প্রসঙ্গ করোনাকালে স্কুল কার্যক্রম

বড্ডো বিরক্তি নিয়ে বলছি, বাচ্চাদের জন্য সীমিত আকারে হলেও স্কুলগুলো খুলে দেওয়া উচিৎ। এযাবৎ কালের বিগ ডেটা যা বলে, বাচ্চাদের শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো বয়স্কদের তুলনায় অনেক সজীব ও সুস্থ। কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ও প্রাণহানির সম্ভাবনা তাঁদের অত্যল্প বা নেই বললে চলে।

আর বাংলাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা এমনিতেই তেমন পড়াশোনা করে না। আমাদের সময়ের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি এবং এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যা দেখছি সেটা হচ্ছে — নানা বর্ষের ধূসর হাতে লেখা নোটের ফটোকপি যাকে কথ্য বাংলায় ‘চোথা’ বলে ; সেগুলো পড়ে একেক সেমিস্টার পাশ করছে। অধুনা, এসেছে ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ; এক সেমিস্টারে কোন সাবজেক্টে ৭/৮ টা পাওয়ার পয়েন্ট থাকলেই অ্যাভারেজে যে কেউ পাশ করে যাচ্ছে। যেখানে সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান উৎপন্ন করে ,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেখানে জ্ঞান দান করে। জ্ঞান উৎপন্ন করতে যে পরিমাণ রিসার্চ, লাইব্রেরি ওয়ার্ক ; ল্যাবরেটরি, থিসিস অথবা জার্নাল পাবলিকেশন দরকার তাঁর সক্ষমতা আমাদের জানা আছে। এবং অদূর ভবিষ্যতেও বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৌড়ে আমাদের কোন পাবলিক অথবা প্রাইভেট যে পৌঁছুতে পারবে না, সেটা বলার জন্য জ্যোতিষী হতে হয় না।

আমারা যারা এখন অভিভাবক হয়েছি ( বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৎসামান্য পূর্বে ও পরবর্তীতে যাঁদের জন্ম)। তাঁরা ইন্টারনেটের জন্ম হতে দেখেছি। স্মার্ট ফোন থেকে শুরু করে নানা ধরণের ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ভিডিও গেম সব আমাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বেড়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল জগতের ভালো দিকের সঙ্গে সঙ্গে মন্দ-দিকগুলো আমাদের চেয়ে ভালো বোধকরি আর কোন প্রজন্ম জানে না। আমাদের প্রজন্ম চেয়েছিলাম আমাদের সন্তানদের আধুনিক গেজেটগুলো থেকে যতোখানি পারা যায় , নিরাপদ দূরত্বে রাখতে। সে আর হল কোথায় ?

আমাদের সন্তানেরা যেন –ছাপানো বই, হাতে লেখা পরীক্ষার খাতা আর ক্লাসে একসঙ্গে শিক্ষক/শিক্ষিকার সামনে বসে ব্ল্যাক বোর্ডের লেখালেখি আর কথা শুনে ক্লাস টেন অবধি পড়াশোনা করতে পারে –সেটাই ছিল আকাঙ্ক্ষা । এরপর কলেজে উঠে গেলে যুগের হাওয়ায় ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম , জুম, ইউ টিউব, অ্যানিমে কার্টুনের সঙ্গে পরিচয় হবেই –কেউ ইচ্ছে করলেও সেটা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
কিন্তু করোনাকালে, আমাদের ( পড়ুন সকল স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবকদের ) প্রতিরক্ষার দেয়ালগুলো ধ্বসে পড়েছে ; ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। অনলাইন ক্লাস চলাকালে কয়জন জননীর পক্ষে সম্ভব বাসার কাজ করেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুর পাশে বসে থাকা। ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোন কোন বাচ্চা আলাদা ট্যাব খুলে কার্টুন-রে, অ্যানিমি-রে , ইউটিউব-রে মায় প্রাইভেট চ্যাটিং করা শুরু করে দিয়েছে। যেই শিক্ষক/শিক্ষিকা ক্লাসে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সশরীরে উপস্থিত থেকে ম্যানেজ করতে পারেন না, তিনি কি করে পারবেন অনলাইনে কোন বাচ্চা কী করছে সেটা ম্যানেজ করতে?

