যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের –মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা!

চাকরির সুবাদে দূরের কারখানাগুলোতে যেতে হয় প্রায়শ । সবুজ ধানক্ষেত , দিগন্তবিস্তৃত গাছগাছালির মাঝখানে হঠাৎ দানবীয় কারখানা ! মাঝে মাঝে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফিরে আসার সময় নাগরিক সভ্যতার ছোঁয়া লাগা জনপদের মাঝখান দিয়ে ঢাকার দিকে আসতে হয়। পিচ ঢালা রাস্তার পাশে হঠাৎ করে বিলুপ্ত প্রায় মাটির ঘর দেখা যায়। ঘন গাছে ঘেরা মাটির বাড়ীর ছোট্ট জানালার পাশে বিছানা। মনে হয়, ধ্যাত ! এই সব বাদ দিয়ে যদি ওই বিছানায় কিছুক্ষণ গা এলিয়ে দেওয়া যেত ! সঙ্গে থাকতো একটা প্রিয় বই।
কিছুক্ষণের মধ্যে ওই আধাশহর আধাগ্রামের রাস্তা ছেড়ে ঢাকার ক্লেদাক্ত যানজটে আমি সম্বিত ফিরে পাই—‘যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের –মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা!’

প্রথম প্রকাশঃ ৩০শে এপ্রিল,২০১৩

প্রসঙ্গ তরমুজ ও সোশ্যাল মিডিয়া

অফিসে আসার সময় ট্রাকে, ভ্যানে , দোকানের পাটাতনে, দোকানের নীচে ও চারপাশে বিস্তর মসৃণ টকটকে লাল তরমুজ দেখছিলাম। গতবছরের প্রথম তরমুজ কেনার পরেরদিনে মিডিয়া-বিস্ফোরণ কোথায় যেন তরমুজ খেয়ে বিষক্রিয়ায় অনেকে আহত-নিহত ; দিলাম বাদ তরমুজ খাওয়া, ইত্যাদি , ইত্যাদি । এবং সকাল সকাল তরমুজ নিয়ে আমার একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেও ইচ্ছে করলো।
জ্বী ভাই, চারপাশের প্রতিমুহূর্তের চলমান সময়ের সব অনিয়মের ব্যাপারে আপনার, আমার ও আমজনতার প্রত্যেকের একটা একটা করে বক্তব্য থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা নিয়ে আপনি ফেসবুকে কতখানি জ্ঞান ফলাবেন , নিজের বা অন্যদের সময় কতটা নষ্ট করবেন ,সেটাও বিবেচনা করা উচিৎ।
সুতরাং , তরমুজ নিয়ে আমার স্ট্যাটাস না দিলেও চলবে !

প্রথম প্রকাশঃ ৩০শে এপ্রিল ,২০১৫

বেলজিয়ামে বেআক্কেল

২০১২ সালের মে মাসে ইউরোপে অফিসের কাজে। বেলজিয়াম (ব্রাসেলস্) থেকে নেদারল্যান্ড যাবো দ্রুতগতির ট্রেনে। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আরো দুই কলিগসহ। উপরে রৌদ্রে বেশ গরম লাগছিল। নীচে নেমে খোলা প্ল্যাটফর্মে এসে দেখি বেশ শীত লাগছে। পরনের জ্যাকেটটা খুলে হ্যাভারস্যাক ব্যাগে রেখে দিয়েছি। সেই মুহূর্তে ট্রেন চলে আসলো। জ্যাকেটটা গায়ে গলিয়ে স্যাম্পলের লাগেজটা, হ্যান্ড লাগেজটা নিয়ে হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠলাম।

ট্রেন ছাড়ার মিনিট দশেক পরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে হঠাৎ গা দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। আমার হ্যাভারস্যাক ব্যাগটা প্লাটফর্মেই ফেলে এসেছি। আমার দুই কলিগের অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন ! আমার ব্যাগে আমার পাসপোর্ট ছাড়াও আমার সবেধন নীলমণি অফিসের সব ডাটা ও ই-মেইল সহ নোটবুক আর পুরো ট্রাভেলের রাহা-খরচ হাজার পাঁচেক ইউরো ! ব্যাগের প্রথম জিপারটা খুললেই যে কেউ পেয়ে যাবে টাকার ওয়ালেট আর পাসপোর্ট। নোটবুক বাদ দিচ্ছি, ইউরোর পরিমাণ যা আছে, যে কোন লোককে লোভাতুর করতেই পারে।

