কিছু কথা সবার সঙ্গে বলতে বলতে মনে হয়, এ বোধহয় আমার একেবারে নিজস্ব কথা। হয়তো নানা পড়ার ফাঁকে ; কথাশোনার ফাঁকে, কথাগুলো আমারই হয়ে গেছে। আমাদের উপমহাদেশীয় সমাজের প্রেক্ষিতে আমার যা মনে হয়ঃ আমাদের জন্ম হওয়ার পর দুটো চালিকাশক্তি আমাদের সর্বোচ্চ প্রভাবিত করে চলে ও একপর্যায়ে অবিচ্ছেদ্য হয়ে ওঠে !

প্রথমটি হচ্ছে , নিরাপত্তাহীনতা বা ইনসিকিউরিটি ! যে নিরাপত্তাহীনতায় আমাদের মধ্যবিত্ত অগ্রজরা ভুগেছিলেন, তা আমাদের মাঝে বংশানুক্রমে চলে আসে। পরিশ্রম, প্রতিযোগিতায় নানারকম প্রাপ্তি ও অর্জন দিয়ে আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ করার চেষ্টা করি । পড়াশোনা, চাকরি,ব্যবসা , টাকা, গাড়ী, সেভিংস ইত্যাদি ইত্যাদি। মূলতঃ এটার কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সীমারেখা নেই। মাথাগোঁজার একখানি জমি হলে কি মানুষ নিরাপদ ! সে কী ক্রমাগত আরো জমির মালিক হতে চায় না ! একটা ফ্ল্যাট হয়েছে আরেকটা করে নিরাপত্তা বাড়াতে চায়। নগরীর এই প্রান্তে কিছু থাকলে,অপরপ্রান্তে । একই ব্যক্তির লাখ টাকার ব্যাংক ডিপোজিট যেমন তাকে নিরাপত্তা এনে দিতে পারে না ; কোটি টাকা ডিপোজিটেরও সেই সম্ভাবনা নেই। কোন কিছুতেই আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ করতে পারিনা বা নিরাপদ ভাবতে পারিনা। পরবর্তী বংশধরদেরকেও একই ভাবে নিরাপদ করার ক্রমাগত চেষ্টা করে যাই। স্বদেশ থেকে প্রবাসী হয়ে জীবনকে আরো নিরাপদ করতে চাই। একটা উর্ধ্বশ্বাস দৌড় ক্রমাগত আমাদের ত্রস্ত করে।

আর , জীবন আমাদের হাতের ফাঁক গলে কখন নীচে পড়ে যায় , আমরা টেরও পাইনা ! নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিতে নিতে জীবন শেষ হয়ে যায় !

দ্বিতীয়টি হচ্ছে , অনিশ্চয়তা বা আনসারটেইনিটি। আমরা কেউই জানিনা – আগামীকাল কী হবে , আগামী সপ্তাহে বা বছরে কী হবে ! আমরা ভুলে যাই, পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি থেকে শুরু করে থেকে আমার মত সাধারণ লোকের জন্য এই অনিশ্চয়তা সমানুপাতিকভাবে আছে। এই অজানা অনিশ্চয়তাকে ঘিরেই আমাদের বৈচিত্রময় লৌকিকতা , আচার-আচরণ,ধর্ম ও সামাজিকতা গড়ে ওঠে। আমরা একেকজন একেকভাবে জীবনকে দেখা শুরু করি। কীভাবে জীবনকে দেখতে হবে আমরা অন্যের কাছ থেকে শিখে ফেলি। আর , অনিশ্চয়তাকে কাটাতে চেষ্টা করি। কিন্তু পেরে উঠি না। অনিশ্চয়তাকে যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না, এটাও মেনে নিতে পারি না।
নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য । তবে , এদেরকেই জীবনের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে দেয়াটা যৌক্তিক নয় । হয়তো , এদের সঙ্গে সহাবস্থান ও সমঝোতা করে চলে , এই দুইয়ের মাঝেই জীবনকে খুঁজে নিতে হয় !