by Jahid | Nov 24, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
‘ ঘোড়া ঘাস সে দোস্তি কারেগা , তো খায়েগা কেয়া ?’ – হিন্দিতে প্রচলিত জনপ্রিয় একটা বাগধারা। প্রথম শুনেছিলাম বহু আগে আমার এক কলিগের কাছে। আমার চাকরি পরিবর্তনের ক্রান্তিকালীন সময়ে সে আমাকে কথাচ্ছলে বলেছিল।
কর্পোরেট জগতে , মালিকের চেষ্টা থাকবে চাকুরীপ্রার্থীকে বোঝানো মাসিক বেতনের বাইরে সে তার নতুন কর্মস্থলে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাবেন সেটা বুঝিয়ে বেতন কম দেয়া। কারণ , যতদূর সম্ভব কম বাজেটে নিয়োগ দিতে পারলে কোম্পানির লাভ। নেগেটিভলিও অনেক মালিক বেতন কম অফার করেন– ব্যবসা ভাল না , চিন্তা করবেন না আপনি তো আমার ফ্যামিলি মেম্বার , আমিতো আছি ; এই বেতনেই জয়েন করেন, কয়েকমাস পরে অ্যাডজাস্ট করে দিচ্ছি, বছর শেষে দেখবেন অনেক কিছু পাচ্ছেন, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনি যখন কর্মচারী , আপনার সৎ উপার্জন কিন্তু ঐ মাস শেষের বেতনটাই। আপনি সৎ হলে আপনাকে ঐ বেতনেই চলতে হবে। এখন মালিকের কথায় কনভিন্সড হয়ে, আপনার যোগ্যতার চেয়ে কম বেতনে যোগদান করলেন। পরবর্তীতে হয় আপনাকে সারাক্ষণ মনঃকষ্টে থাকতে হবে, অথবা অসৎ উপার্জনের চিন্তা করতে হবে। দুটোর কোনটাই কাম্য নয় !
সে ক্ষেত্রে বেতন বা ঘাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করাই ভাল !
প্রকাশকালঃ ২২শে আগস্ট, ২০১৬
by Jahid | Nov 24, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
কর্মচারীর প্রতি মালিকের বিশ্বাস যেমন থাকতে হয় ; মালিকের প্রতিও তার আনুগত্য থাকাটা কাম্য । যদিও মালিক- শ্রমিকের মাঝে ক্ষোভ ও বঞ্চনার ব্যাপারটা চিরকালের। মালিকপক্ষ যদি বঞ্চনার ব্যাপারটা সীমাহীন পর্যায়ে নিয়ে যায় তাহলে তার ব্যবসার কী হতে পারে, সেটা নিয়ে বছর পনের আগে ট্রেডের এক বড়ভাই দারুণ একটা দৃশ্যকল্প বলেছিলেন। ঘটনা পশ্চিমাদেশের এবং সামান্য অশ্লীলতা আছে।
দুপুরের খাবার খেতে এক ভদ্রলোক এক বার কাম রেস্টুরেন্টে গেছেন।
‘এক জাগ বিয়ার, কত দাম হবে?’
‘এক ডলার।’
ক্রেতা এতো সস্তাদাম দেখে বেশ অবাক হলেন।
‘ আচ্ছা একটা বিফ স্টেক, সালাদ , সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, আরেক জাগ বিয়ার, ডেজার্ট হিসাবে মাঝারী সাইজের চিজকেক—কত
পড়বে ?’
‘ তিন ডলার।’
ভদ্রলোক ভীষণ অবাক হলেন, ‘ অর্ডার মাফিক সব খেয়ে দেয়ে বিল দিয়ে বারটেন্ডারকে জিজ্ঞাসা করলেন-‘ওয়াও ! তোমাদের ব্যবসা তো দারুণ হে ! কী করে পারছ ? তোমার মালিকের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করছে।’
বারটেন্ডার উত্তর দিল, ‘ আমার মালিক, তার উপরের তলার অফিসে আমার বউয়ের সাথে সময় কাটাচ্ছে।’
ক্রেতা ভদ্রলোক কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, ‘ তোমার বউয়ের সাথে তোমার মালিক উপরের অফিসে কী করছেন ?’
‘সেটাই করছে, যেটা এখন আমি তার ব্যবসার সঙ্গে করছি !’
