by Jahid | Nov 28, 2020 | ছিন্নপত্র, দর্শন, সমাজ ও রাজনীতি
1.The freethinking of one age is the common sense of the next.( Mathew Arnold)
2.Education’s Purpose is to replace an empty mind with an open one.(Malcolm Forbes)
3.It is the mark of an educated mind to be able to entertain a thought without accepting it.(Aristotle)
4.I never teach my pupils, I only provide the conditions in which they can learn.( Albert Einstein)
5.Don’t limit a child to your own learning, for he was born in another time.( Rabindranath Tagore)
6.I am a part of everything that I have read.( Theodore Roosevelt )
7.Poor is the pupil who does not surpass his master.( Leonardo da Vinci)
8.If I were again beginning my studies, I would follow the advice of Plato and start with Mathematics.(Galileo Galilei)
9.Education is the most powerful weapon which you can use change the world.(Nelson Mandela)
প্রকাশকালঃ ১০ই জুন, ২০১৭
by Jahid | Nov 27, 2020 | লাইফ স্টাইল, সমাজ ও রাজনীতি
আমার প্রবাসী আত্মীয়-বন্ধুদের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রেখে এই পোস্ট দিচ্ছি। কেউ এটাকে পারসোনালি নিবেন না, সেই আশা করতেই পারি।
বছর খানেক আগে এক কানাডা প্রবাসীর সাথে কথা হচ্ছিল। নানা কথার পরে সে যেটা বলল সেটা মনে দাগ কাটার মতো বলেই এখন পর্যন্ত মনে আছে।
কানাডা প্রতি বছর লক্ষাধিক এশিয়ান নিচ্ছে ইমিগ্রান্ট হিসাবে। ইদানীং শুনছি লাখ তিনেক ডলার ওখানকার ব্যাংকে রাখলে বা জয়েন্টভেঞ্চারে ইনভেস্ট করলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি কনফার্ম। ২০০১ সাল থেকে গড়ে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ থেকে তিন লক্ষ লোক কানাডা প্রবাসী হচ্ছে বিভিন্ন এশিয়ান দেশ থেকে। এইসব পশ্চিমা দেশগুলো গরীব-দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজেদের অর্থনীতিতে পাম্প করে এঁদের প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছেন।
আমি অর্থনীতিবিদ নই, ব্যক্তিগত হিসাবেও যথেষ্ট কাঁচা । তবু একটা সংক্ষিপ্ত হিসাব দেওয়ার চেষ্টা করি। ধরেন ২,৫০,০০০ ইমিগ্রান্ট X US$ ৩,০০০০০= US$ ৭,৫০০০০০০০০০.০০ মানে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার ! এইবার আপনি ওইখানে পৌঁছানোর পর ওই উন্নত দেশের নানারকম সুবিধায় চমৎকৃত হতে থাকবেন, হতেই থাকবেন।
কেননা, আপনি তো গেছেন পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি থেকে। আপনি রাস্তা দেখে , বাতি দেখে অবাক হবেন, করিৎকর্মা পুলিশের ভেঁপু শুনে অবাক হবেন। বহু শতবর্ষের লক্ষ লোকের ঘাম-রক্তের বিনিময়ে গড়া আমাদের চেয়ে শত বৎসর এগিয়ে থাকা সভ্যতার ঘি মাখন এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই বিনা পরিশ্রমে আপনি ভোগ করা শুরু করবেন । । বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের কাছে আর বন্ধু-বান্ধবের কাছে ফোন করে নানা রকম তুলনামূলক তত্ত্ব শোনাবেন আর আমাদের দীর্ঘশ্বাস শুনে বিমলানন্দ উপভোগ করবেন।
