by Jahid | Nov 25, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
মানুষের নাম ভুলে গিয়ে আমি নানারকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি এবং এখনো পড়ি। ঢাকা কলেজে একসময় আমাদের গলাগলি ছিল, তুই-তোকারি ছিল; নীলক্ষেতের নীল-পুস্তিকার আদানপ্রদান ছিল। সময়ের টানে আজ আমি স্থুলাকৃতির বিরলকেশ আর সেই বন্ধুও তাঁর শুশ্রমন্ডিত মুখমণ্ডল নিয়ে রীতিমত ব্যাংকের মুরব্বী টাইপ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ! হঠাৎ এক রেস্তোরাতে দেখা ; অনেকক্ষণ ধরে ‘আরে দোস্ত, হ্যাঁরে দোস্ত’ করছি, কিন্তু কিছুতেই নাম মনে করতে পারছি না ! সে হয়তো অন্য কোন ফ্রেন্ড সার্কেলের মাধ্যমে আমার কিছুটা খোঁজ খবর রেখেছে ; আমি খোঁজ খবরতো রাখিইনি নামটাও ভুলে বসে আছি ! একটা উপায় আছে যেটি কার্যকর ; সেই ভদ্রস্থ উপায়টি হচ্ছে আপনার পাশে আপনার স্ত্রী বা কোন সহকর্মী থাকলে দুজনের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দিন। তারা নিজেরা পরিচিত হতে গেলে, আপনার ভুলে যাওয়া বন্ধুর নামটি বের হয়ে আসবে।
নাম ভুলে যাওয়ার চেয়েও আমার খারাপ অবস্থা হয় কোন একটা নতুন জায়গার লোকেশন মনে রাখার ক্ষেত্রে! আমার পরিবারের লোকজন আমার এই বিশ্রী দুর্বলতার কথা জানে। আমি নিজে গাড়িচালকের আসনে থাকলে, তাঁদের কেউ কেউ পথপ্রদর্শক হিসাবে রাস্তার ডান-বাম দেখিয়ে দেয়। বেশ কিছুদিন আগে , মিরপুরের কাজীপাড়ায় দিনের বেলায় আম্মার কাজিন এক খালাম্মার বাড়ী গেলাম। নিজেই চালকের আসনে ছিলাম। ঠিক পরেরদিন সন্ধ্যায় কোন কারণে আম্মা আমাকে ওই একই বাসায় পাঠালেন; আমি দুই ঘণ্টা ধরে সেই বাসা খুঁজে বের করতে না পেরে নাভিশ্বাস ! আবার মেয়ের গানের টিচারের বাসা থেকে সন্ধ্যায় গেছি মেয়েকে আনতে। ঠিক এক সপ্তাহ পরে, বিকালে মেয়েকে পৌঁছে দিতে গেছি ওই একই বাসায় ! আধাঘণ্টা ধরে রাস্তা গুলিয়ে এদিক সেদিক করছি। বড় কন্যা অবশেষে বিরক্তি নিয়ে নিজেই রাস্তা চিনিয়ে দিল।
তো আমাদের একসময় বড় ক্রেতা ছিল Fruit Of the Loom. বাংলাদেশে যে ভদ্রলোক নিয়মিত প্রোডাকশন ফলো আপ করতে আসতেন তাঁর নাম ছিল জর্জ হেগার্টে। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ।উনি আমাদের ফ্লোরের সব মার্চেন্ডাইজার থেকে শুরু করে পিওনদের নাম মনে রাখতেন। দীর্ঘ বিরতিতেও বাংলাদেশে আসলে, ডেস্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে নাম ধরে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। আমি যদিও ওই ক্রেতার কাজ করতাম না। কিন্তু ভদ্রলোকের ওই অসাধারণ গুণের জন্য এখনো তাঁকে মনে রেখেছি। অফিসে হয়তো কিছু একটা কাগজ, স্ট্যাপলার বা স্যাম্পল লাগবে জর্জের ; যে কোন একজনের নাম ধরে ডাকলে সে সবকাজ ফেলে তাঁর কাজটি করে দিত। আমার ধারণা কারখানাগুলোতেও ওঁর এই অসাধারণ গুণের কারণে ওঁর কাজগুলো আগে ভাগে হয়ে যেত । কে না জানে, স্বল্পপরিচিত কারো নাম ধরে ডেকে কোন সাহায্য চাইলে সেটা পাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে।
জর্জের দুটো মজার মন্তব্য আমার মনে আছে, মাঝে মাঝেই উনি ব্রিটিশ উচ্চারণে ফ্যাসফেঁসে গলায় নিজের কপালের উপরে তর্জনী রেখে বলতেন, ‘Jahid , take no shits !’ আরেকটি কথাও প্রায়শ: হতাশার সুরে বলতেন ,‘Shit hits the fan!’
