করোনা ও অনলাইন ক্লাস

সকালে ছোট কন্যার Zoom ক্লাসে কিছুক্ষণ বসেছিলাম।

ওর শিক্ষিকার জন্য বড্ডো মায়া হল। বেচারি !
১৪টা বাচ্চাকে সশরীরে ম্যানেজ করা যতোখানি না কষ্টের; তারচেয়েও বেশি ঝক্কির হচ্ছে কম্পিউটারে দূর-শিক্ষণে এদের নিয়ন্ত্রণ করা । একজন চেঁচিয়ে স্ক্রিনের লেখা পড়ছে, আরেকজন গুনগুন করছে। আরেকজন ‘মিস্ , মিস্, মিস্, মিস্ ’ বলে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে ক্রমাগত। রীতিমত হাটবাজার আর কী !
আমার এক খালাম্মা স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন সেই আশির দশকে।
সেই সময়ে একেক ক্লাসে ন্যুনতম ৬০ থেকে শুরু করে প্রায়ই ৮০ জন ছাত্রছাত্রী থাকত।
আমরা দূর থেকে দেখতাম, খালাম্মা ক্লাসের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছেন হাতে কাঠের স্কেল। ছোট ছোট বাচ্চাদের কিচিরমিচির । খালাম্মা কোনদিন শারীরিক প্রহার করতেন না, তবে দুষ্টুমি করলে , বেঞ্চের উপর দাঁড় করিয়ে রাখতেন। বাচ্চাগুলো বেঞ্চে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গা গা গি গি করত।

খালাম্মা একদিন আম্মাকে আফসোস করে বলছিলেন, ‘ বাপমায়ের আর কী ! এরা তো বছর বছর পুক্ পুক্ করে বানিয়ে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর , এগুলোকে মানুষ করতে যতো যন্ত্রণা আমাদের !’ আমি তখন কিছুটা সাবালক, তাঁর সেই ‘ পুক্ পুক্ ’ শব্দচয়ন আমার কানে বিঁধেছিল । তাঁর বেদনা সেই সময়েই টের পেয়েছিলাম। আজ এই ত্রিশ বছর পরে যেমনটি টের পেলাম ছোটকন্যার শিক্ষিকার বেদনা।
সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার জন্য আমার শুভকামনা।

আজকে আমার শরীর খারাপ।। সমর কুমার সরকার

শরীরটা আজ ক্লান্ত ভারি,
ক’রছে গা ম্যাজম্যাজ,
ঠিক করেছি বিশেষ কিছুই
খাব না তাই আজ।
সকাল বেলায় চায়ের সাথে-
গামলা খানেক মুড়ি
তেল,লঙ্কা মাখিয়ে,
সাথে পেঁয়াজি,ফুলুরি।

সকাল, ধরো নয়’টা নাগাদ,
থাকলে মুখে রুচি,
খেতে পারি ঘি-য়ে ভাজা
গণ্ডা দশেক লুচি।
সঙ্গে আলু, বেগুন ভাজা,
আচার, আলুর দম,
রসগোল্লা গোটা বিশেক,
লাড্ডু ও চমচম।

দুপুরেতে কি আর খাব ?
শরীর ভাল নয় !
ভাতের সাথে কাতলা মাছের
টুকরো গোটা ছয়।
কচি পাঁঠার মাংস কষা
বড় দু-চার বাটি,
মিষ্টি দই আর চাটনি হ’লে
চলবে মোটামুটি।

বিকাল বেলায় খাব না হয়
আপেল, খেজু্র,‌ কলা,
গোটা পাঁচেক ডাবের জল,
আর অঙ্কুরিত ছোলা।
সন্ধ্যাবেলায় চায়ের সাথে,
প্রন কাটলেট, ফ্রাই,
এর বেশী আর খাবো না,পেট
খালি রাখা চাই।

রাত্রি বেলায় গুরুভোজন
আজ তো আমার মানা,
খাবো দুধের ক্ষীর মেখে ওই
রুটি পঁচিশ খানা।
সঙ্গে সরেস ছানার পায়েস
রাবড়ি আধা কিলো,
শরীর খারাপ,এর বেশী কি
খেতে পারি বলো ?

শরীরে আজ পাচ্ছি না জুত,
নাড়ীর গতি ক্ষীণ,
অল্প এমন খেয়েই কাটুক
আজকে সারা দিন।
এমনিতে ও খাওয়া আমার
কম-ই একেবারে,
পেটুক মানুষ দেখলে আমি,
লজ্জাতে যাই ম’রে।।

বড়কন্যার পাঠাভ্যাস

বড়কন্যার পাঠাভ্যাস

শৈশবের বইপড়ার অভ্যাস সেবা প্রকাশনী দিয়ে শুরু হয়েছিল।  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র একটা পাঠ রুচি তৈরি করে দিয়েছে।

ছোটবেলায় যে কোন বই এক বসায় অথবা একটানা কয়েকদিনে শেষ করেছি। সমরেশ মজুমদার , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ঢাউস আকৃতির বইগুলোর পাঠস্মৃতি মনে আছে। এখন বৃহদায়তনের বই পড়া শুরু করার আগে গেলে তিনবার চিন্তা করি। শুরু করলে কবে শেষ হবে ; আদৌ শেষ হবে কীনা কে জানে ! কয়েকটা বই একসঙ্গে শুরু করে , দেখা গেল কোনটাই শেষ না করে ফেলে রেখেছি।