তবে আসল শুভঙ্করের ফাঁকি ব্যাপারটা অনেকে বুঝে ফেলেন কয়েকবছরের মধ্যে । আপনারই দেওয়া টাকাপয়সায় আপনার ওয়েলফেয়ার ইনস্যুরেন্স, গাড়ি বাড়ি লোনের হ্যাপায় ওই পশ্চিমা দেশ আপনাকে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াবে , আপনি তখন ধোপার গাধা– না ঘরকা , না ঘাটকা! এই দুষ্ট চক্রের বাইরে আসতে পারবেন না। আপনি ও আপনার প্রিয় পরবর্তী প্রজন্ম ওই চক্করের ভিতরে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে চীজ বার্গার খেয়ে দিনাতিপাত করবেন। যখন বুঝবেন, ততদিনে ওই দুর্ভেদ্য চক্র ভাঙ্গার সাহস বা সামর্থ্য দুইটাই অবলুপ্ত আপনার।
একইভাবে, নন প্রোডাক্টিভ কিছু দেশ আছে, যেমন যুক্তরাজ্য বা ইংল্যান্ড। লক্ষ লক্ষ ছাত্র প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার এশিয়া থেকে নিয়ে যেয়ে ওই দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে আর চক্করের ভিতরে পড়ছে।পড়ুক, আমার তাতে কোন আপত্তি নাই। আপনি দুধ বেচে তামাক খাবেন , নাকি তামাক বেচে দুধ খাবেন সেটা আপনার ইচ্ছা।
কিন্তু , আমার আপত্তি অন্য খানে!
কোন কোন প্রবাসী শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে ভিওআইপি সস্তা রেটে কল করে বা ফ্রী স্কাইপে, ভাইবারে, হোয়াটস অ্যাপে আধাঘণ্টা ধরে বাংলাদেশের ‘আম্লীগ বিম্পি’ নিয়া কচলা কচলি করে, আর বোঝানোর চেষ্টা করে আমরা কতিপয় ভোঁদাই আমজনতা আসলে গুপ্তকেশ উৎপাটন করছি । উপসংহারে বা গৌরচন্দ্রিকাতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় , ‘দেশটার হচ্ছে টা কি?’
কেন জানি না তাঁদের ধারনা হয়েছে , বাংলাদেশে আমরা শুয়ে বসে আর টকশো দেখে দিনাতিপাত করছি। । আর দুই বরাহ শাবকের দলকে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় এনে দেশের বারোটা বাজাচ্ছি। আমরাও যে ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছি, অফিসের টাইমে হুদা মিছা প্যাঁচাল না পেড়ে আমরাও যে , যে যার জায়গায় পরিশ্রম করে যাচ্ছি, এটা তাঁদের বোঝানো মুশকিল। মনে হয় দুনিয়াতে তাঁরাই শুধু ব্যস্ত আর আমরা শুধু গুপ্তকেশ উৎপাটন করে আঁটি বাঁধছি ! আগে মন দিয়ে শুনতাম বা হু হা করতাম, এখন বয়সের জন্যই কীনা জানিনা। এইসব বাল ও ছালের আলাপ শুনতে আর ভালো লাগে না!
ভাইরে, আপনি থাকেন আপনার পশ্চিমা দেশের ঘি মাখন জ্যাম জেলি নিয়ে ! এই বাংলাদেশের জন্য কে কী ছিঁড়ছেন আমরা তো কম বেশী জানি। কেন খামোখা গুচ্ছের সময় নষ্ট করে আমাদের অপরাধ বোধে ভোগাতে চান? দেশের এই অবস্থা আমরা কি একা করেছি ?
