বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের দেশী-বিদেশী টপ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে আমাকে। এঁদের কেউ কেউ এতো ভয়ঙ্কর মেধাবী ছিলেন যে, এখনও আমার সামনে কেউ তাঁদের নামোচ্চারণ করলে ফোনের এপাশের পুলিশের ছোট কর্মকর্তাদের মতো, স্যার স্যার বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে।

আবার এঁদের মধ্যে কেউকেউ ছিলেন বেশ মজার ও দুর্দান্ত কৌতূহল উদ্দীপক। মজার এইজন্য যে, তাঁদের কাজের দক্ষতা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত; কিন্তু অনেকসময় ‘উদ্ভূত জটিল সমস্যা’ সম্পর্কে তাঁদের তাৎক্ষণিক মনোভাব আমার কাছে যৎসামান্য এড়িয়ে যাওয়া ও ফাঁকিবাজ টাইপ মনে হয়েছে !

এঁদের একজনের কথা মনে পড়ছে ; সমস্যা তিনি মন দিয়ে শুনতেন। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলতেন, ‘ Jahid ! This is not my problem !’ এর মানে হচ্ছে, উনি অন্যকোন টপ ম্যানেজারের কাছে বল পাস করে দেওয়ার চিন্তা করছেন অথবা এই বিষয়ে উনার জড়িয়ে পড়াটা অনর্থক মনে করছেন অথবা উনি বলার চেষ্টা করছেন– সমস্যাটা নীচের লেভেলের কেউই তো সমাধান করতে পারে, উনাকে কেন ইনভল্ভ করা হচ্ছে ? কিন্তু , তাঁর সেই কয়েক সেকেন্ড চোখ বুজে থেকে , ‘Jahid ! This is not my problem !’ –আমার মনে থাকবে সারাজীবন !

ইদানীং সহকর্মীরা এমন কিছু সমস্যা নিয়ে সামনে হাজির হয়, যেগুলো তারা নিজেরাই সমাধান করে ফেলতে পারে। তখন , মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই টপ ম্যানেজারের মতো যদি , কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে বলতে পারতাম “Guys ! This is not my problem !’ – ব্যাপারটা নিতান্ত মন্দ হতো না !

আরেক টপ ম্যানেজার ছিলেন, দুকাঠি সরেস। দৈনন্দিন সমস্যার ব্যাপারে উনি তাৎক্ষণিক সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনার পর আলোচনা করতেন। বারবার তাঁর রুমে ঢুকে তাকে বোঝাতে হতো কী কী হয়েছে। মজার ব্যাপার , যখনই কোন জটিল সমস্যা তাঁর সামনে আসত। উনি দীর্ঘক্ষণ ধরে জটিল উদ্ভূত সমস্যাটি কোন দূর অতীত থেকে কীভাবে শুরু হয়ে আজ এই পর্যন্ত এসেছে সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনতেন। ডিপার্টমেন্টের বড়কর্তা, মেজকর্তা, ছোটকর্তা সবার কাছ থেকে আলাদা আলাদা করে শুনতেন ; কিন্তু কোন সমস্যার সমাধান দিতেন না !
বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর আমি কিছুটা বিরক্ত ও উৎসুক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আচ্ছা তোমার সঙ্গে এতো দীর্ঘক্ষণ ধরে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে লাভ কি , যদি না কোন পথ খুঁজে না পাওয়া যায় !’ সেদিন উত্তর দিলেন না । অন্য আরেকদিন হালকা মুডে হঠাৎ করে বলে ফেললেন তাঁর ‘সিক্রেট’ !

তাঁর ভাষায় মাঝে মাঝে এইরকম জটিল সমস্যা হলে, বার বার আলোচনা করতে হয়। আলোচনা করতে করতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সমাধান বের হয়ে আসে! আর যখন বুঝি যে, এই সমস্যার কোন সমাধানই নাই আমার কাছে, কিন্তু সেটা তোমাদেরকে লজ্জায় বলতেও পারছি না –সেই ক্ষেত্রে আমি চুপচাপ থাকি। আমি জানি, কিছু কিছু সমস্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই মিটে যায়। কেউ না কেউ করে ফেলে অথবা কোন না কোন ভাবে হয়ে যায়। ‘ I better keep myself silent, as sometimes with the duration of time, the problem gets resolved by itself !

কথা হচ্ছে, দুই টপ ম্যানেজারের দুইরকম পদ্ধতিই বেশ কার্যকর ও ইন্টারেস্টিং । কিন্তু আমি নিজে এখন পর্যন্ত কোনটাই হাতে-কলমে প্র্যাকটিস করে দেখিনি। অবশ্য, আমার আর তেমন কী বয়েস ; সামনে দিন তো পড়েই আছে !

[ প্রকাশকালঃ ৬ই অক্টোবর,২০১৬ ]