১।                বছর দশেক আগে ( ২০০৫ সালে)  ইউরোপের কোথাও এক প্যাকেট মার্লবোরো কিনেছি, দাম গায়ে লাগার মতো, প্রায় ৫ ইউরো ! সেই মহার্ঘ  সিগারেট আবার দেখি ড্যাম্প ! মানে শুকনো তরতাজা না, টানছি কিন্তু মজা পাচ্ছি না। ধূমপায়ীদের কাছে ড্যাম্প সিগারেটের চেয়ে অসহ্য কিছু হতে পারে না।

নিজেকে বড্ডো বঞ্চিত ও প্রতারিত মনে হচ্ছিল।  পশ্চিমাদের সমস্ত প্রোডাক্টে ম্যানুফ্যাকচারিং ও এক্সপাইরি ডেট অত্যাবশ্যকীয়। এপাশ-ওপাশ করেও প্যাকেটের গায়ে কিছুই  পেলাম না ;  ঠাট্টার ছলে সঙ্গে থাকা ক্রেতা-বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম ,ব্যাপার কী ,ম্যানুফাকচারিং এক্সপাইরি ডেট নেই যে !  সে দারুণ একটা উত্তর দিল, ‘ শোন জাহিদ, সিগারেট, লিকার বা সকল-প্রকার মাদক যেহেতু বিষতূল্য, সেটার উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ  আবশ্যকীয় নয় !’

তখন মেজাজ খারাপ করলেও , এখন বুঝি ঘটনা সত্য।

২।                বড়ভাইয়া ধূমপায়ী ছিলেন। পাড়ার মোড়ের বাকীর খাতায় তাঁর নামে একপৃষ্ঠা, শেষের দিকে আমার নামে আরেক পৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকতো । তারপরেও ক্রসফায়ার যাতে না হয়, দোকানীকে বলা ছিল, আমার পিতৃদত্ত নামের পরিবর্তে অন্য কোন নাম ব্যবহার করার!

৩।                টেক্সটাইলের ফার্স্ট ইয়ার। ডাইনিং-এর পাশে ছোট্ট ক্যান্টিন। নাস্তা শেষে চা । ১৬তম ব্যাচের মুরব্বী এক ভাইও এক টেবিলে। কোন কলেজে ছিলাম, রেজাল্ট কী এইসব জিজ্ঞাসার মাঝে চা শেষ। আমি উশখুশ করছি, কখন ছাড়া পাবো ;  উঠি উঠি করছি। উনি আমার অবস্থা  বুঝতে পেরে  বললেন, ‘জাহিদ সিগারেট খাইবা নাকি। খাও! এইখানে সমস্যা নাই। আরে মিয়া, তুমি আমারে দেইখ্যা সিগারেট লুকাইয়া সম্মান দেখাইলা; পরে পিছনে গিয়া গালি দিলা। তার চে, সামনা-সামনি সিগারেট খাও !  ‘সিগারেট লুকানো’ সম্মানের দরকার নাই!’

আমি হাঁফ ছেড়ে ভাবলাম, যাক ! জায়গামতো আসছি। আমাদের টেক্সটাইল কম্যুনিটিতে এই ব্যাপারটা এখনো আছে ;  খুব মুরব্বী -ফার্স্ট থেকে ফিফথ ব্যাচের আগের কয়েকজনের সামনে ছাড়া আমাদের সিনিয়রদের সবার সঙ্গেই  অনুমতি নিয়ে আমি ও আমরা ধূমপান করি ।পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বা  সন্মানের এতোটুকু হানি ঘটেনি এখন পর্যন্ত !

৪।                 আব্বা আইনজীবী ছিলেন। কথার মার প্যাঁচতো কিছু জানতেনই।  বড়ভাইয়া সিগারেট খান সেটা উনি  জানতেন। কিন্তু আমার মতো ভালোছেলেও (!) ধূমপায়ী হতে পারে, কস্মিনকালেও তার কল্পনায় ছিল না !  তবুও কোন কারণে তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। সর্বকনিষ্ঠ ভাইটি, আমার বছর আটেকের ছোট। নানা উপঢৌকন ও ভয়ভীতি ছিল  আমার ধূমপানের ব্যাপারটা চেপে যাওয়ার জন্য। সেটা সে মেইন্টেইনও করতো।

তবুও আব্বার সাথে একদিন ওকে জেরা করার কথোপকথন ছিল অনেকটা এইরকম:

: সাজু (আমার অগ্রজ) কি সিগারেট খায়?

: জ্বী , মনে হয় খায়।

: জাহিদ খায়?

: না! মেজভাইয়া খায় না।

: সত্যি !

: হ্যাঁ, সত্যি মেজভাইয়া সিগারেট খায় না !

: আচ্ছা ! ওরা দুইজন কি একসাথে সিগারেট খায়?

: না, না, বড়ভাইয়া আলাদা খায়, মেজভাইয়া আলাদা খায় !

৫।      ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টার একপর্যায়ে, ক্রস-আটলান্টিক এক ফ্লাইটে একটা প্রেরণামূলক বাক্য আমাকে মুগ্ধ ও কনভিন্স করলো। বাক্যটি অনেকটা এরকম ছিল  “If you are able to  avoid smoking in this long flight ;  you will be able to avoid it  for the rest of  your life !

ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী সকলকে  শুভেচ্ছা।

[ প্রথম প্রকাশ ২৪শে অক্টোবর ২০১৫ ]