প্রকাশকালঃ মার্চ, ২০১৩
by Jahid | Nov 27, 2020 | সমাজ ও রাজনীতি
বেশ কয়েকমাস আগে আমার এক জার্মান ক্রেতা-বন্ধু আমাদের দেশের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করলো।সে আমাদের বাংলাদেশের শম্বূক গতির উন্নয়ন দেখে যুগপৎ বেদনার্ত ও আনন্দিত ! সে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কিনছে গত বছর পনেরো ধরে।
বেদনার্ত এই কারণে যে গত পনেরো বছরে আমাদের রাস্তা ঘাট বিদ্যুৎ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। বর্ষা এলে কোন কোন কারখানায় যেতে ‘হাকিম আলীর মৎস্য খামার’ পাড়ি দিতে হয়। অপ্রতুল রাস্তা ও ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতো নিত্যকার ব্যাপার। খুব তাড়াতাড়ি যে উন্নতি হবে তেমন কোন লক্ষণ ও দেখা যাচ্ছে না । কিন্তু, আমাদের বন্ধুত্বের কারণেও সে চায় আমাদের দেশের উন্নতি হোক।
আবার যেহেতু সে তৈরি পোশাক ক্রেতা, আমাদের এই ধীরগতির উন্নতিতে সে ক্রেতা হিসাবে খুশী। নিকট ভবিষ্যতে আমাদের এমন কোন উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হয়নি যে , যে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন সেক্টরে উন্নতি করে ফেলবে!
সীমাহীন দুর্নীতির কারণ রাজনীতির কালো টাকা বা ব্ল্যাক মানির কথা উঠলে সেও একমত পোষণ করলো। অর্থনীতিতে কালোটাকার দরকার আছে। কিন্তু সেইটা রকমফেরে ৭ থেকে স্বচ্ছ ১৩ বা ১৫% হতে পারে। আমি বললাম তোমার কোন ধারণা আছে, সরকারী হিসাবে আমাদের অর্থনীতিতে কালো টাকা আছে সম্ভবত: প্রায় ৪০ ভাগের উপরে বেসরকারি হিসাবে এইট সম্ভবত: ঠিক উল্টোটা ।
আমাদের এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণ কি? আমি নিজেই তাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলাম, আইনের দুর্বল শাসন ছাড়াও এক সর্বগ্রাসী নিরাপত্তা হীনতা মানুষকে অমানুষ করে তুলেছে ধীরে ধীরে । আমি যদি না থাকি , আমার সন্তানের বা পরিবারের কী হবে তা আমি জানিনা। আমি বেঁচে থাকতেই আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নেই, আমি মারা গেলে কি হবে? নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ করার উদ্দেশ্যে শুরু হয় দুর্নীতি। তারপর, এটা পর্যবসিত হয় রোগে।মানুষের চাওয়ার তো শেষ নাই। অনোপার্জিত অর্থের ভাণ্ডার যখন তার সামনে উন্মোচিত হয়, অবারিত লুণ্ঠনের জবাবদিহিতা যখন থাকে না , সে হাত-পা, চুল-নখ দিয়ে চেটেপুটে খায়, খেতেই থাকে । পেট ভরে ফেটে যাওয়ার উপক্রম করলেও খেয়ে যেতেই থাকে , লুণ্ঠন আর থামে না ।
রাজনৈতিক নেতারা পর্যায়ক্রমে একেক টার্মে লুঠতরাজ করতে থাকে।
এই সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে তোমাদের পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটা দেশের অবদান অপরিসীম ! সে প্রথমে আমার কথা বুঝে উঠতে পারলো না।
আমি বললাম, ধরো একজন দুর্নীতি করছে। যখন তার পেট ভরে যাবে সে তার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরও কিছু দুর্নীতি করবে। উদ্বৃত্ত টাকা এখানকার ব্যাংকে রাখবে, কলকারখানায় ব্যয় করবে, ইত্যাদি ইত্যাদি । আজ যদি সে অবৈধ অর্থ পাচার করতে না পারতো, তাহলে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এই দস্যুতা থামবেই । আজ সুইস ব্যাংক না থাকলে তৃতীয় বিশ্বের সীমাহীন দুর্নীতির অনেকটা কমে যেতো।
ধরো, আমাদের কোন নেতা কয়েকশ কোটি টাকার লুণ্ঠন করলো। এখন আমাদের দেশের ব্যাংকে সে আর কতো রাখতে পারবে ? তাকে হয় দেশের মধ্যে সেই টাকা রোল অন করাতে হবে, অথবা অসদুপায়ে টাকা উপার্জনে ক্ষান্তি দিতে হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না কারণ, পশ্চিমা দেশের কিছু ব্যাংক এই তৃতীয় বিশ্বের দেশের রাজনৈতিক কালো মানুষদের অসীম পরিমাণ কালো টাকা নিরাপদে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে।
ভারতের সরকারী হিসাবে ৫০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার কালো টাকা সুইস ব্যাংকে রাখা আছে। বেসরকারি হিসাবে ১৪০০ বিলিয়ন ডলার। (১ বিলিয়ন= ১০০০ মিলিয়ন, ১ মিলিয়ন= আট কোটি টাকা)। এইটা নেট থেকে পাওয়া। বাংলাদেশের হিসাব নখ-দন্তহীন দুর্নীতি দমন কমিশনের( দুদক) কাছে থাকলেও থাকতে পারে। আমি জানি না ।
সে আমার কথার কোন উত্তর বা তর্কে গেল না। হয়তো বুঝলো, মুখে মুখে সাদা চামড়ার এরা তৃতীয়বিশ্বের নীতি দুর্নীতি ও মানবাধিকার নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, ভেতরে ভেতরে এরা ততোটাই ভণ্ড !