প্রথমটি, ‘ Jahid , take no shits !’ বলতেন প্রোডাকশনের কোন ঝামেলার কতটুকু উনি কনসিডার করবেন সেই অর্থে। অন্যের হাগু, কেন তোমাকে নিতে হবে? ‘ Do no Harm, but Take no shit!’ উনি আরেকজনের ভুলের খেসারত আমাদেরকে দিতে মানা করতেন। আবার একই সঙ্গে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এর চেয়ে ভাল পদ্ধতি নেই।
আর কখনো কখনো প্রোডাকশনের অবস্থা ল্যাজেগোবরে হলে, উনি গম্ভীর গলায় বার বার বলতেন ‘Shit hits the fan!’ ‘Shit hits the fan!’ আমি ও সেই সময়ের নবীন মার্চেন্ডাইজাররা ‘Shit hits the fan!’ ব্যাপারটা ভিজুয়ালাইজ করার চেষ্টা করে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করতাম।কারণ Shit ছাদের fan-কে hit যদি করেই এবং সেই fan যদি চালু অবস্থায় থাকে তাহলে সারা ঘরের যা অবস্থা হবে এবং সেটা কতদিনে পরিষ্কার করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা যাবে সেটাই একটা দুঃসাধ্য চিন্তা ছিল !
[ প্রকাশকালঃ নভেম্বর ২০১৬ ]
by Jahid | Nov 25, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
কর্মক্ষেত্রে কাকে নিজের কাছাকাছি বা দলে রাখবেন বা কার পক্ষে আপনি খেলবেন ; আর কাকে আপনি প্রতিপক্ষ বানাবেন সেটি খুব স্পর্শকাতর ও দীর্ঘমেয়াদী জটিল সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সিদ্ধান্তের সামান্য ভুলে আপনাকে পস্তাতে হতে পারে ; সুতরাং ভেবেচিন্তে পক্ষ-বিপক্ষ স্থির করা ভাল। আমার মতে , অনর্থক শক্তিশালী কাউকে প্রতিপক্ষ না বানানোই আখেরে আপনার জন্য ভাল।
একটা উপমা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান ওয়ান ডে ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। বিশ্বকাপ জেতার পরে ট্রফি হাতে ইমরান খানের সেই বিখ্যাত আবেগ-ঘন সমাপনী বক্তব্য আমার এখনো মনে আছে। খেলোয়াড় জীবনের গোধূলি লগ্নে এসে ইমরান খান ও শচিন টেন্ডুলকার দু’জনেই তাঁদের চির আরাধ্য বিশ্বকাপ ছুঁতে পেরেছিলেন।
শোনা কথা; সূত্র মনে নেই।
তো সেই ইমরান খানকে তাঁর খেলোয়াড় জীবনের মধ্যগগণে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘পাকিস্তানের হয়ে খেলার সময়ে কখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন আপনি ?’ইমরান খান সাংবাদিককে হাসিহাসি মুখে উত্তর দিয়েছিল, ‘আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের দেখে ! কারণ তাঁদেরকে ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনুসের মতো বোলারকে সামলাতে হচ্ছে ; আর আমাকে তা করতে হচ্ছে না !’
উল্লেখ্য, ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনুস ছিলেন পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণভাগের মূলশক্তি। প্রায়শ: দুই প্রান্ত থেকে এঁরা বোলিং শুরু করে ডাকসাইটে ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলে দিত। এঁদের দুজনকে ভাষ্যকারেরা আদর করে ‘টু ডব্লিউ’ বলে ডাকতেন ! এঁদেরকে নিজের দলে পেলে যে কোন ক্যাপ্টেন গর্ব করে এই কথা বলতেই পারেন। চোখে ভাসছে , নব্বই এর দশকে ওয়াসিম আকরামের এক ওভারের ছয় রকমের ইনসুইং আউটসুইং ফাস্ট বোলিং ! আমরা যারা ক্রিকেট ভক্ত ছিলাম, ওয়াসিম আকরামের এই বোলিং বৈচিত্র্য আমাদের অবাক করত। আর ওয়াকার ইউনুসের বিধ্বংসী গতির বোলিং আর ফুল লেন্থ্ ইয়র্কার অনেক দাপুটে ব্যাটসম্যানের শিরঃপীড়ার কারণ ছিল।
কর্মক্ষেত্রে আপনি যদি সত্যিকারের দক্ষ ব্যাটসম্যান হন তাহলে ওয়াসিম আকরাম বা ওয়াকার ইউনুসের বিপক্ষে খেলতেই পারেন । কিন্তু ভালো হয়, যদি তাঁদেরকে নিজের দলে রাখতে পারেন !
