয়ার পয়েন্ট থাকলেই অ্যাভারেজে যে কেউ পাশ করে যাচ্ছে। যেখানে সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান উৎপন্ন করে ,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেখানে জ্ঞান দান করে। জ্ঞান উৎপন্ন করতে যে পরিমাণ রিসার্চ, লাইব্রেরি ওয়ার্ক ; ল্যাবরেটরি, থিসিস অথবা জার্নাল পাবলিকেশন দরকার তাঁর সক্ষমতা আমাদের জানা আছে। এবং অদূর ভবিষ্যতেও বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৌড়ে আমাদের কোন পাবলিক অথবা প্রাইভেট যে পৌঁছুতে পারবে না, সেটা বলার জন্য জ্যোতিষী হতে হয় না।
আমারা যারা এখন অভিভাবক হয়েছি ( বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৎসামান্য পূর্বে ও পরবর্তীতে যাঁদের জন্ম)। তাঁরা ইন্টারনেটের জন্ম হতে দেখেছি। স্মার্ট ফোন থেকে শুরু করে নানা ধরণের ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ভিডিও গেম সব আমাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বেড়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল জগতের ভালো দিকের সঙ্গে সঙ্গে মন্দ-দিকগুলো আমাদের চেয়ে ভালো বোধকরি আর কোন প্রজন্ম জানে না। আমাদের প্রজন্ম চেয়েছিলাম আমাদের সন্তানদের আধুনিক গেজেটগুলো থেকে যতোখানি পারা যায় , নিরাপদ দূরত্বে রাখতে। সে আর হল কোথায় ?
আমাদের সন্তানেরা যেন –ছাপানো বই, হাতে লেখা পরীক্ষার খাতা আর ক্লাসে একসঙ্গে শিক্ষক/শিক্ষিকার সামনে বসে ব্ল্যাক বোর্ডের লেখালেখি আর কথা শুনে ক্লাস টেন অবধি পড়াশোনা করতে পারে –সেটাই ছিল আকাঙ্ক্ষা । এরপর কলেজে উঠে গেলে যুগের হাওয়ায় ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম , জুম, ইউ টিউব, অ্যানিমে কার্টুনের সঙ্গে পরিচয় হবেই –কেউ ইচ্ছে করলেও সেটা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
কিন্তু করোনাকালে, আমাদের ( পড়ুন সকল স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবকদের ) প্রতিরক্ষার দেয়ালগুলো ধ্বসে পড়েছে ; ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। অনলাইন ক্লাস চলাকালে কয়জন জননীর পক্ষে সম্ভব বাসার কাজ করেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুর পাশে বসে থাকা। ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোন কোন বাচ্চা আলাদা ট্যাব খুলে কার্টুন-রে, অ্যানিমি-রে , ইউটিউব-রে মায় প্রাইভেট চ্যাটিং করা শুরু করে দিয়েছে। যেই শিক্ষক/শিক্ষিকা ক্লাসে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সশরীরে উপস্থিত থেকে ম্যানেজ করতে পারেন না, তিনি কি করে পারবেন অনলাইনে কোন বাচ্চা কী করছে সেটা ম্যানেজ করতে?
গার্মেন্টসে করোনা ভাইরাস থেকেও নেই সেই মার্চ থেকে।
গণ-পরিবহনে করোনা নেই, জুলাই থেকে।
পিকনিক স্পটে আর সমস্ত রিসোর্টে করোনা নেই আগস্ট থেকে।
সরকারি জরুরি বিভাগগুলো ( হাসপাতাল, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ইত্যাদি) তে করোনা ভাইরাস নেই প্রথম দিন থেকেই। বেসরকারি ব্যাংকে নেই প্রথম থেকে।
আমাদের কর্পোরেট অফিসে করোনা নেই এপ্রিল-মে থেকে।
তাহলে করোনা ভাইরাস আছে কোথায়? একমাত্র শিক্ষায়াতন গুলোতে?