প্রকাশকালঃ মার্চ ,২০১৩
by Jahid | Nov 27, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন, সমাজ ও রাজনীতি
আমাদের কিংবদন্তী অর্থনীতিবিদদের কাছে ‘চাকরি নয়, উদ্যোক্তা হও!’ ‘ সামাজিক ব্যবসা’ ইত্যাদি শুনে শুনে আমার মতো কুলি মজুরদেরও মাঝে সাঁঝে জানতে ইচ্ছে করে, এতো বড় একটা প্রযুক্তিনির্ভর প্রজন্ম উদ্যোক্তা হওয়ার পথে কি করছে ! তাঁদের মৌলিক বাধা কি কি ; নবীন উদ্যোক্তাদের কি অবস্থা ? আমাদের নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনা কি ?
সম্ভবত: ২০০৭/৮ এর পর থেকে শিল্প উদ্যোক্তাদের গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অধুনা কয়েকবছর যাবত তা দেওয়া হচ্ছে, এবং সেই গ্যাসের লাইন নেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের কি পরিমাণ ‘ স্পিড মানি’ খরচ হচ্ছে ; সেটা শুনলে অনেকের চোখ কপালে উঠবে ! বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, আমাদের জ্বালানী সংকট, রানা প্লাজা, তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি আমাদের বস্ত্রশিল্পকে খোলনলচে বদলে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে অন্যতম রপ্তানীমুখি শিল্পে নতুন উদ্যোক্তা আসার পরিমাণ গেছে কমে । নতুন টেক্সটাইলে নতুন উদ্যোক্তাদের পদচারণ নেই বললেই চলে । যা হচ্ছে, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ! কারো ৬ লাখ গজ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল, সে এক ধাক্কায় ১২ লাখ গজ করে ফেলছে। কারো ৩০ লাইনের কারখানা ছিল, সে কয়েকবছরে ৬০ লাইন করে ফেলছে। অসম মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অসংখ্য ছোট মাপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝারি মাপের গার্মেন্টসগুলোর মালিকানা বড় গ্রুপগুলোর কাছে চলে গেছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর আরও বৃহদায়তন হচ্ছে।
দেড় যুগ আগে আমার কর্মজীবনের শুরুতে দেখেছি , গার্মেন্টস-এর মালিকদের প্রধান উৎপাদন নির্ভরতা ছিল , কাপড় উৎপাদন করা ও সেলাই করার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ব্যাক-ওয়ার্ড লিংকেজ বা অন্যান্য খুচরা পণ্যের সরবরাহ ছিল পুরোটাই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে। বোতাম, টুইল টেপ, লেবেল, সুতা, কার্টন, পলি ব্যাগ, স্ক্রিন প্রিন্ট , এমব্রয়ডারি যাবতীয় সরবরাহ ছিল ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনেক লোকের কর্মসংস্থান হত।এখন বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কারখানায় সব ধরণের সার্ভিস ও ব্যাক-ওয়ার্ড লিংকেজ ইউনিট খুলে বসে আছেন।