প্রথমেই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলাম , বেলজিয়ামে কেউ পরিচিত আছে কীনা। আগের অফিসের ( মার্কেট ফিট ) পুরানা বস বেলজিয়ামের। ওই অফিসের ফ্রেন্ডরে ফোন দিলে সে নিশ্চয় আমাকে প্রাক্তন বসের নাম্বারটা দিবে। পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে পেয়ে দেশে ফিরে যাওয়াটা প্রথম জরুরী। আমি সবচেয়ে খারাপ কী কী হতে পারে তাই দিয়ে শুরু করলাম। এটুকু মনে আছে, ব্রাসেলস্ এর ওই প্লাটফর্মে আমি শ’খানেক স্টুডেন্ট দেখেছি। এরিয়াটা বোধহয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরা।

কলিগ বলল, ‘জাহিদ ভাই চেকাররে কইয়া দ্যাখেন হে কোন হেল্প করতে পারে কিনা।’
লম্বা চুলের দাড়িওয়ালা এক চেকাররে ধরলাম, বেটা বেলজিয়ান- তেমন ইংরেজিতে পারদর্শী না। তবে সে সমস্যাটা বুঝলো। ওয়ারলেসে আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলল। আমাদের কেনা দূর-যাত্রার টিকিটগুলো যেন ব্যবহার করতে পারি , সেই ব্যবস্থা করলো। উপদেশ দিল, তোমরা সামনের স্টেশনে নেমে গিয়ে আবার পিছনে ব্রাসেলস্ এ ফিরে যাও। আমি স্টেশনমাস্টারকে বলেছি, সে খোঁজ করবে। শুধুমাত্র কপাল ভালো হলেই ব্যাগটা পেতে পারো। এতো ব্যস্ত প্লাটফর্মে তোমার ব্যাগ এতক্ষণ পড়ে থাকার সম্ভাবনা কম।

যতো সময় যাচ্ছে, আমাদের টেনশন ততোই বেড়ে চলেছে।
ঘণ্টা খানেক পরে আমরা ষ্টেশনে ফিরে গেলাম। যে বেঞ্চিতে বসেছিলাম দেখলাম সেটা শূন্য !
লম্বা প্লাটফর্মের মাঝখানে ছোট্ট কাঁচঘেরা রুম থাকে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য , গার্ডদের বসার জন্য। ষ্টেশন মাস্টারের কাছে যাওয়ার আগে কী মনে করে একবার ঢুঁ মারলাম। দেখি আমার হ্যাভারস্যাক ব্যাগটা পড়ে আছে একপাশে। ভীষণ মোটা গার্ড বেশ কিছুক্ষণ ওদের ভাষায় আমাকে গালাগালি করলো। কিছু যেহেতু বুঝি নাই, গায়ে মাখলাম না। আমি তখন শাব্দিক অর্থেই ‘জানে পানি’ পেয়েছি।

এতো কিছুর পরে আমার দুটো ধারণা হয়েছে, ইউরোপের আইনশৃঙ্খলা ভালো এইটা সবাই জানে। আমার কলিগদের অনেককেই লাগেজ হারানোসহ ছিনতাইয়ের কবলেও পড়েছে। ইস্ট ইউরোপের গরীব দেশগুলোর লক্ষ লক্ষ বেকারে পশ্চিম ইউরোপের বড় শহরগুলোতে ভরে গেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইউরোপিয়ানরা আগের মতো আর গর্ব করে না।
যা বলছিলাম, যেহেতু ওইটা ইউনিভার্সিটি এলাকা এবং শতশত ছেলেমেয়ে যাতায়াত করছে, হয়তো ব্যাগটা পড়ে থাকতে দেখেও কেউ ধরেনি অন্য কোন স্টুডেন্টের বলে।

আর দ্বিতীয় যে ব্যাপারটা মনে দাগ কেটেছে তা অন্য কারণে, আমি তেমন ধার্মিক নই। কিন্তু আমার ধার্মিক কলিগ এই দুর্বিষহ দেড় ঘণ্টার মধ্যে কয়েকবার বললো, ‘জাহিদ ভাই, আপনি ভালো মানুষ,আপনি এতো বড়ো বিপদে পড়তেই পারেন না।’

পুরো ঘটনার মধুরেনু সমাপেয়ু হওয়ার পরে সে আমার মনে করিয়ে দিল, ‘কইছিলাম না, আপনি বিপদে পড়তেই পারেন না!’
ভয়াবহ একটা ঝামেলার হাত থেকে বেঁচে বেসিক্যালি সবাই আমার কাছে ধন্যবাদার্হ ছিলেন, টিকেট চেকার, গার্ড এবং আমার কলিগ দুইজন!

