সিনেমা হলে বা সিনেপ্লেক্সে গিয়ে শেষ যে কয়েকটি বাংলা ছবি দেখেছি তা আমি হাতে গুনে বলে দিতে পারি। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ (গৌতম ঘোষ- ১৯৯৩) ; শ্রাবণ মেঘের দিন( হূমায়ুন আহমেদ -২০০০)। তারপর দীর্ঘ বিরতিতে ‘মনপুরা’ (গিয়াসউদ্দিন সেলিম -২০০৯) সামান্য বিরতিতে ‘মনের মানুষ’ (গৌতম ঘোষ -২০১০) ।
‘মনের মানুষ’-এ চঞ্চল চৌধুরী স্বল্পপরিসরে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের উজ্জ্বলালোকের পাশে থেকেও সবার মন কেড়েছিলেন। আর ‘মনপুরা’-তে তো কেন্দ্রীয় চরিত্রেই ছিলেন।
দেরী করে হলেও এর মাঝে ‘চড়ুইভাতি’, ‘ব্যাচেলর’, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’ মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর ঘরনার ছবিগুলো দেখা হয়েছে, হয় টিভি বা কম্পিউটার স্ক্রিনে। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু ছবিও দেখা হয়েছে এই ফাঁকে ! ‘বেলাশেষে’ , ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘অটোগ্রাফ’ ইত্যাদি—কিন্তু সবই ছোট স্ক্রিনে।
বহুদিন পরে বড়পর্দায় যে ছবি দেখে মুগ্ধ, বিস্মিত, গর্বিত, আলোড়িত হলাম সেটা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘ আয়নাবাজি’! বিজ্ঞাপন নির্মাতার খোলস থেকে বের হয়ে এসে, প্রথম ছবি দিয়ে অমিতাভ তাঁর জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। আমি সিনেমাবোদ্ধা নই। আমি নিতান্তই মধ্যবিত্ত দর্শক। আলোর প্রক্ষেপন, দৃশ্যায়ন, সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যকার ভারী শব্দ আমার
জন্য অনধিকার চর্চা।
‘আয়নাবাজি’ আমাদের ধুলোয় মিশে যাওয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক অনির্বচনীয় উন্মাদীয় ভালোলাগা এনে দিল । এইছবির প্রণোদনায় উৎসাহী আরো তরুণ নির্মাতারা যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন ; তবে এক বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর দর্শক আবার বড়পর্দায় ছবি দেখার সেই দিনগুলোতে ফিরে যাবে, এ আমার গভীর বিশ্বাস।
কয়েকদিন আগেই এক বন্ধুকে বলেছিলাম, আমি ছিলাম ৮৭ সালে হূমায়ুন আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’—এর মুগ্ধ কিশোর ! যে কীনা সেই দুর্মূল্যের বাজারেও চল্লিশ টাকা দামের ৪টি বই কিনে কাছের কয়েকজনকে উপহার দিয়েছিল—শুধুমাত্র আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।
সেই মুগ্ধ কিশোর আজ চল্লিশোর্ধ বয়সে এসে আরেকবার চলচ্চিত্রের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাইছে ! সিনেমা হলে যান, ‘ আয়নাবাজি’ দেখুন। দেখে এসে আমার বক্তব্যের সাথে সহমত বা দ্বিমত পোষণ করুন।
[ প্রকাশকালঃ ১লা অক্টোবর,২০১৬ ]
সাম্প্রতিক মন্তব্য