আহমাদ মোস্তফা কামালঃ —- কিন্তু একজন লেখক হিসাবে বা একজন মানুষ হিসাবে মানুষের জীবনটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

শহীদুল জহিরঃ দার্শনিকভাবে আমি মনে করি, মানুষের জীবন হলো ফলের প্রত্যাশা না করে কাজ করে যাওয়া। কার একটা কাজের ফলাফল কী হবে আপনি তা জানেন না। এটা কোনো ঐশ্বরিক চিন্তা থেকে বলছি না, বলছি বাস্তব চিন্তা থেকেই। হ্যাঁ, নিশ্চিত ফল আপনি পেতে পারেন, যেমন ধরেন, একটা লোককে যদি একটা ঘরের মধ্যে আটকে আমি লাঠি দিয়ে পিটাই তাহলে সে নিশ্চিত মরে যাবে। সেটা আছে। কিন্তু এমনি সাধারণ জীবনে আপনি আসলে কোনো কাজ করে কী ফল লাভ করবেন, তার কিছুই বলা যায় না। ধরেন , আমি লেখাপড়া করছি, এইটা করে কী হবে আমি জানিনা। আমি চাকরি করছি কিন্তু সেটা নিয়ে আমি কত দূর যেতে পারব জানিনা। আমি এখন বেঁচে আছি, কতদিন বেঁচে থাকতে পারবো, জানি না। সর্বত্রই অনিশ্চয়তা। আসলে—আনসারটেইনিটি ইজ লাইফ। আমার এখন সেইরকমই মনে হয়, আগে অত হতো না, এখন মনে হয়। সাহিত্যের একটা ধারা ছিল, মার্ক্সিস্ট ধারা, সেটাতে অনেক ডেফিনিট ওয়েতে বলার ব্যাপার ছিল। জীবনকে জয়ী দেখানো, সমৃদ্ধ দেখানো , বা সম্ভাবনা আছে সেটা দেখানো ইত্যাদি। আমি যে সম্ভাবনা দেখাই না তা না, সঙ্গে ব্যর্থতাও দেখাই। কারণ জীবনের ব্যার্থতাগুলোর মধ্যে সম্ভাবনা থাকে। আমার তো মনে হয় যে , জীবনের ব্যর্থতাগুলোর একধরণের ঐশ্বর্য । এটা দারিদ্র্যকে মহান করার মতো কোনো ব্যাপার না। জয়ী হতে পারলে ভালো, না হতে পারলেও কিছু আসে যায় না। জীবনে কী হবে না হবে কিছুই যেহেতু পরিষ্কার করে বলা যায় না , যেহেতু এই অনিশ্চয়তা নিয়েই জীবন কাটাতে হয়, তাই এই জয়-পরাজয়, সাফল্য-ব্যর্থতার বিষয়গুলো আমার কাছে সমার্থক হয়ে ওঠে।

কামালঃ অনিশ্চয়তাই তাহলে জীবনের মূল কথা।

জহিরঃ হ্যাঁ । অনিশ্চয়তাই মূল ব্যাপার।

(শহীদুল জহিরের সাক্ষাৎকার ; ১৫ই ফেব্রুয়ারি ২০০৫)