গতকাল সারাটা দিন গেছে আমেরিকান গণতন্ত্র নিয়ে কূট-ক্যাচালে। ভেবেছিলাম আজ ক্ষান্তি দিই। কিন্তু আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণের সাথে কেউ একমত হোক বা না হোক, বলতে অসুবিধা কি !

১৭৬০ সাল থেকে শুরু করে আজ ২০১৬ সাল ২৫৬ বছরে গণতান্ত্রিক পথ পেরিয়েছে আমেরিকানরা।পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সর্বপ্রাচীন গণতন্ত্রের ধারক, বাহক ও প্রচারক যুক্তরাষ্ট্র। সেই তুলনায় গণতন্ত্রের পথে আমরা ভ্রূণের অবস্থানেও নিজেদেরকে বিবেচনা করতে পারি না ! পারি কি ?

মেনে নিচ্ছি, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে টেকসই রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি হচ্ছে গণতন্ত্র। সমাজতন্ত্রে স্বৈরাচার তৈরি হয়ে যায় দ্রুত।সেটা আমরা অনেকবার দেখেছি। অ্যারিস্টটল-এর পছন্দ ছিল অ্যারিস্টোক্র্যাটিক অটোক্র্যাসি। রাষ্ট্র পরিচালক যদি হন দেশপ্রেমিক ও শিক্ষিত, তাহলে তাঁকে দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ মঙ্গল আনয়ন সম্ভব।

আমি জানি ,অনেকেই আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসতে পারেন ! অথবা আমার উচ্চম্মন্যতা আছে বলে তাচ্ছিল্য করতে পারেন। তবুও বলি– আমি থাকি মিরপুরের অবাঙালী বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে। ভোটের সময়ে আমার বাসার সামনের বিশাল বস্তির ড্রাগ অ্যাডিক্ট উচ্ছন্নে যাওয়া রাস্তার মাস্তান আর আমার ভোটের দাম কিন্তু একই। আমি সুবিধাবঞ্চিত নই, আমি সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত—নানাভাবে আমাকে হেনস্তা করতে পারেন। কিন্তু, একজন শিক্ষিত সচেতন লোকের ভোট আর মাদকসেবীর ভোটের মূল্য কিন্তু গণতন্ত্রে একই।

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতার দুঃখজনক পরিণতি একটা উদাহরণ দিয়ে বছর বিশেক আগে এক মুরব্বী ব্যাখ্যা করেছিলেন। ধরেন, একটি রাষ্ট্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১০০ জন। দুই জন অযোগ্য প্রার্থীর মধ্যে একজন কুদ্দুস ভোট পেলেন ৪০টি , আরেকজন কম অযোগ্য মফিজ পেলেন ৩৫ ভাগ। বাকী ২৫ ভাগ লোকের ওই দুই প্রার্থীর কাউকেই পছন্দ নয় ! নির্বাচনে জয়ী হয়ে ৪০ ভাগ লোকের সমর্থনে অযোগ্যতর প্রার্থী কুদ্দুস সরকার গঠন করল। এইখানে ট্রাজেডি হচ্ছে — ৬০ ভাগ জনগণ/ বৃহত্তম জনগোষ্ঠী কুদ্দুসকে পছন্দ করে না, কিন্তু তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই !

আমার কাছেও এইটাই মনে হয়, গণতন্ত্রের অন্যতম বড় একটা সীমাবদ্ধতা। আমেরিকার বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তাঁদের দেশের বাইরেও যে বিশাল একটা পৃথিবী আছে , সেটাই জানে না বা কেয়ার করে না ! এঁদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক লোকের হাইস্কুল পাস আছে। অধিকাংশই ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, কারণ সেটা তাঁদের মাতৃভাষা। এই প্রাইমারী স্কুল পাশ বিশাল জনগোষ্ঠীকে মূর্খ বললে, মনে হয় না খুব বেশী অন্যায় করে ফেলব !

আমার মিরপুরে ঢাকা-১১ আসনে ৯০ এর দশকে , সংবিধান প্রণেতা ডঃ কামাল হোসেন পরাজিত হয়েছিলেন , প্রায় অশিক্ষিত জনাব হারুন মোল্লার কাছে। আবার হজ্বের তহবিল তসরুপ করা চোরা মান্নান জেতে গাজীপুরে !

[ প্রকাশকালঃ ১০ই নভেম্বর,২০১৬ ]