by Jahid | Nov 25, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
উচ্চ মাধ্যমিকে ওঠার আগে আমি কখনো বাঙ্গালী চরিত্র বা বাঙ্গালী মুসলমানের চরিত্র নিয়ে চিন্তা করার অবসর পাইনি বা আমার মানসিক অভিজ্ঞতাও ছিল না। উচ্চ মাধ্যমিকে উঠে শরৎচন্দ্রের ‘ বিলাসী’ আমাকে মুগ্ধ করল। সনাতন বাঙ্গালী-চরিত্র কেমন হতে পারে, তা তাঁর চেয়ে ভালো কেউ পরিস্ফুট করতে পারেন নি। ওই সময়েই আমাদের সম্ভবত: পাঠ্য ছিল সমাজ সংস্কারক রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদের ‘ রিলিফ ওয়ার্ক’ স্যাটায়ার গল্পটি। গল্পটি “ফুড কনফারেন্স”(১৯৬৯)- বই থেকে নেওয়া। গল্পটিতে আমাদের জাতীয় জীবনের নৈতিক অধঃপতনের নিদারুণ বর্ণনা দিয়েছেন লেখক । আবুল কালাম শামসুদ্দিনের মতে, লেখক এই গ্রন্থে বাঙ্গালি হিন্দু-মুসলমানের সাধারণ চরিত্রের দিক তুলে ধরেছেন । কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, সর্বকালেই ছিল । তাদের কথাও আবুল মনসুর বাদ দেননি । “রিলিফ ওয়ার্ক” এর হামিদ তেমনই একটি চরিত্র । বিপন্ন মানুষের সেবা করার জন্য ত্রাণ কর্যের দলে যোগদান করে । কিন্তু সেখানে গিয়ে হামিদ দেখতে পায় দুর্বল ভুখা-নাঙ্গারা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে, আর মাত্রাতিরিক্ত খাতির আর ত্রাণ পাচ্ছে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা । হামিদের চোখে এই অনাচার বর্ণনা করেছেন লেখক ।
কালে কালে আমি মুখোমুখি হলাম হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফার লেখার সঙ্গে। বাঙ্গালী চরিত্র চিত্রণে আহমদে ছফা ও হুমায়ুন আজাদ দুইজনই আমার কাছে প্রিয়। তবে প্রিয়তম হচ্ছেন হুমায়ুন আজাদ।
উচ্চমাধ্যমিকেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে সরাসরি শিক্ষক হিসাবে ঢাকা কলেজে পাই। ক্লাসের নানা কথার ফাঁকে বাঙ্গালীর উপরে ওঠার প্রবণতার দারুণ একটা রূপকল্প তুলে ধরেছিলেন। স্মৃতি থেকে লিখছি। স্যার সম্ভবত: তাঁর কোন প্রকাশিত বইয়েও লিখেছেন । উনি কয়েকজন বাঙ্গালীকে বর্ধিষ্ণু গাছের সঙ্গে তুলনা করলেন। হাতে করে কয়েকটি কলম নিয়ে দেখালেন সবগুলোর একই উচ্চতা। এখন এর মধ্যে কোন একটি গাছকে যদি সবার চেয়ে বড় হতে হয়ে দুইভাবে সেটা সম্ভব। উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটি গাছকে বেশী করে আলোবাতাস নিয়ে, পরিশ্রম করে অন্য সবার চেয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। এটি কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ।
আরেকটি সহজ উপায়ে সে নিজের মাথাকে সবার উপরে দেখাতে পারে ! তাকে নিদেনপক্ষে পাশের গাছগুলোর চেয়ে বড় দেখাবে ; হোক সেটা সমাজে , কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষায়তনে বা রাজনীতিতে। সে যদি একটু চালাকি করে বাকী গাছগুলোকে ছেঁটে দেয়। নিজেকে কষ্ট করে উচ্চতায় পৌঁছুতে হল না। অন্যদেরকে ছোট করেই সে নিজেকে বড় করে ফেলল। নিন্দুক , ফাঁকিবাজ বাঙ্গালী এই দ্বিতীয় কাজটি খুব যত্নের সাথে করতে পারে। কষ্ট করে বড় না হয়ে, সারাক্ষণ তার সহকর্মীদেরকে মালিক-পক্ষের কাছে ছোট করে নিজেকে বড় দেখায় ! আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে , মালিক-পক্ষ বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাপারটা বুঝেও না বোঝার ভাণ করেন। দিনে দিনে তোষামোদির প্রাচুর্যে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ বিষাক্ত হতে থাকে। বড় হওয়ার সহজ উপায়টি সবাই প্র্যাকটিস করতে থাকে।
