আমার মধ্যে একসময় খুব খুঁতখুঁতে স্বভাব ছিল। বহুকষ্টে সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমি যদিও জানতাম ৩টা রচনা পড়লেই পরীক্ষায় কমন পড়বে, তবুও খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য গুচ্ছের পড়াশোনা করে যেতাম। সকল ক্ষেত্রেই শঙ্কামুক্ত থাকতে চাইতাম। অফিসিয়াল কাজের বাইরে অফিসে নানা ধরনের কর্পোরেট কাজ থাকে , নতুন চ্যালেঞ্জ থাকে এবং মালিক-পক্ষ বা ঊর্ধ্বতনরা সেই সব চ্যালেঞ্জের কথা খোলামেলা উপস্থাপন করে মতামত জানতে চান সিনিয়রদের কাছ থেকে। আমি নেগেটিভ ক্যারেক্টারের না হলেও ওই যে বললাম, নিজেকে পারফেকশনিস্ট হিসাবে দেখতে চাইতাম বলে কোন নতুন দায়িত্ব নিতে দশবার চিন্তা করতাম। এতে হল কি, আমার সম্বন্ধে আমার সেই সময়ের ম্যানেজমেন্টের একটা ঋণাত্মক ধারণা হয়ে গেল।সেটা আমার পক্ষে উতরানো সম্ভব হয় নি নানা কারণে।
মাত্র বছর পাঁচেক আগে ট্রেডের এক বড়ভাইয়ের কাছে একটা বড় শিক্ষা পেলাম। আসলে আমার খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য, কোন নতুন দায়িত্ব নেওয়ার আগে মোটামুটি ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে চাইতাম যে কাজটি আমি ঠিকমতো সম্পন্ন করতে পারব । সুতরাং আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব না নিলেও সবাই জানতেন , আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হত, সেটা শতভাগ সফল হয়। ট্রাজেডি হচ্ছে, আমার সমসাময়িক কয়েকজন সতীর্থ সহকর্মীদের চেয়ে আমার যোগ্যতা বেশী থাকা স্বত্বেও আমার খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য আমি ঠিক সেইভাবে ঊর্ধ্বতনদের কাছাকাছি ছিলাম না।
ট্রেডের সেই শুভাকাঙ্ক্ষী বড়ভাই যিনি দীর্ঘদিন কর্পোরেট চাকরী করছেন, উনি আমার অবস্থান ও ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আমার ক্রমশ: অনতিক্রম্য দূরত্ব তৈরি হওয়ার ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলেন। একদিন কাছে ডেকে বললেন, ‘জাহিদ কোন একটা কাজ আপনি সফলভাবে সম্পন্ন করবেন নাকি করবেন না , তার চেয়েও মুখ্য ব্যাপার হচ্ছে কাজটি শুরু করার ব্যাপারে আপনার মনোভাব বা অ্যাটিচুড কি। সেটা পজিটিভ হতে পারে, নেগেটিভ হতে পারে, নিউট্রালও হতে পারে। আপনি হয়তো পুরোপুরি নিশ্চিত না- আপনি কাজটি শতভাগ সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা। এবং সেই দ্বিধা থেকে আপনি জড়তায় ভুগছেন। কিন্তু মনে রাখবেন আপনার ঊর্ধ্বতনও ব্যাপারটি জানেন। মূলত: দুজন কর্মচারীর মধ্যে একটা নির্দিষ্ট দায়িত্ব বা কাজ সম্পন্ন করার প্রশ্নে — একজন যদি হয় আপনার মতো , যিনি যোগ্য কিন্তু সাবধানী, খুঁতখুঁতে হিসাব করে দায়িত্ব নিতে চান । আর অপরদিকে আরেকজনের যোগ্যতা কম থাকা স্বত্বেও যদি হয় কাজের ব্যাপারে পজিটিভ এবং প্রোঅ্যাক্টিভ, তাঁকে কিন্তু ঊর্ধ্বতনরা অনেক বেশী দাম দেবেন ও কাছে টেনে নেবেন।’
দ্বিতীয় ব্যক্তি, যদি কোন কারণে কাজটি অসম্পন্ন রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বা তার মিশন সাকসেসফুল নাও হয়, সেটা ঊর্ধ্বতনেরা হাজার কাজের ফাঁকে ভুলে যাবেন। তাঁদের মনে থাকবে কর্মচারীর প্রাথমিক বা প্রারম্ভিক মনোভাবটি। এই শিক্ষাটা আমার জীবনে অনেক দেরী করে হলেও দারুণ দরকারী ও উপকারী হিসাবে প্রমাণিত। আমি এখন বিশ্বাস করি –Sometimes small thing makes a big difference !
প্রকাশকালঃ নভেম্বর ২০১৬
সাম্প্রতিক মন্তব্য