আচ্ছা, ইউনিভার্সিটি বন্ধ রাখা হোক আরো এক বছর কিংবা আরো দুইবছর ।
আমার মামা (DrMd Sarowar Hossain ) যিনি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর। বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার পিছনে তাঁর যুক্তি দেখিয়েছিলেন করোনার শুরুর দিকেই। তিনি বলেছিলেন–১০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা করোনায় আইসিইউ তে মারা গেলে সারাদেশে কোন হৈচৈ হবে না। কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার সামান্য অবহেলাও পায়, তবে সারাদেশে আগুন জ্বালিয়ে দেবে ছাত্ররা । বরং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে বন্ধই থাকুক। অকাট্য যুক্তি। আমাদের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের হেতু লাগে না, কিছু একটা হলেই তাঁরা জ্বলে ওঠে। সরকারের গদি নড়িয়ে দেয়। আর অথর্ব বিরোধীদলগুলো আলুপোড়া খেতে চায়।
অতএব বিশ্ববিদ্যালয় আরো বছর খানেক বন্ধ থাকুক। সরকার শান্তিতে সময় পার করুক। কিন্তু স্কুলগুলো খুলে দেন জনাব। আমরা– বাসা থেকে অনলাইন ক্লাস করা সন্তানদের অভিভাবকেরা আর পেরে উঠছি না।
পাঠ করার জন্য অগ্রিম শুকরিয়া ও ধন্যবাদ।
প্রকাশকালঃ ১৭ই নভেম্বর,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সমাজ ও রাজনীতি, সাম্প্রতিক
আমি চাচ্ছিলাম ট্রাম্প ব্যাটাই আবার জিতুক।
প্রথমবার জেতার পর বিমলানন্দ পেয়েছিলাম। আম্রিকানরা সারাদুনিয়ার সবার পুটুতে আঙুল দিয়ে বেড়ায়। ট্রাম্প আসায়, নিজেদের পুটুতে, নিজেদের লোক আঙুল দিলে কেমন ব্যথা লাগে বুঝছে। এই যে আমরা বাকী দুনিয়াতে চুতিয়া সব নেতা-নেত্রীদের নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি, আমাদের ফিলিংসটা হ্লারপুতেরা বুঝুক। রাষ্ট্রনেতার মতো সর্বোচ্চ সন্মানের পদে বসে একজন যখন হুদামিছা, আউল-ফাউল কথা বলে সেটা তৃতীয় বিশ্বে একচেটিয়া হয়ে গিয়েছিল। এবার বোঝ, ঠ্যালা !
আগের ইলেকশনে ট্রাম্পকে কেন ভোট দিচ্ছ, এক সাদা আমেরিকান বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করায় বলেছিল, ‘শোন জাহিদ, আমার সামনে দুইটা চয়েজ, একটা সুশীল ভণ্ড হিলারি ক্লিনটন আর আরেকদিকে পাগল-ছাগল ট্রাম্প। ভণ্ডের চেয়ে হৈহৈ রৈরৈ করা পাগল ভাল।’
এইবার সেই সাদা আমেরিকানের সঙ্গে কথাবার্তা হয় নাই।
তবে আমার মনে হয়েছে, ট্রাম্প একটা পাগলছাগল হলেও সারা দুনিয়ার পুটুতে আঙ্গুল দিয়ে বেড়ায় নাই। নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বাইডেন সাহেব আসলে সারা পৃথিবীর বিশেষত: তৃতীয়বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের কোথায় কোন যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসবে কে জানে !
