আমার অগ্রজ মাঝে মাঝে একটা কথা বলেন, ‘সাইধা ডাইল খাইয়েন না !’ ( সেধে ডাল খাবেন না !)
মানুষ নানারকম লোকাল প্রবাদ-প্রবচন,বাগধারা ব্যবহার করে ; ভাবতাম এটা সেরকম কিছু একটা। এই যেমন দুইদশক আগে আমি টেক্সটাইলের সদ্য পাশ করা প্রকৌশলী ; প্রাইমারী, সেকেন্ডারি , টারশিয়ারী সব কালার- মুখস্থ। দেশের বাড়িতে গেছি ! আমার খুব বন্ধু-সুলভ মামাটি আমার কাছে কী কারণে যেন কিছু টি-শার্ট চাইলেন । একইসঙ্গে আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলেন, ‘ ভাগিনা, ভালো কালারের কিছু দিও, ‘খায়রুল কালার’ – দিও না। আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,‘খায়রুল কালার’- আবার কী!’ কথা শুনে বুঝলাম ,বন্ধু-মহলে উনাদের খায়রুল নামের একজন আছে, যার কালার-সেন্স অতিমাত্রায় কম। রাজ্যের ফালতু আবঝাপ রঙয়ের পোশাক পড়েন। তাই , অদ্ভুতুড়ে যে কোন রঙের নাম তাদের বন্ধু-মহলে ‘খায়রুল কালার’ নামে পরিচিত।
ইনাম ভাই নামে একজন সদাহাস্যময় বড়ভাই ছিলেন মহল্লায়। ছিলেন বলছি, কারণ তিনি অকালেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ছোটবেলায় উনাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করার সময় নানা ধরণের কথার ভিতরে উনার ফেভারিট ছিল-
‘আল্লাহ্ তুই রহমতের মালিক !
কাউরে দিলি ঘুঘুর বাচ্চা, আমারে দিলি শালিক!!!’
কোন বেদনা থেকে এই দুলাইন উনি বলতেন জানি না। ঘুঘুর বাচ্চা যে শালিকের চেয়ে ভাল শুধু এইটুকু বুঝতাম। লাইনগুলো উনার নিজস্ব রচিত কীনা সেটা জানার এখন আর উপায় নেই !
তো আমি আমার অগ্রজের ‘One liner’ কে ধরে নিয়েছিলাম ঐরকম লোকাল কিছু একটা ! মাস খানেক আগে জিজ্ঞাস করলাম অন্তর্নিহিত অর্থ কি ? হয় কি , ধরেন আপনার সঙ্গে কেউ একটা নেগোশিয়েশনে যাবে, হতে পারে সেটা মালিক-পক্ষ , ক্রেতা বা আপনার কর্মচারী ! আপনাকে আগে তার/তাদের কথা শুনতে হবে মন দিয়ে। সে অবশ্যই কোন নির্দিষ্ট প্ল্যান করে আপনার সাথে আলাপে বসেছে । আপনার উচিৎ হবে তাকে আগে বলতে দেওয়া। আপনি যদি আগ বাড়িয়ে ধরে নেন তার বরাদ্দ অফার কী হতে পারে , তাহলে আপনার নেগোশিয়েশন স্কিলকে আরো একটু ঝালাই করার সময় হয়ে গেছে !
হতে পারে, আপনার প্রতিপক্ষ নিজে থেকেই আপনার ‘সম্ভাব্য’ দাবীর চেয়ে একটু বেশী সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই আপনার সঙ্গে বসেছে ! সুতরাং , তাকে বলতে দিন। তারপর, আপনি আপনার দাবী-দাওয়া উত্থাপন করেন। এমনটা তো হতেই পারে, রোস্ট-রেজালার আকাঙ্ক্ষা বা দাবী নিয়ে যাচ্ছেন ; হয়তো গরুর ভুনা-মাংসের ব্যবস্থা আছে। তা না জেনে, খাবার আসার আগেই ডাল-ভাত দাবী করে বসলেন !
ছোটখাটো ইস্যুতে আমার নিজের এমনটি হয়েছে–কোন একটা মিটিং হয়তো পূর্বনির্ধারিত ছিল। হঠাৎ করে আমার ব্যস্ততা ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে। আমি অনেকক্ষণ ধরে ইতস্তত করছি কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটিকে না করি, বা মিটিং পিছিয়ে নিতে বলি! দেখা গেল, আমি ফোন করে হালকা কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর অপরপক্ষ নিজে থেকেই বলছে, ‘আমি তো ব্যাংকের কাজে আটকে গেছিরে ভাই, ইত্যাদি ইত্যাদি।’ আমি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি ! আসলে , কোন কথোপকথন বা মিটিং এ বসার আগেই অনেকে মাইন্ডসেট করে ফেলেন কী কী বলবেন প্রথম সুযোগেই ; অপরপক্ষকে না শুনেই হড়বড় করে কী কী চাই সেটা বলেও ফেলেন। এতে অনেকসময়ই হিতে বিপরীত হয় !
নেগোশিয়েশনের যে কোন পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য দেখাতে শিখুন, কেন আগ বাড়িয়ে ডাল খাবেন !
[প্রথম প্রকাশঃ ১৩ই সেপ্টেম্বর ,২০১৬ ]
সাম্প্রতিক মন্তব্য