by Jahid | Nov 29, 2020 | ছিন্নপত্র, দর্শন, সাম্প্রতিক
যথারীতি আমাদের পূর্ববঙ্গের আশির দশকের রিয়েল লাইফ অভিজ্ঞতা। এলাকার সিনিয়রের কাছে শোনা।
তো হয়েছে কী, তাদের গ্রামে একজন মোটামুটি সম্পন্ন গৃহস্থ মারা গেলেন হুট করে ; উঠতি বয়সের সন্তানসন্ততিদের রেখে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম লোকের অকালমৃত্যু হলে কী হয় সেটা দেখার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমার আছে।
গ্রাম- মফস্বলে প্রথম কিছুদিন প্রতিবেশীদের আহা উঁহু থাকে। ধীরে ধীরে সবাই যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মৃতের পরিবারে কীভাবে চলছে, কী খেয়ে বেঁচে আছে সেটা দেখার সময় থাকে না সঙ্গত কারণেই।
চারিদিক আঁধার হয়ে এলে ভিটে-বাড়ি বাদে অন্যসব জমি বিক্রি করে পড়াশোনা আর জীবনধারণের প্রাণান্ত চলে।
যথারীতি ঐ পরিবারের বড়ছেলেটি যে কিনা আমার পরিচিতের প্রতিবেশী সেও বাধ্য হয়ে টুকটাক করে বাপের কষ্টের করা জমি বিক্রি করা শুরু করল। প্রতিবেশী মুরব্বীরা ব্যাপারটা তেমন পছন্দ করছিল না। এভাবে জমি বিক্রি করে খেলে আর কতদিন। এক সময় তো হাত পাততে হবে। আবার করারও কিছু ছিল না।
যাই হোক একদিন নদীর ঘাটে কয়েকজন মুরব্বী তাকে ধরল।
‘বাপু হে ! তুমি যেভাবে জমি বিক্রি করে খাতিছ, এভাবে চললি বুড়া হলি কী খায়া থাকবা ?’
সে উত্তর দিল, ‘ কাকা, এখুন আগে আমার খায়া জানে বাঁচতি হবি। খাতি পারলি না তবে বুড়া হতি পারব ; না খাতি পারে মরেই যদি গেলাম ; তালি পর আর বুড়া হব কেম্মা করে !’
প্রকাশকালঃ ৩০শে মার্চ,২০২০
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ-
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল ?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল ?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ !’
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তাহারে কেবা !
সকলে বলিল, ‘যাও- না নন্দ, কর না ভায়ের সেবা।’
নন্দ বলিল, ‘ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি ?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক্; ’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক !’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যতো তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশগুণ !–
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল;
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল!’
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, “আ-হা-হা ! কর কি, কর কি ! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই ?
বলো ক’বিঘৎ নাকে দিব খত, যা বল করিব তাহা’;
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা !’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিশন’ হয়;
হাঁটিতে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি-চাপা-পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
১
তিন ঘণ্টা পর হঠাৎ তোমার একটা ‘কুহু’
চাই না আমি,–চাই না আমি।
আমি চাই মহুর্মুহু কোকিল আমায়
ডাক পাঠাবে তার বাগানে।
আমি চাই অনন্ত বসন্ত, তুমি
সারাক্ষণ থাকবে জুড়ে আমার প্রাণে।
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
২
ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত গভীর জলের মাছ,
শিকারীর সঙ্গে কতরকমের খেলা খেলে-
তারপর যখন শিকারীর বড়শিতে ধরা পড়ে,
তখন চোখের পলকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
মাছকে নিয়ে শুরু হয় শিকারীর জলখেলা।
আমি জানি, আমি মৎস্য , তুমিই শিকারী-
আমি তোমার কষ্টার্জিত ধন।
আমার সাধ্য কি যে এড়াই তোমার বন্ধন?
আমি তোমার সুখের হাসি , দুখের ক্রন্দন।
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
৩
আমি কান পেতে রই,
প্রাণ পেতে রই,
চোখ পেতে রই স্ক্রিনে।
কখন তুমি গানের মতো,
সর্বনাশা বানের মতো,
রুদ্রকাম উত্থানের মতো
প্রবেশ করো
আমার মুঠোফোনে।
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
৪
তুমি আমাকে চতুর শিয়ালের মতো
পা ছেড়ে লাঠি ধরতে বলো না তো।
আদি রস হচ্ছে কাম, স্নেহ নয়।
স্নেহ তো কামের অনুবর্তী।
প্রেম , বন্ধুত্ব—এগুলো হচ্ছে
কামানুভূতির সংস্কৃত প্রকাশমাত্র।
বুঝতে পারলে, বোকা মেয়ে ?