ট্রাম্পের ব্যাপারে আমার মন্তব্য, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত –টাইপ। এই লোক হাউকাউ যাই করুক তার শাসনামলে বড় ধরণের কোন ঝামেলা পাকায় নাই। না দিয়েছে মেক্সিকোর বর্ডারে দেয়াল ; না করেছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ।
কথায় বলে না, চেনা শত্রু অচেনা বন্ধুর চেয়ে অনেকসময় ভাল। কারণ, চেনা শত্রু কী কী করতে পারে, সে সম্বন্ধে একটা ধারণা তো থাকেই। কিন্তু এতোদিন পরে এই , ঘাঘুমাল বাইডেন এসে কী কী করবে কে জানে।
এনিওয়ে, সকল আম্রিকানবাসী সাদাকালোবাদামি ভাই-বেরাদারদের শুভেচ্ছা। গণতন্ত্র নিজেদের পুটুতে গেলে কেমন লাগে বোঝেন অ্যালা !
আম্রিকার ইলেকশনে আমি ও আমার প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবস্থা অনেকটা এ রকম :
বহু শতাব্দী আগে কেউ কাউকে সুসংবাদ দিলে প্রশংসা ও বখশিশ পাওয়া যেতো।তো সেটা জেনে এক লোক নাসীরুদ্দীন হোজ্জাকে গিয়ে বলল,
: ‘তোমার জন্য খুব ভালো খবর আছে, মোল্লা-সাহেব।’
: ‘কী খবর?’
: ‘তোমার পাশের বাড়িতে পোলাও রান্না হচ্ছে।’
: ‘তাতে আমার কী ?
: ‘তোমাকে সে পোলাওয়ের ভাগ দেবে বলেছে।’
: ‘তাতে তোমার কী ?’
এই যে মোবারক ওরফে বারেক ভাইয়ের পরে জয়নাল ট্রাম্প এসে আম্রিকাকে হুলুস্থূল করল। একবার মেক্সিকোর বর্ডারে দেয়াল দেয়। আরেকবার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমানবিক যুদ্ধ বাঁধায়। কিছু অভিযোগ করলেই মুখ বাঁকা করে বলে’ ফেইইইক ন্যুজ !’ ব্যাপারটা আমার বরাবর ভালো লাগতো।
সব সময় মনে হতো, আরে এই লোক তো আমাদের ওয়ার্ড কমিশনারের মতো উত্তর-দক্ষিণ কথা বার্তা বলে। ব্যাটাকে অনেক আপন আপন মনে হইত রে ভাই !
মোবারক ভাই বলেন আর জোবায়ের বাতেন ভাই বলেন, এদের মতো ওর কোন মিষ্টি মিষ্টি কথা নাই ; যা মনে আসতো তাই বলতো।
নির্বাচনে জিতে , আজ জোবায়ের বাতেন ভাই আর কমলা আপার সেই ‘মাপা হাসি চাপা কান্না’ দেখে মনে হচ্ছিল হলিউডের কোন সিনেমা দেখছি। খুব লম্বাচওড়া কথা ; অনেকটা আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকাররা ইদানীং যেরকম করে দেয় আর কী! আম্রিকা হ্যান, আম্রিকা ত্যান, কিপ ফেইথ, স্প্রেড ফেইথ ইত্যাদি ইত্যাদি। মিষ্টি কথার আড়ালে আগামী চারবছরে এদের অমানবিক আগ্রাসী পুঁজিবাদের কবলে পড়ে কার কার সর্বনাশ হয় সেটাই দেখার ব্যাপার।
আমার মামার কাছে শুনেছিলাম জেনারেল জিয়ার প্রথম দিকের ইলেকশনে সবাই দলবেঁধে ধানের শীষে ভোট দিতে যেতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে আওয়ামীলীগ তখন সাময়িক পরবাসে, নিভু নিভু করে জ্বলছে। যে কোন সামরিক শাসকের আবার জনপ্রিয়তা থাকে ১১০% । ভোট হলে অন্য কারো ভোট খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। যাই হোক, কুষ্টিয়ার কোন এক আসনে ‘চিন্টু’ নামের ( ডাকনাম, আসল নাম মনে নেই ) ভয়ংকর এক দুষ্টু লোক ভোটে দাঁড়িয়েছিল। কীভাবে কীভাবে যেন সে ধানের শীষ প্রতীকও ম্যানেজ করেছিল।
ভোট শেষে চিন্টু মিঞার বিজয়োৎসব শুরু হলে, এক লোক ক্ষোভে ফেটে পড়ল, ‘ভোট দিলাম ধানের শীষে, শালার চিন্টু হারামজাদা এমপি হোল কেম্মা কইরে !”