গার্মেন্টসে করোনা ভাইরাস থেকেও নেই সেই মার্চ থেকে।
গণ-পরিবহনে করোনা নেই, জুলাই থেকে।
পিকনিক স্পটে আর সমস্ত রিসোর্টে করোনা নেই আগস্ট থেকে।
সরকারি জরুরি বিভাগগুলো ( হাসপাতাল, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ইত্যাদি) তে করোনা ভাইরাস নেই প্রথম দিন থেকেই। বেসরকারি ব্যাংকে নেই প্রথম থেকে।
আমাদের কর্পোরেট অফিসে করোনা নেই এপ্রিল-মে থেকে।

তাহলে করোনা ভাইরাস আছে কোথায়? একমাত্র শিক্ষায়াতন গুলোতে?
আচ্ছা, ইউনিভার্সিটি বন্ধ রাখা হোক আরো এক বছর কিংবা আরো দুইবছর ।
আমার মামা (DrMd Sarowar Hossain ) যিনি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর। বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার পিছনে তাঁর যুক্তি দেখিয়েছিলেন করোনার শুরুর দিকেই। তিনি বলেছিলেন–১০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা করোনায় আইসিইউ তে মারা গেলে সারাদেশে কোন হৈচৈ হবে না। কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার সামান্য অবহেলাও পায়, তবে সারাদেশে আগুন জ্বালিয়ে দেবে ছাত্ররা । বরং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে বন্ধই থাকুক। অকাট্য যুক্তি। আমাদের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের হেতু লাগে না, কিছু একটা হলেই তাঁরা জ্বলে ওঠে। সরকারের গদি নড়িয়ে দেয়। আর অথর্ব বিরোধীদলগুলো আলুপোড়া খেতে চায়।

অতএব বিশ্ববিদ্যালয় আরো বছর খানেক বন্ধ থাকুক। সরকার শান্তিতে সময় পার করুক। কিন্তু স্কুলগুলো খুলে দেন জনাব। আমরা– বাসা থেকে অনলাইন ক্লাস করা সন্তানদের অভিভাবকেরা আর পেরে উঠছি না।
পাঠ করার জন্য অগ্রিম শুকরিয়া ও ধন্যবাদ।

প্রকাশকালঃ ১৭ই নভেম্বর,২০২০

আমেরিকার নির্বাচন ২০২০

আমি চাচ্ছিলাম ট্রাম্প ব্যাটাই আবার জিতুক।
প্রথমবার জেতার পর বিমলানন্দ পেয়েছিলাম। আম্রিকানরা সারাদুনিয়ার সবার পুটুতে আঙুল দিয়ে বেড়ায়। ট্রাম্প আসায়, নিজেদের পুটুতে, নিজেদের লোক আঙুল দিলে কেমন ব্যথা লাগে বুঝছে। এই যে আমরা বাকী দুনিয়াতে চুতিয়া সব নেতা-নেত্রীদের নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি, আমাদের ফিলিংসটা হ্লারপুতেরা বুঝুক। রাষ্ট্রনেতার মতো সর্বোচ্চ সন্মানের পদে বসে একজন যখন হুদামিছা, আউল-ফাউল কথা বলে সেটা তৃতীয় বিশ্বে একচেটিয়া হয়ে গিয়েছিল। এবার বোঝ, ঠ্যালা !