তাহলে ঐ ক্ষুদ্র- মাঝারি উদ্যোক্তাদের কি অবস্থা ? প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে, পুরনোরা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন । এবং ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ আবহাওয়ায় নতুন উদ্যোক্তারা নিজেদের নৌকার পাল না তুলে ‘ আরামদায়ক’ চাকরির বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন।
টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টর ছেড়ে অন্যদিকে আসি। স্কয়ার বা প্রাণ-আরএফএল এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানকে উদাহরণের স্বার্থে উদাহরণ হিসাবে ধরছি। স্কয়ার-এর ফার্মাসিউটিক্যালস দিয়ে ব্যবসা শুরু। পরে টেক্সটাইল, তারপরে ফুড ও বেভারেজ, কসমেটিক্স, টয়লেট্রিজ, হাসপাতাল সব। দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠতায় তাঁদের সকল পণ্য একটা ব্র্যান্ড লেবেল পেয়ে গেছে। বিশ্বাসযোগ্যতা এমন পর্যায়ে গেছে, তাঁদের পণ্য চোখ বুজে ভোক্তারা কিনে থাকে। কিন্তু এমন অনেক পণ্য ছিল, যেগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা করে বেঁচে থাকত। সেগুলোও ধীরে ধীরে স্কয়ার দখল করে নিয়েছে। সামান্য ঝাল মুড়ি বা চীনাবাদামও যদি স্কয়ারের মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করে, তাহলে সাধারণ ভোক্তাদের কেউ কি আর চলতি ঝাল মুড়িওয়ালার কাছ থেকে কিনবে ?
ঐদিকে প্রাণ-আরএফএল এর মূল পণ্য সম্ভবত: ছিল, একদিকে তরল পানীয় অন্যদিকে হেভি-লাইট মেশিনারিজ, নলকূপ ইত্যাদি। এখন তাঁরা সাধারণ প্লাস্টিকের চেয়ার থেকে শুরু করে সামান্য বালতি,বদনা পর্যন্ত উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। হাস্যকর হলেও সত্য, প্লাস্টিকের বদনা খুবই ছোট মাপের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা করে থাকতেন। যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্লাস্টিকের বদনা, বালতি তৈরি করত তাঁর ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া এখন গত্যন্তর নেই । ব্র্যান্ড ইমেজে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অনেক পিছিয়ে আছে। পেপার ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রমরমা বিজ্ঞাপনে সবকিছুই ব্র্যান্ডিং ও বিক্রি করা সম্ভব।
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রচলিত পণ্য ছাড়াও ছোটখাটো সবরকম পণ্যের বাজার যেভাবে দখল করা শুরু করেছে; দেখে শুনে মনে হচ্ছে , সেই দিন আর বেশি দুরে নেই, কয়েকটি বড় কর্পোরেশন বাংলাদেশের তাবৎ পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহের দায়িত্ব নিয়ে বসে থাকবেন। পুঁজি বাজার ও মুক্তবাজার অর্থনীতির বিজ্ঞাপনে নৈতিকতা পকেটে পুরে ফেলেছেন আমাদের বড় উদ্যোক্তারা।
আবার ফিরে আসি আমাদের টেক্সটাইল ও বস্ত্র খাতে। কেন নতুন উদ্যোক্তাদের দেখা নেই ?কেন এঁরা নতুন শিল্প স্থাপনে উৎসাহী হচ্ছেন না ?