আমাদের নতুন চিন্টু মিঞা —জোবায়ের বাতেন ভাই এখন কী কী দুষ্টুমি করে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আবারো অভিনন্দন জোবায়ের বাতেন ভাই এবং কমলা আপা ।
প্রকাশকালঃ ৫~৮ নভেম্বর,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
কয়েকদিন ধরে উত্তরা ৭ নং সেক্টরে আমি যে অফিসে কর্মরত, তাঁর চারপাশের রাস্তা ঢাকা ওয়াসা খুঁড়ে মিসমার করে ফেলেছে। আমার কর্মস্থলে আসতে একেক দিন গোলকধাঁধার মতো একেক রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে।
শীতের আগে একটা বৃষ্টি হলেই খোঁড়া রাস্তাগুলো হাকিম আলীর মৎস্য খামার হয়ে যাবে। আর দুয়েকদিন কাজ স্থগিত রেখে কন্ডাক্টর যদি ওয়াসা-ভবনে বিলের জন্য ঘোরে ; সেই দুইদিনে এডিস মশাদের প্রজননে বিশাল উপকার করা হবে। উপকৃত মশার কামড়ে উত্তরাবাসী ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেয়র থেকে শুরু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও শাপশাপান্ত করবেন।
প্রায় চারবছর পর নানা কাহিনীর পরে উত্তরার রাস্তাগুলো একটু ভদ্রোচিত অবস্থায় এসেছে। কিন্তু , বছরের পর বছর রাস্তা ঠিক থাকলে তো প্রবৃদ্ধি হবে না সোনা !
মাস দুয়েক হলো না , শুরু হয়ে গেছে খোঁড়াখুঁড়ি ; রাস্তা খোঁড়ার মোচ্ছব।
এই মাসে ঢাকা ওয়াসা খুঁড়ছে , কাজ শেষে দায়সারা গোছের মেরামত করে এরা চলে যাবে ; তার ঠিক দুইমাস পরে বিটিসিএল বা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মনে হবে খোঁড়ার কথা।
আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার না। তবে নাগরিক বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে এটুকু বুঝি যে–একটা রাস্তা প্রথম একটানে নানা ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে টেকসই করে করার পর, সেটা খুঁড়ে মেরামত করলেও সেই রাস্তার না থাকে কোন শক্তি; না থাকে সৌন্দর্য। দিন কয়েকের ভারী বর্ষণে যাচ্ছেতাই হয়ে যায়।
আশেপাশের অনেকের এবং আমার নিজেরর সহধর্মীনিরও ‘সি-সেকশন’ করে সন্তান জন্মদান করতে হয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্মদানের কোনরকম চেষ্টা না করেই যথেচ্ছ অপ্রয়োজনীয় ‘সি-সেকশন’ কেন করা হচ্ছে, তার পক্ষে বিপক্ষে চিকিৎসক , সুশীল সমাজ ও নারীবাদীরা তর্ক করেই যাচ্ছেন। সে আরেক বিতং। কিন্তু, সিজারিয়ান অপারেশন করার পর, প্রসূতি নারীর সার্বিক স্বাস্থ্য আর তলপেটের চামড়ার স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। সিনেমার