আমার বর্তমান কর্মস্থলের মালিক-পক্ষ ও প্রধান কার্যালয় সিংগাপুরে ।
বাংলাদেশীদের চরিত্রের একটা ব্যাপার নিয়ে প্রায়শ: আমার সাথে তাঁদের কথা হয়।

আমাদের সামাজিকতায় অধীনস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সরাসরি ঊর্ধ্বতনকে কোন কথা বলতে পারে না। রুমে ঢুকে নানা রকম খাজুরালাপ করেন ; ত্যানা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে শেষে এসে আসল কথা বলেন।

আমাকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের সমস্যাটা কি, সরাসরি কেন আসল কথা বলতে পার না ? কেন অযথা সময় নষ্ট কর?’

আমি তাঁদেরকে বললাম, কেন –এটা আমিও বুঝি না। তবে এই অভ্যাস আমাদের মজ্জাগত। খাজুর করা ও ত্যানা প্যাঁচানো আমাদের জাতিগত বদভ্যাস !

প্রাসঙ্গিক ,অনেক আগে শোনা আমাদের পূর্ববঙ্গের একটা গ্রাম্য কাহিনী মনে পড়ে গেল।
চৈত্রের কাঠফাটা রোদে উঠানের দাওয়ায় বসে একলোক তামাক খাচ্ছে আর দা দিয়ে চেঁছে চেঁছে বেড়া তৈরির কাজ করছে।
ওই সময় এক পথচারী এসে পাশে বসলেন।
লোকটার পাশের ছেলেটা বলল , ‘আব্বা তুমার জন্যি আবার তামাক সাজা নিয়ে আসি।’
লোকটা বলল ‘যা সাজায়ে নিয়ে আয়।’
তো পথচারী ও ঘর্মাক্ত লোকের কথোপকথন অনেকটা এই রকম ছিল। স্মৃতি থেকে লিখছি।
পথচারী, ‘ভাই কি করতেছেন?;
তিরিক্ষি মেজাজে লোকটা খেঁকে উঠলেন, ‘দেখতেইতো পারতেছেন কি করতিছি।’
‘ভাই ওই যে ছাওয়ালটা তামাক সাজাতি গেল, সিডা কি আপনার ছাওয়াল ?’
‘আরে মরণ ! আমাক বাপ ডাইকলো কেবল, ওই ছাওয়াল আমার না তো কি আপনার?’
‘ভাই, এই বাড়ীডাও কি আপনের ?’
‘না , এই বাড়ী আমার না আপনার ! কি কতি চাচ্ছেন সুজা করে কনতো।’
‘না, মানে হাঁইটে যাচ্ছিলাম তো, ভাবলাম আপনার কাছ থেকে দুইটান তামাক খায়া যাই, একটু খাজুর করতিছিলাম আর কি।’
‘তামাক খাবেন সিডা সরাসরি কলিই তো হয়।’

তো আমাদের সিংহভাগ জনতাই ওই পথচারীর মতো। তামাক খাওয়ার কথা সরাসরি না বলে খাজুর করি, ত্যানা প্যাঁচাই।
এর মধ্যে স্বাভাবিক সৌজন্যের বিষয় আছে নিশ্চয়ই । কিন্তু এই গ্রাম্য-কাহিনী দিয়ে আমাদের বাঙালী চরিত্র যতো সহজে আপনারা বুঝবেন, আমার বিদেশী সহকর্মীদের সেটা বোঝানো সম্ভব না !