বাঙ্গালী চরিত্রের যথার্থ রূপকার হুমায়ুন আজাদ-এর কিছু বাণী চিরন্তনী সবার জ্ঞাতার্থে দিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে আমারও স্মৃতি ধরে রাখা হল।
বাঙ্গালী চরিত্র নিয়ে হুমায়ুন আজাদ-এর প্রিয় প্রবচনগুচ্ছ:
১। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনও অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
২।পা, বাঙলাদেশে, মাথার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পদোন্নতির জন্যে এখানে সবাই ব্যগ্র, কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোনও উদ্বেগ নেই।
৩। এখানে অসতেরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত।
৪। বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।
৫। নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হ’তে পারেন না, কিছুটা সততা তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য; কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার জন্যে মিথ্যাচারই যথেষ্ট।
৬। যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনও শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।
৭। আমাদের সমাজ যাকে কোনও মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা করে। শিক্ষকের কোনও মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ পঞ্চমুখ; চোর, দারোগা, কালোবাজারি সমাজে অত্যন্ত মূল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা
করে।
৮। স্তব স্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক উপহার দেবে।
৯। গণশৌচাগার দেখলেই কেনো যেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।
১০। বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, আর সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।
১১। কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক খরগোশকে, সে-গল্পে কয়েক হাজার ধ’রে মানুষ মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে কাছিমকে, সে-কথা কেউ বলে না।
১২। স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিণত করে।
১৩। সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু।
১৪। মৃত সিংহের থেকে জীবিত গাধাও কতো জ্যোতির্ময় উজ্জ্বল !
১৫। আপনি যখন হেঁটে যাচ্ছেন তখন গাড়ি থেকে যদি কেউ খুব আন্তরিকভাবে মিষ্টি হেসে আপনার দিকে হাত নাড়ে, তখন তাকে বন্ধু মনে করবেন না। মনে করবেন সে তার গাড়িটার দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ ক’রে আপনাকে কিছুটা পীড়ন ক’রে সুখী হ’তে চায়।
১৬। টাকাই অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ইন্দ্রিয়।
১৭। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।
প্রকাশকালঃ২৬শে অক্টোবর,২০১৬
by Jahid | Nov 25, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
বনফুল (বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়)-এর ‘ক্যানভাসার’ নামের একটা অণু গল্প পড়েছিলাম বছর পঁচিশেক আগে। গ্রামের ক্যানভাসারের মর্মন্তুদ স্যাটায়ার। সকালবেলা মেজাজ খারাপ করা এক লোকের কাছে দাঁতের মাজন বিক্রি করার জন্য বেচারা ক্যানভাসার অনেক চেষ্টা করে। তার নিজের চকচকে দাঁত দেখিয়ে হাসে ! সম্ভাব্য ক্রেতা রাগের মাথায় এক পর্যায়ে ক্যানভাসারকে এক চড় দিলে ক্যানভাসারের বাঁধানো দুপাটি দাঁত মুখ থেকে ছিটকে পড়ে ! তারপরের ক্যানভাসারের জীবনের বেদনার কথোপকথন মনে রাখার মত। লিংক পাচ্ছি না , এই গল্পটি একটা মাস্টারপিস, ‘বনফুলের শ্রেষ্ঠ গল্প’ বইটিতে অবশ্যই গল্পটি থাকার কথা। বন্ধু তালিকার উৎসাহী কেউ পড়ে নিতে পারেন।