প্রথমত: বড় উদ্যোক্তারা ছোটদের ডি-মার্কেটিং করছেন। বড় মাছ, পুকুরের সব ছোটমাছকে খেয়ে ফেলছে।
দ্বিতীয়ত: ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের আগের মতো সহায়তা করছে না। ব্যাংক নিরাপদ বিনিয়োগে বড় ঋণ-খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে আবার নতুন করে ঋণ দিচ্ছে। আর আমাদের অসংখ্য মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকেরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না , তাঁদের চাকরি বাজার ও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আদৌ সম্ভব কীনা, হলেও সেটা কীভাবে ! তৃতীয়ত: (এটি আমার ব্যক্তিগত মতও বটে)—ব্রিটিশ কেরানি-নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের অগুনতি কেরানী তৈরি করছে। শত শত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের বেশি দরকার – হাজার হাজার কারিগরি শিক্ষা নির্ভর শিক্ষালয়। যেখানে, একজন তরুণকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহ দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ,আমাদেরকে মানসিক প্রতিবন্ধী করে ফেলছে। একটা চেয়ার ও টেবিলের বসার সুযোগের জন্য আমাদের সকল সম্ভাবনা জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত ।
বাংলাদেশ সরকারের ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু মাস্টার প্ল্যান হয়তো আছে। আমি জানি না । নানা ধরনের ফান্ড থাকে , এসএমই ( Small Medium Entrepreneur) ঋণ থাকে। সেটা কতখানি সঠিক জায়গায় পৌঁছায় , সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ অমূলক নয়। এবং প্রতিবছরে ওই ফান্ডের যথোপযুক্ত ব্যবহার হয় কিনা , সেটার কোন তথ্য কারো জানা নেই।
কিছুদিন আগে , বিশাল শিল্পকারখানার মালিক এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি নিজেও চাইতেন, ছোট ছোট স্ক্রিন প্রিন্টিং কারখানা , লেবেল, পলি , টুইল টেপ, বাটন , কার্টন ফ্যাক্টরি ফ্যাক্টরি চালু থাক। কিছু লোকজন উদ্যোক্তা হোক। মুশকিল হচ্ছে, তাঁর অভিজ্ঞতা এই ব্যাপারে খুবই তিক্ত ! তিনি হয়তো ভালো মানের সুতা দিয়েছেন তাঁর টুইল টেপ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু , ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অতি লোভে , মাঝপথেই গাড়ীসহ সেই ভালো মানের সুতা বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে, দুনিয়ার উচ্ছিষ্ট খোলা বাজারের সুতা কিনে তাঁর টুইল টেপ বানিয়ে দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় গুণগত মানে তাঁর গার্মেন্টস ফেল করেছে।
একই কথা অন্যসব বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য, এঁরা যে দামে কাজ ছোটদেরকে দেয়। তাঁরা যদি সঠিক উপাদান ব্যবহার করত তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু, কিছু অতিলোভী দ্রুত মুনাফা কামী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কৃতকর্মের দায় নিতে হচ্ছে অন্য সবাইকে। প্রায়শই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ভেজাল ও নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে বড় প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলে দেয়। অনেকবার দেখেছি, সামান্য সুতা, বোতাম, কার্টন, টুইল টেপ, স্ক্রিন প্রিন্ট ফ্যাক্টরির গুণগত মানের সমস্যা অথবা সরবরাহে দেরী হওয়ার গার্মেন্টস মালিককে ডিসকাউন্ট ও এয়ার শিপমেন্টের জরিমানা গুনতে হয়েছে।
দ্রুত বড়লোক হওয়ার ও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে পড়ে ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বড় প্রতিষ্ঠানের ভরসা হারিয়েছেন। এখন বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কারখানার অভ্যন্তরেই সব ছোট ব্যাক ওয়ার্ড লিংকেজ করে ফেলেছেন। কেননা, তাঁরা তাঁদের মিলিয়ন ডলারের শিপমেন্ট সামান্য কয়েক পয়সার অ্যাকসেসরিজের জন্য হুমকির মুখে ফেলতে চান না।
এই দুষ্টচক্র থেকে কীভাবে বের হওয়া সম্ভব , সেটা নিয়ে কী ধরণের গবেষণা হওয়া উচিৎ সেটা জানার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই শেষ করতে হচ্ছে আলোচনা।
প্রকাশকালঃ ১০ই মার্চ, ২০১৭
by Jahid | Nov 26, 2020 | সমাজ ও রাজনীতি
শরৎ বাবু তাঁর ‘ শ্রীকান্ত ‘ উপন্যাসে বলেছেন , “বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।”
প্রেম আছে বলেই, কাছে দূরের হিসাব করতে সাহস করি। তবুও হে পাঠক/পাঠিকা ! কৌতুককে ‘কৌতুক’ হিসাবে দেখতে সনির্বন্ধ অনুরোধ করব ; নচেৎ ৫৭ ধারার মামলা কে খেতে চায় বলুন!