কোটি টাকার নায়িকাদেরও সন্তান হয় শেষ বয়সে এসে, হয়তো ‘সি-সেকশন’ করেই হয়। কিন্তু তারা তাদের উন্মুক্ত তলপেটে মসৃণ রাখার জন্য চিকিৎসা ও ডায়েট করে হুলস্থূল করে। সেটা কী আমার গিন্নীর বা আপনার গিন্নীর পক্ষে সম্ভব ? ইচ্ছে করলেই বড়ো শতাংশের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন যে এড়ানো যায়, সে কথা এখন সবাই বুঝতে পারছে।
তো, উত্তরার মসৃণ রাস্তায় এখন ‘সি-সেকশন’ চলছে।
চিন্তা করবেন না, দায়সারা মেরামত হবে দুইমাস পরে ; পানি জমবে, মশা হবে, রিকশা উল্টে পড়বে।
যারা একটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, তাদের অনেকেই তো উত্তরাতেই থাকেন।
তারা সহ সবাই গালি দেবেন মেয়রকে, রাষ্ট্রকে।
আর কমিশনের টাকা দিয়ে আরেকটা ফ্ল্যাট কিনবেন, বাচ্চার জন্য আলাদা গাড়ী বরাদ্দ করবেন। ভালো রাস্তা কেটে ভাঙ্গাচোরা এই ‘ এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই! ’ প্রক্রিয়াকে দোষারোপ না করে ; এসি গাড়ির ভিতর থেকে বসে বলবেন, ‘নাহ্ ! এই দেশের কোন আশাভরসা নেই। বাচ্চাগুলোর এ-লেভেল শেষ হলেই খালা-মামা-চাচার কাছে আমেরিকায় অথবা কানাডা পাঠিয়ে দেব।’
পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ।
প্রকাশকালঃ ১৬ই অক্টোবর,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
বাঙালি একেক সময়ে একেক জিনিস নিয়ে মাতে।
পিঁয়াজ শেষে এখন মেতেছে আলু নিয়ে।
ঢাকাইয়া দুইটা সবজি বিষয়ক চুটকি মনে পড়ে গেল।
দুর্বল স্মৃতি থেকে লিখছি। মূল চুটকি কারো কাছে থাকলে জানাবেন।
১ :
তো , এক শহুরে ভদ্রলোক বাজারে গেছেন সবজি কিনতে। বেগুনে পোকা থাকে দেখে তিনি অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বেগুন দেখছেন।
ঢাকাইয়া সবজি বিক্রেতা অধৈর্য হয়ে পাশের বেগুন বিক্রেতাকে বলছে:
: আবে ওই রফিইক্যা, মান্দার পো ! তোর বাইগুণের কি অছুখ বিছুখ কিছু হইছে নিহি ?
: না তো ওস্তাদ !
: হইয়া থাকলে দেহাইয়া ল, (শহুরে ভদ্রলোককে দেখিয়ে), ওই দ্যাখ, বাইগুণের ডাগদর
আইছে।
২ :
যথারীতি এক সবজিওয়ালা ঝুড়িতে কয়েক পদের সবজি বিক্রি করেছে। দুঃসহ গরমে সবজিগুলোতে ঘনঘন পানি ছিটাচ্ছে।
এক লোক এগিয়ে এলো কিছু কেনার জন্য। কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে সবজিতে পানি ছিটানো দেখতে লাগল।
বিক্রেতা বললঃ
: কিছু লইবেন সাব ?
: ভাইসাব, আপনার পটলের জ্ঞান ফিরলে আমারে একসের পটল দিয়েন !
