বছর দশ বারো আগে , আমার বিবাহিত জীবনের প্রথমদিকেই এবং একইসঙ্গে চাকরির সবচেয়ে বিপদসংকুল সময়ে এক তরুণী দুই-তিনদিন করে ফোন দিল। খাজুর করা , মিষ্টি মিষ্টি কথা।
সপ্তাহ খানেকের মাথায়, সারাদিন রোজা রেখে রিকশায় আমি আর আমার কলিগ অন্য এক অফিসের ইফতার পার্টিতে মুখরক্ষা করতে যাচ্ছি। এর মাঝে সেই মেয়ের ফোন। আগের কয়েকটা আলাপ দীর্ঘ ছিল, এই বারেরটা আর দীর্ঘ করতে ইচ্ছে করলো না।

এইটাও বুঝলাম সে আমার অফিসের কোন মহিলা কলিগের মাধ্যমে আমার ব্যাপারে কিছু খোঁজখবরও নিয়েছে ।
ফোনালাপের মাঝে আমি জানতে চাইলাম , সে আসলে কী চায়।
ন্যাকা ন্যাকা গলায় ‘বন্ধু হতে চাই, আমরা কি বন্ধু হতে পারি না! ’
উল্লেখ্য, সেটা ছিল মোবাইল ফোনের প্রাথমিক যুগ, এইসব নানারকম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ফেটওয়ার্কিং ছিলনা। ছিলনা কোন ভার্চুয়াল জগত।
‘আপনি জানেন আমি বিবাহিত?’
‘জানি।’
‘তাহলে আপনার আর আমার বন্ধুত্বের সংজ্ঞা বা সীমানাটা কোথায় ?’
আমি বললাম, ‘ ধরেন, আপনার সাথে আমি মাস তিন-চারেক গুচ্ছের টাকা খরচ করে ফোনাফুনি করলাম।( সেই সময় কলরেটের কথা চিন্তা করেন, ৬ টাকা ৯০ পয়সা /মিনিট!)
তারপর? তারপর , কোন এক পবিত্র বিকালে আপনি আমার সাথে বা আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাইব।
মেয়েটি আরও ঘন গলায় বলল , ‘তাতো চাইতেই পারি ! পারি না ?’
‘ধরেন অফিসের এতো ঝামেলার মধ্যে সময় বের করে কয়েকদিন চাইনিজ টাইনিজ খেলাম?
মেয়েটা নীরব সম্মতি জানালো , ‘হুম।’ ( মানে চাইনিজ খেতে চায় ! )
‘তারপরে একটু গা ঘেঁষাঘেঁষি হবে, তারপর ছয়মাসের মাথায় এই সম্পর্ক হয়তো বিছানা পর্যন্তও যেতে পারে !’
মেয়ে এইবার কিছুটা বিব্রত, বলে উঠলো , ‘আপনি আমার সাথে এই ভাবে কথা বলছেন কেন?’
মেয়েটি তখনো বোঝে নাই,আলোচনা কোনদিকে যাচ্ছে।
‘আমার মতো একজন ব্যস্ত মানুষের পক্ষে এই ছয়মাস ধরে বিবাহিত জীবনের পাশাপাশি রোমাঞ্চের জন্য এতো সময় বা অর্থ নষ্ট না করে আমরা কি ব্যাপারটাকে সংক্ষিপ্ত করতে পারি না?
আপনি ঠিকানা দেন ইফতার সেরে আপনার বিছানায় আসি!
মেয়েটা কিছুক্ষণ পরে তোতলাতে শুরু করলো।
যাই হোক, ওই ঘটনার পরে সে আর কখনো আমাকে ফোন দেয় নি। এবং আমার বিবাহবহির্ভূত রোমাঞ্চের ওইখানেই অকাল প্রয়াণ !

[ প্রকাশকালঃ মার্চ,২০১৩ ]