তো , সেলস, প্রোডাক্ট প্রমোটর, মার্কেটিং আরও গালভরা নামের মাঝে ক্যানভাসিং এর যে অব্যক্ত বেদনা লুকিয়ে আছে তা অনেকেই বুঝতে চান না। আমি নিজে ভালো সেল্সম্যান নই–কারণ আমি একটু ঠ্যাঁটা কিসিমের , প্রায়শ: হুট-হাট মুখ ছুটাই। কিন্তু যারা মার্কেটিং ও সেল্সে আছেন তাঁদের সারাক্ষণ হাসিহাসি মুখ করে থাকতে হয়। কারো সঙ্গে চিরস্থায়ী সম্পর্ক খারাপ করার প্রশ্নই আসে না। এই অভিনয়ের বেদনা নিরন্তর! তাই আমার কাছে সেলসম্যানশিপ সহজ কোন ব্যাপার না।সেলিং অ্যাটিচুড কারো কারো জন্মগত থাকে, বাকীদের অর্জন করে নিতে হয়। এই যেমন আমি ইনস্যুরেন্স পলিসিতে বিশ্বাস করি না। গত ২০০২ সাল থেকে আমাদের অফিসে অসংখ্য লোককে ইনস্যুরেন্স করিয়েছেন এক অ্যালিকোর এক পরিচিত ভাই। উনি বেশ কয়েক বছর আমাকে লাগাতার বোঝালেন, রিস্ক অ্যানালাইসিস, ফ্যামিলি অ্যাডভান্টেজ , ফোর্স সেভিংস, মোদ্দা কথা ইনস্যুরেন্সের নানা উপকারিতা ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপার হচ্ছে আমি কোনভাবেই বুঝি না। অবশেষে দীর্ঘ একযুগ পরে গত ২০১৩ সালে সেই বড়ভাইয়ের কাছে একটা ইনস্যুরেন্স পলিসি করেই ফেললাম। এই হচ্ছে সেলসম্যানশিপ !
বেশীরভাগ সময় যারা সেল্সে সরাসরি জড়িত নন –যেমন অ্যাডমিন , ফিনান্স, অ্যাকাউন্টস –তারা সেল্সম্যানদের গ্রাউন্ড লেভেলের সমস্যাটা বুঝতে পারেন না অথবা বুঝতে চান না । শুধু লাভক্ষতির হিসাব দিয়ে সেল্সম্যানেরা চলতে পারে না। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে তাঁদের চলতে হয়। সেল্সে জড়িত নন তাঁদের কাছে সবকিছু শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার্য ! এই অর্ডার ভালো না, ওইটা কোন কাস্টমার হল, ইত্যাদি। তো, আমি একদিন মালিক পক্ষের সামনেই একজন উচ্চপদস্থকে বিরক্ত হয়ে বলে ফেলেছিলাম, ‘ ভাইরে, সেল্স এতো সহজ ব্যাপার না। আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি না , তবে এটুকু বলতে পারি , আপনার যেরকম চামড়া পাতলা, খুঁতখুঁতে নাক উঁচু স্বভাব –আপনাকে পক্ষে ৫০০ পিসের একটা গার্মেন্টসের অর্ডার জোগাড় করাও সম্ভব না ! সুতরাং যারা সেল্সে আছে, তাঁদেরকে ন্যূনতম সন্মান দিয়ে কথা বলেন !’
সেদিন আমার এক কলিগের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁর কাছে এক কোম্পানির লোক দীর্ঘদিন ধরে একটা কাজ পাওয়ার আশায় নিয়মিত আসেন। বসে থাকেন, চা টা খান, কোন আশার বাণী ছাড়াই চলে যান। সেল্সম্যান ভদ্রলোক বুঝে ফেলেছেন আমার সহকর্মীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কাজ পাওয়ার কোন আশা নাই। তবুও আসেন । তো , একদিন আমার সহকর্মী ভদ্রলোককে জিজ্ঞাস করলেন, ‘ভাই ক্যান্, এইখানে সময় নষ্ট করতাছেন ?’
সেই সেলসম্যান খুব নরম গলায় বলেছিল, ‘আমি জানি আপনার কাছে এই মুহূর্তে কোন কাজ পাব না। কিন্তু আমার কাজ হচ্ছে মার্কেটিং করা, সেল করা । অফিসের লোকেরা অ্যাট লিস্ট জানে আমি একটা বড় বায়িং হাউজে কাজের চেষ্টা করছি। সেই বা কম কিসের ! আমাকে আমার কাজতো করতেই হবে , তাই না !’
