উপলব্ধি: ২৩

যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, কর্মস্থলে, পরিবারে, বন্ধুমহলে– যতদূর পারেন ভণ্ডদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে আপনার একই সমান্তরালে ,কাছাকাছি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানে যারা আছেন এবং আপনি মোটামুটিভাবে যাদের চিহ্নিত করতে পারেন তাদের কথা বলছি।

এর চেয়ে বরং সমাজের তথাকথিত চিহ্নিত শ্রেণির লোক, ছোটখাটো দোষত্রুটি আছে, দুর্নাম আছে কিন্তু ভণ্ড না, তাঁদের সঙ্গে অবলীলায় চলা সম্ভব। কারণ আপনি জানেন, সে খারাপ। ভণ্ড ব্যক্তিরা রঙ বদলানো গিরগিটির মতো। নিজের স্বার্থে যে কোন সময় ধর্ম দিয়ে বা নিজের অজ্ঞতা দিয়ে নিজের কৃত কুকর্মকে ঢাকতে চায়। যুক্তি দিয়ে চেপে ধরলে ভণ্ডলোকেরা শেষ আশ্রয় হিসাবে অজ্ঞতার ভাণ করেন, তবুও স্বীকার করেন না তাঁদের ভণ্ডামি।

উপলব্ধি: ২২

ঋতু-বৈচিত্র্য, বৈরী আবহাওয়া, ভূ-প্রাকৃতিক কারণে প্রকৃতির অসহনীয় আচরণ, অথবা নিয়ন্ত্রণের বাইরের উদ্ভূত কোন পরিস্থিতির টেনশন নিজের ঘাড়ে টেনে নেবেন না। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া নানা ধরণের প্রতিকুল ঘটনাসমূহ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই ! ঢাকার ট্র্যাফিক, দেশের সরকার, রাষ্ট্রের
আচরণ, গ্রীষ্মের দুঃসহ গরম, প্রযুক্তির অপব্যবহার, অন্যদেশের ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের দুরবস্থা, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি । এই রকম অসংখ্য ইস্যু আছে, যা ধীরে ধীরে সহনীয় হয়; ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যায়। এগুলো নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করতে পারেন ; দুশ্চিন্তা না। গাড়ীতে বসে আছেন, চারপাশের বিশৃঙ্খলা দেখে লেগে গেলেন দেশের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে। রক্তচাপ বেড়ে গেল।

ছোটখাটো আরও কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলো ইচ্ছে করলেই আপনি তাচ্ছিল্য করতে পারেন, এড়িয়ে যেতে পারেন। খাবার খেতে বসেছেন, বাথরুমে যাচ্ছেন, অসময়ে ফোন বাজছে তো বাজছেই। আপনার টেনশন বেড়ে গেল। এসব ক্ষেত্রে সময় নিন, ধীরেসুস্থে ফোন অ্যাটেন্ড করুন। যিনি আপনাকে খুঁজছেন তিনি বুঝমান হলে বুঝবেন আপনার ফোন দেরি করে ধরার কারণ। আর সেটা না বুঝেই কেউ যদি ফোন করতেই থাকেন, সেটা তাঁর সমস্যা।

আসলে, আমরা যারা ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে গেছি, তাঁদের ও যারা এখনো হননি, দয়া করে অনর্থক টেনশন করে উচ্চ রক্তচাপের রোগী হবেন না।

উপলব্ধি: ২০

প্রযুক্তি!