মূল কৌতুক:
বারে বইসা বাঙ্গালের সাথে এক স্কটিশের দেখা হইল। হাই হেল্লোর পর বাঙ্গাল স্কটিশকে কে বললো – তোমরা এত গাধা কেন?
স্কটিশ বললো- কেন?
বাঙ্গাল বললো – গাধা না হইলে কেউ গণভোটে স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করে?
স্কটিশ বাঙ্গালের কথা শুইন্যা আক্কেলগুড়ুম হইয়া বইসা থাকলো!
সেই বারে কিছুক্ষণ পর যোগ দিল এক ব্রিটিশ। কিছুক্ষণ হাই হেল্লোর পর বাঙ্গাল সেই ব্রিটিশকে বললো- ঐ মিঞা ব্রিটিশ! তোমরা এত ছাগল ক্যান?
ব্রিটিশ মুখচোখ লাল কইরা বললো- ক্যান?
বাঙ্গাল বললো- ছাগল না হইলে কেউ ভোটে ব্রেক্সিট অনুমোদন করে?
কথা শুইন্যা ব্রিটিশেরও আক্কেল গুড়ুম!
আরও কিছুক্ষণ পর আসলো এক আমেরিকান l কিছুক্ষণ হাই হেল্লোর পর বাঙ্গাল আমেরিকানকে বললো – ইয়ো ! তোমরা এত পাগল ক্যান?
আমেরিকান চোখমুখ খিঁচায়া বললো- ক্যান?
বাঙ্গাল বললো – পাগল না হইলে কেউ ট্রাম্পরে ভোট দিয়া প্রেসিডেন্ট বানায়? আমেরিকানেরও আক্কেলগুড়ুম অবস্থা!
স্কটিশ-ব্রিটিশ-আমেরিকান ভাবলো, আরি শালা , বাংলাদেশে না জানি কি অবস্থা! ঐখানের লোকজন নিশ্চয়ই অনেক স্মার্ট! ভয়ে ডরে তিনজনে মিল্যা বাঙ্গালরে জিগাইলো – আমরা গাধা/পাগল/ছাগল বুঝলাম! তোমাদের ঐখানে কি অবস্থা ? তোমরা ভোট দিয়া কি পরিবর্তন করছো?
বাঙ্গাল দাঁত ক্যালাইয়া বললো -আমরা বিজি জাতি, তাই আমাদের ভোট দিয়া টাইম নষ্ট করার মত টাইম নাই!
লোকজন আটোমেটিক বিনাভোটে জিত্যা যায়! যারা বিনা ভোটে জেতে না, তারা আমাদের খাটুনি কমানোর জন্য এবং সময় বাঁচানোর জন্য আমাদের ভোটটা নিজ দায়িত্বে মাইরা দেয়…. এরপর যদি আমরা ভোট দেয়ার মত সময় ও সুযোগ পাই, তখন আমরা লাক্স চ্যানেল আই প্রতিযোগিতায় সুন্দরীদের ভোট দেই…. !
[ প্রকাশকালঃ ৪ঠা নভেম্বর,২০১৬ ]
by Jahid | Nov 26, 2020 | সমাজ ও রাজনীতি
গতকাল সারাটা দিন গেছে আমেরিকান গণতন্ত্র নিয়ে কূট-ক্যাচালে। ভেবেছিলাম আজ ক্ষান্তি দিই। কিন্তু আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণের সাথে কেউ একমত হোক বা না হোক, বলতে অসুবিধা কি !