আগের ইলেকশনে ট্রাম্পকে কেন ভোট দিচ্ছ, এক সাদা আমেরিকান বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করায় বলেছিল, ‘শোন জাহিদ, আমার সামনে দুইটা চয়েজ, একটা সুশীল ভণ্ড হিলারি ক্লিনটন আর আরেকদিকে পাগল-ছাগল ট্রাম্প। ভণ্ডের চেয়ে হৈহৈ রৈরৈ করা পাগল ভাল।’
এইবার সেই সাদা আমেরিকানের সঙ্গে কথাবার্তা হয় নাই।

তবে আমার মনে হয়েছে, ট্রাম্প একটা পাগলছাগল হলেও সারা দুনিয়ার পুটুতে আঙ্গুল দিয়ে বেড়ায় নাই। নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বাইডেন সাহেব আসলে সারা পৃথিবীর বিশেষত: তৃতীয়বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের কোথায় কোন যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসবে কে জানে !
ট্রাম্পের ব্যাপারে আমার মন্তব্য, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত –টাইপ। এই লোক হাউকাউ যাই করুক তার শাসনামলে বড় ধরণের কোন ঝামেলা পাকায় নাই। না দিয়েছে মেক্সিকোর বর্ডারে দেয়াল ; না করেছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ।

কথায় বলে না, চেনা শত্রু অচেনা বন্ধুর চেয়ে অনেকসময় ভাল। কারণ, চেনা শত্রু কী কী করতে পারে, সে সম্বন্ধে একটা ধারণা তো থাকেই। কিন্তু এতোদিন পরে এই , ঘাঘুমাল বাইডেন এসে কী কী করবে কে জানে।
এনিওয়ে, সকল আম্রিকানবাসী সাদাকালোবাদামি ভাই-বেরাদারদের শুভেচ্ছা। গণতন্ত্র নিজেদের পুটুতে গেলে কেমন লাগে বোঝেন অ্যালা !

আম্রিকার ইলেকশনে আমি ও আমার প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবস্থা অনেকটা এ রকম :
বহু শতাব্দী আগে কেউ কাউকে সুসংবাদ দিলে প্রশংসা ও বখশিশ পাওয়া যেতো।তো সেটা জেনে এক লোক নাসীরুদ্দীন হোজ্জাকে গিয়ে বলল,
: ‘তোমার জন্য খুব ভালো খবর আছে, মোল্লা-সাহেব।’
: ‘কী খবর?’
: ‘তোমার পাশের বাড়িতে পোলাও রান্না হচ্ছে।’
: ‘তাতে আমার কী ?
: ‘তোমাকে সে পোলাওয়ের ভাগ দেবে বলেছে।’
: ‘তাতে তোমার কী ?’

এই যে মোবারক ওরফে বারেক ভাইয়ের পরে জয়নাল ট্রাম্প এসে আম্রিকাকে হুলুস্থূল করল। একবার মেক্সিকোর বর্ডারে দেয়াল দেয়। আরেকবার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমানবিক যুদ্ধ বাঁধায়। কিছু অভিযোগ করলেই মুখ বাঁকা করে বলে’ ফেইইইক ন্যুজ !’ ব্যাপারটা আমার বরাবর ভালো লাগতো।
সব সময় মনে হতো, আরে এই লোক তো আমাদের ওয়ার্ড কমিশনারের মতো উত্তর-দক্ষিণ কথা বার্তা বলে। ব্যাটাকে অনেক আপন আপন মনে হইত রে ভাই !

মোবারক ভাই বলেন আর জোবায়ের বাতেন ভাই বলেন, এদের মতো ওর কোন মিষ্টি মিষ্টি কথা নাই ; যা মনে আসতো তাই বলতো।
নির্বাচনে জিতে , আজ জোবায়ের বাতেন ভাই আর কমলা আপার সেই ‘মাপা হাসি চাপা কান্না’ দেখে মনে হচ্ছিল হলিউডের কোন সিনেমা দেখছি। খুব লম্বাচওড়া কথা ; অনেকটা আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকাররা ইদানীং যেরকম করে দেয় আর কী! আম্রিকা হ্যান, আম্রিকা ত্যান, কিপ ফেইথ, স্প্রেড ফেইথ ইত্যাদি ইত্যাদি। মিষ্টি কথার আড়ালে আগামী চারবছরে এদের অমানবিক আগ্রাসী পুঁজিবাদের কবলে পড়ে কার কার সর্বনাশ হয় সেটাই দেখার ব্যাপার।

