কিছুদিন আগে কলিগের পারিবারিক ঝামেলার ইস্যুতে  ঢাকার জজকোর্ট পাড়ায় যেতে হয়েছিল। ঘর্মাক্ত , বিষণ্ণ কয়েক ঘণ্টায়  মলা-ঢ্যালা-চিংড়ী উকিল পেরিয়ে অবশেষে সিনিয়র উকিলকে পেলাম। অসংখ্য সারিবদ্ধ আলোবাতাসহীন  খুপরি ঘরের মতো চেম্বার! সরুগলিতে সিনিয়র উকিলের চেম্বারের  ঠিক সামনেই একটা কসাইয়ের দোকান। লাল-লাল-গোলাপি ছিলে রাখা সারিসারি ছাগল-ভেড়া-খাসি ঝুলছে। নীচেই কয়েকটা ছাগল বেঁধে রাখা, অপেক্ষমাণ । আমি মোবাইলে ছবি তুলি না সচরাচর। তোলা উচিৎ ছিল। দৃশ্যটার আপেক্ষিক তাৎপর্য ওই মুহূর্তের জন্য ও  হয়তোবা সবসময়ের জন্যই আছে। ঝুলে থাকা সহযাত্রীর মাংসপিণ্ডের পাশে বসে নিশ্চিন্তে ঘাস চিবানো, জাবর কাটা। চরম আশাবাদ, নৈরাশ্য, অনুদ্বিগ্নতা, নির্লিপ্ততার  দারুণ একটা মিশ্রণ। ওই যে , সিনেমায় থাকে না , সিম্বোলিক শট্‌। মোমবাতি কাঁপতে কাঁপতে নিভে যাওয়া। দুইটা পাখি পাশাপাশি ঠোঁটে ঠোঁটে। অর্থটা  দর্শকের কাছে খুব স্পষ্ট, আলাদা ব্যাখ্যা লাগে না !

সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কোন একটা বইয়ে অনেকটা এইরকম একটা দৃশ্যপট ছিল , সাপে ব্যাঙ ধরেছে। অর্ধেক শরীর সাপের মুখের ভিতরে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। একটা পতঙ্গ উড়ে যাচ্ছে সামনে দিয়ে, ব্যাঙটা খপ্‌ করে জিভ বাড়িয়ে দিল। যতক্ষণ জীবন ততক্ষণ উপভোগ! আমিতো আশাবাদই  দেখি।

টাইটানিক যখন ডুবে যাচ্ছিল, হাজারো যাত্রীর জীবনের সর্বোচ্চ অনিশ্চয়তার চরম আতঙ্কের  মাঝেও  কিছু লোক কিন্তু তাঁদের গিটার, বাঁশী নিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে সঙ্গীতে মগ্ন ছিল। বিদায় হে যাত্রীসকল, বিদায়। বেঁচে থাকুন বা চলে যান, যাত্রা শুভ হোক !  হ্যাঁ , অনেকে বেঁচে গেছেন, অনেকে  অসহনীয়  যন্ত্রণায় বরফ-শীতল অতলান্তিকে বিলীন হয়ে  গেছেন, তাঁদের সবার প্রতিই আমার সমবেদনা। আমাকেও  যদি বেছে নিতে বলা হয়, আপনি কী করতেন। আমিও সবার মতোই একটা কিছু নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করতাম। কিন্তু, ওই কয়েকজনের দিকে আমি সারাটাজীবন ঈর্ষা নিয়ে তাকিয়েই থাকবো।  থাকুক না কিছু বোকা নির্বোধ মানুষ যারা সবার চিন্তার বাইরে চিন্তা করতে পারেন সবার কাজের বাইরে কাজ করতে পারেন !

[ প্রথম প্রকাশঃ ১৯শে মে, ২০১৫ ]