[ প্রথমপ্রকাশঃ ২৬শে অক্টোবর,২০১৬ ]
by Jahid | Nov 25, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
ছোটবেলা থেকে নানারকম ঈশপের গল্প শুনতে হয়েছে। কিছু মনে আছে , বেশীরভাগই এমনভাবে ভুলেছি, হয়তো গল্পটি মনে আছে- কিন্তু গল্পের মর্মার্থ বা মোরালটা কিছুতেই মনে করতে পারি না। এই গল্পটা কর্পোরেট লাইফের সঙ্গে যায়। স্মৃতি থেকে লিখছি। কেউ মূল গল্পটি পেলে ইনবক্স করলে কৃতজ্ঞ থাকব।
হয়েছে কি, একবার এক শেয়াল রাতের বেলা শিকারে বের হয়েছে। মহল্লা ও গৃহস্থবাড়ীগুলো ঘুরে ঘুরে খেয়েছে কুকুরের তাড়া। হাচরেপাচরে সে কোন একটা বাড়ীর উঁচু দেয়ালের উপর দিয়ে দৌড় দিয়ে পালাচ্ছিল। সেই সময়ে পা গেল পিছলে !
উঁচু দেয়াল থেকে পড়ে যাবার আগের মুহূর্তে সে দেয়ালের গায়ের ঝুলে থাকা লতাগাছকে জড়িয়ে ধরল। তাৎক্ষণিক বিপদমুক্তি ঘটলেও কিছুক্ষণের মধ্যে সে টের পেল যে লতাটা সে আশ্রয়ের জন্য জড়িয়ে ধরেছে সেটার গায়ে কাঁটা আর কাঁটা !
সারা শরীর দিয়ে রক্ত ঝরতে ঝরতে শেয়াল লতাগুল্মকে হতাশার সঙ্গে বলল, ‘আমি একটা বিপদে পড়ে তোমার সাহায্য নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সাহায্য করা তো দূরে থাক বরং আমার সারা গাঁয়ে কাঁটা বিঁধিয়ে রক্তাক্ত করে দিলে। এই কি মহানুভবতার নিদর্শন ?’
লতাগাছ দুঃখ প্রকাশ করে বলল, ‘আমি জানি তুমি আমার সাহায্য নিয়েছ দায়ে পড়ে। কিন্তু দয়া করে তোমার এই দুরবস্থার জন্য আমাকে দায়ী কোর না। আমার সাহায্য নেওয়ার আগে তোমার নিজের জানা উচিৎ ছিল যে, আমি নিজেই আশ্রয়ের জন্য দেয়ালের গায়ে ঝুলে আছি। আমি নিজেই যেখানে পরনির্ভরশীল সেখানে আমি কি করে তোমার সাহায্যে আসব ?’
মোরাল অভ দি স্টোরিঃ
আপনার কর্মক্ষেত্রে এমন কারো কাছে সাহায্য চাইবেন না , যিনি নিজেই পরনির্ভরশীল , দুর্বল কিংবা বিপদে আছেন । সাহায্য চাইতে হলে শক্তিশালী কারো কাছে চান। তাঁর পিছনে গিয়ে দাঁড়ান। এই ধরেন , আমার কাছে কেউ সাহায্য চাইতে আসলে আমি ঈশপ ভাইয়ের এই গল্পটা শুনিয়ে দিই। আর আপনি যদি আত্মশক্তিতে ভরপুর হয়ে থাকেন , তাহলে নিজেই একটা আলাদা লাইন তৈরী করুন। অমিতাভ বচ্চন আমার প্রিয় অভিনেতা। ‘কালিয়া’ ছবিতে একটা বিখ্যাত লাইন আমার খুব ভাল লাগে। “হাম জাহা পে খাড়ে হো যাতে হ্যাঁই, লাইন ওহি সে শুরু হোতি হ্যায় !” ( আমি যেখানে দাঁড়িয়ে পড়ি ; লাইন ওইখান থেকেই শুরু হয় ! )[ অমিতাভ বচ্চন; কালিয়া ]
প্রকাশকালঃ ২৫শে অক্টোবর, ২০১৬
by Jahid | Nov 25, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
বছর তিনেক আগে দেশের বাইরে ট্রেডের এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গ কিছু সময় কাটাচ্ছিলাম। ব্যবসায়ী হিসাবে তিনি ভালো করেছেন। উনি দীর্ঘদিন স্বতন্ত্র ব্যবসা করার পর হঠাৎ একটা বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হয়ে গিয়েছিলেন। যা , আমাকে ঐ সময়ে বেশ অবাক করেছিল। আড্ডার মুডে ছিলাম বলে সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম,’ ভাই , ব্যাপারটা কি?’
উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি ঈশপের খরগোশ ও কচ্ছপের সেই বিখ্যাত দৌড়ের গল্পটা জানি কিনা ? আমি মৃদু হেসে বললাম, এটা বাংলাদেশের কেন বা তাবৎ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গল্পের একটি। ওই যে দৌড় শুরু হয়ার পরে খরগোশ গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ; আর ঐদিকে কচ্ছপ ধীরে ধীরে ঠিক পৌঁছে গেল ফিনিসিং লাইনে। উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন আমি গল্পটার মোরালটা জানি কিনা ? আমি সায় দিয়ে বললাম জানি, ‘Slow and Steady wins the race !’
এবার উনি নড়েচড়ে বসে আমাকে বললেন, আমি এই রূপক গল্পের পরের এক্সটন্ডেড আধুনিক ভার্সনগুলো জানি কীনা।
এবার আমি মাথা নেড়ে স্বীকার করলাম, জানি না !
উনার ভাষায় বললে যা দাঁড়াচ্ছেঃ
প্রাথমিকভাবে ঈশপের গল্পের মোরালের গুরুত্বপূর্ন দিকটা আমরা মিস করি ! শুধু জয়পরাজয়ের ব্যাপারটা মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। গল্পের আরেকটি অন্তঃর্নিহিত অর্থ হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বীকে কখনই আন্ডারএস্টিমেট করা উচিৎ নয় ! অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জন্যই ধীরগতির কচ্ছপের কাছে দ্রুতগতির খরগোশকে লজ্জাস্কর পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল।
এখন সেই প্রাচীন গল্পের পরের ভার্সনটা হচ্ছে। বনের সবার কাছে দুয়ো দুয়ো শুনতে শুনতে খরগোশ তিতবিরক্ত হয়ে আরেকবার সুযোগ চাইল দৌড় প্রতিযোগিতার। সে জানে, দৌড়ের ক্ষিপ্রতায় ও দক্ষতায় তার পরাজয়ের কোন কারন ছিল না। । সে যদি হেরে গিয়ে থাকে, সেটা তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের জন্য হেরেছে। আরেকবার সুযোগ পেলে সেই একই ভুল সে করবে না।
এবারও বনের সবাই মহোৎসাহে আরেকটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করল। এবার আর খরগোশের কোন ভুল হল না। স্বাভাবিকভাবে কচ্ছপকে কয়েক মাইলের ব্যবধানে সে হারালো।
মোরাল অভ দি স্টোরিঃ দ্রুতগতির এবং দক্ষ কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানে ভালো ফলাফল এনে দেবে। দুজন কর্মীর মধ্যে একজন বিশ্বস্ত কিন্তু ধীরগতির আরেকজন দ্রুত, দক্ষ কিন্তু বিশ্বস্ততা মোটামুটি। আপনি ধরেই নিতে পারেন—বিশ্বস্ত, ধৈর্যশীল কিন্তু ধীরগতির কর্মচারীর প্রয়োজন আছে আপনার প্রতিষ্ঠানে ; কিন্তু কর্পোরেট মই বেয়ে দ্বিতীয় লোকটিই অনেক উপরে চলে যাবে।
উঁহু গল্পের এইখানেই শেষ নয়!