প্রকাশকালঃ ১৫ই অক্টোবর,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
গত সাত সাতটি মূল্যবান মাসে সবধরনের লকডাউন, হোম কোয়ারিন্টিন, আইসোলেশন, আইসিইউ, সিসিইউ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যাচুরেশন ইত্যাদি পার হয়ে যেখানে আছি, সেটা সেই প্রথম মাসের শিক্ষার খুব কাছাকাছি।
কেননা, কোভিড-১৯ ভাইরাসের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য তথ্য হচ্ছে আপনাকে মাস্ক পরতেই হবে ও নিয়মিত সাবান স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতেই হবে। সুষমখাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা ও রোগপ্রতিরোধ বাড়ানো সব রোগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কোভিডের জন্য নতুন নিয়ম না।
মূলত: কোভিড ভাইরাস আক্রান্ত রোগী, সে উপসর্গযুক্ত হোক বা উপসর্গহীন হোক; তার সংস্পর্শে আসলে আপনার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমবেশি। তাই মাস্ক পরে চলতে হবে। নিরাপদ দূরত্ব রেখে কথা বলতে হবে।
কোভিড-১৯ বায়ুবাহিত কীনা, বিতর্ক চলছেই।
এটি পানিবাহিত কীনা, বিতর্ক চলছেই।
অন্য প্রাণীকুল , বাজারের সজীব শাকসবজিতে কতোক্ষণ থাকে, নানা মুনির নানা মত আছে।
সকল নির্জীব বস্তু, চেয়ার টেবিল, সিঁড়ি রেলিং, লিফট, যানবাহন, পোশাক, জুতা মোজায় কতক্ষণ এই ভাইরাস টিকে থাকতে পারে, নানাবিধ মত আছে।
পুরো বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বাভাবিক। সরকারি-বেসরকারি সবাই মোটামুটি কর্মক্ষেত্রে । শুধুমাত্র শিক্ষায়তনগুলো বন্ধ, সেটাও আগামী জানুয়ারিতে খুলে দিতে পারে।
যা বুঝলামঃ নিজের অজ্ঞাতে আমরা প্রতিনিয়ত কোভিড ভাইরাসের সংস্পর্শে আসছি। একই লিফট বা রেলিং স্পর্শ করছি। একই চেয়ারে বসছি। আরেকজনের চিমটি কাঁটা লাউ নিজেও চিমটি কেটে দেখছি। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের হাতের স্পর্শ করা ভাইরাস আমাদের চোখ, মুখ ও নাসারন্ধ্র দিয়ে দিয়ে দেহে প্রবেশ করছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্তি-ভেদে প্রবল বা ক্ষীণ।
আমাদের ছোটবেলায় সিনেমার কৌতুক অভিনেতারা ঘরে ঘরে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন, বিখ্যাত ছিলেন। খান জয়নুল থেকে শুরু করে হাসমত, টেলিসামাদ, আশীষ কুমার লোহ, আনিস, সাইফুদ্দিন আহমেদ আরো অনেকে। বছর পঁয়ত্রিশ আগে , সাইফুদ্দিন আহমেদ সম্ভবত: বিটিভির আনন্দমেলায় একটা ঢাকাইয়া চুটকি বলেছিলেন। তিনি অসাধারণ ঢাকাইয়া উচ্চারণে কৌতুক পরিবেশন করতে পারতেন। খুব দুর্বল স্মৃতি থেকে লিখছি, কারো কাছে মূল কৌতুক থাকলে শেয়ার করবেন।
তো, এক পাগলা গারদে একজন বড়ো ডাক্তার অথবা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি গেছেন পরিদর্শন করতে। উন্মুক্ত পরিবেশে মানসিক রোগীদেরকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। প্রত্যেকের আচরণ স্বাভাবিক নয় যথারীতি । তো একজনকে দেখা গেল ড্রেনে পড়া একটা নোংরা বিড়ালকে উদ্ধার করা নিয়ে ব্যস্ত। পরিদর্শক বেশ খুশি, একটা প্রাণীকে বাঁচিয়ে তুলছে যে, সে তো আর পাগল হতে পারে না ! তাঁকে পাগলাগারদ থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন তিনি। আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন বিড়ালকে নিয়ে কী করবেন সেই রোগী। সে বলল, বিড়ালের গায়ে নোংরা লেগেছে সে একে গোসল করাবে।
পুরো হাসপাতাল ঘুরে সেই পরিদর্শক যখন ফিরতি পথে ; দেখলেন সেই রোগী মৃত বিড়ালটি সামনে নিয়ে বসে আছে।
‘বিড়াল কি গোসল করার সময়ে মারা গেছে?’