যখন যে প্রযুক্তি এসেছে , তার ভালো দিক মন্দ-দিক বোঝার চেষ্টা করুন। প্রযুক্তির বৈভব , পরাভব মেনে নিতেই হবে। আজকের পৃথিবী এমনভাবে সংযুক্ত হয়ে আছে, এর বাইরে আপনি থাকতে চাইলে আপনাকে বনবাস নিতে হবে। আমার দুই কন্যাকে নানা প্রযুক্তির পাশাপাশি রেখেও বই পড়তে উৎসাহিত করেছি। বই এমন একটা মাধ্যম, যেখানে আপনার কল্পনাশক্তি কাজ করে, মাথা খাটাতে হয়। বই ইলেকট্রনিক অন্য সব মিডিয়ার মতো রেডিমেড ইনস্ট্যান্ট নুডলস নয়। বইকে আমি এখনো তুলনা করি, রান্না করে পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়ার মতো। জীবনের স্বাদ পেতে হলে আপনাকে নিজে বেছে বাজার করতে হয়, সেগুলো নানা প্রক্রিয়ার পরে রান্না করে তারপরে সুস্বাদু খাদ্যে পরিণত করতে হয়। তাই, অন্য সকল ইনস্ট্যান্ট মিডিয়ার সঙ্গে বইয়ের তফাৎ আজন্ম থাকবে।

টিভি ও ইন্টারনেট আমাদের আসক্ত করে রাখে । কীভাবে রাখে সেটা নিয়ে একবার বড়কন্যার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বেশ কয়েকবছর আগে, বড়কন্যাকে বোঝালাম, ধরো তোমার আই-কিউ ৯০। কিন্তু টিভি, ভিডিও গেম, ইন্টারনেটের যে কোন প্রোগ্রাম একক কোন ব্যক্তির করা নয়। ধরো তাঁদের ভিতরে কয়েকজনের আই কিউ তোমার চেয়ে অনেক বেশি। তাঁদের সম্মিলিত আই কিউ দিয়ে সে অনেক সময় ব্যয় করে একটা অনুষ্ঠান করেছে, সেটা তোমাকে আটকে রাখার জন্য, আসক্ত করার জন্য। ছুটিতে , অলস সময়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কিছুক্ষণ সময় দেওয়া যায়। কিন্তু সময় তো অফুরন্ত নয়। নানাবিধ কার্যকরী কাজে নিজেদেরকে নিযুক্ত করতে হয়। পড়াশোনা, কর্মজীবন, পরিবারকে সময় দিতে হয়। যা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ না, এড়িয়ে যান। নিজের প্রায়োরিটি দিয়ে প্রযুক্তিকে পরাভূত করা শিখতে হয়।

উপলব্ধি: ১৯

জীবন উদযাপন করতে শিখুন। পরিবারকে সময় দিন, বছরে নিয়ম করে একঘেয়েমি কাটাতে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যান। যদি আর্থিক সামর্থ্য ও সময় না থাকে, কাছে ধারে হলেও কোথাও যান। কোথাও যেতে না পারলে, কাছে ধারের রেস্টুরেন্টে যান। আনন্দ উদযাপন করুন। । না চাইতেই পাওয়া এই অসাধারণ, অমূল্য জীবনকে উদযাপন করা শিখুন।

অনেক আগে, ৯৭-৯৮ সালে যখন OPEX Group এ কর্মরত ছিলাম, ক্যারল ব্রাউন নামের এক মহিলা ক্রেতা ছিলেন, আশির কাছে বয়স। আমাদের তৎকালীন চেয়ারম্যান সর্বেসর্বা ক্যাপ্টেন আনিসুর রহমান সিনহা স্যারের খুব প্রিয়ভাজন। আমেরিকান এই ভদ্রমহিলার অর্ডার খুব ছোট ছোট সংখ্যার হলেও আমাদেরকে খুব মনোযোগ দিয়ে ফলোআপ করতে হত।

উনি খুব হাসি খুশী থাকতেন। দারুণ বাহারি রঙের পোশাক পড়তেন। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে উনি আমাকে বলেছিলেন, Jahid, life is not a dress rehearsel, never keep your best wine in the stock for an occasion! ঠিকই তো, জীবন তো আর মঞ্চ নয়– বার বার রিহার্সাল দেওয়ার সুযোগ কোথায়! যা করবার, বা বলবার বলে ফেলতে হয়; বারবার সেই সুযোগ আসে না। আবার আনন্দ করার জন্য উৎসব বা বিশেষ দিনের অপেক্ষা অনেকাংশে বোকামি।