বৃহদাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বা গ্রুপ অভ কোম্পানি গুলোতে কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে চাকরীচ্যুত করতে হলে বা মানে মানে বিদায় করতে হলে একেক কোম্পানি একেকরকম নিয়ম মেনে চলে। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে চাকরি করার সময় দেখেছি— যখনই প্রোডাকশন ও কারখানা থেকে বড় কোন কর্মকর্তাকে হেড অফিসে ডেকে কোন পোস্টিং দেওয়া হয় ; আমরা বুঝে ফেলতাম ‘অমুক স্যার’ আর বেশীদিন নেই গ্রুপে।

আবার, অনেক কোম্পানিতে বেতন বোনাসের বাইরেও প্রত্যক্ষ অবহেলার পরিমাণ এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় যে, তিনি যতদূর সম্ভব ইজ্জত নিয়ে কেটে পড়েন। কোন কোম্পানিতে মালিকপক্ষ সম্ভাব্য টার্গেটেড ব্যক্তির ডিপার্টমেন্টের লোকজন নিয়ে আলাদা মিটিং করা শুরু করেন, তাকে না জানিয়েই।
আরও মোক্ষম উপায় মালিকপক্ষের কাছে আছে ; সেটা হচ্ছে সম্ভাব্য ব্যক্তিকে তাঁর কাজের দক্ষতার সঙ্গে মিল নেই, এইরকম ফালতু কিছু কাজের দায়িত্ব দিয়ে বসিয়ে রাখা। সরকারি চাকুরীতে OSD ( Officer on Special Duty) করে রাখার মত আর কী !
সবচেয়ে মোক্ষম ও কার্যকর উপায় হচ্ছে, সম্ভাব্য ব্যক্তির চেয়ে অনভিজ্ঞ সহকর্মী বা তাঁর অধস্তন অযোগ্য ব্যক্তিকে পদন্নোতি দিয়ে দেওয়া। এই অপমান মূলত: কোন সুস্থ লোকের পক্ষে হজম করা সম্ভব হয় না।
যাই হোক, এক যুগ আগে আমিও অনেকটা এইরকম একটা সিচুয়েশনের মুখোমুখি হয়েছিলাম। কোনভাবেই কিছু যখন হচ্ছিল না , তখন রাগে দুঃখে ক্ষোভে তৎকালীন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মালিকপক্ষের আস্থাভাজন বসকে গিয়ে এই চুটকি শোনালাম। পরিশেষে প্রশ্ন করলাম, ‘ আপনি আসলে আমাকে নিয়ে কি করতে চাচ্ছেন ?’
যদিও উত্তর মেলেনি কখনই !

সেই চুটকি আবারও সবার সঙ্গে শেয়ার করছি, যৎসামান্য খিস্তি ক্ষমার্হ হবে আশা রাখি।
ঘটনা ব্রিটিশ আমলের।
মহল্লা প্রধান বা সর্দাররা জাতে ওঠার জন্য ঘরে বন্দুক রাখতেন। নতুন সর্দার যথারীতি দোনলা বন্দুক কিনলেন। কিনে রেখে দিলে তো হবে না ! ‘ ছিকার-ঠিকার না করলে — মহল্লা বুঝব ক্যাম্থে, বন্দুক কিনবার লাগছি !’
তো , সর্দার যাবেন পাখী শিকারে। সন্দেহ থাকতেই পারে, নতুন সর্দারের বন্দুক চালানোটা ঠিকমত জানা আছে কী নেই। ঢাকার আশেপাশে তখন অসংখ্য জলাভূমি এবং অতিথি পাখীর আনাগোনা। শীতের শেষ, অস্বস্তিকর চিটচিটে রৌদ্রের শুরু। অনেক আয়োজন করে কাক-ডাকা ভোরে নৌকা ও মাঝিকে নিয়া সর্দার পাখী-শিকারে বের হলেন। এই জলা, সেই জলা, পাখীর আর দেখা নাই। মাঝি চূড়ান্ত বিরক্ত। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল। ধীরেধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে চারপাশ। হঠাৎ দূরে ঘাস, লতা-পাতার আড়ালে একটা বক দেখা গেল। মাঝি খুব সাবধানে বৈঠার আওয়াজ না করে আস্তে আস্তে নৌকা এগিয়ে নিয়ে চলছে।
শ’ খানেক হাত দূরে ।

মাঝি: ‘ গুলি করেন ছর্দার সাব।’
সর্দারঃ ‘ আরেকটু আউগাইয়া যা !’
পঞ্চাশ হাত দূরে–
মাঝি: ‘ গুলি করেন ছর্দার সাব।’
সর্দার: ‘আরেকটু আউগাইয়া যা !’
এমন করতে করতে বিশ হাত দূরে গিয়ে অবশেষে সর্দার বন্দুক তাক করলেন ।
মাঝি: ‘এইবার গুলি করবার লাগেন, বক তো উইড়া যাইব গা।’
সর্দার: ‘ আরেকটু আউগাইয়া যা’।
তিতবিরক্ত হয়ে মাঝি সর্দারকে: ‘ ছর্দার সাব, আপনারে এউগা কথা জিগাই?’
বন্দুকে চোখ রেখেই সর্দার বললেন: ‘ জিগা।’
মাঝি: ‘ সত্যি কইরা কন্ তো, আপনে হালায় বক রে গুলি করবেন, নাকি বকের পুঁটকি মারবেন?’

[ প্রকাশকালঃ ২৮শে সেপ্টেম্বর ,২০১৬ ]