by Jahid | Nov 23, 2020 | সমাজ ও রাজনীতি
ঠিক প্রতিবার নয়, প্রায়ই বিদেশের ইমিগ্রেশনে আমি র্যান্ডম সিলেক্টেড হই। বিবেচনা করেন, আমার প্রোফাইলের খোমা দেখে কী মনে হয় আমি সন্ত্রাসী ! আফসোস! শুধুমাত্র আমার মা বেঁচে থাকতেই আমার চেহারার প্রশংসা করতেন। এর পরে আর কেউ করেনা।
খুব কাছের লোকেরা আমার হাজির জবার ও উপস্থিত বুদ্ধির অপ্রতুলতায় অভ্যস্থ। কেউ একটা কথা শুনিয়ে গেলে , দুইদিন পরে মনে হয়, ইস্ এইটার উত্তরতো ওই ভাবে দেওয়া যাইতো ! সুতরাং আমার পাশের লাইনের লোকেরা স্মার্ট উত্তর দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, আমি র্যান্ডম সিলেক্টেড হই । আমি এইটা মেনে নিছি। দেশের ও বিদেশের এয়ারপোর্টের ব্যাপারে নিতান্তই ব্যক্তিগত লার্নিং হচ্ছে এইখানে হুদা হ্যাডম না দেখানোই ভালো। দেখাইতে পারেন, যদি আপনি মন্ত্রী , উর্ধ্বতন পুলিশ ,সেনাবাহিনী কর্মকর্তার নিকটাত্মীয় হন। এবং আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, ওই ঐশ্বরিক ক্ষমতার লোকটি আপনাকে চেনে ও আপনার ফোন যে কোন মুহূর্তে রিসিভ করবে। আপনি আমজনতা হলে, স্রেফ চেপে যান। একপাশে পা ভর দিয়ে কেবিন লাগেজ নিয়ে অপেক্ষা করুন। বাংলাদেশের সমস্ত অনিয়মের শুদ্ধি অভিযানের জন্য আপনি ম্যাজিস্ট্রেট রোকনুদ্দৌলা নন।
যাই হোক,বিদেশে ভদ্র কাস্টমস অফিসার যে একেবারে নাই , তা না । কেউকেউ লাজুক লাজুক ভদ্রতা করে বলে, বুঝলা মুহাম্মাদ , টুডে ইউ আর আওয়ার র্যান্ডম সিলেকশন। আমি ঘাস খাই না। এত্তো লোক রেখে শুধুই যে মোহাম্মদ, সবুজ পাসপোর্ট আর গাত্রবর্ণই সিলেকশনের কারণ সেটা বুঝি । মনে মনে আইএস জঙ্গী, ওসামা বিন লাদেন আর হালের নাফিজ টাইপ পোলাপানরে অভিসম্পাত করি আর আশে পাশের লাল- নীল পাসপোর্টের লোকেদের বাইরে যেয়ে ট্যাক্সি ধরা দেখি।
আমার একটা ট্রিক্স আছে, মাঝে মাঝে কাজে দেয়। বিদেশের ইমিগ্রেশনে স্রেফ হাসি হাসি মুখ করে চেয়ে থাকবেন। মুখে একটু ক্লান্তির ছাপ ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। পরের ফ্লাইট মিস করছেন, আরেক কলিগ চলে যাচ্ছে , এইসব টেনশন বা উত্তেজনার ছাপ চেহারায় রাখবেন না । যে যে কাগজ চায়, দেখাবেন, যেই রুমে বসাইয়া রাখে বইসা থাকবেন। এই দেশে কী আইন নাই, আমার সমস্যা কী, এইসব আগ বাড়িয়ে বলেছেন কি আপনার সময় আরো নষ্ট হবে। আপনি ভয়ংকর স্মার্ট লোক হইলে কাস্টমস অফিসারের সঙ্গে ওই দেশের অর্থনীতি,আবহাওয়া , রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। সেটাতেও মুশকিল আছে, আপনি রিপাবলিকান কাস্টমস অফিসারের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের প্রশংসা করলে হিতে বিপরীত হইতে পারে।
যেহেতু আপনি আমার বন্ধুস্থানীয় এবং এই লেখা পড়ছেন ধরেই নিচ্ছি আপনি ওই দলের না। ভয়ংকর স্মার্ট লোকেরা ব্লগিং বা ফেসবুকিং করে সময় নষ্ট করে না।
[ প্রথম প্রকাশঃ ২২শে মে, ২০২০ }
by Jahid | Nov 23, 2020 | সমাজ ও রাজনীতি
‘আপা আমার জামাইটা অনেক ভালো, আমার মেয়েকে কোন কাজই করতে দেয়না। মেয়ে সারাদিন বিছানায় শুয়ে বসে কাটায় । আর আমার ছেলের বউটাতো অসহ্য ! সারাক্ষণ আমার ছেলেটাকে খাটিয়ে মারে। আমার ছেলেটা সকাল থেকে রাত নাস্তারে,বাচ্চারে, স্কুলরে, অফিসরে করতে করতে শেষ!’