১৭৬০ সাল থেকে শুরু করে আজ ২০১৬ সাল ২৫৬ বছরে গণতান্ত্রিক পথ পেরিয়েছে আমেরিকানরা।পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সর্বপ্রাচীন গণতন্ত্রের ধারক, বাহক ও প্রচারক যুক্তরাষ্ট্র। সেই তুলনায় গণতন্ত্রের পথে আমরা ভ্রূণের অবস্থানেও নিজেদেরকে বিবেচনা করতে পারি না ! পারি কি ?
মেনে নিচ্ছি, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি হচ্ছে গণতন্ত্র। সমাজতন্ত্রে স্বৈরাচার তৈরি হয়ে যায় দ্রুত।সেটা আমরা অনেকবার দেখেছি। অ্যারিস্টটল-এর পছন্দ ছিল অ্যারিস্টোক্র্যাটিক অটোক্র্যাসি। রাষ্ট্র পরিচালক যদি হন দেশপ্রেমিক ও শিক্ষিত, তাহলে তাঁকে দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ মঙ্গল আনয়ন সম্ভব।
আমি জানি ,অনেকেই আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসতে পারেন ! অথবা আমার উচ্চম্মন্যতা আছে বলে তাচ্ছিল্য করতে পারেন। তবুও বলি– আমি থাকি মিরপুরের অবাঙালী বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে। ভোটের সময়ে আমার বাসার সামনের বিশাল বস্তির ড্রাগ অ্যাডিক্ট উচ্ছন্নে যাওয়া রাস্তার মাস্তান আর আমার ভোটের দাম কিন্তু একই। আমি সুবিধাবঞ্চিত নই, আমি সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত—নানাভাবে আমাকে হেনস্তা করতে পারেন। কিন্তু, একজন শিক্ষিত সচেতন লোকের ভোট আর মাদকসেবীর ভোটের মূল্য কিন্তু গণতন্ত্রে একই।
গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতার দুঃখজনক পরিণতি একটা উদাহরণ দিয়ে বছর বিশেক আগে এক মুরব্বী ব্যাখ্যা করেছিলেন। ধরেন, একটি রাষ্ট্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১০০ জন। দুই জন অযোগ্য প্রার্থীর মধ্যে একজন কুদ্দুস ভোট পেলেন ৪০টি , আরেকজন কম অযোগ্য মফিজ পেলেন ৩৫ ভাগ। বাকী ২৫ ভাগ লোকের ওই দুই প্রার্থীর কাউকেই পছন্দ নয় ! নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৪০ ভাগ লোকের সমর্থনে অযোগ্যতর প্রার্থী কুদ্দুস সরকার গঠন করল। এইখানে ট্রাজেডি হচ্ছে — ৬০ ভাগ জনগণ/ বৃহত্তম জনগোষ্ঠী কুদ্দুসকে পছন্দ করে না, কিন্তু তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই !
আমার কাছেও এইটাই মনে হয়, গণতন্ত্রের অন্যতম বড় একটা সীমাবদ্ধতা। আমেরিকার বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তাঁদের দেশের বাইরেও যে বিশাল একটা পৃথিবী আছে , সেটাই জানে না বা কেয়ার করে না ! এঁদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক লোকের হাইস্কুল পাস আছে। অধিকাংশই ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, কারণ সেটা তাঁদের মাতৃভাষা। এই প্রাইমারী স্কুল পাশ বিশাল জনগোষ্ঠীকে মূর্খ বললে, মনে হয় না খুব বেশী অন্যায় করে ফেলব !
আমার মিরপুরে ঢাকা-১১ আসনে ৯০ এর দশকে , সংবিধান প্রণেতা ডঃ কামাল হোসেন পরাজিত হয়েছিলেন , প্রায় অশিক্ষিত জনাব হারুন মোল্লার কাছে। আবার হজ্বের তহবিল তসরুপ করা চোরা মান্নান জেতে গাজীপুরে !
[ প্রকাশকালঃ ১০ই নভেম্বর,২০১৬ ]
সাম্প্রতিক মন্তব্য