আমার মামার কাছে শুনেছিলাম জেনারেল জিয়ার প্রথম দিকের ইলেকশনে সবাই দলবেঁধে ধানের শীষে ভোট দিতে যেতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে আওয়ামীলীগ তখন সাময়িক পরবাসে, নিভু নিভু করে জ্বলছে। যে কোন সামরিক শাসকের আবার জনপ্রিয়তা থাকে ১১০% । ভোট হলে অন্য কারো ভোট খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। যাই হোক, কুষ্টিয়ার কোন এক আসনে ‘চিন্টু’ নামের  ( ডাকনাম, আসল নাম মনে নেই ) ভয়ংকর এক দুষ্টু লোক ভোটে দাঁড়িয়েছিল। কীভাবে কীভাবে যেন সে ধানের শীষ প্রতীকও ম্যানেজ করেছিল।
ভোট শেষে চিন্টু মিঞার বিজয়োৎসব শুরু হলে, এক লোক ক্ষোভে ফেটে পড়ল, ‘ভোট দিলাম ধানের শীষে, শালার চিন্টু হারামজাদা এমপি হোল কেম্মা কইরে !”

আমাদের নতুন চিন্টু মিঞা —জোবায়ের বাতেন ভাই এখন কী কী দুষ্টুমি করে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আবারো অভিনন্দন জোবায়ের বাতেন ভাই এবং কমলা আপা ।

প্রকাশকালঃ ৫~৮ নভেম্বর,২০২০

বাঙালি হাসে না কেন!

বহুবছর আগে পড়েছিলাম। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের একটা গল্প সংকলনের নাম ছিল ‘মাপা হাসি চাপা কান্না’।

আজ বিকালে বসে ভাবছিলাম– শিক্ষিত বাঙালি মেপে হাসে কেন ? হাসলে দাঁতের ফাঁক দিয়ে বুদ্ধি বের হয়ে যাবে বলে কী কম হাসে অথবা হাসতেই চায় না। লক্ষণীয় যে, লেখক ও মানুষ হিসাবে যারা কৌতুকপ্রিয়, হাসিখুশি, সমাজে তাদেরকে খুব একটা উঁচু চোখে দেখা হয় না। এই যেমন আমাদের সামগ্রিক সাহিত্য , সিনেমা ও নাটকের সবচেয়ে অপ্রয়োজনীয় অনানুষাঙ্গিক চরিত্রটি হচ্ছেন তিনি, যিনি ফিলার হিসাবে গল্পে টিকে আছে আছেন কোনরকমে। তিনি – যিনি নাটক, সিনেমার মাঝেসাঁঝে কৌতুক করছেন, লোক হাসাতে চাচ্ছেন, বিনোদিত করতে চাচ্ছেন।

পাশ্চাত্যে চার্লি চ্যাপলিন একজনই ছিলেন।

আমাদেরকে খুঁজে পেতে একজনের কথাই মনে পড়বে, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রয়াত খান জয়নুল, আশীষ কুমার লোহ, আনিস, হাসমত, টেলিসামাদ, দিলদার ও নাম না জানা অনেকেই সারাজীবন পার্শ্বচরিত্রেই ছিলেন। প্রোটাগনিস্ট বা মূল অভিনেতা হতে পারেননি কখনো, কোন পরিচালক সেই সুযোগ করে দেননি।
চলচ্চিত্রে কেউ চরিত্রাভিনেতা হতে না পারলেও, নাটকে আশির দশকে আমজাদ হোসেন সেটা করতে পেরেছিলেন। সেই সময়ের ঈদের নাটকে ‘জব্বর আলী’ ছিলেন একজন সামাজিক টাউট, আদম-ব্যবসায়ী, মজুতদার। তাঁর নানা কীর্তিকাণ্ড ও ধরা খাওয়ায় দেখে দর্শক হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ত। জব্বর আলী নতুন কী কাণ্ড করে জেলে গিয়ে ঈদের সেমাই খাবে, সেটা দেখার জন্য প্রতি ঈদে আমরা বিটিভির সামনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম।

হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও সিনেমায় তাঁর জাদুকরী গল্প আর মধ্যবিত্তের আনন্দ-বেদনার কাব্যই ছিল মূল চরিত্র। একজন শান্তশিষ্ট বোকাবোকা বাবা, খুব কড়া মেজাজের মা ; তরল কথা বলা দেবর, অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথাবার্তায় পটু কাজের লোক ; ভীরু প্রেমিক ও সাহসী প্রেমিকা নিয়ে তাঁর ঈদের নাটকগুলো ছিল অসম্ভব স্বাদু। কিছু নাটক নিখাদ আনন্দের, কিছু নাটকে প্রচ্ছন্ন সমাজ সচেতনতার মেসেজ।

হুমায়ূন আহমেদ জীবিতাবস্থায় তাঁর লেখালেখি দিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ পাঠকের মন জয় করতে পারলেও, সমালোচক ও সাহিত্য-বোদ্ধারা তাঁর পুরো লেখালেখিকেই হালকা করে দেখেছেন। কেউ কেউ জিজ্ঞেসও করেছেন, কেন তিনি সিরিয়াস লেখা লেখেন না।

আমি আসলে বোঝার চেষ্টা করছি, সিরিয়াস লেখা কয়জন পাঠকের কাছে যায়। কমলকুমার মজুমদার কি অধিক পঠিত? বিষ্ণু দের কবিতা কয়জন পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে? শরৎচন্দ্র , মানিক, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, শিবরাম চক্রবর্তী, সুনীল , সঞ্জীব, সমরেশ, শীর্ষেন্দু জনপ্রিয় বলে কি তাঁরা সিরিয়াস সাহিত্যিক নন ? দুই-বাংলা তন্নতন্ন করে আমাদের একজনই সৈয়দ মুজতবা আলী আছেন ; যার অসম্ভব উইট সমৃদ্ধ প্রবন্ধ, উপন্যাস, সবধরনের লেখালেখি এক ফরমেটে ‘রম্যরচনা’ বলে ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সরস, চটুল, হালকা ভঙ্গীর লেখালেখিকে , কথা বলাকে এতো তাচ্ছিল্য কেন বাঙালির ! নাকি , ছোটবেলা থেকে “ যত হাসি তত কান্না, বলে গেছেন রাম সন্না” শুনে শুনে বড় হওয়া বাঙালি অবচেতনে ধরেই নিয়েছে, হাসি ব্যাপারটা মোটেও ভালো কিছু না, হাসি হচ্ছে কান্নার প্রারম্ভিকতা। আর তাছাড়া আমরা শৈশবে দেখেছি, মন খুলে হো হো হাসির হুল্লোড় উঠলেই , চারপাশ থেকে বিশেষ একশ্রেণীর আত্মীয়, মুরব্বী হা রে রে করে ছুটে আসত, ‘এতো হাসি কীসের ! কপালে দুঃখ আছে !’