প্রথম প্রকাশঃ ২২শে এপ্রিল ২০১৩

প্রসঙ্গ সড়ক দুর্ঘটনা

আশির দশকের দৈনিক পত্রিকায় সরকারী-বেসরকারি নিউজের পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহের লিড নিউজ কী হতো, কারো মনে আছে?
আমার মনে আছে। হয় আরিচা মহাসড়কের বা অন্যকোন মহাসড়কের দুর্ঘটনার ছবি, সারিবদ্ধ লাশ , নীচে ক্যাপশন “এভাবে আর কতোদিন?” অথবা, লঞ্চ দুর্ঘটনায় অর্ধশত নিহত, শতাধিক নিখোঁজ।

তো আমি তখন স্কুলের পোলাপান, থান্ডার ক্যাটস বা টম অ্যান্ড জেরি নিয়ে ব্যস্ত। কোথায় লঞ্চডুবি হইলো ,কতোজন মারা গেল আমাকে অতোখানি স্পর্শ করতো না। বড়োজোর ফেলে রাখা সারি সারি লাশের ছবি দেখে একটু মন খারাপ হতো।

৮৭ তে আমার বড়মামা আর নানী লঞ্চডুবিতে পড়লেন। দিনের বেলা হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা কম। মোবাইলের যুগও নয়। বড়মামা ও নানী সঙ্গের মালপত্তর হারিয়ে কীভাবে যেন জানে বেঁচে গেলেন। আশে পাশের অনেক মাছ ধরা নৌকা অনেক যাত্রীর জীবন বাঁচায় সেবার। বড়মামা কারো সাহায্য করা একটা পুরনো ছেঁড়া লুঙ্গি আর নানী এক-কাপড়ে যখন ঢাকায় এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তখন আমি বুঝলাম লঞ্চডুবির ভয়াবহতা। মামা ও নানীর মুখে শোনা, লঞ্চ ডুবে যাওয়ার আগের প্রত্যেকটা মুহূর্ত কী যে ভয়ংকর আতংকের ছিল, এখন মনে পড়ে যাচ্ছে।
ভারতের বদান্যতায় নদীতে নাব্যতার অভাবে লঞ্চ নির্ভরতা অনেক কমে গেছে মনে হয়। যা দেখছি, আগের মতো মাসে ৭/৮টা লঞ্চডুবির কথা শুনতে হয় না। লঞ্চ দুর্ঘটনা এখন আরে লিড নিউজে নাই।

আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটলো আমার নিজের জীবনে। ২০০৫ এ বাস অ্যাকসিডেন্টে বিছানায়, ফিমার ছুটে গেছে টিবিউলার থেকে, মানে হিপ বা কোমরের সাথে ডান পায়ের জয়েনিং ফর্দাফাঁই । ট্রাকশন নিয়ে চিৎ হয়ে তিনমাসের অসহনীয় দিনগুলো , মাঝে আবার কোরবানির ঈদ গেল, হাসপাতালের বেডে শুয়ে অকথ্য যন্ত্রণা , অসহায় আক্রোশের প্রতিটা মুহূর্ত। ওই সময় আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। বিছানায় শুয়ে শুয়েই প্রথম কন্যার জন্মসংবাদ শুনতে হলো। কী জানি কী মনে করে ,ঈদে গ্রামমুখী মানুষের সড়ক দুর্ঘটনার নিউজগুলো মন দিয়ে শুনতাম। শুয়ে শুয়ে একটা ডাটাও বের করলাম। ২০০৬ এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে শুধুমাত্র টিভি নিউজে মোটামুটি শ দেড়েক বড় সড়ক দুর্ঘটনার নিউজ শুনলাম। মোটামুটি ১৫০ জনের অকালপ্রয়াণ আর হাজার খানেকের পঙ্গুত্ব।

আমি নিজে পা ভেঙ্গে পড়েছিলাম বলেই হয়তো এইগুলো মন দিয়ে দেখতাম। আর কতিপয় অসাবধানী শুয়োরের বাচ্চা ড্রাইভারের জন্য পঙ্গুত্ব বরন করা লোকগুলোর কথা চিন্তা করতাম। আমার ডাক্তার ছিলেন ডাঃ রুহুল হক ( বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রী)। কিন্তু , কয় জনের সাধ্য আছে, তাঁকে দিয়ে চিকিৎসা করানোর? পঙ্গুত্বতো এক অর্থে মৃত্যুর চেয়ে অকল্পনীয় যন্ত্রণার !মনুষ্যজীবনে অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে অসম্মানের আর কী থাকতে পারে ?