মুঠোফোনের কাব্য। নির্মলেন্দু গুণ।।
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাম্প্রতিক
১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন আতঙ্ক আর ভয়াবহতার কথা আম্মার মুখে শুনেছি কয়েকবার। কীভাবে তাঁদের দিন যেয়ে সন্ধ্যা নামত আর সারাটা দিন যেতো পাকিস্তানী আর্মির নৃশংসতা আর ধারেকাছে ওদের পৌঁছে যাওয়ার নানা গুজবে । সন্ধ্যা হলেই ভুতুড়ে নিস্তব্ধতা। কুপি ও হ্যারিকেনের টিমটিমে আলোয় দ্রুত রাতের খাওয়া খেয়ে নিয়ে আরো নিঃশব্দে ট্রানজিস্টার খুলে বিবিসি আর স্বাধীন বাংলা বেতারের নব ঘোরানো। সারাক্ষণ একটা বুকভার করা চাপা আতঙ্ক। নিজের দীর্ঘশ্বাসে নিজেই চমকে ওঠা ! আবার ভোরের অপেক্ষা। একেকটা দিন প্রিয়জনদের নিয়ে বেঁচে থাকা মানেই সৃষ্টিকর্তার কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা !
স্বাধীনতার পরের প্রজন্মের ঐ দুঃসহতার ধারেকাছের কোন অভিজ্ঞতা নেই । তবে শ্বাসরুদ্ধকর, দীর্ঘমেয়াদী আতঙ্ক ও অসহায়ত্বের একটা অভিজ্ঞতা আছে আমাদের ! সেটা স্বৈরাচার লেজেহোমো এরশাদের শাসনামলের শেষের কয়েকটা বছর। সবরকমের আন্দোলন ব্যর্থ ও তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল ঐ হারামজাদা বিশ্ববেহায়ার কাছে । বছরের পর বছর, মাসের পর মাস, দিনের পর দিন কী এক দুঃসহ দম আটকে আসা অসহায়ত্ব নিয়ে এরশাদের ভণ্ডামি সহ্য করেছে বাংলাদেশে। অত্যাচারের মূল ধাক্কাটা গেছে ঢাকাবাসী ও ছাত্রসমাজের উপর দিয়ে। আমাদের সদ্য কৈশোর পার হওয়া মনে ৯০ এর গণআন্দোলনের নানা বীভৎস স্মৃতিচিহ্ন এখনো দাগ কেটে আছে !
আর আছে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা । ৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পরে শেষবারের বন্যার অভিজ্ঞতা ছিল ৯৮ তে। তখন, প্রতিবছর ছোট বা বড়মাপের বন্যা অবশ্যম্ভাবী ছিল। সরকারের যৎসামান্য প্রস্তুতি থাকত কী থাকত না। মূলত: প্রতিটা বন্যাপ্রবণ এলাকার জনগণের নিজস্ব প্রস্তুতি থাকত। তবে রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃত্বকে দেখা যেত এই সুযোগে নৌকায় করে চিড়ে-মুড়ি, ওরস্যালাইন, খিচুড়ি নিয়ে মফস্বলের বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটে বেড়াতে। বন্যা শুরু হলে ট্রেন লাইনের উঁচু পাড় আর স্কুল-ঘরগুলোতে উদ্বাস্তু বন্যার্তদের মানবেতর জীবন শুরু হতো।
বন্যা শুরু হলেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা যে চলে যেত ; পানি একবার টান দেওয়া শুরু করলে সপ্তাহখানেকের ব্যাপার –সেটা সবাই জানত। যতো দ্রুত চলে যায় সে জন্য সবার প্রার্থনা ছিল, অপেক্ষা ছিল, সাহায্য ছিল, ত্রাণ ছিল। আর ছিল, বন্যা চলে যাওয়ার পর কত দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে সেটার । বছর দশেক পরপর বন্যা তার বিধ্বংসী রূপ নিয়ে লণ্ডভণ্ড করে দিত বাংলাদেশকে। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস এতোটা দীর্ঘমেয়াদী আতঙ্ক তৈরি করতে পারত না। ঝড়ের মতো এসে ঝড়ের মতো চলে যেত। শহরের লোকে সেটা টেরও পেত না।
কোভিড-১৯ বা করোনা নিয়ে সে রকমটি ভাবতে ইচ্ছে করছে। বন্যা ঠেকানোর মতো কিছু আমাদের ছিল না, পুরোটাই প্রকৃতি ও ভারতের ফারাক্কা বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার উপর নির্ভর করত। করোনা এসেছে, চলেও যাবে ! আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করে টিকে থাকা জাতি ; কোন না কোনভাবে টিকে যাব। কিন্তু করোনার পরে পুনর্বাসন কীভাবে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত জাতি কীভাবে উঠে দাঁড়াবে সেটাও ভেবে দেখার দরকার।
প্রকাশকালঃ ২৪শে মার্চ,২০২০
by Jahid | Nov 29, 2020 | সাহিত্য
সে হয় না।
হয় পুরোটা পাগল হও, নয় তুমি মরে যাও।
এই মাঠ মানুষ বিক্রির মাঠ,
এইখানে তুলা ও রমণী একত্রে ওজনে ওঠে,
এইখানে সর্প ও বৃশ্চিক একত্রে অপেক্ষা করে খদ্দের আসার,
এই গৃহ জনহীন, এই দেহ ভাঙা হাট বটে—
মরে গেলে হবে? তারও পরে খরচাপাতি আছে।
উৎপলকুমার বসু।। টুসু আমার চিন্তামণি। প্রকাশ ১৯৯৯
সাম্প্রতিক মন্তব্য