হ্যাঁ, রে ভাই, হাসির পরে দুঃখ আছে বলে কি আমাদের মেপে মেপেই হাসতে হবে। দুঃখ তো হাসলেও আসবে ; না হেসে সুকুমার রায়ের রামগরুড়ের ছানা হয়ে থাকলেও আসবে। জীবনযাপনের প্রাত্যহিক যন্ত্রণা, প্রিয়জন হারানোর শোক, দুঃখ, বেদনা, নানাবিধ ব্যর্থতা, চাওয়া না পাওয়ার টানাপড়েন, শারীরিক অসুস্থতা, বার্ধক্য আর অবশেষে অনিবার্য মৃত্যু তো আপনার হাসির তোয়াক্কা করে না। তবু, কেন এতো চাপা কান্না, বেদনার উদযাপন, শোকের উদযাপন ! বাঙালি মনুষ্যের আকাশে সারাক্ষণ চাপাকান্নার মেঘলা আবহাওয়াই থাকবে কেন ! গম্ভীর হয়ে, সিরিয়াস হয়েও নিয়তিকে কী কেউ এড়াতে পেরেছে ! পারেনি ; পারবেও না।

বাঙালির জীবনে হাসির সূর্যালোক দূর করুক সব অপ্রাপ্তির , বেদনার কালো মেঘ।
হে বাঙালি ! হাসতে হাসতেই না হয়, নিয়তির সঙ্গে লড়াই করা শিখুন !

প্রকাশকালঃ ২৮শে অক্টোবর,২০২০

প্রসঙ্গঃ ঢাকার রাস্তা সংস্কার

কয়েকদিন ধরে উত্তরা ৭ নং সেক্টরে আমি যে অফিসে কর্মরত, তাঁর চারপাশের রাস্তা ঢাকা ওয়াসা খুঁড়ে মিসমার করে ফেলেছে। আমার কর্মস্থলে আসতে একেক দিন গোলকধাঁধার মতো একেক রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে।

শীতের আগে একটা বৃষ্টি হলেই খোঁড়া রাস্তাগুলো হাকিম আলীর মৎস্য খামার হয়ে যাবে। আর দুয়েকদিন কাজ স্থগিত রেখে কন্ডাক্টর যদি ওয়াসা-ভবনে বিলের জন্য ঘোরে ; সেই দুইদিনে এডিস মশাদের প্রজননে বিশাল উপকার করা হবে। উপকৃত মশার কামড়ে উত্তরাবাসী ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেয়র থেকে শুরু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও শাপশাপান্ত করবেন।

প্রায় চারবছর পর নানা কাহিনীর পরে উত্তরার রাস্তাগুলো একটু ভদ্রোচিত অবস্থায় এসেছে। কিন্তু , বছরের পর বছর রাস্তা ঠিক থাকলে তো প্রবৃদ্ধি হবে না সোনা !

মাস দুয়েক হলো না , শুরু হয়ে গেছে খোঁড়াখুঁড়ি ; রাস্তা খোঁড়ার মোচ্ছব।

এই মাসে ঢাকা ওয়াসা খুঁড়ছে , কাজ শেষে দায়সারা গোছের মেরামত করে এরা চলে যাবে ; তার ঠিক দুইমাস পরে বিটিসিএল বা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মনে হবে খোঁড়ার কথা।

আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার না। তবে নাগরিক বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে এটুকু বুঝি যে–একটা রাস্তা প্রথম একটানে নানা ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে টেকসই করে করার পর, সেটা খুঁড়ে মেরামত করলেও সেই রাস্তার না থাকে কোন শক্তি; না থাকে সৌন্দর্য। দিন কয়েকের ভারী বর্ষণে যাচ্ছেতাই হয়ে যায়।