[The guy looks all confused then asks “What is he doing upstairs in his office with your wife?” The bartender then says “The same thing I’m doing to his business !” ]
by Jahid | Nov 24, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
১। কর্পোরেট দুনিয়ায় আপনাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার চেষ্টা করে যেতে হবে। সমান পরিশ্রমী হলেও , এক শ্রেণী আছে যারা ডিমপাড়া মুরগীর মতো প্রতিটি প্রাত্যহিক ডিম-প্রসবের পরপরই সমস্ত কোম্পানির মালিকপক্ষ থেকে শুরু করে, ড্রাইভার –দারোয়ানদেরকেওকে জানিয়ে দেয় সদ্যই ডিম পাড়া হয়েছে। পাইপলাইনে আরো ডিম আছে। এরা একটা এক্সট্রিম শ্রেণী। মধ্যপন্থীদের কথা বাদ দিলে — আরেকদল নরমপন্থী আছে যারা ডিম পেড়ে খাঁচা ভরে যাওয়ার অপেক্ষা করে । ভাবতে থাকে , এটাতো তার দায়িত্বই ছিল। একইসঙ্গে তাঁরা এই আশাবাদও পোষণ করতে থাকে–উর্ধ্বতনেরা এসে তাঁকে সাধুবাদ জানাবে ! আফসোস –Everybody cares about barking dogs ; either it bites or not !
২। বহুবহু বছর আগে কথা ! আমাদের এক সতীর্থ বন্ধুর প্রথম চাকরি ও টাইটেলের কাহিনী। আমরা সদ্য পরীক্ষা শেষে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছি ; সেই সময়ে সে খোঁজ দিল তার চাকরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের একটা নিট কম্পোজিটে। টেক্সটাইল কারখানায় সেই সময়ে ওপেনিং পজিশন ছিল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার। সে তার ভিজিটিং কার্ড দেখালো , টাইটেল হচ্ছে ED ( এক্সিকিউটিভ ডিরেকটর )! আমরা সবাই বিস্ময়ে হতবাক ও মনেমনে মর্মাহত ! ক্যাম্নে কি ? জিজ্ঞাসাবাদে সে বের হল, মালিক তেমন শিক্ষিত না । ভিজিটিং কার্ডে কি টাইটেল লিখবে সেটা জিজ্ঞাস করায়, মালিক নাকি উত্তর দিয়েছে, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছাড়া যে কোন একটা কিছু লিখে নিতে ! বন্ধু আমার প্রথম চাকরিতেই এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর !
ভুলে যাবেন না, কর্পোরেট চাকরির হচ্ছে পিরামিডের মতো, উর্ধ্বমুখী টাইটেল ও বেতনের সাথে সাথে পিরামিডের উপরের দিকে নড়াচড়ার পথ সরু হয়ে যায় ! একটা টাইটেল নিতেই পারেন বা পেতেই পারেন, কিন্তু ওই টাইটেলে কেউ নিজেকে যদি আমার সেই বন্ধুটির মতো করে ফেলেন, তাহলেই মারা !
৩। প্রায়শঃ দীর্ঘদিনের কর্মচারীদের ধারণা হয় যে, মালিকরা মনে হয় তাঁদেরকে পরিবারের মত ভাবে ! কোন কারণে পুরাতন কর্মচারীরা উর্ধতনদের উপরে ক্ষুদ্ধ, অভিমানী হয়ে পড়লে সে আশা করে বসে, ব্যাপারটা হয়তো সমানুপাতিকভাবে উর্ধ্বতন বা মালিকপক্ষকেও চিন্তিত করছে। বাস্তবতা হচ্ছে—না করছে না ! আপনি কর্মচারী হলে আপনার কোন একটা বঞ্চনার অভিমান নিয়ে আপনি দিনে দশবার চিন্তা করতেই পারেন, মালিকের কিন্তু অতখানি সময় নেই সেটা সপ্তাহে বা মাসে একবার চিন্তা করার ! সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর মান-অভিমান যদি হয় সমানুপাতিক , তবে মালিক কর্মচারীর মান-অভিমানের টানাপোড়েন বিপরীতভাবে ব্যস্তানুপাতিক।