‘না ডাগদর ছাব ! বিলাই তো গোছলের ছময়ে ঠিকই আছিলো। মাগার যখন চিপা পানি বাইর কইরা দড়িতে শুকাইতে দিছি, তহন মইরা গেছে।’
মোরাল অভ দি স্টোরি:
কোভিড-১৯ ভাইরাস হাতে লাগুক, জামায় লাগুক, জুতায় লাগুক লাগতে দেন। পরিষ্কার করেন ইচ্ছেমত। কিন্তু সেটা যেন হাত থেকে মুখে অথবা নাকে এসে দেহে প্রবেশ না করে। বিড়াল পরিষ্কার করে ছেড়ে দিন,শুকাতে যাবেন না
প্রকাশকালঃ ৪ঠা অক্টোবর,২০২০
by Jahid | Dec 1, 2020 | সাম্প্রতিক
জুনের প্রথম থেকেই বাংলাদেশের প্রায় সকলেই করোনা আতঙ্ক থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। সচ্ছল জনগণের বাসায় কোয়ারিন্টিন থেকে হাতি-ঘোড়া মারার নানা উপায় থাকলেও দেশের বৃহত্তম অংশ জীবিকার তাগিদেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মরিয়া। সরকারের নানারকম প্রজ্ঞাপন ও সাবধানবানী কেউ আমলে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। একমাত্র আন্তর্জাতিক সীমানাগুলো ও বিমান চলাচল সীমিত পরিসরে আছে। অফিস, রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন, ট্র্যাফিক জ্যাম সেই আগের মতো। সংক্রমণ বেড়েই চলছে , আইসিইউ-গুলো সব পূর্ণ ; মৃত্যু থেমে নাই।
বাংলাদেশের গড় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদেশগুলোর চেয়ে বেশি সেটা প্রমাণিত হয়েছে। গরমে ভাইরাস বাঁচে না অথবা দুর্বল প্রজাতির ভাইরাস এসেছে এই ধরণের বালখিল্য কথা যুক্তিতে টেকেনি।
আবার সব দুর্যোগে সরকারী তথ্যের উপর অনিবার্য অবিশ্বাসের মতো করোনায় মৃত্যুহার নিয়েও অনেকে আশাহত। ভেবেছিলেন এই ঘনবসতির দেশে গলিতে-গলিতে, রাস্তায়-রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে থাকবে ; দাফন সৎকার করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেটি যে হয়নি, সে আমাদের পরম সৌভাগ্য। আমাদের জনমানুষের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই এযাত্রা বাঁচিয়ে দিল আমাদের।
গত মে মাসে, প্রবাসী এক ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল । সে বলছিল, পশ্চিমে একজন কোভিড আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা ও মৃত্যু যথেষ্ট মানবিক ও গবেষণার ব্যাপার। তাই, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সৎকার করার প্রশ্নই আসে না। মৃত্যুসংখ্যা বেশি হলে সৎকারের আগে মর্গে মৃতদেহ দিনকয়েক পড়ে থাকাটা স্বাভাবিক। আর আমাদের বাংলাদেশে সকালবেলায় কারো মৃত্যু হলে, যোহরের নামাজে তার জানাজা হয় আর দুপুরে মারা গেলে আসর অথবা বড়জোর এশার ওয়াক্তে তার দাফন হয়ে যায়। । মুর্দাকে কতো তাড়াতাড়ি দাফন করা যাবে সেটা নিয়ে আত্মীয়স্বজনেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই সামাজিকতায় মৃতদেহ কীভাবে রাস্তায় বা মহল্লায় পড়ে থাকবে? সেই সুযোগ নেই আমাদের দেশে।