জ্বী, এই হচ্ছে ঘরে ঘরে আমাদের বাঙালি ভণ্ডামো। জ্বী , আপনি ভীষণ একচোখা, স্বার্থপর, ভণ্ড ! কিন্তু মানবতার কথা বললে আপনি তাতে অংশ নেনে এবং উহু আহা করেন। আপনি বেড়ে উঠেছেন জামাই ও বৌমাকে দুই চোখে দেখতে দেখতে।
আমি মিরপুরের অবাঙ্গালী-বিহারী উদ্বাস্তুদের সাথে বেড়ে উঠেছি। কিন্তু ওই তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকের বেদনা বোঝার মতো ঔদার্য আমার ছিলনা, এখনো নাই। জ্বী , আমিও আপনার মতোই। আমাদেরকে বলা হয়েছিল , এরা মানুষের মতোই , কিন্তু পরজীবী নর্দমার ক্রিমিকীটের চেয়েও তুচ্ছ। এদের জন্ম নর্দমায়, চলাফেরা নর্দমায় ও মৃত্যুও তাই । এরা আমাদের আমাদের খাদ্যে ভাগ বসাচ্ছে, রাস্তা নোংরা করছে, পরিবেশ নষ্ট করছে ; চলার পথে এরা পড়ে থাকা দুর্গন্ধময় আবর্জনা। পারলে পাশ কাটিয়ে চলে যাও, পা মাড়িও না। আমরা তাই করেছি।
জ্বী ভাই, আপনার প্রতিবেশী কয়েক কোটি বাঙালি হিন্দু বাপ দাদার ভিটেবাড়ী ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ-কোলকাতায় ৪৭, ৬৯, ৭১ ও ৯০ থেকে ২০১৫, ১৬– দফায় দফায় গিয়ে রাস্তা ঘাট নোংরা করলে, পরিবেশ নষ্ট করলে আপনার খারাপ লাগে না । কিন্তু রোহিঙ্গা বা অবাঙালি-বিহারী দেখলে, তাদের ব্যাপারে সরকারের আহ্লাদ দেখে আপনি উষ্মা প্রকাশ করেন, ক্ষুদ্ধ হন।
জ্বী ভাই, তিন প্রজন্ম ইংল্যান্ডে থেকে তাঁদের ঘি মাখন খেয়ে খেলার সময় বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মাঠে দৌড়ান। আপনার সাদা চামড়ার সহকর্মীর সাথে হাতাহাতি করেন। আপনার বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য হচ্ছে দেশপ্রেম।
জ্বী ভাই, আপনি অস্ট্রেলিয়া যান, আপনি আমেরিকা যান আপনি ইটালি যান। আপনার ভাই যায়, বোন যায়, মামা-চাচা যায়। আপনি দিন গোনেন কবে আপনার বা আপনার প্রিয়জনের নাগরিকত্ব দেবে ওই দেশ। না দিলে, ওই দেশের ক্ষমতাসীন দলকে মা-বাপ তুলে গালি দেন।
২৩৯ জন সাদা-বাদামী চামড়ার লোক নিয়ে এমএইচ ৩৭০ সাগরে ডুবে গেলে আপনি আবেগে ভেসে যান, সাহায্যকারী জাহাজ ও বিমান পাঠান ।কিন্তু ঠুনকো নৌকায় মাঝ সমুদ্র পেরিয়ে মৃতপ্রায় হাজার আটেক বেঁচে থাকা মুসলমান রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীদের নিয়ে টিভি নিউজ দেখলে আপনি চ্যানেল চেঞ্জ করে স্টার প্লাস দেখেন।
বাঙালি নাগরের জন্য নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক।
তবু বলি, আশির দশকের কোন একটা সেমিনারে মাদার তেরেসার অসংখ্য কাজের মধ্যে একটা ছোট্ট মহতী কাজের উদাহরণ শুনেছিলাম। মহামারী আক্রান্ত জনপদে মাদার তেরেসা ও তাঁর সংগঠনের কর্মীরা। পাশাপাশি দুজন মৃতপ্রায়ের একজন ঘণ্টাখানেক বাঁচবেন। আরেকজন হয়তো মিনিট পাঁচেকে চলে যাবেন। মাদার তেরেসা এগিয়ে গেলেন বেশী মুমূর্ষুর কাছে , কোলের উপর মাথা নিয়ে পানি খাওয়ালেন। লোকটির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পরে, পাশে থাকা কর্মী তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, মা ওই লোকটা তো এমনিতেই চলে যাচ্ছিল। বরং যার বাঁচার সম্ভাবনা বেশী তাকেই কী আপনার সেবা করা উচিৎ ছিল না ?
মাদার তেরেসা উত্তর দিয়েছিলেন অনেকটা এইরকম, আমি জানি সে চলে যাচ্ছে, কিন্তু চলে যাওয়ার আগে জেনে যাক, পৃথিবীতে এখনো ভালোবাসা আছে !
[ প্রথম প্রকাশঃ ২১শে মে, ২০১৫ ]
সাম্প্রতিক মন্তব্য