বড্ডো বিরক্তি নিয়ে বলছি, বাচ্চাদের জন্য সীমিত আকারে হলেও স্কুলগুলো খুলে দেওয়া উচিৎ। এযাবৎ কালের বিগ ডেটা যা বলে, বাচ্চাদের শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো বয়স্কদের তুলনায় অনেক সজীব ও সুস্থ। কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ও প্রাণহানির সম্ভাবনা তাঁদের অত্যল্প বা নেই বললে চলে।

আর বাংলাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা এমনিতেই তেমন পড়াশোনা করে না। আমাদের সময়ের অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি এবং এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের যা দেখছি সেটা হচ্ছে — নানা বর্ষের ধূসর হাতে লেখা নোটের ফটোকপি যাকে কথ্য বাংলায় ‘চোথা’ বলে ; সেগুলো পড়ে একেক সেমিস্টার পাশ করছে। অধুনা, এসেছে ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ; এক সেমিস্টারে কোন সাবজেক্টে ৭/৮ টা পাওয়ার পয়েন্ট থাকলেই অ্যাভারেজে যে কেউ পাশ করে যাচ্ছে। যেখানে সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান উৎপন্ন করে ,আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেখানে জ্ঞান দান করে। জ্ঞান উৎপন্ন করতে যে পরিমাণ রিসার্চ, লাইব্রেরি ওয়ার্ক ; ল্যাবরেটরি, থিসিস অথবা জার্নাল পাবলিকেশন দরকার তাঁর সক্ষমতা আমাদের জানা আছে। এবং অদূর ভবিষ্যতেও বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৌড়ে আমাদের কোন পাবলিক অথবা প্রাইভেট যে পৌঁছুতে পারবে না, সেটা বলার জন্য জ্যোতিষী হতে হয় না।

আমারা যারা এখন অভিভাবক হয়েছি ( বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৎসামান্য পূর্বে ও পরবর্তীতে যাঁদের জন্ম)। তাঁরা ইন্টারনেটের জন্ম হতে দেখেছি। স্মার্ট ফোন থেকে শুরু করে নানা ধরণের ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ভিডিও গেম সব আমাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বেড়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল জগতের ভালো দিকের সঙ্গে সঙ্গে মন্দ-দিকগুলো আমাদের চেয়ে ভালো বোধকরি আর কোন প্রজন্ম জানে না। আমাদের প্রজন্ম চেয়েছিলাম আমাদের সন্তানদের আধুনিক গেজেটগুলো থেকে যতোখানি পারা যায় , নিরাপদ দূরত্বে রাখতে। সে আর হল কোথায় ?

আমাদের সন্তানেরা যেন –ছাপানো বই, হাতে লেখা পরীক্ষার খাতা আর ক্লাসে একসঙ্গে শিক্ষক/শিক্ষিকার সামনে বসে ব্ল্যাক বোর্ডের লেখালেখি আর কথা শুনে ক্লাস টেন অবধি পড়াশোনা করতে পারে –সেটাই ছিল আকাঙ্ক্ষা । এরপর কলেজে উঠে গেলে যুগের হাওয়ায় ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম , জুম, ইউ টিউব, অ্যানিমে কার্টুনের সঙ্গে পরিচয় হবেই –কেউ ইচ্ছে করলেও সেটা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
কিন্তু করোনাকালে, আমাদের ( পড়ুন সকল স্কুলগামী শিশুদের অভিভাবকদের ) প্রতিরক্ষার দেয়ালগুলো ধ্বসে পড়েছে ; ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। অনলাইন ক্লাস চলাকালে কয়জন জননীর পক্ষে সম্ভব বাসার কাজ করেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা শিশুর পাশে বসে থাকা। ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোন কোন বাচ্চা আলাদা ট্যাব খুলে কার্টুন-রে, অ্যানিমি-রে , ইউটিউব-রে মায় প্রাইভেট চ্যাটিং করা শুরু করে দিয়েছে। যেই শিক্ষক/শিক্ষিকা ক্লাসে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সশরীরে উপস্থিত থেকে ম্যানেজ করতে পারেন না, তিনি কি করে পারবেন অনলাইনে কোন বাচ্চা কী করছে সেটা ম্যানেজ করতে?

গার্মেন্টসে করোনা ভাইরাস থেকেও নেই সেই মার্চ থেকে।
গণ-পরিবহনে করোনা নেই, জুলাই থেকে।
পিকনিক স্পটে আর সমস্ত রিসোর্টে করোনা নেই আগস্ট থেকে।
সরকারি জরুরি বিভাগগুলো ( হাসপাতাল, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ইত্যাদি) তে করোনা ভাইরাস নেই প্রথম দিন থেকেই। বেসরকারি ব্যাংকে নেই প্রথম থেকে।
আমাদের কর্পোরেট অফিসে করোনা নেই এপ্রিল-মে থেকে।

তাহলে করোনা ভাইরাস আছে কোথায়? একমাত্র শিক্ষায়াতন গুলোতে?
আচ্ছা, ইউনিভার্সিটি বন্ধ রাখা হোক আরো এক বছর কিংবা আরো দুইবছর ।
আমার মামা (DrMd Sarowar Hossain ) যিনি শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর। বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার পিছনে তাঁর যুক্তি দেখিয়েছিলেন করোনার শুরুর দিকেই। তিনি বলেছিলেন–১০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা করোনায় আইসিইউ তে মারা গেলে সারাদেশে কোন হৈচৈ হবে না। কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার সামান্য অবহেলাও পায়, তবে সারাদেশে আগুন জ্বালিয়ে দেবে ছাত্ররা । বরং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে বন্ধই থাকুক। অকাট্য যুক্তি। আমাদের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের হেতু লাগে না, কিছু একটা হলেই তাঁরা জ্বলে ওঠে। সরকারের গদি নড়িয়ে দেয়। আর অথর্ব বিরোধীদলগুলো আলুপোড়া খেতে চায়।

অতএব বিশ্ববিদ্যালয় আরো বছর খানেক বন্ধ থাকুক। সরকার শান্তিতে সময় পার করুক। কিন্তু স্কুলগুলো খুলে দেন জনাব। আমরা– বাসা থেকে অনলাইন ক্লাস করা সন্তানদের অভিভাবকেরা আর পেরে উঠছি না।
পাঠ করার জন্য অগ্রিম শুকরিয়া ও ধন্যবাদ।

প্রকাশকালঃ ১৭ই নভেম্বর,২০২০