কনিষ্ঠা টুনটুনিকে গত আগস্টে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হইয়াছে। দান দান তিনদান, অদ্যাবধি তিনবার বিদ্যালয় হইতে তাহার নামে অভিযোগ আসিয়াছে।

প্রথম অভিযোগঃ সে তাহার সতীর্থ কয়েকজনকে বলিয়াছে, তাহাদের হাতের লেখা দ্রুততর না হইলে সে তাহাদের বন্ধু হইবে না। উল্লেখ্য , কনিষ্ঠা টুনটুনির হাতের লেখা কিঞ্চিৎ দ্রুতগতির এবং সে আগেভাগে লিখিয়া বসিয়া থাকে। যেহেতু, বন্ধুত্বের অস্বীকৃতি কিছুটা অপমানের , তাই অন্য বালক-বালিকাদের মাতারা তাহা আমার টুনির কাছে অভিযোগ আকারে পেশ করিয়াছে।

দ্বিতীয় অভিযোগঃ কনিষ্ঠা টুনটুনি পেনসিল দিয়া তাহার কতিপয় সতীর্থকে খোঁচা দিয়াছে। ইহাও অভিযোগ আকারে আসিয়াছে। টুনটুনির সঙ্গে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তাহাকে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করা হইল। বোঝানো হইল বিদ্যালয়ে কিরূপ আচরণবিধি পালন করা উচিৎ। সে খুব আত্মবিশ্বাসের সহিত কহিল, বিদ্যালয়ে সকলেই একে অপরকে পেনসিল দিয়া খোঁচা দেয়। সকলেই অকাতরে হৈচৈ করে, উচ্চস্বরে চিৎকার করে। সে শুধুমাত্র সকলে যাহা করিতেছে , তাহাই করিয়াছে। ইহার মধ্যে সে কোন সমস্যা দেখিতে পাইতেছে না !

তৃতীয় অভিযোগঃ শিক্ষাদান চলাকালীন অবস্থায় সে পার্শ্ববর্তিনী-পার্শ্ববর্তীর সহিত যথেচ্ছ গল্পগুজবে মশগুল থাকে। এইবার এই অভিযোগ আসিয়াছে স্বয়ং শিক্ষয়ত্রীর কাছ হইতে। আমার টুনি বিদ্যালয়ে দুইদিন গমন করিয়া শিক্ষয়ত্রীকে কহিল–কনিষ্ঠা টুনটুনিকে আবারো যদি কাহারো সহিত গল্পগুজব করিতে দেখা যায়, তবে তৎক্ষণাৎ স্থান পরিবর্তন করিয়া দেওয়া হউক। তৃতীয়দিনে , অভিযোগ পুনরায় আসিল ; স্থান পরিবর্তনে কোনরূপ প্রতিকার হইতেছে না। সবচেয়ে নীরব শিক্ষার্থীর নিকটে টুনটুনিকে বসাইয়ে দিলেও, সে তাহার সহিত আপনমনে গল্প করিতে থাকে।

টুনি বিদ্যালয় হইতে ফিরিয়া আসিয়া, আমি টোনাকে যথেচ্ছ চৌদ্দপুরুষ তুলিয়া গালিগালাজ করিল। সে পুরাতন সকল ইতিহাস পর্যালোচনা করিয়া উহাই প্রমাণ করিল যে, এরূপ গর্হিত আচরণ বংশপরিক্রমায় কনিষ্ঠা টুনটুনি পাইয়াছে। বাচালের গোষ্ঠী বলিয়া আরো কিছুক্ষণ মাথা চাপড়াইল। টুনির মতে, কনিষ্ঠা টুনটুনির পিতা-জ্যাঠারাও বিদ্যালয়ে ইহাই করিয়াছে। এখন এই ‘গল্পবলা-বাচালস্বভাব’ রোগের কোন প্রতিকার নাই!

গত সন্ধ্যাবেলায়, টুনি আসিয়া আমি টোনাকে পুনরায় ক্ষুদ্ধস্বরে কহিল, কনিষ্ঠা টুনটুনিকে কেননা একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলিয়া দেওয়া হউক ! সে তাহার জনক (আমি ) বাচাল টোনার মত অদৃশ্যজগতের বন্ধুতালিকার বন্ধুদের সহিত বাচলামি করুক, স্কুলের অন্যান্যদেরকে রেহাই দিক !

প্রকাশকালঃ ৪ঠা নভেম্বর,২০১৬