অফিস মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না।

আমার প্রাথমিক কর্মজীবন ছিল টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে শিফটিং ডিউটির ।
এ,বি,সি শিফট। ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা ; দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা আর সি শিফট হচ্ছে রাত দশটা থেকে ভোর ৬টা।
আমি যখন শিফটের গাড়ি ধরতে অন্ধকার কাক-ডাকা ভোরে বাসা থেকে বের হতাম, তখন মহল্লার সবাই গভীর ঘুমে নিমগ্ন।
শিফটিং ডিউটির সময় মনে হতো আমি সারাক্ষণ কাজের ভিতরে আছি। সারারাত নির্ঘুম কেটে দিনের বেলায় গড়াগড়ি দিয়ে আবার শিফট ধরতে ধরতে মনে হতো, আমি লেখক হুমায়ূন আহমদের ‘অনন্ত নক্ষত্রবীথি’ নামের এক উপন্যাসের অসীম চক্রে পড়ে গেছি। দিনরাত একাকার। কারখানার ডরমিটরিতে থেকে ডিউটি দিতে আরো অসহনীয় লাগত। বরং বাসায় ফিরে এলে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও নিজের বিছানা, আপনজন আর পরিচিত মহল্লা দেখে মনে হতো আমি বিশ্রামে আছি। শিফটিং ডিউটির একটা সুবিধা ছিল, শিফট বুঝিয়ে দিয়ে আসলে তেমন কোন দুশ্চিন্তা থাকতো না।

প্রোডাকশন থেকে যখন সেলস, মার্কেটিং, মার্চেন্ডাইজিং এ চলে আসলাম, কাজের ধরণটা এমন যে, এখানেও সারাক্ষণ মনে হতো অফিস করছি।
মোবাইল প্রযুক্তি আসার পরে আমি একসময় তিক্তবিরক্ত হয়ে গেলাম। দিনরাত২৪ ঘণ্টাই আমাকে ফোনের উপরে থাকতে হতো।

আমি যখন Mothercare Sourcing BD-তে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসাবে কাজ করা শুরু করলাম, তখন আমাদের ৭ সোর্সিং ম্যানেজারকে আমাদের ডিরেক্টর একটা করে ব্ল্যাকবেরি দিলেন।সবাই ভীষণ খুশি। শুধু আমি ব্ল্যাকবেরি নিতে অস্বীকৃতি জানালাম। সে অবাক হলো। কারণ তখন ব্ল্যাকবেরি ছিল দারুণ সম্মান ও ফ্যাশনের একটা জিনিস। যার হাতে ব্ল্যাকবেরি সে যে হোমরাচোমরা বোঝা যেত। যাই হোক, আমি তাঁকে বুঝিয়ে বললাম,দেখো আমি সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি ইমেইল আর ফোনে থাকি। বাসায় যখন ফিরি তখন অতি-জরুরি কিছু ছাড়া দাপ্তরিক কাজগুলোর ঝামেলা নিতে চাচ্ছি না। এতে করে বরং আমার প্রোডাক্টিভিটি কমে যাবে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আমার প্রথম কন্যা সবে হামাগুড়ি দিচ্ছে; বাসায় ফিরে আমি সারাক্ষণ ডুবে থাকি ওঁকে নিয়ে। ঐ যে আমার অভ্যাস হয়ে গেল, বাসায় ইমেইল কিংবা দাপ্তরিক কাজ না নিয়ে যাওয়ার, সেটা গত ১৬ বছরে একই রকম আছে।

এই ডিজিটাল যুগে সারাক্ষণ ইমেইল না দেখে সাময়িকভাবে কর্মক্ষেত্রে কিছুটা পজিশন ও পারফরমেন্সের ক্ষতি হয়েছে,অন্য সহকর্মীদের মতো আপডেট থাকতে পারিনি।
তবে আমার মনে হয়েছে আখেরে লাভ হয়েছে আমার ও আমার পরিবারের।