by Jahid | Mar 23, 2022 | লাইফ স্টাইল
যেখানে সেখানে , যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ার অদ্ভুতুড়ে অভ্যাস বা ক্ষমতা ছিল আমার ! আমি ছিলাম অনেকের ঈর্ষার ! আমি এখন অন্যদের ঈর্ষা করি !
২০০৫ সালের ডিসেম্বরে অফিস পিকনিকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বাস উল্টে কেলেঙ্কারি। কোমরের ফিমার ছুটে গেল পেলভিক থেকে। ছয় সপ্তাহ বিছানায়, ধীরে ধীরে ক্র্যাচ নিয়ে আবার হাঁটা শেখা। বড়কন্যা জেবা তখনও পৃথিবীর মুখ দেখেনি। আমার স্ত্রী ৭ মাসের সন্তানসম্ভবা। পুরো পরিবারের উপর দুর্যোগ।
দুর্ঘটনা যখন হয় , আমি তখন ১০৫ জ্বর নিয়ে বাসের জানালার পাশে তন্দ্রাচ্ছন্ন। মুহূর্তেই সব উলটপালট। যে আমি, ঢাকা কলেজে টেম্পোতে যাওয়ার সময় পাশের জনের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমাতাম ; বাসে সিট না পেলে হ্যান্ডেল ধরে ঘুমাতাম ; দুই ঘণ্টার বিমানযাত্রায়ও ঘাড় কাত করে ঘুমাতাম—ওই অ্যাকসিডেন্টের পরে কীরকম একটা আতঙ্ক গ্রাস করল আমাকে। যে কোন যানবাহনে আমি এখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটা অস্ফুট আতঙ্ক নিয়ে জেগে থাকি। দুই এক মিনিটের তন্দ্রা কেটে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আমার হয়তো কোন সাইক্রিয়াটিস্ট সেশন দরকার ছিল– ওই আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার জন্য। নানা কারণে ভেবেছিলাম , এমনিতেই একদিন সেরে যাবে। আমি আবার বেঘোরে ঘুমাতে পারব। না ! হচ্ছে না ! কিছুতেই হচ্ছে না! যে কোন যানবাহনে, হোক সে প্রাইভেট কার, বাস, বিমান—আমি আর ঘুমাতে পারি না। একটা দুর্ঘটনা আমার জীবনের নিষ্পাপ, নিশ্চিন্ত ঘুম কেড়ে নিয়ে গেছে আজ এই ১৪ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও।
আমার টুনি আর দুই টুনটুনি আমার সেই বিখ্যাত অভ্যাস ধরে রেখেছে। যেখানে কাত, সেখানেই বেঘোরে ঘুম।
প্রকাশকালঃ ৭ই জানুয়ারি, ২০২০
by Jahid | Mar 23, 2022 | লাইফ স্টাইল, সাম্প্রতিক
প্রসঙ্গ: চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে জুন ও জুলাই মাসে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
সারাজীবনে ঈশপ সাহেবের কিছু গল্প বহুচর্চিত হতে হতে ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। কচ্ছপ ও খরগোশ ; রাখালবালক ও নেকড়েবাঘ, চালাক শেয়ালের গল্প ইত্যাদি।
সব গল্পের আদি ও অরিজিনাল একটা মোরাল থাকে।
যুগে যুগে সেই মোরাল আবার দার্শনিকেরা বদলে ফেলে। হাতির যেমন দুইটা দাঁত, একটা দেখানোর আরেকটা খাওয়ার। তেমনি , একটা মোরাল সবাই দেখতে পায়, আরেকটা বুজুর্গ লোকে বোঝে।
রাখাল ও নেকড়েবাঘের গল্পে পাহাড়ের পাদদেশে গভীর জঙ্গলের পাশে রাখালবালক ভেড়ার পাল চরাত। একাকীত্বের বোরিং জীবনে থ্রিল আনার জন্য সে একদিন চিৎকার করে ‘নেকড়ে বাঘ ! নেকড়েবাঘ !’
আশেপাশে ক্ষেতে খামারের কর্মরত গ্রামবাসীরা যে যার কাছে যা আছে নিয়ে ছুটে আসে। এসে দেখে রাখালবালক হাসছে। কিছুদিন পরে আবার চিৎকার ‘নেকড়েবাঘ, নেকড়েবাঘ !’ আবারো গ্রামবাসী ছুটে এলো সাহায্য করতে; সেই একই কাহিনী ।
শেষের বার কী হয় সবাই জানে।
সত্যি সত্যি বাঘ আসে, কিন্তু এইবার চিৎকার করেও লাভ হয় না ; কেউ রাখালবালককে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনা। ভেড়ার পাল সমেত রাখালবালক বাঘের পেটে যায়।
ভাবলাম আমাদের দেশে বিদেশের নবীন দার্শনিকরা এই গল্পের নতুন কী কী মোরাল বের করেছে দেখি।
অরিজিনালের পাশাপাশি নবীন দার্শনিকদের মোরাল দেওয়া হল।
আপনার কোনটি যৌক্তিক মনে হয় জানান।
শুধু ইমো না দিয়ে কমেন্ট করলে নতুন কোন মোরাল আবিষ্কৃত হতে পারে !
অরিজিনাল মোরালঃ
সদা সত্য কথা বলিবে । মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না, এমন কি সে যখন সত্যি কথা বলে তখনও !
নতুন মোরাল ১: ধনী ও প্রভাবশালীদেরই ভেড়ার পাল থাকে। তারা একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকে এরকম বিপদসংকুল কাজে পাঠিয়ে অন্যায় করেছেন। সে হয়তো ভয় কাটানোর জন্য, সঙ্গ পাওয়ার জন্য সবাইকে ডেকেছে। তার এই মজা করে মিথ্যা বলাটা দুর্বল শোষিতের আর্তনাদ , অন্যায়কারীদের প্রতি তীব্র বিদ্রূপ।
নতুন মোরাল ২: রাখালবালক যে সমাজে বাস করে সেইটাই আমাদের সমাজ। নিপীড়িত জনগণ অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ও নেতারদের ক্রমাগত আশ্বাস ও সম্ভাব্য বিপদের কথা শুনতে শুনতে তাদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। যখন সত্যি বিপদ আসে, তখন সে বুঝতে পারে না কোনটা আসল বিপদ আর কোনটা নকল বিপদ ।
নতুন মোরাল ৩: অনভিজ্ঞ লোকের কাছে বিপজ্জনক দায়িত্ব দিয়ে বসে না থেকে সারাক্ষণ সেটা মনিটর করতে হয়। কারণ সত্যিকার কোন দুর্ঘটনা ঘটলে রাখালবালকের জীবনতো যাবেই ; কিন্তু প্রভাবশালীদের ভেড়ার পালও বাঘের পেটে যাবে।
নতুন মোরাল ৪: সত্য কথা বললে বাঘের পেটে যেতে হয়। রাখালবালক যতো বার মিথ্যা কথা বলেছিল, ততবার মানুষ তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। সে মাত্র একদিন সত্য কথা বলেছিল। সেদিন কেউ তার বিপদে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। কাজেই সত্য কথা বলতে হয় না। কৌশলী হতে হয়। মিথ্যা বলতে হয়।
প্রকাশকালঃ ৩০শে মে ২০২০
সাম্প্রতিক মন্তব্য