এবার কচ্ছপ নিজে নিজে অনেক চিন্তা করল হেরে যাওয়ার পরে। সে বুঝতে পারল, সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে , কিন্ত দৌড়ের জন্য যে রুট বা ট্র্যাক আছে সেখানে সে কোনভাবেই খরগোশের সঙ্গে দৌড়ে জিততে পারবে না । এবার সে আরেকটি প্রতিযোগিতার প্রস্তাব দিল খরগোশকে। কিন্তু এবারের রানিং ট্র্যাকে একটু ভিন্নতা আছে।
আবার মহোৎসাহে দৌড় শুরু হল। বনের সবাই অধীর আগ্রহে দর্শক সারিতে। দৌড় শুরু হওয়ার পরে খরগোশ দ্রুতগতিতে দৌড়ে এগিয়ে গেল। থমকে দাঁড়াতে হল, বিশাল একটা নদীর সামনে এসে। সে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকল , এই নদী সে কিভাবে পার হবে ! ইতোমধ্যে ধীর গতিতে কচ্ছপ নদীর ধারে এসে হাজির হল। খরগোশ দাঁড়িয়েই রইল , সে অবলীলায় নদী সাঁতরে ওপাশে পৌঁছে গেল, নদীর পরে সামান্য মাইলখানেক দূরে ফিনিসিং লাইন । সবার করতালির মধ্যে কচ্ছপের বিজয় হল। আর অনেক অনেকক্ষণ পরে খরগোশ হাচঁড়েপাচঁড়ে ফিনিশিং লাইনে পৌছাল।
মোরাল অভ দি স্টোরিঃ আপনি প্রতিযোগী হলে আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী দিকটি খুঁজে বের করুন। এবং যদি মনে হয়, খেলার মাঠ আপনার জেতার জন্য উপযুক্ত নয়, মাঠে আপনার সহায়তাকারী কিছু পরিবর্তন আনুন। আর আপনি যদি, কর্মকর্তা বা মালিক হন, লক্ষ্য করুন আপনার কর্মচারীটি কোথায় হোঁচট খাচ্ছেন। তার শক্তিমত্তা অনুযায়ী তাকে পরিবেশ তৈরী করে দিন, আশাতীত ভালো ফল পাবেন।
গল্পটি এখানে শেষ হলে ভাল হত। কিন্তু গল্পের এখনো বাকী আছে।
কয়েকবার প্রতিযোগিতার পরে কীভাবে কীভাবে যেন খরগোশ ও কচ্ছপের বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
তারা দুজনেই উপলব্ধি করল যে তাদের শেষ দৌড়টা আরেকটু ভালোভাবে শেষ হতে পারত।
এইবার তারা দুজনের সম্মতিক্রমে আরেকটি দৌড়ের আয়োজন করল সেই লাস্ট ট্র্যাকে।
দৌড় শুরুর কিছুক্ষণ পরে সবাই অবাক হয়ে দেখল , ডাঙার অংশটি খরগোশ কচ্ছপকে কাঁধে নিয়ে মুহুর্তেই নদীর ধারে পৌঁছে গেল। এইবার নদীর তীরে এসে কচ্ছপ খরগোশকে কাঁধে নিয়ে সাঁতরে নদী পার হয়ে গেল। নদীর ওইপাশে আবারো কচ্ছপকে কাঁধে নিয়ে খরগোশ ফিনিসিং লাইনে পৌঁছে গেল। দ্রুততার সঙ্গে দুজন একসঙ্গে জেতায় তাদের মন এক অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে উঠল।
মোরাল অভ দি স্টোরিঃ স্বতন্ত্র ভাবে আপনি মেধাবী হতে পারেন, জিততেও পারেন। কিন্তু আপনি যখন টিম মেম্বার হিসাবে কাজ করছেন ; সবার আলাদা আলাদা শক্তিমত্তাকে কাজে লাগালে আপনার ফলাফল ও প্রাপ্তি অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক ভালো হবে। টিমওয়ার্ক আসলে সিচুয়েশনাল লিডারশীপের একটা বড় অংশ। অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন মাফিক সিদ্ধান্ত গ্রহন। টিমের খেলোয়ারদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলতে দেওয়া এবং সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করা।
এই গল্পগুলোর এক্সটেন্ডেড ভার্সন থেকে আরো কিছু মজার শিক্ষনীয় আছে।
দেখুন, খরগোশ কিংবা কচ্ছপ কেউ কিন্তু পরাজয়ে হাল ছাড়ে নি। খরগোশ পরাজয়ের পরে দ্বিতীয় দৌড়ে চেষ্টা করেছে আরো বেশী পরিশ্রম করে জিততে। সে আর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হয়ে দৌড়েছে। আবার কচ্ছপও তার সীমাবদ্ধতা জানে, সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও জেতার সম্ভাবনা না দেখে স্ট্রাটেজী বদলেছে।
জীবনে এরকম সময় আসে, যখন আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও আপনি সফল হতে পারছেন না । তখন আপনাকে খরগোশের মতো বেশী করে পরিশ্রম করতে হবে অথবা কচ্ছপের মত কর্মপন্থা বা কাজের ক্ষেত্র বদলে ফেলতে হবে। প্রায়শঃ দুইটিই একসঙ্গে করতে হতে পারে।
প্রকাশকালঃ ২৪শে অক্টোবর,২০১৬
সাম্প্রতিক মন্তব্য