ছোট্ট দুইটা গল্প বছর ত্রিশেক আগে শোনা। স্মৃতি থেকে লিখছি। অনেকেরই মূল গল্পদু’টো হয়তো আরেকটু ভাল করে জানা আছে ।
গল্প ১ :
বহুদিন আগের কথা , সমাজে টোল ছিল , পাঠশালা ছিল, পণ্ডিতও ছিল। এবং নদী পার হওয়ার একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। এখন অনেক নদী ও খালই হেঁটে পার হওয়া যায় ।
তো একদিন এক পন্ডিত নৌকায় নদী পার হচ্ছিলেন । নিজের পান্ডিত্য জাহির করতে অক্ষরজ্ঞানহীন মাঝিকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন,
: মাঝি তুমি কি ত্রিকোণমিতি জানো?
: নাহ্।
:তবেতো তোমার জীবনের চার আনাই মিছে।
: তুমি মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে কিছু বলতে পারো?
: না তো।
: তবেতো তোমার জীবনের আট আনাই মিছে।
: তুমি কি পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন সম্পর্কে ধারণা আছে ?
: এগুলো কি খায় নাকি গায়ে মাখে বাবু সাব?
: তোমারতো দেখি জীবনের বারো আনাই বৃথা !
এমন সময় নদীতে ঝড় উঠলো । বড় বড় ঢেউ এসে নৌকায় আঘাত করা শুরু করলো। পন্ডিতও ডুবে মরার শঙ্কায় থরথর করে কাঁপতে লাগল।
দূরাবস্থা দেখে মাঝি বললো, বাবু সাব আপনি কি সাঁতার জানেন?
: না। সাঁতারতো জানিনা।
মাঝি হাসি দিয়ে বললেন, জনাব! আপনার দেখি জীবনের ষোল আনাই মিছে !
গল্প ২ :
খেয়া নৌকারও আগের কথা। নদী পার হওয়া নিশ্চয়ই আরো ঝক্কির ছিল। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া জনমনিষ্যিহীন শূন্য ঘাট পড়ে থাকতো । নদীর পাশে কোন এক জনপদে একদল সন্ন্যাসী বাস করত। একজন সদগুরুও ছিলেন। অনেক শিষ্যের মাঝে একনিষ্ঠ এক শিষ্য সাধনায় গুরুকেও প্রায় হার মানিয়ে দিল।
দীর্ঘ একযুগের সাধনার পরে শিষ্য এসে গুরুকে বললো, গুরু আমি এখন সাধনার বলে পানির উপরে হাঁটতে পারি, হেঁটে নদী পার হতে পারি।
শিষ্য পরিবেষ্টিত গুরু উল্টো প্রশ্ন করলেন , নদী পার হতে কয় আনা লাগে রে ?
: চার আনা।
: বারো বৎসরের সাধনায় তুই মাত্র চার আনার শিক্ষা অর্জন করলি !
ফুটনোট : গুরু সৈয়দ মুজতবা আলী বলে গেছেন, হাতির দু’ই রকম দাঁত থাকে, একটা দেখানোর আরেকটা খাওয়ার ! অনেক গল্পের দ্বৈত অর্থ থাকে। উপরের গুলোরও হয়তো আছে, হয়তো নেই !
সাম্প্রতিক মন্তব্য