শৈশবের কথা স্মরণ করলে অনেকগুলি মুখ মনে পড়ে। আরো মনে পড়ে তাঁদের সঙ্গে ভালবাসার বন্ধন । দীর্ঘদিন বিদেশে বাস করে বুঝেছি , আমাদের সমাজের বিশিষ্ট লক্ষণ মানুষে মানুষে এই স্নেহবন্ধন – যা সহস্র রকমের ক্ষুদ্রতা, দলাদলি , ঈর্ষা-দ্বেষ সত্ত্বেও এক ধরণের আনন্দ আর শান্তির স্বাদ নিয়ে আসে , যার তুলনা পৃথিবীর অন্য কোন সমাজে বোধ হয় নেই।
ইংল্যান্ডে এক সন্ধ্যায় ট্রেনে বাড়ি ফিরছি ।কামরায় সহযাত্রী শুধু একজন মুসলমান মৌলবি। উনি জায়ে-নমাজ বিছিয়ে সান্ধ্য নমাজ পড়লেন । কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম – ইংরেজি ভাষাটা ওঁর অজানা , আমার অখাদ্য হিন্দুস্তানিতে বাতচিত শুরু করলাম। মৌলবি সাহেব জানালেন – বিদেশে এই ওঁর প্রথম আগমন। কেমন লাগছে এই প্রশ্নের উত্তরে চারটি শব্দে বিলাতি সভ্যতার উনি যে-মূল্যায়ন করলেন , তার চেয়ে সুষ্ঠু বর্ণনা এবং আমাদের সঙ্গে এদের মূলগত তফাত কোথায় তার নির্দেশ, আমি আর কোথাও পাইনি । ওঁর বক্তব্য—এদের “ইনসানিয়াত জেয়াদা , মুহব্বত কম ।” অর্থাৎ আমাদের সমাজে “ মুহব্বত জেয়াদা, ইনসানিয়াত কম।” ব্যপকতম অর্থে সেই মুহব্বত আমাদের সমাজ এবং ব্যক্তিচেতনাকে রক্ষা করছে , শত যন্ত্রণা আর ব্যর্থতাবোধ সত্ত্বেও আমাদের আনন্দের সন্ধান দিচ্ছে। যদি কোনওদিন ইনসানিয়াত অর্থাৎ যে সব গুণে মানুষ এই পৃথিবীতে সুখ-সমৃদ্ধি-ধর্মময় বীরভোগ্য জীবন যাপন করতে পারে , তা আমাদের আয়ত্ত হয় , আশা করি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার মূল্য হিসাবে আমাদের মূল্যাতীত স্নেহবন্ধনগুলি বিসর্জন দেবে না।
সাম্প্রতিক মন্তব্য