কয়েকদিন ধরে উত্তরা ৭ নং সেক্টরে আমি যে অফিসে কর্মরত, তাঁর চারপাশের রাস্তা ঢাকা ওয়াসা খুঁড়ে মিসমার করে ফেলেছে। আমার কর্মস্থলে আসতে একেক দিন গোলকধাঁধার মতো একেক রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে।
শীতের আগে একটা বৃষ্টি হলেই খোঁড়া রাস্তাগুলো হাকিম আলীর মৎস্য খামার হয়ে যাবে। আর দুয়েকদিন কাজ স্থগিত রেখে কন্ডাক্টর যদি ওয়াসা-ভবনে বিলের জন্য ঘোরে ; সেই দুইদিনে এডিস মশাদের প্রজননে বিশাল উপকার করা হবে। উপকৃত মশার কামড়ে উত্তরাবাসী ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেয়র থেকে শুরু করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও শাপশাপান্ত করবেন।
প্রায় চারবছর পর নানা কাহিনীর পরে উত্তরার রাস্তাগুলো একটু ভদ্রোচিত অবস্থায় এসেছে। কিন্তু , বছরের পর বছর রাস্তা ঠিক থাকলে তো প্রবৃদ্ধি হবে না সোনা !
মাস দুয়েক হলো না , শুরু হয়ে গেছে খোঁড়াখুঁড়ি ; রাস্তা খোঁড়ার মোচ্ছব।
এই মাসে ঢাকা ওয়াসা খুঁড়ছে , কাজ শেষে দায়সারা গোছের মেরামত করে এরা চলে যাবে ; তার ঠিক দুইমাস পরে বিটিসিএল বা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মনে হবে খোঁড়ার কথা।
আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার না। তবে নাগরিক বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে এটুকু বুঝি যে–একটা রাস্তা প্রথম একটানে নানা ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে টেকসই করে করার পর, সেটা খুঁড়ে মেরামত করলেও সেই রাস্তার না থাকে কোন শক্তি; না থাকে সৌন্দর্য। দিন কয়েকের ভারী বর্ষণে যাচ্ছেতাই হয়ে যায়।
আশেপাশের অনেকের এবং আমার নিজেরর সহধর্মীনিরও ‘সি-সেকশন’ করে সন্তান জন্মদান করতে হয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্মদানের কোনরকম চেষ্টা না করেই যথেচ্ছ অপ্রয়োজনীয় ‘সি-সেকশন’ কেন করা হচ্ছে, তার পক্ষে বিপক্ষে চিকিৎসক , সুশীল সমাজ ও নারীবাদীরা তর্ক করেই যাচ্ছেন। সে আরেক বিতং। কিন্তু, সিজারিয়ান অপারেশন করার পর, প্রসূতি নারীর সার্বিক স্বাস্থ্য আর তলপেটের চামড়ার স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। সিনেমার কোটি টাকার নায়িকাদেরও সন্তান হয় শেষ বয়সে এসে, হয়তো ‘সি-সেকশন’ করেই হয়। কিন্তু তারা তাদের উন্মুক্ত তলপেটে মসৃণ রাখার জন্য চিকিৎসা ও ডায়েট করে হুলস্থূল করে। সেটা কী আমার গিন্নীর বা আপনার গিন্নীর পক্ষে সম্ভব ? ইচ্ছে করলেই বড়ো শতাংশের অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান অপারেশন যে এড়ানো যায়, সে কথা এখন সবাই বুঝতে পারছে।
তো, উত্তরার মসৃণ রাস্তায় এখন ‘সি-সেকশন’ চলছে।
চিন্তা করবেন না, দায়সারা মেরামত হবে দুইমাস পরে ; পানি জমবে, মশা হবে, রিকশা উল্টে পড়বে।
যারা একটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, তাদের অনেকেই তো উত্তরাতেই থাকেন।
তারা সহ সবাই গালি দেবেন মেয়রকে, রাষ্ট্রকে।
আর কমিশনের টাকা দিয়ে আরেকটা ফ্ল্যাট কিনবেন, বাচ্চার জন্য আলাদা গাড়ী বরাদ্দ করবেন। ভালো রাস্তা কেটে ভাঙ্গাচোরা এই ‘ এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই! ’ প্রক্রিয়াকে দোষারোপ না করে ; এসি গাড়ির ভিতর থেকে বসে বলবেন, ‘নাহ্ ! এই দেশের কোন আশাভরসা নেই। বাচ্চাগুলোর এ-লেভেল শেষ হলেই খালা-মামা-চাচার কাছে আমেরিকায় অথবা কানাডা পাঠিয়ে দেব।’
পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ।
প্রকাশকালঃ ১৬ই অক্টোবর,২০২০
সাম্প্রতিক মন্তব্য