সত্যিকারের অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই।

আমার এক সহকর্মী প্রায়শই বলেন, ‘ ভাইরে , ছাগল দিয়া হালচাষ করা গেলে কী আর মাইনষে টাকা দিয়ে বলদ কিনত!’

স্মৃতি থেকে লিখছি। উদাহরণের শেষাংশ হুমায়ূন আহমেদের ‘এলেবেলে’ থেকে নেওয়া। মূল লেখাটি কাছে পেলে ভালো হত!

১।                বছর তিরিশেক আগে আব্বার কাছ থেকে শোনা –যুদ্ধক্লান্ত, স্বদেশমুখী সমুদ্র-জাহাজের কাহিনী। । সাধারণ  সৈনিক-নাবিকদের ক্ষোভ,  এতো উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও কেন সেকেন্ড ইন কম্যান্ডের তুলনায় তারা সুবিধাবঞ্চিত। সেটা আচার-আচরণে ক্যাপ্টেনের গোচরেও এনেছে তারা। জাহাজে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র অভাব ; কোথাও নোঙর করা নিতান্তই অপরিহার্য ।  নানা বিপদসংকুল  সমুদ্রপথ পেরিয়ে  ডাঙ্গায় নামতে না পেরে সবাই মরিয়া হয়ে উঠেছে। দূরে একটা  দ্বীপ বা ডাঙা । নোঙর করা হবে কী হবে না, সেটা জাহাজের ক্যাপ্টেন যাচাই করছেন। ভোরের সৈকতে ঘনকুয়াশা। দূর থেকে আওয়াজ, হুঙ্কার বা বেশ একটা হট্টগোল শোনা যাচ্ছে, দূরবীন দিয়েও সঠিক কারণটি বোঝা যাচ্ছে না।

নিরাপদ দূরত্বের জাহাজ থেকে ছোট নৌকায় এক এক করে অধঃক্রম অনুসারে কয়েকটি  পর্যবেক্ষণকারী দল গেল।প্রথমে সৈনিকরা এসে রিপোর্ট করল, অসংখ্য হিংস্র প্রাণীতে সৈকত পূর্ণ। ঊর্ধ্বতন শ্রেণির লেফটেন্যান্টরা এসে বললো , বুনো কুকুরের দল, পরস্পর আক্রমণে ব্যস্ত। একে একে সবার পর গেলেন সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। তিনি এসে রিপোর্ট করলেন, দ্বীপে নামা যাবে। কুয়াশা থাকলেও বেলাভূমি সমতল। একটা মা কুকুরের আটটি বাচ্চা । একসঙ্গে চারটি বা পাঁচটির বেশী দুধ খেতে পারছেনা। হুটোপুটিটা মূলতঃ সেইজন্য।

জাহাজের ক্যাপ্টেন , সৈনিকদের  দিকে তাকিয়ে বললেন, কেন ওকে বেশী বেতন ও সুবিধা দেওয়া হয় সম্ভবতঃ তোমরা বুঝতে পারছো !

২।                এই গল্পটি সত্যিকারের এক নাবিক বন্ধুর (মেরিন ইঞ্জিনিয়ার) কাছে শোনা। সমুদ্রবন্দরে মূল পোর্টের আগে  সংযোগকারী ক্যানেলে  একটা জাহাজ বিকল হয়ে গেছে। পোর্ট মোটামুটি অচল। দীর্ঘক্ষণ ধরে নানাভাবে ইঞ্জিন চালানোর চেষ্টা করে সবাই ব্যর্থ ! এই ধরণের কাজে অভিজ্ঞ একজন ইঞ্জিনিয়ারকে তলব করা হোল। তিনি এলেন,  সবকিছু চেক করে, জাহাজের ইঞ্জিনের নির্দিষ্ট একটা স্থানে তার টুলবক্স থেকে  হাতুড়ী বের করে জোরে একটা  আঘাত করলেন। ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে বললেন, জাহাজ নড়ে উঠলো। পুরো ব্যাপারটিতে খুব সামান্য সময় লাগল। কোম্পনীর কাছে বিল আসলো দশ হাজার পাউন্ডের। বিপদ থেকে উদ্ধার পেলে যা হয় আর কী ! কোম্পানির  অডিট টিম চিঠি পাঠালো, কেন দশ হাজার পাউন্ড বিল হয়েছে, তার ব্রেক ডাউন বা ডিটেলস না দিলে  বিল পরিশোধ করা হবে না । ডিটেল বিল ছিল অনেকটা এরকম,  এক পাউন্ড বিল- হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করার জন্য ; বাকী নয় হাজার নয় শত নিরানব্বই পাউন্ড বিল- ঠিক কোথায় আঘাতটা করতে হবে, সেটা জানার জন্য। (One Pound for the Tap   and Nine thousand Nine Hundred and Ninety Nine Pound  for knowing–exactly where to Tap  ! )

৩।                হুমায়ূন আহমেদ ‘উন্মাদ’ পত্রিকায় ‘এলেবেলে’ নামের কলাম লিখতেন; দুর্দান্ত স্যাটায়ার ! আমাদের স্কুলজীবনে আমরা  ‘উন্মাদ’-এর ব্যাপক ভক্ত ছিলাম। হুমায়ূন আহমেদের  গল্পটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকের।সম্ভবতঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তখন বাংলা ও সংস্কৃত  বিভাগের প্রধান। বৃটিশ উপাচার্য পি জে হার্টগ। বাংলা বিভাগে একজন রীডারের জন্য  হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবেদন করলেন। হার্টগ সাহেব একজন রীডার না নিয়ে ,ওই বেতনে দুজন লেকচারার নিতে বললেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী হার্টগ সাহেবকে একটা গল্প শোনালেন। এক ভয়ংকর অত্যাচারী নীলকর সাহেবের কুঅভ্যাস ছিল, প্রতি রাত্রে  নিত্যনতুন ষোড়শী সম্ভোগের। এরকম করতে করতে আশেপাশের  কয়েক গ্রামের সব ষোড়শী সম্ভোগিত । এক সন্ধ্যায় , সাহেবের লাঠিয়ালরা দীর্ঘ খোঁজাখুঁজি করেও কোন নতুন ষোড়শীর সন্ধানে ব্যর্থ ! সন্ধ্যা থেকে রাত, মাতাল সাহেব ধীরে ধীরে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন। প্রায় মধ্যরাত্রিতে , সাহেবের লাঠিয়ালরা দুইটি আট বছরের বালিকাকে নিয়ে হাজির ! সাহেবকে ভাঙা ইংরেজিতে বোঝানো হোল,– সাহেব, দুইজন ‘এইট ইয়ার গার্ল’  মানে ওয়ান  ‘ষোল ইয়ার’ !

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী  গল্প শেষে হার্টগ সাহেবকে বলেছিলেন, স্যার একজন ষোড়শীর কাছ থেকে আপনি যা পাবেন  , দুইজন আট বছরের বালিকা, তা আপনাকে  কখনই দিতে পারবে না !

গল্প শুনে, হার্টগ সাহেব নাকি রীডারের আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন।

[ প্রথম প্রকাশঃ ২৪শে অক্টোবর, ২০১৫ ]