৪। প্রতিটি শাশুড়ি ভুলে যান তাঁরা একসময় বৌমা ছিলেন ! ঠিক যে ব্যবহার তিনি পেয়েছেন, মনে মনে ভাবেন তিনি ভালো শাশুড়ি হবেন । কিন্তু যা হওয়ার তাই হয় ! উনি তার শাশুড়ির চেয়েও একপ্রস্থ নিম্নগামী হন ! অনেক নতুন মালিক বা ম্যানেজারদের সমস্যা তাঁরা চিন্তায় পড়ে যান , তাদের অধীনস্থদের সাথে কী ধরণের ব্যবহার করবেন? আসলে ঠিক সেই ব্যবহারটাই করা উচিৎ , যেটা আপনি আপনার উচ্চপদস্থদের কাছ থেকে আশা করে থাকেন। সময়মত আপনার অধীনস্থকে যেমন প্রশংসাও করতে হবে আবার তিরস্কারে সময় তিরস্কারও ।
অন্যদিকে , নতুন কর্মচারী হিসাবে আপনি কি ধরণের আচরণ করবেন উর্ধ্বতনের সাথে ? সহজ উত্তর, আপনি আপনার অধীনস্থদের কাছ থেকে যে রকমটি আশা করেন সেটাই ! আপনি নিজেওতো হালকা তেলের সাথে আপডেট থাকতে ও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালোবাসেন। কয়েকজনের মাঝে যে আপনাকে সবসময় আপডেট দেয়, তাঁকেই তো আপনার পছন্দ। যে অধীনস্থ আপনাকে প্রশংসা করে, তার ব্যাপারে সুনজর আছে আপনার । যে কর্মচারী আগ বাড়িয়ে সালাম দেয় , সে আপনার ঘনিষ্ঠ ! তো আপনাকেও ঠিক সেই কাজগুলিই করতে হবে , যেটা আপনি নিজেও পছন্দ করেন !
৫। কিছু বস আছে , অধীনস্থদের দৌড়ের উপরে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একটা ই-মেইল ডাউনলোড হওয়ার আগেই , সে আপনাকে ফলোআপ করা শুরু করে। সেইসব বসকে ‘বশ’ করার জন্য আমার একটা আলাদা নিয়ম ছিল। নিতান্তই ঠেকায় পড়ে আবিষ্কার করতে হয়েছিল। সাধারণত এই শ্রেণির বসেরা কমফোর্ট জোনে থাকতে চায়,আপডেটেড থাকতে চায়; একটা কাজ দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে না, নিজেও টেনশন করতে থাকে। তো, এই শ্রেণীর বস , ক্ষণে ক্ষণে খবর নেয়, কি অবস্থা ,কতদূর ? এদেরকে ঠান্ডা রাখতে হলে , নিয়মিত ইনফর্মেশন দিতে হয়। এবং ইনফর্মেশন ওভারফিড (overfeed ) করতে হয়। আপনি গত কয়েক ঘন্টায় কী কী করেছেন এবং আগামী কয়েকঘন্টায় কী কী করবেন তা যদি নিয়মিত প্রতিদিন রুটিন করে জানাতে থাকেন, মাস দুয়েকের মধ্যেই আপনার বস আপনার ব্যাপারে পুরোপুরি আস্থাশীল হয়ে উঠবেন, আপনার ঘাড়ের কাছে সারাক্ষণ নিঃশ্বাস ফেলে বার বার কাজের অগ্রগতির কথা জানতে চাইবেন না
প্রকাশকালঃ ২রা আগস্ট,২০১৬
by Jahid | Nov 24, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন, সমাজ ও রাজনীতি
সততার নানা রকমফের আছে– আর্থিক, ধার্মিক, আত্মিক, শারীরিক ইত্যাদি। শুধু অর্থনৈতিক সততার ব্যাপারে নিজস্ব কিছু স্বগতোক্তি! মোটা দাগে, আমার দেখা তিনটি শ্রেণী আছে। আমি জাজমেন্টাল হতে চাচ্ছি না, কারণ আমি নিজেও একটা গ্রুপে পড়ি !