বন্ধুর আরেকটি মত ছিল, আমাদের গ্রাম মফঃস্বলে সকলেই কায়িক পরিশ্রমী। এঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ; চারদেয়ালে বন্দী সচ্ছল জনগণের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা যারা বাসায় পানি ফুটিয়ে খাই, তরিতরকারি ধুয়ে খাই, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকি, গাড়িতে চড়ি , তাদের ইমিউনিটি প্রান্তিক জনগণের চেয়ে কম। উদাহরণ দিয়ে বলল যে , আমাদের বয়সী বন্ধুদের কয়েকজন যদি পথচলতি রাস্তার ড্রেনের পাশের ফুচকার দোকানে দাঁড়িয়ে চটপটি খায়, তবে কী হতে পারে। দুয়েকজন যে অতিঅবশ্যই পেটের পীড়ায় ভুগবে সে দিব্যি করে বলা যায়। কিন্তু এই ঢাকারই বস্তিবাসী যারা বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর, অপরিচ্ছন্ন, গাদাগাদি জীবনযাপনে অভ্যস্ত একই খাদ্যাভ্যাসে তাদের কি কিছু হবে ? মনে হয়, হবে না। তো সেই বন্ধু রসিকতা করে বলল, তাৎক্ষণিক পরীক্ষায় এদের অধিকাংশের দেহে দুই রকমের ডায়রিয়া আর তিন রকমের কলেরার ব্যাকটেরিয়া এমনিতেই পাওয়া যাবে। এন্তার সিজনাল ভাইরাস তো থাকবেই। কোভিড-১৯ ভাইরাস এদের কাবু করতে পারবে না। ওঁর মতের সঙ্গে এই আগস্টে এসে একমত পোষণ করতেই হচ্ছে। অবশ্যই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকে মারা গেছেন, সেটা প্রত্যন্ত জেলা শহর থেকে ঢাকার মিডিয়াতে এসে পৌঁছায়নি ; তবে সংখ্যায় সেটা আশাতীত রকমের কম।
ছোটমামার সঙ্গে দেখা হয় না বহুদিন। ফোনে সেদিন বলছিলেন , করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলেও মনে হচ্ছে আতঙ্কটা আর নেই রে ! অবাধ চলাফেরা, মেলামেশা করা পাবলিকের ভাবখানা হচ্ছে, ও আচ্ছা, মৃত্যুই তো !
আমার মনে হয়, করোনার ব্যাপারটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে তীব্র আতঙ্ক থাকে। কিছুদিন পরে সবাই বোমা, মৃত্যু, হাসপাতালে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যুদ্ধের ভিতরেই একসময় সোমত্ত ছেলেমেয়েদের বিয়েশাদি হয়, সন্তানাদি হয়। যুদ্ধকালীন মানবিক সঙ্কটকে স্বাভাবিক মনে করা শুরু করে। দিনশেষে বাসায় রেডিও টিভিতে হতাহতের কথা শুনে একটু আতঙ্কিত হয়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, আবার বেমালুম ভুলে যায়।
করোনায় পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে, তবে বিমান ও পর্যটন খাতের অবস্থা একেবারে কেরোসিন মনে হচ্ছিল। ইদানীং গত রোজার ঈদেও অনেকে এদিক সেদিক সামাজিক দূরত্ব রেখে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি।
বন্দিজীবনে তিক্ত হয়ে যাওয়া বাচ্চাগুলোকে একটু খোলা বাতাসে নিয়ে গেলাম গত পরশু। ঢাকার পাশেই একটা রিসোর্টে। ঢাকার সীমানা অতিক্রম করার পরে, মনে হোল না যে দেশে করোনা আতঙ্ক আছে। অর্ধেক লোকের মুখেই মাস্ক নেই। গতমাসে অনেককে সামাজিক দূরত্ব না মেনে ঘুরতে যেতে দেখেছি আর বাড়ি এসে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কোঁকাতেও দেখেছি। যাদের নির্বোধ ব্যাকুলতা নিয়ে হাসি তামাশা করেছি, নিজেরাই সেই কাজ করে এলাম। তাই, সেটা লুকানোর কিছু দেখি না।
প্রকাশকালঃ ৯ই আগস্ট,২০২০
সাম্প্রতিক মন্তব্য