আমি কোন থিয়োরির গেটকিপার নই। কোনও সৌন্দর্যের দারোয়ান নই। আমার কোন অ্যাটাচি কেস নেই যে তাঁর ভেতরে একটা পর্বতমালা নিয়ে আমি বিমানে উঠে পড়ব। আমি চেয়েছিলাম কবিতাই লিখতে, একটা লোক এসে বলল, আপনি যা লিখছেন, একে কবিতা বলে না, বলে অ্যান্টি-পোয়েট্রি। সেটাই বা কী বস্তু ? সেটা বুঝতেই জীবন চলে গেল।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আমাকে উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারবেন?
তিনি বললেন , শিয়োর। মিস্টার রামোকৃষ্ণের গল্পটা ধরুন। ফাইভ ব্লাইন্ড মেন অ্যান্ড দ্য এলিফ্যান্ট। যিনি পা ধরে দেখলেন, তিনি হাতিকে ঠাউরেছিলেন একটি ল্যাম্পপোস্ট। যিনি পেট ধরে দেখলেন তিনি ভাবলেন হাতি একটা বালির বস্তা। যিনি কান ধরে দেখলেন, তিনি বললেন, হাতি আসলে একটা কুলো। ব্লা ব্লা ব্লা ।

ভদ্রলোক বিদেশে পড়ান , এক কলমেই বাঘে গোরুতে জল খাওয়ান, আমি তাঁকে বললাম, আমি হাতিকে কী বলে ঠাউরেছি, আপনার কী মনে হয় ? উনি বললেন, আপনি হাতিকে ভেবেছেন ঝাঁটা। অর্থাৎ আপনি হাতির পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন , লেজটাকে ধরেছিলেন।
আপনি কি বলতে চান আমি কবিতাকে ঝাঁটা হিসেবে ব্যবহার করি? ভদ্রলোক বললেন, সে তো কিছুটা সত্যি। আপনি কোথাও ধুলো দেখলেই ঝাঁটা বের করেন, আপনি ঘুষ দেখলেই ঝাঁটা বের করেন, গুজরাত দেখলেই ঝাঁটা বের করেন, বানতলা হলেই ঝাঁটা বের করেন, কামদুনি হলেই ঝাঁটা বের করেন। কোথাও কেওরামি দেখলেই , ধুলো জমলেই আপনি প্রতিবাদের ঝাঁটা নিয়ে নেমে পড়েন।
আমি বললাম, যা বাবা , আমি কোনওদিন গেটকিপার হতে চাইনি, দারোয়ান হতে চাইনি, কিন্তু হয়ে গেলাম ঝাড়ুদার।

আমার কবিতা হয়ে উঠল সহজ, আমি ছন্দে না লিখে গদ্যে লিখে যেতে লাগলাম। যে গদ্য কবিরা ফেলে দেন আমি সেই সেই গদ্য কুড়িয়ে নিলাম।যে গল্প বাদ দিয়ে কবিরা লেখেন, আমি সেই গল্প ফিরিয়ে আনলাম আমার কবিতায়। ফলে আমার কবিতা পরে কিছু লোকে বুঝতে পারল, কিছু কবি তাতে রেগে গেল। তাঁরা বললেন, কবিতা বোঝা গেলে সেটা আর কবিতা থাকে না। আমি মন খারাপ করে বসে থাকলাম। মন খারাপ করে কী করব? দশ বছর ধরে মন খারাপ করে বসে থাকা যায় না।আবার উঠে দাঁড়িয়ে লিখতে শুরু করলাম যে লেখা আজও লিখে চলেছি। সম্প্রতি চিন্ময় গুহ আনন্দবাজার-এ লিখেছেন যে ফরাসিতে প্রবাদ আছে, ‘ যা স্বচ্ছ নয়, তা ফরাসি নয়।‘ এতদিন বাদে সান্ত্বনা পেলাম, যাক আমি তাহলে গোপনে গোপনে ফরাসি। অথচ স্বচ্ছ লেখার অপরাধে আমি এতদিন গঞ্জনা সয়ে এলাম।