প্রথম শ্রেণী : আপনি নিখাদ অসৎ। আপনি জানেন, আপনি কিভাবে অর্থ উপার্জন করছেন। পরিবারের ও সমাজের আশেপাশের সবার কমবেশি ধারণা আছে আপনার বেতন ও সম্পদের বৈষম্যের ব্যাপারটা। পৃথিবীর সকল প্রাপ্য ও অপ্রাপ্য সুবিধা আপনার চাইই চাই । যোগ্যতার চেয়েও বেশীকিছু আপনার পায়ের কাছে গড়াগড়ি দেবে ; কঠিন পৃথিবীতে ধাক্কা খেতে খেতে , সেটা কীভাবে করতে হয় আপনি শিখে গেছেন। সততা, নৈতিকতা ইত্যাদি নিয়ে দোটানায় থাকার মতো বিলাসী সময় আপনার নাই। আরো চাই, আরো চাই করতে করতে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছেন। তবে সোসাইটির কাছে আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ন ! আপনার মতো এই বিশেষ শ্রেণি না থাকলে , শিল্পায়ন অসম্ভব ও পুঁজিবাদের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটত ! আপনার ধার্মিকতা নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নেই। পরিপার্শ্বের কাছে, আপনার এলাকায়, বন্ধুমহলে আপনার অর্জিত সম্পদের গল্প ঈর্ষার সাথে বলা হতে থাকে।
দ্বিতীয় শ্রেণী : মূলতঃ আপনি অসৎ ও লোভী। কিন্তু সমাজে সৎ হওয়ার ভান করে সম্মান পেতে আপনি প্রতিনিয়ত উন্মুখ ! সবাইকে সততার কথা বলেন। অথচ আপনি ঠিক ঠিক জানেন কতটুকু আপনার প্রাপ্য, আপনার মাত্রাতিরিক্ত অনোপার্জিত অর্থ নিয়ে আপনার নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে। আপনি সর্বদাই নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছেন- আমি ঠিক পথেই আছি ; এই যুগে এভাবেই সম্পদ অর্জন করতে হয়, এভাবেই করা উচিৎ, সবাই এভাবেই করে ! সময় গেলে এই সুবর্ন সুযোগ আর পাওয়া যাবে না ! আপনি দান-ধ্যান করেন , ধর্মেও মন আছে। কিন্তু মনের গহীনে এই প্রাচুর্যের ব্যাপারে আপনি চিন্তা করতে করতে আবার গা ঝাড়া দিয়ে টাকা কামানোতে মন দেন । যদিও আপনি জানেন , অনেক যোগ্য লোকের চেয়ে বেশীরকমের প্রাচুর্যে আছেন। তবুও প্রথম শ্রেণীর ওই পরাক্রান্ত, চক্ষুলজ্জাহীণ দুর্দান্ত সাহসী অসৎ লোকদের সঙ্গে তুলনা করে আপনি নিজেকে সৎ ও ধার্মিক ভেবে সান্ত্বনা পেতে চান !
তৃতীয় শ্রেণী : আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠ ! কারণে বা অকারণে কেমন করে যেন আপনি সু্যোগের অভাবে সৎ থেকে গেছেন ! কিন্তু পুর্বোক্ত দুই শ্রেণীর বৈভব ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়ে সারাক্ষণ তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের মত নিজেকে ধর্মপুত্তুর যুধিষ্ঠির ভাবতে থাকেন। ধার্মিকতা পুরোটাই আছে । কী কী সম্পদ করেছেন , এইসব প্রশ্ন আসলেই সুযোগমত আপনি যে সৎ সেটা তোতাপাখীর মত কপচাতে থাকেন। আপনি সৎ সেই কথা বলে , নিজের পিঠ নিজে চাপড়ান, শ্রোতার কাছ থেকে সান্ত্বনা বা সততার বাহবা পেতে চান !
আগের দুই শ্রেণীর ব্যাপারে একটা ক্ষোভ মেশানো ঈর্ষা আপনাকে ক্লান্ত করে। তাদের অসততা যতোটুকু আছে তার চেয়েও বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদের আপনি পশুতুল্য করে নিজের বঞ্চনার ক্ষতে বাতাস দিতে থাকেন। যা আপনি ভুলে থাকতে চান, তাই আপনাকে গ্রাস করে প্রতিমুহূর্তে ! মনের গহীনে যথারীতি প্রাচুর্যে উপচিয়ে পড়া শ্রেণিকে ঘৃণা করেন। সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছু কেন আপনার নেই, সেটা নিয়ে হা হুতাশতো আছেই !
এই তিন শ্রেণীর বাইরেও ক্ষীণধারায় আরো কয়েকটি শ্রেণি আছে হয়তো ! তবে কারা যে হাস্যকর রকমের বেদনাদায়ক , ক্ষতিকর বা প্রয়োজনীয় সেটা অবশ্যই এখানে আলোচ্য নয়!
