“You always meet twice in life!” আমার এক অগ্রজের কাছে শেখা।
চাকরির প্রথমদিকে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানায় ছিলাম বেশ কয়েকবছর ; তারপরে নানা পাকেচক্রে ট্রেডিং হাউজে। আমরা যারা কারখানায় কাজ করে এসেছি , কেন জানিনা মালিকদের ব্যাপারে একটা সহজাত সম্মানবোধ আছে তাদের । সম্বোধনে ও আচার আচরণে আমি মালিকপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হই, যে তাঁদের বহুবিধ সমালোচনা থাকতেই পারে, কিন্তু দিনশেষে তাঁরা মালিক । আমি জানি , একটা প্রতিষ্ঠান চালানো চাট্টিখানি কথা নয়। আরেক বড়ভাই, কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন,’ আমি একটা ফ্লোরে বসে একসঙ্গে কয়েকশত নানা মাপের , চিড়িয়াটাইপ শিক্ষিত লোক চালাতে পারি ! কারণ এটা আমার এক্সপার্টিজ। কিন্তু এই আমাকেই ২ জন কর্মচারী সহ একটা পান-বিড়ির দোকানের মালিক করে দিলে দেখা যাবে আমি সেটা চালাতে পারছি না।’ তো কর্মজীবনের প্রথমধাপেই বুঝে গেছি ,প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া ও চালানো সহজ না। ‘Entrepreneurship’ ব্যাপারটা সবার হয় না !
অনুজ সহকর্মীদের অনেকে কোন প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাময়িক ব্যর্থতায় হুট করে অসম্মান করে বসেন । মূলত: ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে একটা প্রভুসুলভ আচরণতো থাকেই। যারা কারখানাগুলোতে কাজ করে এসেছেন , তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা একটু কম। সরাসরি এসেই ট্রেডিং বা সোর্সিং অফিসের চেয়ারগুলোতে বসে পড়লে সমস্যা হতে পারে। কারণ নবীন কর্মকর্তা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে কারখানার কাউকে উচ্চস্বরে মুখ খিস্তি করতে দেখে ভেবে নিয়েছে—কার্যোদ্ধারের ওইটাই একমাত্র পন্থা।
টেবিলের এই পাশে থেকে কাউকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলাটা খুব সহজ একটা কাজ। ভুলে যাবেন না , আপনাকে টেবিলের ঐ পাশে যেকোনো মুহূর্তে বসতে হতে পারে। আপনি কোন মালিককে তার ঐ মুহূর্তের ব্যর্থতা দিয়ে তাকে বিবেচনা করছেন। আপনি জানেন ও না, ঐ অবস্থানে আসতে কতটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাঁকে। আপনার উন্নাসিক ক্রোধের এক মুহূর্তে আপনি এমন দুর্ব্যবহার ব্যবহার করে বসলেন যে , দ্বিতীয়বার তাঁর সাথে কথা বলার মতো অবস্থা থাকল না। বরং কেউ আপনার সঙ্গে অসদাচরণ করলে , সেটি তার ব্যর্থতা ; পরের বার সে আপনার চোখের দিকে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না। আপনার মৃদু তাচ্ছিল্যের হাসি তাকে অনুশোচনায় জ্বালাবে !
মানুষের আয়ু ক্ষুদ্র ! তাই বলে এতো সংক্ষিপ্ত নয় যে কারো সাথে আপনার আরেকবার দেখা হবে না !
[ প্রকাশকালঃ ১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬]
সাম্প্রতিক মন্তব্য