আমার আশে পাশের অনেককে দেখেছি হাজার তিনেক টাকা দিয়ে দু নাম্বার ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করতে। কেন জানিনা আমার জিদ চেপে গিয়েছিল আমি দু নম্বরি কোনকিছু করবো না। সুস্থ হয়ে আমি নিজে ড্রাইভিং শিখলাম এবং মাত্র ১৮০০ টাকা কুল্লে খরচ করে পর্যায়ক্রমে ৪/৫ দিন বিআরটিসি তে লিখিত, মৌখিক, ব্যাবহারিক দিয়ে ওরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স নিলাম। এইটুকু বুঝলাম যে একজন অপ্রশিক্ষিত ড্রাইভার কতজনের সারাজীবনের দুর্দশার কারণ হতে পারে।

দুইটা ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা, আমাকে সচেতন করেছে মানুষের অসহায়ত্ব ও দুর্দশার কথা ভেবে দেখতে। আজ যারা রাজনীতিবিদ, দেশের মাথা , তাদের জন্য দোয়া করি তাঁদের নিকটাত্মীয় বা প্রিয়জনের এই অভিজ্ঞতা হোক। একজন প্রিয় মানুষের প্রস্থানে যদি ইলিয়াস কাঞ্চন, তারানা হালিমের মতো তারকা আজ সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হতে পারেন । আমি প্রার্থনা করি, মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদদের প্রিয়জন অকালে বিল্ডিং চাপা পড়ুক, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাক, পুড়ে মরুক কোন বদ্ধ কারখানায়।

কয়েকজন মানুষের বিদায়ে যদি সারা বাংলাদেশে কিছু পজিটিভ পরিবর্তন হয়, আমি সেই প্রার্থনা করতেই পারি ! আপনারাও প্রার্থনা করেন , হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে করেন !

প্রথম প্রকাশঃ ২৬শে এপ্রিল ২০১৩

লিডারশীপ

লিডারশীপের একটি বড় অংশ হচ্ছে আপনার অধীনস্থদের দায়িত্ব দিয়ে সঠিক পথে পরিচালনা করা । এটি আপনি দুইভাবে করতে পারেন । সারাক্ষণ ধাক্কা দিয়ে দিয়ে করতে পারেন অথবা সামনে থেকে মোটিভেট করেও করতে পারেন। কার্যোদ্ধার নিয়া কথা । কীভাবে কাজটা হল ,সেটা আপনার বস বা কোম্পনি হয়তো আপনাকে জিজ্ঞেস করবে না। কিন্তু, কাজে ব্যর্থ হলে, তদন্ত শুরু হয়ে যাবে।

আমি কেন জানিনা , পিছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার চেয়ে সামনে থেকে লিড করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
এবং আমার উচ্চপদস্থ কেউ আমাকে যখন পিছন থেকে অনাবশ্যক ঠেলা বা ধাক্কা ; আমি ব্যাপারটা নিতে পারি না। কেনরে ভাই, তুমি তো দেখিয়েই দিলেই পারো কীভাবে কাজটা করা যায়। যেহেতু আমি একজন শিক্ষিত লোক , না বোঝার তো কিছু নেই।

উদাহরণ দিই।
বিভিন্ন লোক বিভিন্ন সময়ে তাঁদের গাড়ীতে আমাকে লিফট দিয়েছেন। সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখেছি, ড্রাইভার বেচারা নিজের মতো গাড়ী চালাতে পারে না। সারাক্ষণ ত্রস্ত থাকে পিছন থেকে মালিক কখন কী বলে।
আমি নিজে যখন ড্রাইভ করি, আমি আশা করি আমার সহযাত্রী এবং আমার পিছনে বসে থাকা কেউ আমাকে গাড়ি চালানোর সময় শুধুশুধু যেন ডিরেকশন না দেয়। এই একই জিনিষ আমি আমার ড্রাইভারের সাথেও করি। আমি যেহেতু, বিশ্বাস করে স্টিয়ারিং এ তোমাকে বসানো হয়েছে, কারণ নিশ্চয়ই তোমার গাড়ী চালানোর ট্রেনিং আছে। আর ড্রাইভিং সীটে বসার আগেই তোমাকেতো আমি বলে দিয়েছি, গাড়ি কোন রাস্তায় আর কিধরণের গতিতে চালাবে।
এখন যদি, প্যাসেঞ্জার সিটে বসে বসে আমি সারাক্ষণ ড্রাইভারকে ডিরেকশন দিই , আস্তে আস্তে আস্তে, জোরে জোরে , ডানে না বাঁয়ে—তাইলে তো ড্রাইভার বেচারার মুশকিল !
স্টিয়ারিং এ বসার পর গাড়ী এবং রাস্তাই আপনাকে ঠিক করে দিবে আপনি কী গতিতে চালাবেন।
ওয়েল, একজনের ড্রাইভিং এর সাথে আরেকজনের ড্রাইভিং মিলবে না কোনোদিনও ! এটা মেনে নিয়েই তো তাঁকে আপনি স্টিয়ারিং দিছেন। তার ড্রাইভিং পছন্দ না হলে , তাকে বাদ দেন। আরেকজন রাখেন বা নিজেই চালান।
জীবনের সবক্ষেত্রেই আমার এই মানসিকতা। আমি জানিনা এই মানসিকতা কীভাবে আমি পেয়েছি। কিন্তু, এটি আমার মজ্জাগত হয়ে গেছে।

প্রথম প্রকাশঃ১৪ই এপ্রিল ২০১৩