প্রকাশকালঃ ২৮শে জুলাই, ২০১৬
by Jahid | Nov 23, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন, ছিন্নপত্র
একজন হতাশ, ব্যর্থ লোকের সাথে অনেকক্ষণ কথা হলো আজকে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীন বলে উনাকে ব্যর্থ একজন বললাম।কারণ , আমার চারপাশের সবাই মানুষকে অর্থনৈতিক মাপকাঠি দিয়েই মাপেন। ভদ্রলোক বছরকয়েক আগে বড়ো কর্পোরেট চাকরি করতেন, বাইপাস সার্জারিতে সহায়-সম্বল শেষ। শারীরিক অসুস্থতার দীর্ঘবিরতিতে উনি উনার চাকরিজীবনের আগের পজিশন হারিয়েছেন। এইটা খুব স্বাভাবিক । তাঁর অধস্তনরা উনাকে ফেলে চলে গেছে সামনের দিকে , বয়স ও শারীরিক কারণে নতুন চাকরি পাওয়া অনেকটা জটিল হয়ে গেছে। সবাই, এড়িয়ে চলেন। হুম হাম করে পাশ কাটিয়ে যান।
ভেবেছিলেন ব্যবসা করবেন। ব্যবসা করার যোগ্যতা বা মূলধন কিছুই নাই। কারো কাছে সাহায্য চাওয়ার মতো মানসিক অবস্থা নাই। ত্রিশঙ্কু অবস্থা । আমি নিজে , ব্যবসার ‘ব’ ও বুঝি না। উনাকে বললাম, ‘চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে হলেও পুরোনা মালিকের ওখানে জয়েন করেন , যে পজিশনেই হোক না কেন, আপনারে দিয়া ব্যবসা হবে না। কিছুদিন চাকরি করার পরে হয়তো কোন না কোন পথ পেয়ে যাবেন।’
আমাদের কর্পোরেট জগতের সবাই, খুব ভিতরে একজন আতংকিত ব্যর্থ মানুষকে বয়ে নিয়ে চলছি। আমরা কেউ জানি না, কখন কোন পরিস্থিতিতে ওই ব্যর্থ লোকটা বের হয়ে আসবে সামনে !
[ প্রথম প্রকাশ ৭ই জুন,২০১৩ ]
by Jahid | Nov 23, 2020 | কর্পোরেট অবজার্ভেশন
সত্যিকারের অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই।
আমার এক সহকর্মী প্রায়শই বলেন, ‘ ভাইরে , ছাগল দিয়া হালচাষ করা গেলে কী আর মাইনষে টাকা দিয়ে বলদ কিনত!’
স্মৃতি থেকে লিখছি। উদাহরণের শেষাংশ হুমায়ূন আহমেদের ‘এলেবেলে’ থেকে নেওয়া। মূল লেখাটি কাছে পেলে ভালো হত!
১। বছর তিরিশেক আগে আব্বার কাছ থেকে শোনা –যুদ্ধক্লান্ত, স্বদেশমুখী সমুদ্র-জাহাজের কাহিনী। । সাধারণ সৈনিক-নাবিকদের ক্ষোভ, এতো উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও কেন সেকেন্ড ইন কম্যান্ডের তুলনায় তারা সুবিধাবঞ্চিত। সেটা আচার-আচরণে ক্যাপ্টেনের গোচরেও এনেছে তারা। জাহাজে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র অভাব ; কোথাও নোঙর করা নিতান্তই অপরিহার্য । নানা বিপদসংকুল সমুদ্রপথ পেরিয়ে ডাঙ্গায় নামতে না পেরে সবাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। দূরে একটা দ্বীপ বা ডাঙা । নোঙর করা হবে কী হবে না, সেটা জাহাজের ক্যাপ্টেন যাচাই করছেন। ভোরের সৈকতে ঘনকুয়াশা। দূর থেকে আওয়াজ, হুঙ্কার বা বেশ একটা হট্টগোল শোনা যাচ্ছে, দূরবীন দিয়েও সঠিক কারণটি বোঝা যাচ্ছে না।
নিরাপদ দূরত্বের জাহাজ থেকে ছোট নৌকায় এক এক করে অধঃক্রম অনুসারে কয়েকটি পর্যবেক্ষণকারী দল গেল।প্রথমে সৈনিকরা এসে রিপোর্ট করল, অসংখ্য হিংস্র প্রাণীতে সৈকত পূর্ণ। ঊর্ধ্বতন শ্রেণির লেফটেন্যান্টরা এসে বললো , বুনো কুকুরের দল, পরস্পর আক্রমণে ব্যস্ত। একে একে সবার পর গেলেন সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। তিনি এসে রিপোর্ট করলেন, দ্বীপে নামা যাবে। কুয়াশা থাকলেও বেলাভূমি সমতল। একটা মা কুকুরের আটটি বাচ্চা । একসঙ্গে চারটি বা পাঁচটির বেশী দুধ খেতে পারছেনা। হুটোপুটিটা মূলতঃ সেইজন্য।
জাহাজের ক্যাপ্টেন , সৈনিকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, কেন ওকে বেশী বেতন ও সুবিধা দেওয়া হয় সম্ভবতঃ তোমরা বুঝতে পারছো !