গত কয়েকবছরের বইমেলায় কেনা বই পড়া হয়নি। বই পড়ার সেই প্যাশন জীবিকার চাপে চিঁড়েচ্যাপটা হয়েছে বহুবছর আগেই। জীবনে বই একমাত্র বিনোদন নয় আমাদের প্রজন্মের। অনলাইন সাহিত্য, ব্লগ, ফেসবুক এসে বইয়ের জায়গা দখল করেছে।

বড়কন্যার বইপড়ার অভ্যাস শুরুতেই আমার মধ্য-চল্লিশের মতো। একসঙ্গে কয়েকটা বই শুরু করে আর একেকটা একেক বেলায় পড়ে। আরেকটা বড় পার্থক্য হচ্ছে, সে পড়ে ইংরেজি ভাষার বই। আমি সারাজীবনে ইংরেজি নন-ফিকশন বই পড়েছি ঠ্যাকায় পরে সাকুল্যে হাতে গোনা কয়েকটি। আর বড়কন্যার স্কুলের পড়াশোনার মাধ্যম যেহেতু ইংরেজি ; ঐ ভাষাতেই ওর স্বাচ্ছন্দ্য বেশি।
আজ সকালে ওর পড়ার টেবিলে কী কী বই পড়ছে সেটা চোখে পড়ল।

আর নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল।

প্রকাশকালঃ ২রা জুলাই,২০২০

কোভিড করোনা ও নেপোলিয়নের আত্মবিশ্বাস

সপ্তাহ দুয়েক ধরে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে ।

অনেকেই বলছেন, তাঁদের একটু জ্বরজ্বর ছিল বা ক্লান্তি ছিল, শরীর ম্যাজম্যাজে ছিল । এবং সবাই ওরস্যালাইনের মুখস্থ রেসিপির মতো বহুল প্রচলিত মশলা পানির ভাপ নিয়েছেন। এখন সুস্থ বোধ করছেন। তাদের ধারনা তাদের মাইল্ড কোভিড-19 ভাইরাস অ্যাটাক হয়েছিল। খুব অল্পের উপর দিয়ে শরীরে অ্যান্টিবডি হয়ে গেছে।

আমি তাদের এই অপরীক্ষিত আত্মবিশ্বাসের পক্ষেই আছি।

বহুবছর আগে ‘দি টার্মিনাল’ সিনেমাতে ক্যাথরিন জেটা জোন্স টম হ্যাঙ্কসকে বলে, সম্রাট নেপোলিয়ন নির্বাসনে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ছয়গুণ বেশি মাত্রার বিষ গ্রহণ করতেন বা তাকে খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হতো। উদ্দেশ্য তাঁর দ্রুত মৃত্যু । কিন্তু নেপোলিয়ন ছিলেন অহংকারী লোক। তাঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, পৃথিবীর কোন বিষ তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না। এই অতিমানবিক আত্মবিশ্বাস নাকি নেপোলিয়নকে বহুবছর সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিল !

ভুল করে হলেও নিজের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ব্যাপারটা হয়তো ভাল।

তবে কোভিড-19 ভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলছেন বৈজ্ঞানিকেরা। সেই ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের অ্যান্টিবডি আপনার থাকলেও সবরকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিৎ।
কেননা , দিন শেষে আমি,আপনি কেউই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট না !

প্রকাশকালঃ ১লা জুলাই,২০২০

কোভিড বনাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

প্রায় সগোত্রীয় বলে নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের প্রতি আমার কিছুটা পক্ষপাতিত্ব থাকা স্বাভাবিক।

নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর করোনায় অধিকতর বিত্তহীনতা অসহায় করবে জানি। এঁদেরকে আরো মানবেতর জীবনের দিকে ঠেলে দেবে। রাষ্ট্র তাঁদের কল্যাণের জন্য যতোখানি করতে চাইছে, সেটা দুর্নীতির ছাঁকনি পেরিয়ে কতোটুকুই বা তাঁদের কাছে পৌঁছাচ্ছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ।
ইতিহাস ও সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তি থেকে দেখা যায় দারিদ্র্যের হেরফেরে নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মানিয়ে চলার সক্ষমতা রাখে।

কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত ও সচ্ছলদের অস্বচ্ছলতার দিকে ধাবিত হওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আরো বেশি বিপদে ফেলবে। চারপাশের সচ্ছলরা এখনো নানাভাবে নিম্নবিত্ত হত দরিদ্রদের দায়ে-ঘায়ে পাশে দাঁড়াতে পারছে। বিত্তহীনতা তাঁদের সেই চ্যারিটি করার সক্ষমতাকে আরো সঙ্কুচিত করবে।

পারস্পরিক উন্নয়ন, অবনমন ও মিথস্ক্রিয়া এই কয়েকটা শ্রেণির মধ্যেই বেশি হয়ে থাকে।

 

প্রকাশকালঃ ১লা জুলাই,২০২০