আশেপাশের অনেকের এবং আমার নিজেরর সহধর্মীনিরও ‘সি-সেকশন’ করে সন্তান জন্মদান করতে হয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্মদানের কোনরকম চেষ্টা না করেই যথেচ্ছ অপ্রয়োজনীয় ‘সি-সেকশন’ কেন করা হচ্ছে, তার পক্ষে বিপক্ষে চিকিৎসক , সুশীল সমাজ ও নারীবাদীরা তর্ক করেই যাচ্ছেন। সে আরেক বিতং। কিন্তু, সিজারিয়ান অপারেশন করার পর, প্রসূতি নারীর সার্বিক স্বাস্থ্য আর তলপেটের চামড়ার স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। সিনেমার কোটি টাকার নায়িকাদেরও সন্তান হয় শেষ বয়সে এসে, হয়তো ‘সি-সেকশন’ করেই হয়। কিন্তু তারা তাদের উন্মুক্ত তলপেটে মসৃণ রাখার জন্য চিকিৎসা ও ডায়েট করে হুলস্থূল করে। সেটা কী আমার গিন্নীর বা আপনার গিন্নীর পক্ষে সম্ভব ? ইচ্ছে করলেই বড়ো শতাংশের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন যে এড়ানো যায়, সে কথা এখন সবাই বুঝতে পারছে।
তো, উত্তরার মসৃণ রাস্তায় এখন ‘সি-সেকশন’ চলছে।

চিন্তা করবেন না, দায়সারা মেরামত হবে দুইমাস পরে ; পানি জমবে, মশা হবে, রিকশা উল্টে পড়বে।
যারা একটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, তাদের অনেকেই তো উত্তরাতেই থাকেন।
তারা সহ সবাই গালি দেবেন মেয়রকে, রাষ্ট্রকে।

আর কমিশনের টাকা দিয়ে আরেকটা ফ্ল্যাট কিনবেন, বাচ্চার জন্য আলাদা গাড়ী বরাদ্দ করবেন। ভালো রাস্তা কেটে ভাঙ্গাচোরা এই ‘ এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই! ’ প্রক্রিয়াকে দোষারোপ না করে ; এসি গাড়ির ভিতর থেকে বসে বলবেন, ‘নাহ্ ! এই দেশের কোন আশাভরসা নেই। বাচ্চাগুলোর এ-লেভেল শেষ হলেই খালা-মামা-চাচার কাছে আমেরিকায় অথবা কানাডা পাঠিয়ে দেব।’

 

পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ।

প্রকাশকালঃ ১৬ই অক্টোবর,২০২০

পিঁয়াজ আলু প্রসঙ্গে

বাঙালি একেক সময়ে একেক জিনিস নিয়ে মাতে।
পিঁয়াজ শেষে এখন মেতেছে আলু নিয়ে।
ঢাকাইয়া দুইটা সবজি বিষয়ক চুটকি মনে পড়ে গেল।
দুর্বল স্মৃতি থেকে লিখছি। মূল চুটকি কারো কাছে থাকলে জানাবেন।

১ :
তো , এক শহুরে ভদ্রলোক বাজারে গেছেন সবজি কিনতে। বেগুনে পোকা থাকে দেখে তিনি অনেকক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বেগুন দেখছেন।
ঢাকাইয়া সবজি বিক্রেতা অধৈর্য হয়ে পাশের বেগুন বিক্রেতাকে বলছে:
: আবে ওই রফিইক্যা, মান্দার পো ! তোর বাইগুণের কি অছুখ বিছুখ কিছু হইছে নিহি ?
: না তো ওস্তাদ !
: হইয়া থাকলে দেহাইয়া ল, (শহুরে ভদ্রলোককে দেখিয়ে), ওই দ্যাখ, বাইগুণের ডাগদর
আইছে।

২ :
যথারীতি এক সবজিওয়ালা ঝুড়িতে কয়েক পদের সবজি বিক্রি করেছে। দুঃসহ গরমে সবজিগুলোতে ঘনঘন পানি ছিটাচ্ছে।
এক লোক এগিয়ে এলো কিছু কেনার জন্য। কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে সবজিতে পানি ছিটানো দেখতে লাগল।
বিক্রেতা বললঃ
: কিছু লইবেন সাব ?
: ভাইসাব, আপনার পটলের জ্ঞান ফিরলে আমারে একসের পটল দিয়েন !

প্রকাশকালঃ ১৫ই অক্টোবর,২০২০