বড় কিছু পেতে হলে আমাদের যে কিছু দিতে হবে , এ তো নতুন কথা নয়। কিন্তু তা নিগ্রহ বা কষ্টের মধ্য দিয়ে দিলে হবে না, দিতে হবে জীবনের সুপ্রচুর উদ্‌যাপনের ভেতর দিয়ে। সব কাজ আমাদের কাছে সমান আনন্দ নিয়ে আসে না । অথচ আনন্দ না থাকলে সাধনা শুকিয়ে ওঠে। অবন ঠাকুরের খুব সুন্দর একটা কথা আছে । কথাটা হলঃ ‘ মানুষ কি ভেরেণ্ডা গাছ খেতে পারে ? পারে না; কিন্তু আখ গাছ খেতে পারে। কেন? খেতে পারে এর ভেতরকার মাধুর্যের জন্য ।এর ভিতর মিষ্টি রস আছে বলে।’ জীবনও তা-ই । এর পরিপক্ব ফলটি পেতে হলে এর ভেতরকার মাধুর্যটি আস্বাদন করতে হয়। না হলে এ হয়ে যায় খরখরে কাঠের মতো।

জীবন উৎসর্গ করা মানে ভয়ংকর চেহারা করে দুরূহ শপথে জীবনকে শ্বাসরুদ্ধ করা নয়। উৎসর্গের আসল মানে আনন্দ। উৎসর্গ মানে উদ্‌যাপন । সর্বোচ্চ আনন্দ আর উদ্দীপনার আলোয় বিচ্ছুরিত হওয়া। যার কাছে বেঁচে থাকা মানে জীবনকে নিগ্রহ নিষ্পিষ্ট করা , সে কিন্তু আসলে জীবন উৎসর্গ করে না। কর্মদানব আর কর্মবীর এককথা নয়। কর্মদানব জীবনকে জবাই করে জীবনকে পায় , আর কর্মবীর পায় জীবনকে বিকশিত করে। ওটাই প্রকৃত উৎসর্গ । এ উৎসর্গ শ্রেয়তর জীবনের জন্য । উচ্চতর লক্ষ্যের জন্য । ….

তাই সফল সেই মানুষ – যে পৃথিবীর কাছ থেকে নেয় বেশি আর সার্থক সেই মানুষ – যে দেয় বেশি। এই সার্থকতাই শেষপর্যন্ত জীবনের লক্ষ্য। কিন্তু একটা বিশেষ পর্যায় পর্যন্ত সাফল্য আমাদের চাই। যেমন, টাকার কথাই ধরা যাক। অনেক বেশি হয়ে গেলে এ আত্মঘাতী জিনিশ। কিন্তু কিছু পরিমাণ না হলে তো সবই ভণ্ডুল। সব ক্ষেত্রের জন্যই এ সত্য।

ভাঙ্গো দুর্দশার চক্র। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।।