করপোরেট জগতে আমার খুব কাছের অগ্রজ দু’জন মানুষের কাছ থেকে অনেক দেরীতে শেখা একটা ‘ পর্যবেক্ষণ’।
আফসোস ! এই শিক্ষাটা আগে পেলে, আমি নিজেও অনেকগুলো অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে পারতাম! সঙ্গত কারণে অগ্রজদের নামোল্লেখ থেকে বিরত থাকছি।

আপনি যখন নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেবেন, তখন মূলত: আপনি প্রতিমুহূর্তে আপনার সদ্য ফেলে আসা কোম্পানির নিয়ম-কানুন, সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে তুলনা করতে থাকবেন। এটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। মানুষ পূর্ব-অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায়। মূলত: এক কোম্পানির নিয়ম আরেক কোম্পানিতেও থাকবে এই প্রত্যাশা করেই আপনি ভুল করছেন।

মনে রাখবেন, একেকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান মানে একেকটি আলাদা রাষ্ট্র ; প্রাগৈতিহাসিক যুগের স্বনির্ভর রাজ্যের মত। সেখানে ঐ প্রতিষ্ঠানের মালিকের বা ক্ষমতাবানদের তৈরি করা নিয়ম চলে। কোথাও বা মহারাজার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপতির ক্ষমতা বেশী ! আপনাকে বুঝতে হবে, প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বা তার পাশে কারা আছে ! কোম্পানির নিয়ন্ত্রক কে বা কারা।

একই মাপের এক কোম্পানিতে কোথাও এইচ আর/ অ্যাডমিন ম্যানেজার অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী ; তো আরেক কোম্পানিতে অ্যাডমিন ম্যানেজার বসে বসে মাছি তাড়ায়। কারণ এইচ আর -অ্যাডমিনের সকল দায়িত্ব মালিক নিজেই দেখে।
এক কোম্পানিতে মার্কেটিং এর লোককে সকাল- বিকাল দুধ দিয়ে গণেশ পূজা করা হয় ; তো আরেক কোম্পানিতে মার্কেটিং এর লোক চাকরির টেনশন করতে করতে অফিসে যায় আর আসে।

এক কোম্পানিতে হয়তো সততার দাম দেওয়া হয় ; দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থেকে বিশ্বস্ত লোকের মূল্য দেওয়া হয় ! তো আরেক কোম্পানির মালিক বলে বসেন , ‘ব্যবসা বাড়াও , প্রফিট বাড়াও –টাকাটাই মুখ্য ; সৎলোক, বিশ্বস্ত লোক কিন্তু ব্যবসা কম আনা লোকের দরকার হয় তাবলীগে যাক, আমার এইখানে কি ? অসৎ লোক কিছু টাকা পয়সা খেলেও সে তো দিনশেষে আমার ব্যবসা এনে দিচ্ছে!’

প্রত্যেক কোম্পানির নিজস্ব নিয়ম কানুন থাকে, সেটা বোঝার জন্য সময় নিন। কোন কারণে আপনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু চিনতে ভুল করলে, ফালতু উপগ্রহের মতো অভিকর্ষের বিপরীতে হুদাই চারপাশ দিয়ে চক্কর কাটতে কাটতে আয়ুক্ষয় করবেন।

প্রকাশকালঃ আগস্ট,২০১৬