এ পৃথিবী বড়ো , তবু তার চেয়ে ঢের বেশি এই

সময়ের ঢেউগুলো- অনিঃশেষ সমুদ্রের থেকে

অন্তহীন সাগরের অভিমুখে কোথায় চলেছে ।

রাত্রি আসে –রাত্রি শেষ হয়ে গেলে আলো;

আলো আরো মৃদু হ’লে তার চেয়ে বেশি

স্নিগ্ধ অন্ধকার সব—আকাঙ্ক্ষিত মেয়েটির হাতের মতন

কাছে এসে ,সংবরণ ক’রে তবু, যেন নেপথ্যের

ওপারের থেকে তার কথা বলে ।

 

অগাধ আয়ুর শিশু এরা সব ঃ এই দিন, এই রাত্রি ,

বাতাসের আসা-যাওয়া , নীল নক্ষত্রের ফুটে ওঠা,

শিশির ঝরার শব্দ , আশ্চর্য পাখির

ডিম প্রসবের সাড়া ; আবার রোদের দিন মাঘ ফাল্গুনের ;

সহসা বৃষ্টির রাত্রি,– হেমন্তের ঠান্ডা নিঃশব্দতা

কবের আয়ুর শিশু এরা সব ;– ম্যামথ দেখেছে।

 

 

শতাব্দীর সন্ধিপথে আজ মানুষের

আধো-আলো আধো- আশা অপরূপ অধঃপতনের

অন্ধকারে অবহিত অন্তর্যামীদের মতন ভোরের সূর্য ;

দূরতম সমুদ্রের হাওয়া এসে ছুঁয়ে কিছু ভালো ব’লে যেতে চায় ;

নগরীর বিদগ্ধ লোকেরা কথা ভেবে—ব’লে

প্রেরণা জাগাতে চায় ;

সহজ ত্যাগীরা কাজ করে ;

রক্তে দেশ অন্ধকার হয়ে পড়ে ;

কথা ভাষা স্বপ্ন সাধ সংকল্পের ব্যবহারে

মানুষেরা মানুষের প্রিয়তর না হ’য়ে শুধু দূরতর হয় ;

হৃদয় মলিন হ’য়ে যেতে থাকে ;

নিয়ন্ত্রিত জ্ঞানেরো আকাশ ঢেকে কুয়াশা বাড়ছে;

মুক্ত হতে গিয়ে সুধী কেবলি রোমাঞ্চকর রূঢ় সায়েন্সের

জন্ম দেয় ; চারিদিকে অগণন মানুষের মৃত্যু তার বড়ো কাহিনীর

যবনিকাপাতের প্রাক্কালে ক্লান্তির মতো ;

তখন শতাব্দী অন্ধ—অবসন্ন—ব্যর্থ ।–

হয়তো এ পৃথিবীতে মানবের অনন্ত চারণ,

লোভ থেকে লোভে শুধু –ব্যাথা থেকে ব্যাথার ভিতরে,

ভুল থেকে উল্লোল ক্ষমতাময় ভুলের গহ্বরে;

চাঁদের কুয়াশা থেকে অঘ্রাণ রাতের

নক্ষত্রের অন্ধকারে ;-

তারপর নক্ষত্রেরা নেই।

 

 

 

 

নবীন প্রয়াণে স্পর্শে মানুষেরা একদিন চীন পিরামিড

গড়েছিল ; সূর্যঘড়ি চিনেছিল ; প্রিয়তর উজ্জ্বল সূর্যকে

দিব্য দিয়ে নগরীর ভাঙ্গা হাড়ে কেবলি গড়েছে

নতুন খিলান স্তম্ভ ফ্যাক্টরি এঞ্জিন ক্রেনঃ

এ সব বিচিত্র নীড় কুশলতা কল

সময়ের থেকে দূর বড় সময়ের কাছে

মানুষের যেই পরিচয় রেখে যায়

তা তার আবেগ বুদ্ধি উৎকণ্ঠার;-

যেন তা কল্যাণ সত্য চায় –তবু অগাধ হিংসার—

রিরংসার পাকে ঘুরে –ঘুরে ঘুরে শূন্য হয়ে যায় ;

অন্ধকার থেকে মৃদু আলোর ভিতরে

আলোর ভিতর থেকে আঁধারের দিকে

জ্ঞানের ভিতর থেকে শোকাবহ আশ্চর্য অজ্ঞানে

বারে- বারে আসা- যাওয়া শেষ ক’রে ।

 

 

 

 

চিরকাল ইতিহাসবহনের পথে

রক্ত ক্ষয় নাশ ক’রে সে এক জগতে

মানুষের দিকচিহ্ন মাঝে মাঝে মুক্ত হ’য়ে পড়ে ;

তা কোন প্রশান্তি নয় , মৃত্যু নয়, অপ্রেমের মতো নয়,

কোনো হেঁয়ালির শেষ মীমাংসার বার্তা নয়,

অচিহ্নিত সাগরের মতন তা , দূরতম আকাশের মতো ;

পেছনের পার্শ্বের দ্রুতগতি চিহ্ন ও বলয়

অন্তর্হিত হ’য়ে গেলে কূলহীন পটভূমি জেগে ওঠে

ব্যক্তি ও জাতির নাম সময়ের দিগন্তরে শেষ হ’লে

শূন্য নীল আকাশের – মহাসাগরের শূন্যে মেশে ;

চিনে নিতে পারে তার হৃদয়ের অসীম ভূগোলে

আরো শুদ্ধ আরো গাঢ় অনির্বচনীয় সম্মিলন

মানুষ ও মানুষেরঃ চারিদিকে গ্লোবমাস্টারের শব্দে

অন্তহীন অন্ধকারে হাঙর মকর মৃত্যু কুজ্‌ঝটিকায়

মৃত মূঢ় এরিয়েল ও বেতারের ব্যর্থতায়

যদিও প্রত্যাশা সব সর্বশান্ত ব’লে মনে হয়—

আশার আস্থার আধার তবু নিজেই মানুষ

মহাকাশ কিংবা মহাসাগরের চিহ্নগুলো নয়।