২। এই গল্পটি সত্যিকারের এক নাবিক বন্ধুর (মেরিন ইঞ্জিনিয়ার) কাছে শোনা। সমুদ্রবন্দরে মূল পোর্টের আগে সংযোগকারী ক্যানেলে একটা জাহাজ বিকল হয়ে গেছে। পোর্ট মোটামুটি অচল। দীর্ঘক্ষণ ধরে নানাভাবে ইঞ্জিন চালানোর চেষ্টা করে সবাই ব্যর্থ ! এই ধরণের কাজে অভিজ্ঞ একজন ইঞ্জিনিয়ারকে তলব করা হোল। তিনি এলেন, সবকিছু চেক করে, জাহাজের ইঞ্জিনের নির্দিষ্ট একটা স্থানে তার টুলবক্স থেকে হাতুড়ী বের করে জোরে একটা আঘাত করলেন। ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে বললেন, জাহাজ নড়ে উঠলো। পুরো ব্যাপারটিতে খুব সামান্য সময় লাগল। কোম্পনীর কাছে বিল আসলো দশ হাজার পাউন্ডের। বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে যা হয় আর কী ! কোম্পানির অডিট টিম চিঠি পাঠালো, কেন দশ হাজার পাউন্ড বিল হয়েছে, তার ব্রেক ডাউন বা ডিটেলস না দিলে বিল পরিশোধ করা হবে না । ডিটেল বিল ছিল অনেকটা এরকম, এক পাউন্ড বিল- হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করার জন্য ; বাকী নয় হাজার নয় শত নিরানব্বই পাউন্ড বিল- ঠিক কোথায় আঘাতটা করতে হবে, সেটা জানার জন্য। (One Pound for the Tap and Nine thousand Nine Hundred and Ninety Nine Pound for knowing–exactly where to Tap ! )
৩। হুমায়ূন আহমেদ ‘উন্মাদ’ পত্রিকায় ‘এলেবেলে’ নামের কলাম লিখতেন; দুর্দান্ত স্যাটায়ার ! আমাদের স্কুলজীবনে আমরা ‘উন্মাদ’-এর ব্যাপক ভক্ত ছিলাম। হুমায়ূন আহমেদের গল্পটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকের।সম্ভবতঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তখন বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রধান। বৃটিশ উপাচার্য পি জে হার্টগ। বাংলা বিভাগে একজন রীডারের জন্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবেদন করলেন। হার্টগ সাহেব একজন রীডার না নিয়ে ,ওই বেতনে দুজন লেকচারার নিতে বললেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী হার্টগ সাহেবকে একটা গল্প শোনালেন। এক ভয়ংকর অত্যাচারী নীলকর সাহেবের কুঅভ্যাস ছিল, প্রতি রাত্রে নিত্যনতুন ষোড়শী সম্ভোগের। এরকম করতে করতে আশেপাশের কয়েক গ্রামের সব ষোড়শী সম্ভোগিত । এক সন্ধ্যায় , সাহেবের লাঠিয়ালরা দীর্ঘ খোঁজাখুঁজি করেও কোন নতুন ষোড়শীর সন্ধানে ব্যর্থ ! সন্ধ্যা থেকে রাত, মাতাল সাহেব ধীরে ধীরে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন। প্রায় মধ্যরাত্রিতে , সাহেবের লাঠিয়ালরা দুইটি আট বছরের বালিকাকে নিয়ে হাজির ! সাহেবকে ভাঙা ইংরেজিতে বোঝানো হোল,– সাহেব, দুইজন ‘এইট ইয়ার গার্ল’ মানে ওয়ান ‘ষোল ইয়ার’ !
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী গল্প শেষে হার্টগ সাহেবকে বলেছিলেন, স্যার একজন ষোড়শীর কাছ থেকে আপনি যা পাবেন , দুইজন আট বছরের বালিকা, তা আপনাকে কখনই দিতে পারবে না !
গল্প শুনে, হার্টগ সাহেব নাকি রীডারের আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন।
[ প্রথম প্রকাশঃ ২৪শে অক্টোবর, ২০১৫ ]
সাম্প্রতিক মন্তব্য